রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৮ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ॥ ৮ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৭ মে ২০২৪

॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া ॥
আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ভোটেই রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং সরকার ও পার্লামেন্ট নির্বাচিত হয়ে থাকে। অবশ্য এটা কোনো রাষ্ট্রে সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটে হয় আবার কোনো রাষ্ট্রে পরোক্ষ ভোটে হয়ে থাকে। বর্তমান বিশে^ রাষ্ট্র, সরকার, আইনসভা তথা পার্লামেন্ট, জনগণ, নির্বাচন ও ভোট অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এককথায় জনগণের ইচ্ছায় তথা ভোটেই রাষ্ট্র, সরকার ও আইনসভা সবকিছু গঠিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্র, সরকার থেকে শুরু করে আইনসভা ও প্রশাসন ইত্যাদির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে সরকার। আর আধুনিক বিশ্বে এ সরকারের থাকে দুটি অঙ্গ- একটি ক্ষমতাসীন দল নিয়ন্ত্রিত সরকার আর একটি হচ্ছে বিরোধীদল। গণতান্ত্রিক বিশে^; বিশেষ করে ওয়েস্টমিনস্টার স্টাইলের গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল থাকা স্বীকৃত বিষয়। রাষ্ট্র এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের জোট পরিচালনা করবে, তার বিপরীতে একাধিক রাজনৈতিক দল ও জোট বিরোধীদল হিসেবে সরকারের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে রাষ্ট্রকে সঠিক পথে পরিচালনা করবে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধীদল রাষ্ট্র ও সরকারের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। রাষ্ট্র বিরোধীদলকে সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর প্রতিটি পার্লামেন্টেই সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদল থাকে এবং প্রায় সমান মর্যাদা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও বিরোধীদল আছে, বিরোধীদলের নেতা আছে, নেতার জন্য সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতার কার্যালয় আছে। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোট না হওয়ায় বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে প্রকৃত বিরোধীদল নেই। জাতীয় পার্টি নামে একটি বিরোধীদল আছে, যেটা সরকারি দলের খুবই অনুগত। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে প্রকৃত বিরোধীদল না থাকায় পার্লামেন্ট তার মৌলিক কার্যকারিতা হারিয়েছে।
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে প্রকৃত বিরোধীদল না থাকলেও রাজনৈতিক ময়দানে জনসমর্থিত মূল এবং প্রকৃত বিরোধীদলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, খেলাফত মজলিস, নাগরিক ঐক্য, জাসদ, মুসলিম লীগসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রকৃত বিরোধীদলগুলোকে রাজনৈতিক মর্যাদা দেয়া তো দূরের কথা, স্বাভাবিক রাজনৈতিক তৎপরতাই চালাতে দিচ্ছে না।
রাজনীতিতে বিরোধীদলের ভূমিকা
পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সূতিকাগার বলা হয়ে থাকে ব্রিটেনকে। ব্রিটেনে বিরোধীদলকে মহামান্য রাজা বা রানির বিরোধীদল হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। বিংশ শতকেই বিরোধীদলকে এ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। পার্লামেন্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে বিরোধীদলের সদস্যদের রাখা হয়ে থাকে। ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিরোধীদলের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবময়। সেখানে সরকারকে বলা হয়, ‘মহামান্য রানির সরকার’ বা ‘মহামান্য রাজার সরকার’ (Her Majesty's Government or His Majesty's Government) এবং বিরোধীদলকে বলা হয়, ‘মহামান্য রানির বিরোধীদল’ বা ‘মহামান্য রাজার বিরোধীদল’ (Her Majesty's Opposition' His Majesty's Opposition')। ১৯৩৭ সাল থেকে বিরোধীদলের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তাই বিরোধীদলকেও সরকারের অপরিহার্য অঙ্গ বলে বিবেচনা করা হয়। পার্লামেন্টের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশ কমন্স সভার বিরোধীদল। পার্লামেন্টের কর্তব্য শাসন করা নয়, সমালোচনা করা (The most important part of parliament is the opposition in the House of Commons. The function of Parliament is not to govern but to criticise)।
গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীদল রাষ্ট্র ও সরকারের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাই বাংলাদেশসহ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোয় বিরোধীদলের নেতাকে সরকারের পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর পরই বিরোধীদলীয় নেতাকে প্রটোকল অনুযায়ী স্থান দেয়া হয়ে থাকে। বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে কথা বলার জন্য ফ্লোর চাওয়ার সাথে সাথে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত যেসব কমিটি আছে, তার চেয়ারম্যান করা হয়ে থাকে মন্ত্রী নয় বেসরকারি সদস্যদের, তন্মধ্যে বিরোধীদলের সদস্যও রয়েছে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ তার ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা’ বইয়ে বিরোধীদলের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলেছেন, ‘প্রথম, বিরোধীদল সরকারিদলের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে তাকে সর্বদা সজাগ রাখে। ব্রিটেনে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা প্রচলিত থাকায় পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠনের যেমন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তেমনি বিরোধীদল সরকারি দলকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য গঠনমূলক সমালোচনা করে থাকে। দ্বিতীয়, বিরোধীদল সরকারি দলের একনায়কতন্ত্রের প্রতিরোধ করে। বিরোধীদল গঠনমূলক সমালোচনা করে। জনকল্যাণকর প্রস্তাব যারা এবং দুর্নীতি ও কুশাসনকে জনসমক্ষে তুলে ধরে সুষ্ঠু গণতন্ত্র কায়েম করতে প্রয়াসী হয়। বিরোধীদল সরকারিদলকে পর্যুদস্ত করার জন্যই শুধুমাত্র সরকারি নীতির বিরোধিতা করে না, বরং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে মহীয়ান করে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে। তৃতীয়, বিরোধীদল স্বীয় দলের নীতি নির্বাচকমণ্ডলীর নিকট তুলে ধরে ও তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে সরকারি নীতির ত্রুটি প্রমাণ করে থাকে ও পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভের পথকে সুগম করে। নির্বাচনে বিরোধীদল জয়লাভ করলে সরকার গঠনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আধুনিককালে কোনো সরকারের পতন পার্লামেন্টের আস্থা হারিয়ে হয়নি। ১৯৭৯ সালে অবশ্য এর বাতিক্রম ঘটে। তখন শ্রমিক দল আস্থা ভোটে ব্যর্থ হয় এবং নির্বাচনে রক্ষণশীল দল জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ১৮৮৫ সাল থেকে ব্রিটেনের কোনো মন্ত্রিসভা পার্লামেন্টের আস্থা হারিয়ে পদত্যাগ করেনি। বরং বিরোধীদলের আক্রমণের মুখে পদত্যাগ করেছে। কেননা বর্তমানে দলের ঐক্যবন্ধন ও সংগঠন অত্যন্ত সুদৃঢ়। চতুর্থ, কোনো জটিল সমস্যা মোকাবিলার জন্য সরকারিদল বিরোধীদলের পরামর্শ গ্রহণ করে। ব্রিটেনে সাধারণত বিরোধীদলকে সাথে রেখেই বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করা হয়। রাজকীয় প্রতিরক্ষা কমিটিতে বিরোধীদলের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ করা হয়। জাতীয় কল্যাণমূলক কর্মসূচিতে অনেক সময় বিরোধীদলের সহযোগিতা লাভ করা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ গণতন্ত্রের সুষ্ঠু রূপায়ণের মূলে আছে রানির বিরোধীদলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।’
পার্লামেন্টের স্পিকারও যুক্তরাজ্যের এ ঐতিহ্য রক্ষা করে থাকেন। সরকারি দলের পতন ঘটানোই বিরোধীদলের প্রধান লক্ষ্য নয়। ১৯৬৫ সালের জুন মাসে স্পিকার তার কাস্টিং বা নির্ণায়ক ভোট (Casting vote) যারা উইলসন মন্ত্রিসভাকে সুনিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন।
ছায়া সরকার ও মন্ত্রিসভা
আধুনিক বিশ্বে উন্নত ও অগ্রসর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোয় বিরোধীদলের ছায়া সরকার একটি ঐতিহ্য ও স্বীকৃত বিষয়। কানাডা ও নিউজিল্যান্ডেও ব্রিটেনের মতো অনেক দেশেই ছায়া মন্ত্রিসভা আছে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে ২০০৭ সালে প্রথম ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করে। পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় বিরোধীদলগুলো সরকারের পাশাপাশি ছায়া সরকার গঠন করে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করে থাকে। ইংরেজিতে ছায়া সরকারকে শ্যাডো গভর্নমেন্ট হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ছায়া সরকারের সদস্যরা রাষ্ট্রের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব পালন করে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি টিম কাজ করে থাকে। তাদের কাজই হচ্ছে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে পর্যালোচন করা। ছায়া সরকারের সদস্যরা একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সাধারণত তারা সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক তথ্য ও উপাত্ত সাংবাদিকদের মাধ্যমে পুরো জাতির সামনে তুলে ধরেন। এতে করে ক্ষমতসীন সরকার ও সরকারের মন্ত্রীরা সবসময়ই একটি ভয়ে থাকেন কোনো কাজ করতে গিয়ে কী ভুল করে ফেলে। এককথায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার ও সরকারের মন্ত্রীরা বিরোধীদলের নানামুখী তৎপরতা ও চাপের কারণে একটি জবাবদিহির মধ্যে থাকেন। ছায়া সরকারের যেমন থাকে অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী, পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী, শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত মন্ত্রী এভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ছায়া মন্ত্রী থাকেন। তারা ও তাদের টিম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কে বিভিন্ন কায়দা ও সোর্সের মাধ্যমে এবং পত্রপত্রিকার কাটিং সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। এসব প্রতিবেদনে যেমন মন্ত্রণালয় ও সরকারের সমালোচনা থাকে, তেমনিভাবে পরামর্শও থাকে। তারপর সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের মাধ্যমে পুরো জাতিকে জানান। এতে করে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী যেমন সচেতন থাকেন, তেমনিভাবে ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরাও নিজেকে পরবর্তী তার দলীয় সরকারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন।
শিক্ষক গবেষক হারুনুর রশিদ তার ‘রাজনীতিকোষ’ বইয়ে, ছায়া সরকার নিয়ে একটি ছোট পরিচিতি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অনেক সময় সরকার বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দল সরকারের মন্ত্রীমণ্ডলীর অনুরূপ পদ সৃষ্টির মাধ্যমে ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন করে। এর উদ্দেশ্য থাকে প্রধানত দুটি: এক. যাতে ছায়া মন্ত্রিসভার প্রত্যেক মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সত্যিকার রাষ্ট্রীয় মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীর কার্যাবলি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দলকে অবহিত করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় দাবি, পরামর্শ, সমালোচনা ইত্যাদি তৈরি করতে সক্ষম হন। দুই. ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যদের এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়, যাতে উক্ত দল রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে ওই ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারেন। ছায়া সরকারও একই উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়।’
যুক্তরাজ্যে বিরোধীদলের ছায়া সরকার
ব্রিটেনে ছায়া মন্ত্রিসভা ওয়েস্টমিনস্টার সরকার পদ্ধতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এখানে পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে বিরোধীদল থেকে একদল জ্যেষ্ঠ সদস্য একটা মন্ত্রিসভা গঠন করেন, যেটা সরকারের মন্ত্রিসভার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধীদলই ছায়া সরকার গঠন করে থাকে এবং তারা পার্লামেন্টের প্রথম সারিতেই বসেন, পার্লামেন্টের স্পিকারও তাদের সংসদ কক্ষের প্রথম সারিতেই বসার ব্যবস্থা করে থাকেন।
যুুক্তরাজ্যে ছায়া সরকারের মন্ত্রীদের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। ছায়া সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে ক্ষমতাসীন সরকারের কার্যক্রম ও নীতিমালা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা এবং সরকারকে বিকল্প প্রস্তাব দেয়া। ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন যুক্তরাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য, ছায়া সরকারের মন্ত্রীদের ছায়া মন্ত্রী বলা হয়ে থাকে। ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্যরা আলাদা কোনো বেতন-ভাতা পান না, তারা পার্লামেন্টের অন্য সংসদ সদস্যদের মতোই বেতন-ভাতা পান। তবে তারা বিরোধীদল যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
ছায়া সরকারে বেখেয়াল দেশের বিরোধীদল
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে সরকারি ও বিরোধীদল গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে গলা ফাটিয়ে ফেলছে, কিন্তু ছায়া সরকারের মতো একটি গঠনমূলক কাজের কোনো উদ্যোগ কোনো সময় কোনো বিরোধীদলগুলো নেয়নি। আজকে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তারাও এদেশে বেশ কয়েকবার বিরোধীদল হিসেবে পার্লামেন্টে ছিল, কিন্তু তারাও কোনোদিন এ ধরনের গঠনমূলক কাজটি করেনি। বর্তমানে জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি নামে যে বিরোধীদল আছে, তাদের পক্ষে ছায়া সরকার গঠন করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কারণ তাদের রাজনৈতিক ময়দানে একটি নতুন নামে ডাকা হয়, তা হচ্ছে গৃহপালিত বিরোধীদল। আর গৃহপালিত বিরোধীদল দিয়ে তো ছায়া সরকার গঠন করার সাহস দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে বড় দুটি বিরোধীদল হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অবশ্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় তাদের ছায়া সরকার গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। তবে তারা ছায়া সরকার গঠন না করেও অন্য একটি কাজ করতে পারে, তা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বিভিন্ন কমিটি করা। যদিও এ কাজটি নতুন এবং কষ্টসাধ্যও বটে, তারপরও বিরোধীদলকে এভাবেই গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে তার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এসব কমিটি হতে পারে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক এবং দলের সিনিয়র নেতারা দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ৪৪টি মন্ত্রণালয় আছে, আর বিভাগ ও সংস্থা আছে আরো অনেকগুলো। যেমন অর্থ, আইন, পরিকল্পনা, শিক্ষা, স্বরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় আছে, যাদের একাধিক বিভাগ রয়েছে। বিরোধীদল ইচ্ছে করলে তাদের দলের অভিজ্ঞ নেতা ও দক্ষ লোকদের দিয়ে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার জন্য কমিটি করতে পারে।
বিরোধীদলকে বর্তমান সরকার কোনোভাবেই গঠনমূলক রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের মতো একটি অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ছায়া সরকার তথা ছায়া মন্ত্রিসভা গঠনকে সরকার ভালোভাবে নেবে না। তাই বিরোধীদলের পক্ষে ছায়া সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। তারপরও বিরোধীদলের জন্য এটা শুরু করতে পারলে একটি গঠনমূলক কাজ শুরু হবে এবং বিরোধীদলের গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, বিরোধীদল অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি ছায়া সরকারের আদলে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কমিটি করে হলেও মন্ত্রণালয়গুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। দল বা জোট যৌথভাবে এসব কমিটি একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর একটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যক্রম ও তাদের দুর্বলতা তুলে ধরতে পারে। প্রয়োজনে অনুসন্ধানী কমিটি বা সংবাদিকদের মাধ্যমে দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত পেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে উন্মোচন করতে পারে। এগুলো হতে পারে বিরোধীদলের গঠনমূলক কার্যক্রম এবং এসব কার্যক্রম দেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে বিরোধীদলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে পারে। যথাযথ তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক প্রতিবেদন তুলে ধরতে পারলে সরকার ও তার মন্ত্রীরা সবসময়ই তটস্থ থাকতেন। আর সাধারণ জনগণও জানতেন সরকার ও সরকারের মন্ত্রীরা কীভাবে দেশ পরিচালনা করছে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।