নিজেকে সাজান


৮ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১৭

॥ আসমা খাতুন ॥
মায়ায় ভরা রঙিন এ পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি ভালোবাসার অবয়বে। মানুষ ভালোবাসার কাঙাল চিরকালই ছিল, আছে এবং থাকবে। এ ভালোবাসার তাগিদেই পৃথিবীর সব মানুষ ক্লান্তি ভুলে জীবনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। নবউদ্যমে আনন্দে মানুষ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নিজেকে যুক্ত করে শুধুমাত্র ভালোবাসার জন্যই।
সুন্দর একটিমাত্র গুণ! সৌন্দর্য হাজারগুণের সমাহার।
যেমন-
সুন্দর ব্যবহার : এর মাধ্যমে মন জয় করা যায়। শায়েখ আহমদুল্লাহ বলেছেন, সুন্দর আচরণ এমন একটি গুণ যা সকল কিছুকে হার মানায়। হেসে কথা বলা একটা সাদকা। কিয়ামতের দিন মিজানের পাল্লায় সবচেয়ে যে আমলটি বেশি ওয়েটফুল হবে, তা হলো উত্তম আচরণ।
নিজেকে পরিপাটি করে রাখা : নিজেকে টিপটপ করে রাখা একটি বড় গুণ। সারা দিনের ক্লান্তি নিয়ে একজন পুরুষ যখন ঘরে ফেরে আর দেখে তার প্রিয়তমা স্ত্রী বেশ ছিমছাম পরিপাটি হয়ে আছে। তাকে দেখামাত্রই পুরুষের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
সুন্দরভাবে সংসারটিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা একজন নারীর অনবদ্য কাজ। যে কাজে শুধু আনন্দই নয় সফলতা ও নেকি সবই বিদ্যমান।
আপনার চাহনি, মিষ্টি করে কথা বলা, আপনার কাজ, আপনার সততা, লজ্জা, বিনয়, সরলতা, উদারতা, আপনার ব্যবহার একজন মানুষের কাছে আপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। নারীর প্রতি গভীর বিশ্বাস, একজন পুরুষকে কী রকম আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে, তার জ¦লন্ত উদাহরণ মহীয়সী নারীরা।
ঈমান তো থাকতেই হবে। মহান রাব্বুল আলামিনের প্রতি শতভাগ ঈমান রাখতে হবে। এতে কোনো প্রকার সন্দিহান থাকা চলবে না।
সময়মতো সালাত আদায় করা
আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, আজান না হলে পুরুষদের জামাত শেষ না হলে মহিলারা নামাজ পড়তে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ওয়াক্ত হলেই নামাজ পড়ুন। মন দিয়ে পড়ুন। ধীরে ধীরে পড়তে হবে। নামাজের যে ফরজগুলো আছে, তা মেনে চলতে হবে।
নামাজ এমন একটা অলৌকিক শক্তি যা যথাযথ আন্তরিকতা, মনোযোগ সহকারে আদায় করলে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়, যা নিজের মন ও আত্মাকে জাগ্রত করে তোলে। নিজের মনের মধ্যে এক অপার আনন্দ ও ভালোলাগা কাজ করে। সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে রুকু, সিজদা, তিলাওয়াত সবিনয় একাগ্রতা এবং সময়নুবর্তিতার যথাযথ সমন্বয়।
সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ-
অর্থ : যে আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তা শুনতে পান।
আল্লাহর প্রতি খোশ দিলে সন্তুষ্টিচিত্তে প্রশংসা করতে হবে।
রব্বানা লাকালহামদ-
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রশংসা করছি।
হাদীসের বাণী
যে ব্যক্তি ফজরের সালাত ছেড়ে দেবে, তার চেহারার উজ্জ্বলতা কমে যাবে।
যে ব্যক্তি জোহরের সালাত ছেড়ে দেবে, তার রুজির বরকত কমে যাবে।
যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দেবে, তার শরীরের শক্তি কমে যাবে।
যে ব্যক্তি মাগরিবের সালাত ছেড়ে দেবে, তার সন্তানাদি কোনো উপকারে আসবে।
যে ব্যক্তি ইশার সালাত ছেড়ে দেবে, তার নিদ্রার তৃপ্তি নষ্ট হয়ে যাবে।
ফরজ রোজা রাখা
স্বামীর সেবা করা
দাম্পত্য জীবন সুখের করতে হলে অবশ্যই দুজনের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা থাকতে হবে। আমরা কমবেশি অনেকেই জানি, স্বামীর সেবা-সন্তুষ্টির মাধ্যমে প্রথম যে নারী জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তিনি হলেন একজন কাঠুরিয়ার স্ত্রী।
সাধ্যমতো তিনি স্বামীর সকল সুবিধার ব্যবস্থা করতেন।
চরিত্র ধরে রাখা
সন্তান লালন-পালন করা।
নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। ভাবতে হবে আমি ভালো আছি। আমার অবস্থানে আসার জন্য অনেকে সংগ্রাম করে চলছে।
একজন মোটরসাইকেল আরোহী ভাবছে ইস আমার যদি প্রাইভেট কার থাকত। তবে এই কড়া রোদ থেকে আমার শরীরকে সেইফ করতে পারতাম।
একজন সাইকেল চালক ভাবছে ইস আমার যদি একটা মোটরসাইকেল থাকত, তবে কত ভালো হতো। একজন পাথচারী ভাবছে ইস আমার যদি একটি সাইকেল থাকত, তবে এ কড়া রোদে এত কষ্ট করতে হতো না।
এক ব্যক্তি বাজারে হেঁটে গিয়ে দেখে একজন লোকের দুই পাই নেই। সে পিঁড়িতে বসে হাত দিয়ে চালিয়ে ভিক্ষা করছে। তাকে দেখার পর তার আক্ষেপ নিমিষেই উধাও হয়ে যায়।
নবী মূসা (আ.)-এর সময়কালের একটা ঘটনা।
দুজন ব্যক্তি এলেন দুই ধরনের সমস্যা নিয়ে।
১ম জন : আমি এত দান-খয়রাত করি, খরচ করি, যাকাত দেই, আত্মীয়দের হক আদায় করি, তবু আমার সম্পদ দিন দিন বাড়তে থাকে। আমার ধনসম্পদ বৃদ্ধির কারণ কী? তার ভেতরে ভয় কাজ করে।
২য় জন : খুবই অভাবী। এ অভাব থেকে মুক্তির উপায় জানতে চাইল।
নবী হযরত মূসা (আ.) দরিদ্রজনকে বললেন, বেশি বেশি করে খোদার শুকরিয়া আদায় করুন।
২য় জন : ক্ষোভের সাথে বলল, আমার ঘরবাড়ি নেই, জায়গা-জমি নেই, খাবার নেই, আসবাবপত্র নেই। আর আমি শুকরিয়া আদায় করব কেন?
এ কথা বলার সাথে সাথে একটা দমকা হাওয়া এসে তার পরণের কাপড় খুলে বাতাসের সাথে উড়ে গেল।
হযরত মূসা (আ.) প্রথমজনকে বললেন, আপনি রবের শুকরিয়া আদায় বন্ধ করে দিন।
আমি কেন শুকরিয়া আদায় থেকে বিরত থাকব!
তবে আপনার সম্পদ কমবে।
একসময় আমার কিছুই ছিল না। তবুও আমি খোদার শুকরিয়া আদায় করেছি। কারণ আমি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলাম। আমি পরিশ্রম করেছি, আজও আমি আমার মহান রবের প্রতি খুশি। আলহামদুল্লিাহ! আমি ভালো। তার সম্পদ আরো বাড়তে লাগল।
অতএব, নেয়ামতে শুকরিয়া আদায় করতেই হবে। কেননা আমি যে অবস্থানে আছি অনেকে সেই অবস্থানে আসার জন্য লড়াই করছে। অনেকের কাছে তা স্বপ্ন।
অভিশাপ দেওয়া যাবে না।
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা।
বেশি বেশি দান-সাদকা করা।
সময় নষ্ট না করা।
নিজেকে সাজান ইসলামের আলোয়। দেখবেন এ বিশ্বজগৎ হেসে উঠবে আপনার সৌন্দর্যের পরশে।