২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকেন হাসিনা


২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪০

স্টাফ রিপোর্টার : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও ভোটারবিহীন নির্বাচন দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখেন শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়া আর প্রভাবশালী কোনো দেশের সমর্থন ছিল না। ভারত শুধু সমর্থনই করেনি, দেশটি ওই নির্বাচনে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে কূটনৈতিক নীতি লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করে। তখন শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। আন্দোলনে ঢাকা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। মিলকারখানা, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা যাতে ঢাকা প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য সব ধরনের গণপরিবহনে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাসিনা সরকার। কিন্তু আন্দোলন থেমে যায়নি। আন্দোলন থামাতে প্রকাশ্যে গুলি করে বিরোধীদলের অসংখ্য নেতাকর্মী হত্যা করা হয়। এরপরও আন্দোলন থামাতে না পেরে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন হাসিনা। ওই নির্বাচনের আগেই ১৫৪টি আসনে (সরকার গঠনে প্রয়োজন ১৫১ আসন) বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করে রাখা হয়Ñ যাতে সরকার গঠনে কোনো ঝুঁকি তৈরি না হয়। আর এ তামাশার নির্বাচনে ক্ষমতায় বহাল থাকেন হাসিনা।
ওই নির্বাচন নিয়ে বিসিসি বাংলার এক প্রতিবেদন বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে একতরফা নির্বাচনের যেসব নজির রয়েছে, তার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্যতম। সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সে নির্বাচন বয়কটের প্রেক্ষাপটে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল।’ নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৪৬টি আসনে। অর্থাৎ ওই নির্বাচনে ১৪৬ আসনে ভোট শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত না হলেও সরকার গঠনের পথ তৈরি করে রেখেছিল হাসিনা সরকার। আর যে ১৪৬টা আসনে নামমাত্র ভোট অনুষ্ঠান করা হয়, যেসব আসনে এমন শতাধিক ভোট কেন্দ্র ছিল, যেখানে একজন ভোটারও ভোট দিতে আসেনি। অনেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা আসেননি। আওয়ামী লীগের লোকেরা নিজেরা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে রেখেছিলেন। যার অসংখ্য প্রমাণ ওইসময় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে ‘ব্যর্থ নির্বাচন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচনী সততা প্রকল্প (ইলেক্টোরাল ইন্টিগ্রিটি প্রজেক্ট-ইআইপি) নামের একটি বৈশ্বিক প্রকল্প। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি পরিচালিত হয়। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ১০৭টি দেশের ১২৭টি নির্বাচনের ওপর করা জরিপের ভিত্তিতে তারা নির্বাচনী সততার ধারণা সূচকও (পারসেপশন অব ইলেক্টোরাল ইন্টেগ্রিটি-পিইআই) প্রকাশ করেছে। ওই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে ১৪তম। কোনো কোনো দেশে সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আলাদা হিসাব করায় একাধিক নির্বাচন জরিপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো সংস্থাই এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলে আখ্যা দেয়নি।