ন্যায়ভিত্তিক বাজেট আসছে


৮ মে ২০২৫ ১৪:১৫

॥ উসমান ফারুক॥
বাজেট হচ্ছে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার বা দলিল। যে প্রতিশ্রুতি ক্ষমতায় যাওয়ার আগে নির্বাচনের সময় সাধারণ মানুষের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো। যেখানে জনগণ ও দেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। গত দেড় দশকে ভোট ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া সরকার জনগণের কথা ভেবে বাজেট তৈরি করেনি। বড় বাজেট, বড় প্রকল্প ও বড় লুটপাটÑ এ দর্শনে চালিয়েছে জাতীয় অর্থনীতি। এ কারণেই জন্ম হয় পর্দা থেকে শুরু করে বালিশকাণ্ড, যা এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও আলোচিত। ৩৬ জুলাই বিপ্লবের পর জনগণ সরাসরি দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিখ্যাত কয়েকজন বিদগ্ধ ব্যক্তিকে সরকার পরিচালনায় নিযুক্ত করেছে। এখন সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছে জনবান্ধব বাজেট। ফ্যাসিস্টের ধারা থেকে বের হয়ে জনবান্ধব ও বাস্তবমুখী বাজেট দেয়ার দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক রাখা, কর হার না বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো ও জনজীবন স্বস্তিদায়ক হয় এমন বাজেট দর্শন হতে হবে। বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দিতে হবে, এজন্য বাজেটের আকার আরো কমানো প্রয়োজন। ঘাটতি বাজেটের পরিবর্তে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করতে পারলে অতিরিক্ত দুই লাখ কোটি টাকা আদায় সম্ভব। ঢাউস বাজেট দেয়ার পর তা বাস্তবায়ন না করে জনগণের সঙ্গে তামাশা করার দিন শেষ হবে এবার। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কর্মকর্তাদের যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। এর আলোকেই পদোন্নতি নিশ্চিত করতে পারলে আমলাদের জবাবদিহি বাড়বে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে গঠিত সংস্কার কমিশনে আসা সুপারিশ বাস্তবায়নে বাজেটে বরাদ্দের দাবি করেছেন তারা।
বাজেটের আকার বাস্তবমুখী করার দাবি
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত শুরু করেছে সরকার। এবার সংসদ না থাকায় জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি সরাসরি বাজেট উপস্থাপন করবেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবারের বাজেটের দর্শন সম্পর্কে সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, খরচের মহোৎসব পালনের জন্য আগে বাজেট প্রণয়ন করা হতো। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে একটি বাস্তবভিত্তিক বাজেট তৈরি করা। বাজেটে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। আমরা ব্যয়ভিত্তিক নয়, একটি ন্যায়ভিত্তিক বাজেট তৈরির পরিকল্পনা করছি। কর ন্যায্যতা কায়েম করা না গেলে সমাজে দুর্বৃত্তায়ন হয়। আর দুর্বৃত্তরাই বার বার ক্ষমতায় আসে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ধারণা দিয়েছেন, আগামী বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার মতো। অর্থ উপদেষ্টাও সেই আকার নিয়ে কাজ করছেন। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকারের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল। প্রকল্পগুলো অনুমোদন হওয়ায় সেগুলোয় বরাদ্দ দিয়েছিল। সেখান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে সরকার। প্রকল্পের বাহুল্য বন্ধ, ঋণ ও বিদেশনির্ভরতা কমানোর পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নানা কারণে আগামী বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও ছোট হবে। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। তবে যেসব বড় প্রকল্প আছে, সেগুলোয় অর্থায়ন চলমান থাকবে।
সরকারের এ বাজেট পরিকল্পনাকেও বিলাসী মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আগের সরকার কল্পনার ওপর ভর করে বাজেট তৈরি করেছে। এটি করতে গিয়ে ঘাটতি বাজেট দিয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করেছে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে। টাকা না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে ছাপিয়ে দিয়েছে। এতেই বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। এজন্য কল্পনানির্ভর না হয়ে বাস্তবভিত্তিক বাজেট তৈরি করতে হবে। এ পরিমাণ বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে চার লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায়।
বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, আকারের বিবেচনায় আগামী বাজেটও উচ্চাভিলাষী হবে। এতে ঘাটতি বড় হবে। এটা কোনোভাবেই ছোট বাজেট হবে না, মূল্যস্ফীতি কমার বাজেটও হবে না; এমনকি বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার বাজেটও হবে না। সাত হাজার কোটি টাকা কমানো কোনো প্রভাব ফেলবে না বাজেটে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা দেখছি, সরকার ইতোমধ্যে বলেছে, তারা বাজেটের আকার ছোট করছে। কারণ আমাদের বুঝতে হবে, দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অর্থনীতি। বর্তমান সরকার সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনো তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি তো বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থ উপদেষ্টাও এ বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছেন। বাজেটের আকারের চেয়ে রাজস্ব বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও সেটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও অযৌক্তিক প্রকল্পগুলো বাদ দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের উদাহরণ হচ্ছে রূপপুরে রেলস্টেশনে বিলাসবহুল কক্ষ নির্মাণ। সেই উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে রূপপুর রেলস্টেশনের পাশে সাতটি বিলাশবহুল রুমের আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। অথচ সেখানে এখনো ট্রেনই যায় না। তাহলে এ প্রকল্পগুলোর তো কোনো প্রয়োজন নেই, ছিলও না। এগুলো সরকারকে বাদ দিতে হবে।
বাজেটে কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, বিনিয়োগের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চাকরির বাজার সৃষ্টি, যা বেসরকারি খাত ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা সরকারকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন।
অগ্রাধিকার পাচ্ছে জনস্বস্তি
বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি ফ্যাসিস্ট সরকারের শেষ ৫ বছরের সময়ে দুই অংকের ঘরে গিয়ে উঠেছিল। সরকারি হিসাবে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখালেও বাস্তবে তা ২০ শতাংশের ওপরে উঠে। এতেই খেটে খাওয়া মানুষের বড় একটি অংশ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সাধারণ মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মানুষ দুটি আয় তথা চাকরি শুরু করে। এতেও ব্যয় মেটাতে পারেনি বেশিরভাগ মানুষ। সেই মূল্যস্ফীতির জাঁতাকল থেকে বাঁচতে এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা ভাবছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগে ইতোমধ্যে কিছুটা সফলতা দেখেছে সরকার। সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় গত এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি আরো কমে হয় ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এটি গত ২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সামনের দিকে আরো কমবে বলেই মনে করছে সরকার। এতদিন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও আওয়ামী লুটেরাদের কারণে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হয়নি।
সচিবালয়ে বাজেট বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি (নিয়ন্ত্রণকে) প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট করতে যাচ্ছি। এছাড়া নজর থাকবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জ্বালানি সাশ্রয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বাজেটে। চাইব মানুষের জীবনযাত্রা যেন সহজ হয়।’
কর্মসংস্থানে গ্রামকে অগ্রাধিকার
এবারের বাজেটে ঢাউস আকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বদলে গ্রামীণ কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরিকল্পনা করে সাজানো হচ্ছে। ছোট ছোট প্রকল্প নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যেখানে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। এজন্য এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
রাজস্ব আদায় বড় চ্যালেঞ্জ
সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। এটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে এনবিআর চার লাখ কোটি টাকা আদায় করতে ঘাম ঝরাচ্ছে। তারপরও পারছে না। এখন বাড়তি টাকা আদায় করতে হলে তো সরকারকে কোনো না কোনো খাতে বাড়ানোর দিকে যেতে হতে পরে। বা কোথাও থেকে ভর্তুকি সুবিধা তুলে নিতে হবে।
প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের নিচে রাখা হবে। আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে ইতোমধ্যে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে থাকবে।
বাড়ছে না করহার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে, যা চলতি বাজেটে ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্য কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ টাকা, কিন্তু আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা, অর্থাৎ ২১ শতাংশ।
অবশ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে, করহার বাড়াবে না। ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়ানো হতে পারে। এটি করা হলে, ব্যক্তিগত আয়কর দিতে মানুষ উৎসাহিত হবে বলে মনে করছে সরকার।
বাজেটের আকার আরো কমানোর দাবি
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রাজস্ব আয় চার লাখ কোটি টাকা করতেই ঘাম ছুটে যায়। সে বিবেচনায় আগামী বাজেটও উচ্চাভিলাষী হবে। এতে ঘাটতি বড় হবে। এটা কোনোভাবেই ছোট বাজেট হবে না, মূল্যস্ফীতি কমার বাজেটও হবে না; এমনকি বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার বাজেটও হবে না। তিনি বলেন, সাত হাজার কোটি টাকা কমানোর কথা বলা মানে হচ্ছে, কল্পনার সঙ্গে কল্পনার তুলনা করা। অনেকটা এরকম, আগের সরকার চাঁদে যাওয়ার কথা বলেছিল, এখন বলা হবে মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার কথা।
তিনি বলেন, এবার বাজেটের আকার ছোট হোক, সেটা আমরা বলেছি। কারণ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়ে বাজেট বড় করা রাজনৈতিক সরকারের কাজ। এ সরকারের তো সেই ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে সরকার চাইলেই ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতির দিকে নজর দিতে পারে। পাশাপাশি যেদিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন সেটা হলো, সম্প্রতি সিপিডি তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, ২০২৩ সালে দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে অর্থাৎ এ রাজস্ব সরকারের পাওয়ার কথা ছিল। সেটা কীভাবে পাওয়া যাবে, সেই পথ দেখতে হবে। সব পাওয়া না গেলেও যদি অর্ধেকও পাওয়া যায় অর্থাৎ এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, সেটাও তো বাজেটের বড় একটা অংশ।
বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয় পরিকল্পনার ২৮ শতাংশ। গত আট মাসে মূল বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের প্রায় ৪৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এভাবে বাস্তবায়ন হার আট মাসেও বাজেটের অর্ধেকের কম হয়েছে। অর্থবছরের মূল বাজেট সময়মতো যৌক্তিক বাস্তবায়ন তো দূরের কথা, সংশোধিত বাজেটও অর্ধেক বাস্তবায়ন হয়নি।
সরকারের তথ্যানুযায়ী, এ সময়ে বাজেটের পরিচালন ব্যয় তথা কর্মচারীদের পেছনে ব্যয় ১৮ শতাংশ বেশি হয়েছে। জনগণের কাজ না করলেও নিজেদের সুযোগ-সুবিধার পুরোটুকু নিয়েছে কর্মচারীরা। যদিও উন্নয়ন ব্যয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮.৬১ শতাংশ কম হয়েছে।
বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজেট বাস্তবায়ন বরাবরই কমছে। প্রশাসনিক অদক্ষতা ও অপচয় এর বড় কারণ। এজন্য আমলাদের পদোন্নতি দেয়ার বেলায় মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতাকে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। যারা সরকারের কাজ বাস্তবায়ন করতে যত বেশি সময় নেবে, তাদের পদোন্নতি তত বেশি দেরিতে হবে। বাজেট ঘাটতি হলে সরকারকে ঋণ করতে হয়। আর ঋণ করলেই মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এজন্য রাজস্ব ফাঁকি রোধে এনবিআরে সৎ ও দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। ধনিক শ্রেণি ও ব্যবসায়ীদের কর রেয়াত সুবিধা বাতিল করে দিতে হবে।
সরকার চাইলে দুই লাখ কোটি টাকা আদায় করতে পারে অতিরিক্ত, যা সরকারের পাওনা হলেও ব্যবসায়ীরা ফাঁকি দিয়েছেন। এ ফাঁকি আদায় করতে পারলে ঘাটতি বাজেট দেওয়া লাগবে না। সরকারি তহবিল পরিচালনায়ও সরকারকে ঋণ নিতে হবে না ব্যাংক থেকে। যতদিন না সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে পারছে, ততদিন ঘাটতি বাজেট থেকে সরে আসা উচিত। এজন্য আগামী বাজেটে সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর একটি প্রতিচ্ছবি রাখা দরকার।