॥ একেএম রফিকুন্নবী ॥
মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তৈরি করে তাঁর পথে চলার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবী-রাসূলের তালিকা পাওয়া যায়। তাঁরা সবাই বিয়ে-শাদী করে সংসার জীবন ও সমাজ জীবন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা তাদের সময়ের লোকদের আল্লাহর পথে ডেকেছেন। শিরকমুক্ত থেকে দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করেছেন, ভালো কাজের আদেশ দিয়েছেন আবার মন্দ কাজের জন্য দুনিয়া-আখিরাতে বদনসিবের খবর দিয়েছেন। প্রত্যেক নবী ও রাসূল একই দায়িত্ব পালন করেছেন। নবী মুহাম্মদ সা. আল্লাহর শেষ নবী ও রাসূল।
নবী মুহাম্মদ সা. ২৩ বছরে তাঁর নবুয়্যতের সময় আল কুরআন নাজিল হয়েছে এবং পূর্ণ বাস্তবায়নও এ সময়ে পুরোপুরি হয়েছে। ঐ সময়ে মুহাম্মদ সা. তাঁর সাথে পেয়েছিলেন নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন সাহাবী আবু বকর রা., ওমর, ওসমান, আলী রা.সহ ঈমানের বলে বলীয়ান আরো বহু সাহাবীকে। শেষ নবী মুহাম্মদ সা.-কে নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী করেই সৃষ্টি করেছিলেন। শিশু বয়সে দুধ মায়ের দুধ পানের সময়ও তাঁর দুধ মায়ের আরেক ছেলের অধিকার সংরক্ষণ করে এক স্তন থেকেই দুধ পান করে অন্যের অধিকার দেয়ার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন।
যুবক বয়সে চাচা আবু তালেবের সাথে সিরিয়ায় ব্যবসা করার সময়ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে আরব দেশে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ঐ সময়ের ধনাঢ্য বিধবা মহিলা বিবি খাদিজার কাছেও তাঁর ব্যবসায়িক যোগ্যতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার খ্যাতি জানান দেয়। ফলে বিবি খাদিজা তার ব্যবসায়িক কাজে শেষ নবী মুহাম্মদ সা.কে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। অল্পসময়ের মধ্যেই নবী মুহাম্মদ সা. বিবি খাদিজার ব্যবসার প্রসার ঘটাতে সক্ষম হন এবং তার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন।
২৫ বছরের মুহাম্মদকে সা. ৪০ বছরের বিবি খাদিজার বিয়ের প্রস্তাব উভয়ের অভিভাবকদের পরামর্শে সহজ শর্তে অনাড়ম্বর পরিবেশে সংঘটিত হয়। শুরু হয় একদিকে ব্যবসা; অন্যদিকে ঘর-সংসার। তিনি সমাজে সততা, যোগ্যতা ও নীতি-নৈতিকতার স্বাক্ষর রেখে সমাজ গঠনের কাজে এগিয়ে যান।
যুবকদের সংগঠিত করে ‘হিলফুল ফুজুলের’ সহযোগিতায় সমাজের নেতৃত্ব দেয়ার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। বিবি খাদিজার সমস্ত ধনসম্পদের পূর্ণ হেফাজত এবং দিনে দিনে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে স্বাক্ষর রাখেন এবং আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে গড়ে ওঠার যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দিতে জাহেলি যুগে উদাহরণ সৃষ্টি করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা নবী মুহাম্মদ সা.কে শেষ নবী হিসেবে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য একদিকে নীতি-নৈতিকতার স্বাক্ষর রাখতে সহযোগিতা করেন আবার উত্তম চরিত্রের স্বাক্ষর রেখে পারিবারিক জীবনে বিবি খাদিজার ঘরে ৭ ছেলেমেয়ের জন্ম হয়। বিবি ফাতিমা রা. তার মধ্যে অন্যতম।
সমাজবিপ্লব করার জন্য একজন ভালো মানুষ হিসেবে ঐ আরবের জাহেলি যুগে ব্যক্তি, পরিবার, চালচলন, আত্মীয়তার বন্ধন, পাড়া-প্রতিবেশীদের অধিকার সংরক্ষণ, অমুসলিমদের অধিকার দেয়া সবই তিনি আয়ত্ত করেন নবী হিসেবে দায়িত্বের পূর্বেই। নবী মুহাম্মদ সা. আরবের ঐ কলুষিত সমাজে নিজের সততা, যোগ্যতা ও ন্যায়নীতির সব স্বাক্ষর রাখেন এবং সমাজে ‘আল আমিন’ বিশ^াসী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
নৈতিক চরিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সমাজে জায়গা করে নেন। এতিম নবী সা. তাঁর দাদা আবু মুত্তালিব ও চাচা আবু তালেবের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে সমাজপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। মহান আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে এতিম বালক থেকে সমাজের প্রধান হওয়ার সব যোগ্যতা অর্জনে পদে পদে সাহায্য করেন।
এভাবেই কেটে যায় ৪০ বছর। মহান আল্লাহ তাঁর কাছে ওহি পাঠান। হেরা পর্বতের গুহায় হযরত জিবরাইল আ.-এর মাধ্যমে তাঁকে নবী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। শুরু হয় নবীর প্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের কাজ। ইতোমধ্যে বিবি খাদিজার মনও নবীর প্রতি সার্বক্ষণিক নির্ভরতার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। তিনিই সর্বপ্রথম নবীকে তাঁর দায়িত্ব পালনের সব সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করে দেন। শুরু হয়ে গেল নবীওয়ালা কাজ।
মক্কার বড় বড় গোত্রের লোকেরা বিশ্বস্ত আল আমিন উপাধির নবী মুহাম্মদ সা.কে নবী হিসেবে মেনে নেয়া শুরু করেন। আবু বকর রা., ওমর রা., ওসমান রা., আলী রা.সহ অনেকেই এগিয়ে আসেন। একদিকে নবীর দাওয়াতে লোক জড়ো হতে শুরু করেন; অন্যদিকে তাঁর বিরোধীরাও বিরোধের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। নিজের চাচা আবু জেহেলসহ গোত্রপতিরা বিরোধিতা এমনভাবে বাড়িয়ে দেয় যে, নবীর মক্কায় থাকাই দুরূহ হয়ে যায়।
নবী হওয়ার পূর্বেই ৪০ বছর এবং নবী হিসেবে ১৩ বছর মক্কার লোকদের কাছে মুহাম্মদ সা. যেমন ‘আল আমিন’ উপাধি পেয়েছেন আবার কাবায় নামাযের সময় আল্লাহর নবীর মাথার ওপর উটের নারীভুঁড়িও চাপিয়ে দেয়ার ঘটনা জাহেলরা ঘটিয়েছে। ইতোমধ্যে মক্কার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে মদিনার লোকেরা আল্লাহর নবীর দাওয়াতের সংবাদ পেয়ে তাঁর অনুসারী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করা শুরু করেছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে সমাজপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রাথমিক প্রশিক্ষণ মক্কাতেই শেষ করে ইসলামের বিজয়ী সেনাপতি বানানোর জন্য নবীকে মদিনায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর নবী মুহাম্মদ সা. মদিনার অদূরে ‘কুবা’ নামক স্থানে পৌঁছে যান। সেখানকার লোকেরা নবী মুহাম্মদকে অভ্যর্থনা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। আজও কুবাতে প্রথম নির্মিত মসজিদে হজ ও ওমরাহ করার লোকেরা দুই রাকাত নামায পড়ে থাকেন। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদেরও ওখানে নামাযের সুযোগ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহর নবীকে মদিনায় সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পরিচিত করার জন্য প্রথমেই মদিনার সব গোত্রপতিদের এবং সব ধর্মের নেতাদের এক সম্মেলন আহ্বান করার ব্যবস্থা করেন। সবাই নবী মুহাম্মদ সা.-এর কথা ও কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মদিনার হেফাজতের জন্য ‘মদিনা সনদ’ নামে ৫৩টি ধারার (মতান্তরে ৫৭ ধফা) এক চুক্তি করেন। দেশ পরিচালনার জন্য আজও ঐ ‘মদিনা সনদ’ গাইড হিসেবে কার্যকর আছে, পৃথিবীর ইতিহাসে যা প্রথম লিখিত সংবিধান হিসেবে স্বীকৃত।
আমাদের আলোচনার বিষয় দেশের কল্যাণে নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন নেতৃত্ব দরকার। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর শেষ নবীকে নেতৃত্বের সব গুণাবলির বলে বলীয়ান করে মক্কার কাফেরদের একদিকে সত্যের দাওয়াত দিয়ে অনেক সমাজপতিকে তাঁর দলে এনেছিলেন আবার বিরোধীদের মোকাবিলার সব কার্যকর ভূমিকায় সাক্ষ্য রেখেই মদিনায় সফল বিজয়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন।
মদিনায় গিয়েই একদিকে যেমন ইসলাম প্রতিষ্ঠার উপযোগী কাজে নবী মুহাম্মদ সা. মনোযোগ দিয়েছিলেন; অন্যদিকে যুদ্ধ-বিগ্রহ, সন্ধি-সমঝোতা করে বিজয়ের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের সব পরিকল্পনা সুচারুভাবে গ্রহণ করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে নবীর কাজ অনেকাংশে সমাপ্তির দিকে অগ্রসর হয়। বিদায় হজের মাধ্যমে লাখো লোকের সামনে নীতিনির্ধারণী বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলামের সুশীতল আশ্রয়স্থলের দিশা দিয়ে গেছেন। আজকের এ প্রযুক্তির উন্নয়নের দুনিয়ায় আমরা যারা ইসলাম বিশ^াসী লোকেরা আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন কায়েম করতে চাই, তাদেরও আগে নিজেদের নবী মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শ অনুসারে চরিত্র ও নৈতিকতা গঠন এবং আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নবী মুহাম্মদ সা. যেমন বিবি খাদিজার মতো মেধাবী, ধনদৌলতের মালিক ও বিশ^স্ত স্ত্রী হিসেবে ইসলাম প্রচারের জন্য সহযোগী পেয়েছিলেন। আমাদেরও নবী মুহাম্মদকেই সা. অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে।
আমাদের কাছে নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, ধনী-গরিব, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই যেন আশ্রয় পায়। ভালো-মন্দ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণ যাতে আমাদের পাশে পায়, তার উদ্যোগ নিতে হবে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের মানুষ সব দলের আচার-ব্যবহার, চুরি-চামারি, লুটপাট, দেশের টাকা বিদেশে পাচার, স্বজনপ্রীতিসহ ভালো এবং মন্দ দেখেছে। দেশের মানুষ বিচার করতে শিখেছে। অন্যদিকে আমরা যারা ইসলামের সুশীতল ছায়া জনগণকে দিতে চাই, তারও কিছু প্রমাণ সমাজে হাজির করতে চাই। ইতোমধ্যেই আমাদের সক্ষমতা দেখাতে মহান আল্লাহ তায়ালা সুযোগ করে দিয়েছেন, ইসলামের অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্য ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে দেশে-বিদেশে ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি করা গেছে। দেশের শিক্ষা খাতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, স্বাস্থ্য খাতে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেছে।
নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে সমাজকে আমরা ভালোর আদেশ, মন্দের নিষেধ কার্যকরী করার উদ্যোগ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়া শুরু করেছে। আমাদের লোকেরা গ্রামের নির্বাচিত সদস্য হয়ে তারপর একাধিকবার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী হয়ে জাতিকে সৎলোকের শাসনের নমুনা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। একই সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, বার বার ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, দলের জেলা প্রধানের ভূমিকা পালনের উদাহরণও আমাদের কাছে দৃশ্যমান। সাথে সাথে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনে সততা, ন্যায়নীতির উদাহরণও কম নয়। তাই দলের প্রধান থেকে শুরু করে গ্রামের প্রধানকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে সততা, ন্যায়নীতি, ধৈর্যের পরীক্ষা, চালচলন, আচার-ব্যবহার, ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন পরিচালনায় আদর্শ ভূমিকা রাখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ন্যায়পরায়ণ লোকদেরই সাহায্য করবেন, কোনো সন্দেহ নেই। ইসলামী আদর্শের অনুসারী দুজন মন্ত্রী কর্মজীবনে ৫ বছর ন্যায়নীতির সাথে দায়িত্ব পালনে সত্যের সাক্ষ্য রেখে গেছেন। আবার ফাঁসির মঞ্চেও সত্যের সাক্ষ্য রেখে গেছেন। দেশের মানুষ দেখেছে। লোভ-লালসা ত্যাগ করে ইসলামের প্রতি অগ্রসর হলেই কেবল মহান আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে আল্লাহর ঘোষণা, ‘তিনিই আমাদের একমাত্র অভিভাবক, তিনিই আমাদের একমাত্র সাহায্যকারী।’
দেশে দেশে এর প্রমাণ পাওয়া শুরু হয়ে গেছে। কিছুদিন পূর্বে মহান আল্লাহ তায়ালা আফগানিস্তানকে দুটি পরাশক্তির মোকাবিলা করে বিজয় আনতে সাহায্য করেছেন। সর্ববৃহৎ পরাশক্তি দাবিদার মার্কিনিরা রাতের অন্ধকারে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আফগান জনগণ তাদের ঈমান আর আমলের নীতিতে সত্যের সাক্ষ্য রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অর্থনীতি এখন অন্য দেশের চেয়ে অনেক ভালো।
অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের জুলুমবাজি করে দীর্ঘদিন অপশাসন করে যাচ্ছে। শিশু, মহিলাসহ সাধারণ জনগণকে বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করছে। এর প্রতিকার শুরু হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরা অভ্যন্তরীণভাবে যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে; অন্যদিকে পৃথিবীর নীতি-নৈতিকতাবোধসম্পন্ন দেশগুলোও ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের সাথে তাল মিলিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরাইলের দোসর আমেরিকায়ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভের আওয়াজ উঠেছে জোরেশোরে। আরব দেশগুলোও এবার সোচ্চার হচ্ছে। আরো সোচ্চার হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন এবং শোনেন। মানুষের সব কাজের হিসাব অণুপরিমাণ পর্যন্ত রেকর্ড করে রাখছেন। দুনিয়ায়ই অনেক বিচার হয়ে যাবে বা হচ্ছে, বাকিটা আখিরাতে। কাউকেই ছাড়ের আওতায় আনা হবে না। ভালোর ফল ভালো আর মন্দের ফল বিভীষিকাময় জাহান্নাম চিরদিনের জন্য, যার শেষ নেই।
ভোট ছাড়া নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করা, বিদেশের সহযোগিতায় জনগণের ভোটের অধিকার হরণ কারো জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না। দুনিয়ায়ই লাঞ্ছনার মধ্যে পড়তে হবে। আখিরাতে তো পার পাওয়া যাবেই না।
যারা জনগণের কথা বলছেন, তাদের সংঘবদ্ধ হয়ে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার দিকনির্দেশনা সঠিকভাবে দিতে হবে। বিরোধীদলগুলোর পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে জনগণের কথা চিন্তা করে সবাইকে একমঞ্চে এসে কর্তৃত্ববাদী শাসকদের মোকাবিলা করতে হবে। জনগণ ইতোমধ্যেই তাদের মতামত দিয়ে দিয়েছে, তারা একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ভোটকেন্দ্রে আসেনি। শাসকশ্রেণি তাদের ভোটারদেরও ভোটকেন্দ্রে আনতে সক্ষম হয়নি।
মামলা, হামলা, গুম, গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে জনগণকে আর ফাঁকি দেয়া যাবে না। আমলারা তাদের বেগমপাড়া রক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। ব্যাংকের টাকা লুট করে ছাড় পাবে না। দেশের প্রধান থেকে শুরু করে গ্রামের চৌকিদার পর্যন্ত সবাইকেই তার কাজের হিসাব দিতে হবে জনগণের সামনে, ইনশাআল্লাহ।
শক্তিধর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বিচারের আওতায় আদালতপাড়ায় ঘুরছেন। ইরানে শাহ পাহলভীও দেশে মরতে পারেনি। তাই এখনই পাপ ও অন্যায় থেকে মুক্ত হোন। জনগণের রায়ে ন্যায়নীতিপরায়ণ নেতৃত্ব দেশে আবির্ভূত হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।