আওয়ামী অপশক্তি মোকাবিলায় প্রয়োজন সুদৃঢ় ঐক্য


৮ মে ২০২৫ ১৩:০৮

॥ জামশেদ মেহদী॥

গত ৪ মে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার অনতিদূরে গাজীপুরে নবগঠিত ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুুল্লাহর গাড়ির ওপর ৪ থেকে ৫ দুস্কৃতকারী হামলা চালিয়েছিল। গাজীপুর চৌরাস্তার ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যালে ট্রাফিকে আটকে থাকলে ৪-৫টি মোটরসাইকেলে ৪-৫ জন মুখোশধারী হাসনাতের গাড়িতে আক্রমণ করে। হাসনাত গাজীপুরে সাংগঠনিক কার্যক্রম সেরে ঢাকায় ফিরছিলেন। দৈবচক্রে তিনি গাড়ির পেছনের সিটে শুয়ে ছিলেন, যার ফলে ঘাতকদের আক্রমণে তার হাত রক্তাক্ত হয়। কিন্তু তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এদিকে হাসনাতকে আক্রমণের খবরটি দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দেন। তিনি ঐ বার্তায় সকলকে বলেন, হাসনাত আক্রান্ত। আপনারা যে যেখানে আছেন ছুটে আসুন এবং হাসনাতকে রক্ষা করুন। এনসিপির আর একজন সংগঠক হান্নান মাসুদও মোবাইল ফোনে এনসিপির সহকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি একই বার্তা দেন এবং তাদের হাসনাত রক্ষায় দ্রুত এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান।
এ খবর সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কানে পৌঁছালে তিনি ফোর্স নিয়ে আসেন এবং হাসনাতকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য বোর্ডবাজারে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে নিয়ে আসেন। অতঃপর গাজীপুর পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারের এস্কোর্টে তাকে ঢাকায় আনা হয়। ঐদিকে তার আহত হওয়ার খবর পেয়ে এনসিপির বাংলামোটর অফিস থেকে তাৎক্ষণিক একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও একটি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে রাজু ভাস্কর্যে মিলিত হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান রাতেই প্রদত্ত এক বিবৃতিতে দুষ্কৃতকারীদের এ হামলার তীব্র নিন্দা করেন। ৫ মে সোমবার সন্ধ্যায় এ ভাষ্য লেখার সময় পর্যন্ত বিএনপির তরফ থেকে কোনো নিন্দা বা প্রতিবাদ জ্ঞাপক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
হাসনাতের ওপর কারা হামলা করল? এ হামলার কারণ কী? ঘাতকরা এ হামলার সাহস পেল কোত্থেকে? এ প্রশ্নগুলো আজ দেশের গণতন্ত্রকামী এবং বিবেকবান মানুষের মনকে আলোড়িত করছে। যারা এ হামলার প্রতিবাদ করেছেন, তারা সকলেই একবাক্যে বলছেন, এ হামলা করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের গুণ্ডারা। ‘আমার দেশের’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান গত ৫ মে সোমবার এক আলোচনা সভায় বলেন, ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া আদালতে তার ওপর যারা হামলা করেছিল সেই আওয়ামী ঘরানার ঘাতক চক্রই হাসনাত আব্দুল্লাহর ওপরও হামলা করেছে। যে কায়দায় মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করা হয়েছিল সেই একই কায়দায় হাসনাতের ওপরও হামলা করা হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছায় মাহমুদুর রহমান সে যাত্রায় বেঁচে যান। তার রহমতেই হাসনাত আব্দুল্লাহও এ যাত্রায় বেঁচে যান।
মাহমুদুর রহমান বলেন যে, তার ওপর আক্রমণের সংবাদ পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালকে ফোন করে বলেন, আপনারা মাহমুদুর রহমানকে বাঁচান। উত্তরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন যে, এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নাই। কারণ হুকুম এসেছে আরও ওপর থেকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপরে কে? অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ নন। তাহলে হাসনাতের ওপর হামলা করা হলো কার হুকুমে? এটি জানতে হলে কয়েকদিন আগে আপলোড করা বিতাড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিওক্লিপ শুনতে হবে। ঐ অডিওতে হাসিনা বলেন যে, এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত ২২৬টি মামলার ২২৬ জন বাদীর পরিচয় ও ঠিকানা পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তিনি ২২৬ জন বাদীকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছেন। এই ২২৬ জন বাদীকে হত্যার জন্য শেখ হাসিনা ভারতের নিরাপদ আশ্রয়ে বসে বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে বসে থাকা তার কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বিগত ৩ সপ্তাহে বেশ কয়েকটি অডিও আপলোড করেছেন। প্রতিটিতেই তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন এ কথাটি সকলেই জেনে গেছেন যে, ভারত এবং শেখ হাসিনার উসকানিতেই হঠাৎ বাংলাদেশের এখানে-সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল হচ্ছে। তার নির্দেশেই বাংলাদেশের একাধিক স্থানে এনিসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছেÑ শুধু এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপরেই এ হামলা হচ্ছে কেন?
আওয়ামী লীগ ৭০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি প্রাচীন দল। জন্মের পর থেকে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ সংগঠনসহ আওয়ামী বিরোধীদের ওপর হামলা করে গেছে। গুণ্ডামির মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে প্রভাব বিস্তারের রাজনীতির সূচনা করেছেন শেখ মুজিব। যারা বয়স্ক তারা জানেন, সেই পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিব চকবাজার, নাজিরা বাজার এবং কলতাবাজার থেকে মাস্তান এনে বিরোধীদের ওপর আক্রমণ করেছেন। তার হামলা থেকে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী সাবেক ন্যাপ নেতা সীমান্ত গান্ধী, খান আব্দুল গাফ্ফার খান, সিন্ধুর নেতা জিএম সৈয়দ, পশ্চিম পাকিস্তানের বামপন্থী নেতা মিয়া ইফতেখার উদ্দিনসহ সেই সময়কার বড় নেতারা আওয়ামী লীগের গুণ্ডামির শিকার হয়েছেন।
এনসিপির ওপর হামলার দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হলো, বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরে সবগুলো বিরোধীদল আওয়ামীবিরোধী আন্দোলন করলেও পুলিশের গুলি এবং আওয়ামী লাঠিয়ালদের হামলার মোকাবিলা করার সাহস কেউ দেখাতে পারেনি। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল হলেও আওয়ামী হেলমেট বাহিনীর সামনে পড়ার সাহস দেখাতে পারেনি। মানুষ তখন চাচ্ছিলেন, আওয়ামী লীগের এ রংবাজির বিরুদ্ধে সাহস করে কেউ ঘুরে দাঁড়াক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে একদল টগবগে তরুণ সেই দুঃসাহস দেখিয়েছিল। এ টগবগে তরুণদের নেতৃত্বে ছিলেন নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রমুখ। এরা সকলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। তাদের সহযোগী ছিল ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদল প্রভৃতি ছাত্র সংগঠন। বৈষম্যবিরোধীদের কাঁধে কাঁধ রেখে পুলিশ ও আওয়ামী মাস্তান বাহিনীর মোকাবিলা করেছেন নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, আকতার হোসেন প্রমুখ। ঐ আন্দোলনের সম্মুখসারিতে ছিলেন উমামা ফাতেমা প্রমুখ দুঃসাহসী ছাত্রী নেতৃবৃন্দ। ডিবি হারুনের নির্যাতনের শিকারও হয়েছিলেন নাহিদ, হাসনাত, সারজিস, আসিফ মাহমুদ প্রমুখ। এরা এমন কতগুলো স্লোগান দিয়েছেন এবং ইস্যু সামনে এনেছিলেন, যেগুলো ছিল জনগণের ভেতরে চেপে রাখা ক্ষোভের প্রতিধ্বনি। আওয়ামী লীগ, আওয়ামী ঘরানা এবং ভারতীয় প্রভুত্বের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলনজুড়ে ছিলেন উচ্চকণ্ঠ।
জুলাই বিপ্লব শেষ হয়েছে। বৈষম্যবিরোধীরা এবং নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ও আকতার হোসেনের দল তাদের আন্দোলনের ইস্যুগুলো এখনো সমুন্নত রেখেছেন। তাদের সমন্বয়ে গঠিত এনসিপি ভারতীয় প্রভুত্বের অবসান এবং আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আপসহীন।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর ৯ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের স্পিরিট বিএনপিসহ অনেক দল ধরে রাখতে পারেনি। তারা ফ্যাসিবাদ এবং ভারতীয় প্রভুত্ব চিরতরে নির্মূল করার পরিবর্তে দ্রুততম সময়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। সেই লক্ষ্যে বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের মহান আদর্শ বাস্তবায়নের পরিবর্তে নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। তাই জামায়াত ও এনসিপিসহ অন্যান্য দল বলতে বাধ্য হচ্ছে, সিস্টেমের পরিবর্তন না করে শুধু কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আন্দোলন হয়নি।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ফসল হলো ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে বাস্তবায়নের জন্য ড. ইউনূস ১১টি কমিশন করেছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঐসব কমিশনের শ্রম পণ্ডশ্রমে পরিণত হতে যাচ্ছে। বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের যতগুলো প্রধান সংস্কার প্রস্তাব রয়েছে, তার প্রায় সবই প্রত্যাখ্যান করেছে। দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, সংসদীয় দলের নেতা এবং রাজনৈতিক দলের নেতা হওয়ার বিরোধিতা করেছিল সংস্কার কমিশন। সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি এবং তার জোটসঙ্গীরা। সাংবিধানিক কাউন্সিল মানতে রাজি নয় তারা। তারা সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব অস্বীকার করেছে। গণভোট, গণপরিষদ নির্বাচন, মুজিববাদী সংবিধানের পরিবর্তে নতুন সংবিধান রচনা প্রভৃতি সব বিষয় তারা দ্বিমত পোষণ করেছে। এর আগে ফ্যাসিবাদে চিহ্ন অপসারণের জন্য হাসিনার সিলেকশন বর্তমান প্রেসিডেন্টের অপসারণের বিরোধিতা করেছে। অতঃপর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেও অস্বীকার করেছে।
ওরা সবার আগে নির্বাচন চায়। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, শিবির, জামায়াত ও কয়েকটি ইসলামী দল আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে জুলাই চার্টার ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন। সেটিও বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীরা বিরোধিতা করেছে। ড. ইউনূস বলেছেন, জুলাই চার্টার প্রণীত ও ঘোষিত হওয়ার পর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সেই জুলাই চার্টার প্রণয়ন করার ব্যাপারেও অনীহা লক্ষ করা যাচ্ছে।
১৪০০ শত ছাত্র-জনতার রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। কিন্তু এর মধ্যেই আন্দোলনের অংশীজনদের মধ্যে বিরোধ প্রবল। আওয়ামী লীগ যে দখলবাজি এবং চাঁদাবাজির ইতিহাস গড়েছিল, সেই ইতিহাস এখন অন্যরা কব্জা করেছেন।
এ অনৈক্যেরই সুযোগ নিচ্ছে ঘৃণিত স্বৈরাচার হাসিনা এবং ভারতে অবস্থানকারী প্রায় ১ লাখ আওয়ামী ঘরানার নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ। আন্দোলন রচনা এবং আন্দোলন দমন করায় ভারত একটি বড় ফ্যাক্টর। জনরোষ এবং প্রশাসনের আইনি ব্যবস্থা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য মুহূর্তেই আওয়ামী লীগ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে এবং সেখানে তারা আহার ও বাসস্থান পায়। কিন্তু সেই সুযোগ বিরোধীদলগুলোর নেই। অনৈক্যের ফলে বিপ্লবের শক্তিগুলো দুর্বল হয়েছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। তাই তারা মনে করছে যে, আন্দোলনের শক্তিগুলোর ওপর আঘাত করার এখনই সময়। এদের মধ্যে এনিসিপি, শিবির প্রভৃতি সংগঠন ভারত এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ব্যাপারে আপসহীন, দুঃসাহসী এবং লড়াকু। তাই হাসনাতদের ওপর এ আক্রমণ।
আজ যদি হাসনাতদের ওপর আক্রমণ বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে পারে, তাহলে আগামীকাল অন্যরাও রেহাই পাবে না। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করা সব শক্তির সুদৃঢ় ঐক্য। ভারত এবং আওয়ামী অপশক্তিকে মোকাবিলা করার জন্য বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং এই তিন দলের মিত্রদের মাঝে লৌহকঠিন ঐক্যের প্রয়োজন। অন্যথায় আগামী ১ বছরের মধ্যে তাদের মোকাবিলা করতে হবে ভারতের প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগকে। বিডিআর ম্যাসাকারে অন্তত ৪শত ভারতীয় অনুপ্রবেশ করেছিল। জুলাই বিপ্লব দমনেও দমনকারীদের অনেককে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে গিয়ে যদি হিন্দি ভাষার আওয়াজ পাওয়া যায়, তাহলে সচেতন মহল বিস্মিত হবেন না।