আদর্শ সমাজ গঠনে সিয়ামের ভূমিকা
॥ এম. মুহাম্মদ আব্দুল গাফফার ॥
মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সৃষ্টির সেরা জীব করে পাঠানোর উদ্দেশ্যই হলো মানুষ পৃথিবীতে ভালো কাজ করবে আর সকল প্রকার অশ্লীলতা, অন্যায়, অবিচার, তথা ঘৃণ্য কাজকর্ম থেকে শুধু বিরতই থাকবে না বরং অন্যায়-অসুন্দরের বিরুদ্ধে বিরতিহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। কিন্তু মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার দেয়া সে জ্ঞানকে উল্টো পথে কাজে লাগায় এবং দাম্ভিকতাবশত সে আত্মগর্ব তথা আত্মাহংকারে লিপ্ত হয়ে বিশ্বকে অগ্নিময় অশান্তির আবাসস্থল বানিয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘মানুষকে এমন জ্ঞান তিনি দিয়েছেন, যা সে জানতো না। না, মানুষ কী মনে করে এ কারণে যে, সে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেখতে পায়।’ (সূরা আল আলাক : ৫-৬)।
বর্ণিত আয়াতগুলোয় যে বিষয়টির প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা হলো মানুষ নিজেকে যতই বড় বা শ্রেষ্ঠ মনে করুক না কেন, মহান রাব্বুল আলামিনের হুকুম পালনের ক্ষেত্রে সে যদি শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় না দিতে পারে, তাহলে তার স্থান সর্বনিম্নে ও সে সর্বনিকৃষ্ট ঘৃণার পাত্র। এ মর্মে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমি মানুষকে অতীব উত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করেছি। পরে আমি তাকে উল্টো ফিরিয়ে সর্বনিম্নে পৌঁছিয়ে দিয়েছি সেই লোকদের ব্যতীত, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করতে থেকেছে, তাদের জন্য অশেষ শুভ প্রতিফল রয়েছে।’ (সূরা আত তীন: ৪- ৬)। পবিত্র কালামুল্লাহর এ ঘোষণা থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে, মানুষ এক ....বিস্তারিত
দাওয়াহ-এর গুরুত্ব
॥ মো. হাসিম আলী ॥
‘দাওয়াহ’ ও ‘তাবলিগ’ উভয়ই আরবি শব্দ। শব্দদ্বয় ভাবার্থের দিক দিয়ে প্রায় কাছাকাছি। উভয় শব্দের ব্যবহারই পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়। ‘দাওয়াহ’ অর্থ ডাকা, আহ্বান, আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ, প্রচার, প্ররোচিত করা, অনুপ্রাণিত করা, উৎসাহিত করা ইত্যাদি। এর সমার্থক শব্দ হলো ওয়াজ, নসিহত, তাবলিগ, এরশাদ, জিকর, বাশারাত, ইনযার, হিস্সু, ইবাদত, দোয়া। বিশিষ্ট দাওয়াহ বিজ্ঞানী ড. আব্দুর রহমান আনওয়ারী বলেন, “যে আহ্বান ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি কর্তৃক গৃহীত বিজ্ঞান সম্মত ও শিল্প সঞ্জাত উপায়ে নির্দিষ্ট বিষয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করা, মেনে নেয়া এবং তাদের বাস্তব জীবনে চর্চার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পদ্ধতিগত সকল প্রচেষ্টা ও কার্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাই দাওয়াহ।” এ সম্পর্কে আরেক দাওয়াহ বিজ্ঞানী ড. এ কে এম নুরুল আলম বলেন, “দাওয়াহ হলো- সুনির্দিষ্ট পয়গাম বা লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পনা মাফিক বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টিকে আকৃষ্ট করার নিমিত্তে আহ্বান করা বা আবেদন পেশ করা।” তবে দাওয়াহ গবেষকগণ অনেক ক্ষেত্রে ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ’ করাকে দাওয়াহ নামে অভিহিত করেছেন।
মোটকথা, ‘দাওয়াহ’ ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। যেকোনো পথ বা মত কিংবা যেকোনো বিষয়ের প্রতি দাওয়াহ হতে পারে। কিংবা যেকোনো বিষয় গ্রহণ করার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করার অর্থে হতে পারে। আবার সে বিষয়টি ভালোও ....বিস্তারিত
মুসলিম সমাজে আলেমদের প্রভাব ও তার ফলাফল
॥ মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম ॥
(পূর্ব প্রকাশের পর)
কুরআনে ‘পানি’ অর্থে ‘মাউন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৬৩ বার। পানি থেকে সব প্রাণীর সৃষ্টি। (২১:৩০, ২৪:৪৫, আল ফুরকান : ৫৪)। তারা কি লক্ষ করে না (আওয়ালাম ইয়ারাও) আমি উশর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করি। তার সাহায্যে উদগত করি শস্য (যারয়ান), যা থেকে আহার্য গ্রহণ করে তাদের আনআম এবং তারাও? তারা কি তবুও লক্ষ করবে না? (৩২:২৭)। এবং প্রাণবন সবকিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে (বিজ্ঞান), তবুও কি তারা ঈমান আনবে না (ধর্ম)? (২১:৩০)। অতঃপর তিনি তার (আদম আ.) বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস/পানি থেকে।(৩২:৮, ৮৬:৬)। আমি কি তোমাদের তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? (৭৭:২০)। এগুলো দুনিয়াবী সংক্রান্ত (বিজ্ঞান/সৎকর্ম) এবং প্রশ্ন করে সৃজনশীল চিন্তার আহ্বানও রয়েছে এখানে। মুত্তাকিদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে (ধর্ম) তার দৃষ্টান্ত তাতে আছে নির্মল পানির নহর (ধর্ম)।(৪৭:১৫)। সদা প্রবহমান পানি। (৫৬:৩১)। আর জাহান্নামিদের পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, যা তাদের নাড়ি-ভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন করে দেবে। (৪৭:১৫)। এগুলো আখিরাত (ধর্ম ও তাকওয়া) সংক্রান্ত এবং এখানে মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণের শ্রেষ্ঠ পথ ও পাথেয়ের পদ্ধতি বর্ণিত রয়েছে।
এভাবে প্রতিটি শব্দে দুনিয়া (বিজ্ঞান/সৎকর্ম) এবং আখিরাত (ধর্ম ও তাকওয়া) বিদ্যমান। মসজিদে সালাতের পর ঈমান ও আমলের যে দাওয়াত দানের কথা প্রকাশ পায়, তা কখনোই যথার্থ নয়। ক্ষুদ্র ....বিস্তারিত
সাংবাদিক লেখক মুহাম্মদ নূরে আলমের বই ‘ঋণমুক্ত দুনিয়া ও পাপমুক্ত পরকাল’
সাংবাদিক লেখক মুহাম্মদ নূরে আলমের ‘ঋণমুক্ত দুনিয়া ও পাপমুক্ত পরকাল’ নামের একটি বই আমার কাছে এসেছে। বইটির নাম দেখলেই বোঝা যায়, বইটিতে দুনিয়ার কল্যাণ এবং আখিরাতের মুক্তির নির্দেশনা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আরও সহজভাবে বলতে গেলে ইহকাল কীভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে এবং পরকালে কীভাবে শান্তি পাওয়া যাবে, সেই নসিহত দিয়েছেন লেখক বইটিতে। বইটি নিঃসন্দেহে আলোচনার অপেক্ষা রাখে। প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যে কলিগ হিসেবে আমাকে বইটি উপহার দিয়েছেন লেখক মুহাম্মদ নূরে আলম।
বইটি উল্টেপাল্টে দেখে এ উপলব্ধি হলো- ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় চলতে-ফিরতে, জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে, পারিবারিক, সামাজিক; এমনকি ধর্মীয় জীবনে মানুষ হিসেবে কার অধিকার কার ওপর বর্তায়, প্রথম পার্টে সেই কথাটি বোঝাতে চেয়েছেন বিশদভাবে। ঋণ বলতে লেখক অধিকারকে বোঝাতে চেয়েছেন। অপরদিকে পরকালে মুক্তির জন্য এ জীবনে কী করা উচিত, সে বিষয়টি টেনেছেন দ্বিতীয় ভাগে। এক্ষেত্রে তিনি বহু বিদগ্ধ ইসলামিক পণ্ডিত ব্যক্তিদের বইয়ের রেফারেন্স টেনেছেন। সবচেয়ে বাস্তব বিষয় হলো, বইটি এমন পরিমিতি বোধের পরিসীমায় রেখে প্রকাশ করেছেন- যাতে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। সেইসাথে বইটি কিনে পড়তেও অর্থের টানাপড়েন না তৈরি হয়।
বইটির ভূমিকায় চোখ বুলালেই বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হবে। এরপর প্রয়োজন অনুসারে বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে কিস্তি কিস্তি করে পড়ার সুযোগ রয়েছে; যা অনুধাবন করে, তা বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন ঘটানো ঈমানের দাবি ....বিস্তারিত
ব্যাঙ্গালুরু টু হাওড়া
॥ ফিরোজ আহমদ ॥
১৫ জানুয়ারি ২০২৪। ব্যাঙ্গালুরু থেকে হাওড়া যেতে আমরা দুরন্ত ট্রেনে উঠেছি। তিন দিনের ভোগান্তি দালালের যন্ত্রণায়। ১২০০ রুপির টিকিট কিনতে ২৭০০ রুপি শেষ করতে হয়েছে। এটা নন এসি স্লিপিং বেড। একতলা, দোতলা, তিনতলা করে প্রতি কক্ষে দুই পাশে ৬ জন এবং সামনের দুই বেডে দুজন- এ নিয়ে মোট ৮ জন যাত্রীর একটি কক্ষ। কিন্তু এ কী আশ্চর্য! আমাদের কক্ষেই বেডে, মেঝেতে গাদাগাদি করে শুয়ে-বসে রাত কাটালেন ১১ যাত্রী। রাতে উঠে ওয়াশরুমে যাবো। দোতলা থেকে নেমে সামনে পা বাড়াবো। কিন্তু সে ক্ষমতা আমার নেই। সামনে-পেছনে চোখ মেলে দেখি মেঝের ওপরে শত শত মানুষ- কেউ শায়িত, কেউ কাত হয়ে ঝিমাচ্ছে। কেউ বা আবার বসে আছে। অন্যান্য নারী, পুরুষ ও শিশুরা একের ওপরে অন্যজন, তার ওপরে আরেকজন আলুর বস্তার মতো পড়ে আছে। এসবে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। এসব দেখে মনে পড়ে গেল, ফিলিস্তিনের মুসলমানদের লাশের স্তূপের কথা।
দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর অনবরত সীমাহীন বোমা ও গুলির আগুনে মানুষ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। জ্বলজ্যান্ত মানুষকে ধরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেললো। ছটফটে মানুষ চিৎকার করছে। ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি করে সবাইকে লাশ বানিয়ে ফেলছে। এসব শত শত লাশ উন্মুক্ত স্থানে মাঠের মধ্যে স্তূপ করে ফেলে রাখে এখানে-সেখানে। কী নির্মম সেই হত্যাকাণ্ড।
আজকের এই ট্রেন জার্নিতে এমনভাবে যাত্রীসাধারণের কষ্টকর অবস্থা দেখে আমার মনে খুবই দুঃখ লাগল। এতো টাকা খরচ ....বিস্তারিত