পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ চান ভোক্তারা


২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০০

স্টাফ রিপোর্টার : শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বাড়ছে নানা ধরনের সবজি, দাম কমছে না, বাড়ছে। সাধারণত পণ্য সরবরাহ বাড়লে দাম কমে, কিন্তু রাজধানীর বাজারে নানা জাতের সবজির আমদানি বাড়লেও মূল্য কমছে না। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির যেন প্রতিযোগিতা চলছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন অসহায় দরিদ্র মানুষ। তারা কেউ কেউ সপ্তাহে একবার মাছ জোগাড় করতে পারলেও পুরো মাসেও দেখা পাচ্ছেন না গোশতের। এর পেছনে রয়েছে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের প্রশ্নÑ মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর হচ্ছে না কেন?
দিন যাচ্ছে আর পণ্যমূল্য বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৬ বছর ধরেই দেশে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগামী। বিশেষ করে ডিম-মুরগি, চাল-ডাল, শাকসবজি থেকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নজিরবিহীন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রব্যমূলের এ অসহনীয় বৃদ্ধি সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করলেও সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। কয়েক বছর ধরেই জীবনযাত্রার ব্যয় সংকুলানে মানুষ এখন দিশেহারা।
বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতিতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে এসেছে বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী, রংপুর, ময়মনসিংহের কমপক্ষে ২০ জেলার বন্যা। বন্যায় ফসল ও পোলট্রি খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে জোগান কমে গেছে। যেকোনো অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না।
জানা গেছে, সিন্ডিকেটই ডিমের দাম নির্ধারণ করে। এসএমএসের মাধ্যমে সিন্ডিকেট চক্র এ দর নির্ধারণ করে। কিন্তু এর সুফল প্রান্তিক খামারিরা পান না; অন্যদিকে ক্রেতাদের বাড়তি দামে ডিম কিনতে হয়। বাড়তি মুনাফায় পকেট ভারী হয় সিন্ডিকেটের।
এছাড়া বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির চিত্রও অনেকটা একই রকম। ১০ টাকায় উৎপাদিত সবজির বাজারমূল্য ১২০ টাকা হয়। অস্বাভাবিক পরিবহন ব্যয়, রাস্তায় চাঁদাবাজি, উৎপাদনকেন্দ্র থেকে বিক্রয়কেন্দ্র পর্যন্ত দফায় দফায় হাতবদল, আড়তদারি খরচসহ নানা ব্যয়ের কারণে সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে পণ্য পাইকারি বাজারে আসার পর ফড়িয়াদের মধ্যেই তিন-চারবার হাতবদল করে তা দু-তিনগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এখানেই প্রশ্ন আসে পণ্যমূল্য নির্ধারণের যৌক্তিকতার। একটি পণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট সবাই স্টেকহোল্ডারদের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নৈতিক অবস্থানে থেকে যৌক্তিক দামের ওপর জোর দিতে হবে। এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরাসরি কীভাবে পণ্যদ্রব্য পৌঁছানো যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা উচিত। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং ব্যবস্থার মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই ডিস্ট্রিবিউশন চেইন থাকা উচিত, যেখানে ‘উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, ভোক্তার শক্ত অবস্থানের বাইরে ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য থাকবে না। উৎপাদনকারী, পাইকার, পরিবহন ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফার হার যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যেন কোনো অসাধু চক্র নানা অজুহাতে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে না পারে। রাজধানীসহ জেলা শহরগুলোয় এটি বাস্তবায়ন করা গেলে বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি ও শিল্প। বিশেষত একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকটাই মুখ্য বিষয়। দেশ যদি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন নানামুখী ঝুঁকি প্রকট আকার ধারণ করে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি অন্যতম। বিশেষ করে আমাদের শিল্প উৎপাদনের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে আমদানিকৃত দ্রব্যের বেশিরভাগেরই মূল্য ডলারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে পণ্যদ্রব্য আমদানির কারণে এলসি দায় মেটাতে রিজার্ভ কমে যায়। ফলে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এতে কমে যায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান।
এদিকে যদি আমদানি করা পণ্য দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হতো, তাহলে আমদানির ওপর চাপ কমত ও ডলারের চাহিদাও তুলনামূলক কম হতো। সেক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখাও সম্ভব হতো। সর্বোপরি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন অনেকে।