সম্পাদকীয় : জাতীয় ঐক্য সংহতি অটুট রাখতেই হবে


১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

উপমহাদেশের আজাদী আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বার বার বিজয় বেহাত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আজাদী আন্দোলনে উপমহাদেশের আলেমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, কিন্তু স্বাধীনতার সুফল তাদের ভাগে পড়েনি। তাদের স্বপ্নের আলোকে কল্যাণরাষ্ট্রও উম্মাহকে উপহার দিতে পারেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধপূর্ব স্বৈরশাসন এবং স্বাধীনতা-উত্তর জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসা বাকশাল নামের একদলীয় স্বৈরাচার উৎখাতে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের পরিণতিও কারো অজানা নয়। এর কোনোটির জন্যই প্রতিবিপ্লব দায়ী নয়। বরং বিপ্লবের পরের সুসময়ের কোকিল এবং মৌ-লোভী মাছিরাই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনেক ত্যাগ আর তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লবের ফসল নিজের ভাগে নিতে বিপ্লবের নায়কদের বলিরপাঁঠা বানিয়ে উচ্চবর্ণের আগ্রাসীদের শ্রীচরণে উৎসর্গ করেছে। তাদের এমন লোভের ভুলের খেসারত জাতিকে দিতে হচ্ছে বার বার। এবার দেখা যাচ্ছে, সেই সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের চেতনা ভুলে জাতিকে বিভক্ত করে ফায়দা লোটার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। তাদের বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতি এবং কর্মসূচি পতিত স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীকে সংগঠিত হতে সাহায্য করছে।
ইতোমধ্যেই ছাত্র-জনতার মধ্যে সন্দেহ, সংশয়ের বীজ রোপণ শুরু করেছে। বিপ্লবী চেতনার আলোকে রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের আগেই তারা জাতীয় নির্বাচন, অবৈধ সংসদের ডামি সদস্যদের দিয়ে নির্বাচিত পতিত স্বৈরাচারের সেবাদাস প্রেসিডেন্ট ইস্যুসহ আরো নতুন নতুন ইস্যু উপস্থাপন করছে। ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি ভারতের আগ্রাসী তৎপরতার অশনিসংকেতও ইতোমধ্যেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। এমন অবস্থায় সচেতন দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। কারণ এক লহমার ভুলে শেষ হতে পারে সব অর্জন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নায়কদের জীবন সংশয় হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়। কারণ ইতোমধ্যেই আমরা লক্ষ করছি পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া বিভিন্ন ফোনকল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার দোসররা হুমকি-ধমকি ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে। বিনা ভোটে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে দেশত্যাগ করেছে। তাকে অনুসরণ করে তার অবৈধ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ ও ডামি সংসদের সদস্যরাও পালিয়েছে। দেশ ছাড়ার আগে দেড় থেকে দ্ইু হাজার মানুষ হত্যা করেছে। সন্ত্রাসের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। এখন দেশ লুটের টাকায় মিথ্যাচারের মাধ্যমে নিজের দোষ ঢাকার অপচেষ্টা করছে। অথচ তাদের উচিত ছিল গণহত্যার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া।
তাদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সময়ের দাবি। ক্ষমতা ভাগাভাগির চিন্তার আগে জুলাই বিপ্লবের আলোকে রাষ্ট্র ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। ফ্যাসিবাদ ফিরে এসে যেন আবার কোনো ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার সাহস না পায়, সেই কৌশল নির্ধারণে দলমত-নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি। এ সত্য উপলব্ধি করতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম সমাজ ব্যর্থ হলে গোটা জাতিকে আবার চরম খেসারত দিতে হবে, যা কারো কাম্য নয়। তাই আসুন, সিসাঢালা প্রাচীনের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে জুলাই বিপ্লবের চেতনার আলোকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সামনে এগিয়ে যাই। লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় ঐক্য সংহতি অটুট রাখতেই হবে।