রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ১ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৮ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ১১ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২২ মাচ ২০২৪

বহিঃশক্তির সাথে সমসম্পর্ক : ইস্যুভিত্তিক সমঝোতা : দ্রব্যমূল্য-অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার

দেশজ শক্তিনির্ভর কৌশল বিরোধীদের

॥ ফারাহ মাসুম ॥
নিজস্ব শক্তি নির্ভর আন্দোলন গড়ে তোলার কৌশল নিচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো। এ উদ্দেশ্যে দল পুনর্গঠন, সামাজিক শক্তি বৃদ্ধি এবং নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক ভোগান্তির মতো জনগণের মৌলিক সংকটের ওপর ফোকাস করার কৌশল নিয়েছে তারা। এতে দ্রুত সাফল্যের আশা না করে একটি মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের বিষয়কে সামনে রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াতের কারাবন্দি শীর্ষনেতারা এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। নতুন নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করার আগে একতরফা নির্বাচনের আগে গণগ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীকে মুক্ত করাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। দলীয় নেতাকর্মীর মুক্তির পর এখন নতুন করে কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করেছে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং অন্য দল ও জোটগুলো।
নির্বাচন বর্জনকারী প্রধান বিরোধীদল হিসেবে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবিতে রাজপথে টানা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচির পরিবর্তে গণসংযোগ ও দল গঠনমূলক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হবে বছর দুয়েকের মধ্যে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের দাবি আদায় করা। এজন্য আন্দোলনের পরিবেশ তৈরির জন্য জনসংযোগমূলক কর্মসূচি দেয়ার পাশাপাশি দলকে নতুন করে গোছানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দলের সব ফোরামকে গতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
দলটির শীর্ষনেতারা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলনে আছেন এবং থাকবেন। তারা এ দাবি সামনে রেখেই আন্দোলনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন। দলের নেতারা আরো বলছেন, অবাধ নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার আদায়ে সাময়িক ব্যর্থতা আদৌ কোনো ব্যর্থতা নয়। আন্দোলনের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে নতুনভাবে অগ্রসর হতে পারলে সাফল্য আসবেই।
প্রধান বিরোধীদলের শীর্ষনেতারা কারামুক্ত হওয়ার পর নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবির আন্দোলন থেকে পিছু হটবে না দলটি। দেশের জনগণও দলটির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছেন বলে মনে করেন বিএনপির হাইকমান্ড। একইসঙ্গে তাদের দাবির পক্ষে যৌক্তিকতা হিসেবে নানা উদাহরণও দিচ্ছেন তারা। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা অনেক দেশও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি বলে বক্তব্য ও বিবৃতি অব্যাহত রেখেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই ও আইআরআইয়ের যৌথ মূল্যায়নেও বাংলাদেশের নির্বাচন মুক্ত-অবাধ হয়নি বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো পশ্চিমা বলয় এ নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়নি বলে অভিন্ন মত ব্যক্ত করল।
বিরোধীদল ও জোটের নেতারা মনে করেন, বিদেশিদের কাছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে না পারার কারণে নৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে সরকার। সামনে দেশের অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আঞ্চলিক সংঘাতে পরস্পরবিরোধী বিদেশি শক্তির দ্বন্দ্বে সবাইকে খুশি করার নীতি বাধার মুখে পড়তে পারে। এভাবে দেশি-বিদেশি সেক্টরে বৈরী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যতটা সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজপথে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বিরোধীদল ও জোটগুলো।
সদ্য কারামুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা কারামুক্ত হলেও মহাসচিবসহ অনেকে এখনো অসুস্থ ও চিকিৎসাধীন। তাছাড়া বিএনপি আন্দোলনের মধ্যেই আছে। পবিত্র রমযান মাসেও ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম চলছে। রমযানের পর দল ও যুগপৎ আন্দোলনের সমমনাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের দিনক্ষণ ও ধরন এ মুহূর্তে আগাম বলা যাবে না। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।
বিএনপির শীর্ষনেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ কারামুক্ত হয়েছেন। আগাম জামিনে মুক্ত হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম প্রমুখ।  
তাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। চিকিৎসা নিতে জহির উদ্দিন স্বপন গেছেন ব্যাংককে। অসুস্থ অপর নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে দেওয়া হয়নি। তাকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেক দিন কারাগারে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা। বর্তমানে তারাও দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পাশাপাশি দলীয় ইফতার মাহফিলের কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান দীর্ঘ ১৫ মাস পর কারামুক্ত হয়েছেন। এর আগে দলের নায়েবে আমীর মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর ও কর্মপরিষদ সদস্য মু. সেলিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী কারামুক্ত হন। জামায়াতের শীর্ষনেতৃবৃন্দ কারামুক্ত হওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় একাধিক বৈঠকে মিলিত হন।
জামায়াত আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য জনকল্যাণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। এর মধ্যে সমাজের অসচ্ছল নিম্নবিত্তদের মধ্যে জরুরি খাদ্যসামগ্রী সংবলিত ফুড প্যাকেজ বিতরণ এবং আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
বিরোধী জোটভুক্ত ১২ দল আর গণতান্ত্রিক মঞ্চও জনসম্পৃক্ততা ও সচেতনতা সৃষ্টিমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সব দলের মধ্যে একটি বক্তব্য প্রাধান্য পাচ্ছে যে, তারা হাল ছাড়বে না, রাজপথে নামার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আবার আন্দোলন শুরু করবে।
জানা যায়, বিএনপির শীর্ষনেতারা জামিনে কারামুক্তির পর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। একই সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষনেতাদের সঙ্গেও বিএনপির শীর্ষনেতাদের বৈঠক হয়েছে। কারামুক্ত অন্য সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে দলের শীর্ষনেতৃত্বের।
ওইসব বৈঠকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের মুখে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, রাজপথের আন্দোলন, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াগুলোর চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়। বিশেষ করে আন্দোলন মোকাবিলায় সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগ্রাসী মনোভাব, রাজপথে দল ও সমমনা দলগুলোর উপস্থিতি, গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের সঙ্গে কারাগারে আচরণসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
বিএনপি নেতারা জানান, বৈঠকে আওয়ামী লীগের ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা, পৃথিবীর অনেক সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে অসুস্থ শীর্ষনেতাদের দ্রুত সুচিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি পবিত্র রমযান মাসজুড়ে ইফতার মাহফিলের কর্মসূচির মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ডামি নির্বাচন করেছেÑ এটা শুধু দেশের মানুষ নয়, বিশ্ব জানে। কীভাবে এ ডামি সরকারকে হটানো যায়, সে চিন্তাভাবনা করেই এগোতে হবে। মানুষকে সজাগ করতে হবে। সবকিছু নতুন করে সাজাতে হবে। রমযানের পর পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপলব্ধি হয়েছে, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ের ১৯ দফার আলোকে গড়া এবং ১৯৯১ সালের খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের মতো বিএনপিকে গড়তে হবে। অভিমানে ও বঞ্চিত হয়ে সরে যাওয়া নেতাদের একত্রিত করতে হবে।
কারামুক্ত হয়ে প্রবীণ নেতা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেছেন, আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি তাকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন। তিনি দল ছেড়ে নির্বাচনে যাননি এবং যাবেনও না।
বিএনপির মধ্যে সন্দেহ-সংশয় তৈরি করার জন্য এর নেতাদের ব্যাপারে এর মধ্যে নানা ধরনের প্রচার-প্রোপাগান্ডাও চালানো হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি বিএনপির অনেক নেতার সাথে যোগাযোগ করে এ যোগাযোগকে দল ছাড়ার উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে। দলের মধ্যে পরস্পরে অবিশ্বাস তৈরির এ তৎপরতাকে আমলে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের শীর্ষনেতৃত্ব চাইছে বিভেদের বিষয় দূরে ঠেলে দিয়ে ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করতে।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পটপরিবর্তনে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আর ক্ষতি করা যাবে না। এ উদ্যোগ দলের শুধু শীর্ষনেতৃত্বের নয়, জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী, জিয়া পরিবারের প্রতি আস্থাশীল, দলের প্রতি প্রতিশ্রুতি রেখে নৈতিক শক্তি নিয়ে সবাইকে আগামীর পথ চলার নীতি তৈরি করতে হবে। তিনি জানান, দলের পক্ষ থেকে বিগত আন্দোলনগুলোয় দলের ভেতর ও বাইরে নানা সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপির মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোয় ত্যাগী, যোগ্য নেতাকর্মীর মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। যথাযথ মূল্যায়নের অভাবে অভিমানে দূরে থাকা নেতাদের একত্রিত করবে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলের ভেতর অবমূল্যায়িত প্রবীণ নেতা মেজর হাফিজকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য নেতাদেরও মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। শিগগিরই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পুনর্গঠন ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, বিএনপি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার ব্যাপারে আরো কৌশলী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের মূল্যায়নে ধরা পড়েছে যে, দেশজ শক্তির ওপর নির্ভর করে আন্দোলনকে সাফল্যের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো এক দেশ বা বলয়ের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হয়ে ইস্যুভিত্তিক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। দেশের মানুষের অনুভব-অনুভূতি সামনে রেখে প্রয়োজনে রাখঢাক না রেখে কথা বলতে হবে। দেশের ভেতরে শক্তি অর্জন করলে বাইরের পক্ষগুলো তাদের নিজেদের স্বার্থেই কাছে আসবে বলে পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো দেশবিশেষকে খুশি করার জন্য মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শ ও ধ্যান-ধারণার সাথে আপস করে কোনো লাভ হয় না।
বিরোধীদলের সাফল্য হিসেবে দেশের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষের বিগত নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের এনডিআই ও আইআরআইয়ের মূল্যায়নকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে পশ্চিমের পাশাপাশি চীন, ভারত, রাশিয়া ও ওআইসির দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দলের বলয়ে থাকা অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের সঙ্গে রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে পর্দার আড়ালে আরও বেশি করে তৎপরতা চালানোর ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়।
বর্তমানে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সাথে আন্দোলনে শরিক সমমনাদের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা টানাপড়েনের বিষয়ও মূল্যায়নে এসেছে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত বিএনপি এককভাবে গ্রহণ করাকে শরিকরা পছন্দ করেনি। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি সমমনাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও ভাবছে।
সদ্য কারামুক্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিএনপি নেতাদের কারামুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ‘আইওয়াশ’ ছাড়া আর কিছু নয়। যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশিরা নির্বাচনকে ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড’ অনুযায়ী হয়নি বলছে, তখন তাদের মুখ বন্ধ করতে বিরোধী নেতাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। তারপরও আমরা অতীতের সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করে সামনে পথ চলার কৌশল নির্ধারণ করব। যেভাবে আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন, সেভাবেই আমরা এগোব। এর আগে দলকে শক্তিশালী, সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে।
বিরোধীদলের শুভানুধ্যায়ী সুশীল সমাজের নেতারাও বলছেন, এ মুহূর্তে বিরোধী দলগুলোর দল গোছানোকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তারপর দাবি-দাওয়া নিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত হবে। তাদের অনেকে মনে করছেন, বৃহৎ পরাশক্তির গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা সম্পর্কে একসময় অতি আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। সে ধরনের নির্ভরশীলতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রচর্চা ও মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক ও ঢাকায় দায়িত্ব পালনকারী উপরাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোভিজ তার নিজ দেশের বাংলাদেশ-নীতির সমলোচনা করে সম্প্রতি এক এক্স বার্তায় বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বাংলাদেশ নীতিকে একটি মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর দাবি করেছে যে, একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য একটি ‘শেয়ার ভিশন’ রয়েছে। এটা দেশ-বিদেশের সবার জন্য অপমান, যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে এবং শেখ হাসিনা সরকারের অপকর্মকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া আমেরিকান রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি একটি মতামত কলাম লিখেছেন। তাতে তিনি ধীরে ধীরে লক্ষ্য অর্জনের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন,
“আমার দেশের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এটা একদিন একদিন করে আসে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তৃতীয় বছর শুরুর সময়ে, এই কথাগুলোকে আমার সত্যি বলে মনে হয়। প্রতিদিন এই দেশের সম্ভাবনা, জনগণের শক্তি ও সহনশীলতা এবং এর প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ আমাকে মুগ্ধ করে। যেমনটা আমি গত বছর বলেছিলাম, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। ভবিষ্যতের দিকে তাকালে এমন এক ভবিষ্যৎ যা একদিন একদিন করে এগিয়ে আসে, আমি এই দেশের সামনে সম্ভাবনা দেখতে পাই, তবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও চোখে পড়ে।”
মতামতে তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি, ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জনসমক্ষে ওকালতি করেছিল, যা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করবে। এটা ঘটেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো গণতন্ত্র নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে বাংলাদেশে এবং অন্যত্র। খুব সহজভাবে আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র হলো স্থায়ী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম উপায়, যা একটি দেশের সব জনগণের সেবা করে। আমরা সুশীল সমাজের সাহসী সদস্য এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীদের সমর্থন অব্যাহত রাখব। আমরা মিডিয়া পেশাদারদের পদ্ধতিগত দমন ও হয়রানির অবসানের আহ্বান জানাতে থাকব, যারা কেবল তাদের কাজ করছেন। আমরা বৃহত্তর বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতার জন্য চাপ অব্যাহত রাখব। আর আমরা আরও উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের পথ প্রশস্ত করার জন্য অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানাতে থাকব।’
এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অংশীদারিত্ব রয়েছে এমন এলাকাগুলো আমরা খুঁজব। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মতো দ্রুত পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক। আমি ইতোমধ্যেই নতুন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে একাধিক বৈঠক শুরু করেছি, সুযোগ খুঁজছি যেখানে আমরা পারস্পরিক গুরুত্বের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারি।’
রাষ্ট্রদূত হাসের এ বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তার অঙ্গীকারের জোরালো অবস্থানের পরিবর্তে পরোক্ষ ও নৈতিক অবস্থানের কথাই জানান দিয়েছেন। একই সাথে তাতে সরকারের সাথে এনগেজমেন্টের বিষয়ও রয়েছে। এছাড়া দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় দিল্লির চাওয়া পাওয়াকে উপেক্ষা করার পর্যায় থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ অবস্থায় সব পক্ষের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়ে বিরোধীপক্ষের অগ্রাধিকার দেখা যেতে পারে সামনের সময়গুলোয়।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।