সম্পাদকীয় : প্রসঙ্গ: ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় পথচলা
৮ নভেম্বর ২০২৪ ০০:০৭
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এদিনে দেশের সর্বস্তরের জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরা ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে রাজপথে নেমেছিলো। তাদের সেই প্রতিরোধে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরাজিত অপশক্তি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু তাদের ফ্যাসিবাদী তৎপরতা অব্যাহত ছিল। ইতিহাসের বাঁকগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, তারা ১৯৮১ সালে আবার ফেরার পথ তৈরি করে বিপথগামী এক জেনারেলের ক্ষমতালিপ্সাকে পুঁজি করে। সাড়ে ৯ বছর সংগ্রামের পর স্বৈরাচার জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের কেয়ারটেকার ফর্মুলায় দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় আবারও যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু আগ্রাসী অপশক্তি ও ফ্যাসিবাদ গণতান্ত্রিক উদারতাকে অপব্যবহার করে ২০০৬ সালে রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর এবং ষড়যন্ত্রের ১/১১ ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে (ভারত সরকার মঈন উ আহমদকে ছয়টি ঘোড়া উপহার দিয়েছিল) আবার ফিরে আসে। এরপর চলে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে অবৈধ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট জাতি মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। ঘটনার ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এবারও ছাত্র-জনতার বিপ্লবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শরিক হয়েছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যরা আবারও ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের মতো কোনো ফাঁদে পা দেবেন না। তারা ফ্যাসিবাদমুক্তির আন্দোলনে তাদের অবদান মনে রেখে আগামী দিনে পথ চলবেন।
হাসিনার ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন প্রতিবেশী ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থনে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, তারা মনে করে নিয়েছিল, কোনোদিন ক্ষমতার মসনদ তাদের হাতছাড়া হবে না। তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার মতো পৃথিবীতে কোনো শক্তি নেই। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, সারা বিশ্ব তা প্রত্যক্ষ করল গত ৫ আগস্ট। নিরস্ত্র-নিরীহ ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয় হাসিনা ও তার দোসররা। এ হলো ঐক্যের প্রতি মহান রবের রহমত। তার নিকট থেকে এ রহমতের ফল্গুধারা অব্যাহত রাখতে চাইলে অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিশেষ করে দেশপ্রেমিক ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী সকল রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও ছাত্র-জনতার শক্তিতে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ঐক্যের শক্তি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।
আমরা জানি, ইতিহাসের শিক্ষা যারা ভুলে যায়, তাদের ঘাড়ে বাব বার ফ্যাসিবাদ সওয়ার হওয়ার সুযোগ পায়। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নষ্টকারী শক্তি বার বার ফিরে এসে দেশ ও জাতিকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে। কিন্তু যারা এ সত্য মনে রেখে পথ তৈরি করে এবং সেই পথে চলে, তাদের মাঝে ফ্যাসিবাদী শক্তি ফিরে আসার সুযোগ পায় না; যেমন- জার্মানি, ইতালি। অন্যদিকে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মিশর উদার গণতন্ত্রের নামে ফ্যাসিবাদকে সুযোগ দেওয়ায় সেখানে আবার ফ্যাসিবাদী শাসকরা ফিরে এসেছে।
আমরা আশা করি, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ইতিহাস মনে রেখে সেই শিক্ষার আলোকে শপথ নিয়ে পথ চলবেন দেশের বর্তমান কাণ্ডারিরা, তাহলেই আমরা আর পথ হারাবো না, ইনশাআল্লাহ।