আমরা বিগত ১৭ বছর আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে বসবাস করেছি : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান


৪ জুন ২০২৫ ১৩:০১

আহসানুল হক জুয়েল, কিশোরগঞ্জ : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমরা বিগত ১৭ বছর আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে বসবাস করেছি। ইনশাআল্লাহ, দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাবে। এ সময় তিনি কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
গত শনিবার (৩১ মে) সকাল ৯টায় কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মো. রমজান আলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সেক্রেটারি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক ড. মাওলানা মো. ছামিউল হক ফারুকী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাবেক জেলা আমীর অধ্যক্ষ তৈয়বুজ্জামান, অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম, নেত্রকোনা জেলা আমীর সাদেকুর রহমান হারিছ, জামালপুর জেলা আমীর মাওলানা আবদুস সাত্তার, শেরপুর জেলা আমীর মাওলানা হাফিজুর রহমান, কিশোরগঞ্জ জেলা নায়েবে আমীর ঐতিহ্যবাহী হয়বতনগর আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. আজিজুল হক, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম, ময়মনসিংহ মহানগর সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, নারায়ণগঞ্জ জেলা নায়েবে আমীর আব্দুল কাইয়ুম, কিশোরগঞ্জ জেলা সহকারী সেক্রেটারি প্রচার বিভাগের দায়িত্বশীল সাংবাদিক শামছুল আলম সেলিম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মো. আজিজুল হক, সাবেক সভাপতি ফাইজুল হক উজ্জ্বল, কিশোরগঞ্জ জেলা আদর্শ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান, কটিয়াদী উপজেলা আমীর কটিয়াদী উপজেলা আমীর অধ্যাপক মোজাম্মেল হক জোয়ারদার, বাজিতপুর উপজেলা আমীর ডাক্তার ইয়াকুব আলী, নিকলী উপজেলা আমীর মো. আবুল হোসাইন, ভৈরব উপজেলা আমীর মাওলানা কবির হোসেন, ইটনা উপজেলা আমীর মাওলানা আবুল হোসাইন, তাড়াইল উপজেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ সিফাত উল্লাহর পিতা হাফেজ মাওলানা নূরুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন, বাবু কৃষ্ণ চন্দ্র বসাক, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি খালেদ হাসান জুম্মন, সদর জামায়াতে ইসলামী আমীর কারী নজরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসান আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা বিগত ১৭ বছর আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগে বসবাস করেছি। হত্যা, গুম, নির্যাতন, জুলুম কি-না করেছে বিগত আওয়ামী লীগের সরকার। দুর্নীতি করে টাকা পাচার করা, গুম, খুনসহ নিরপরাধ মানুষগুলোকে মিথ্যা অপরাধী সাজিয়ে ফাঁসি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের বিচার একটি সুবিচার হয়েছে। যারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে, ওই দল ও তাদের সঙ্গে যারা জড়িত সকলের বিচার হওয়া উচিত। আমরা সরকারকে বলবো, আগে বিচার হবে, এরপর সংস্কারের পর নির্বাচন হতে হবে। যারা বিচার চায় না, যারা শুধু তাড়াতাড়ি নির্বাচন চায়, সংস্কার চায় না। আপনারা বলেন, আগের মতো যদি নির্বাচন হয়, এ নির্বাচনের দরকার আছে? ওইগুলো তো নির্বাচনই হয়নি। আপনারা জানেন, ২০১৪ সালে হলো বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হলো এবং ২০২৪ সালে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়ে ডামি নির্বাচন করেছে। এই সময় তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন চায়, তবে যেনতেন নির্বাচন চায় না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের ৩টি দাবি। বিচার, সংস্কার তারপর জাতীয় নির্বাচন। দেশে লুটপাট করছে কারা, জামায়াতে ইসলামী কোনো লুটপাট, দখলদারির সাথে জড়িত নেই। এ কারণে আল্লাহর আইন মেনে আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, যারা আজকে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দিতে চান। আন্দোলনের হুমকি দেন। দেশকে অচল করে দেওয়ার কথা বলছেন। সাড়ে ১৫ বছরে তারা এ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে থেকে একটা বালুর ট্রাক সরানোর ক্ষমতা দেখাতে পারেননি। আমাদের তরুণ যুবসমাজ একটি স্বপ্ন দেখেছিলো অধিপত্যবাদমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে উঠবে। ১৬৫১ জন ছাত্রছাত্রী ও জনতার রক্তের বিনিময়ে। ৩০ হাজার ছাত্র, যুবক, শিশু-কিশোর, তরুণ ও বৃদ্ধ’র আহত ও পঙ্গুত্ববরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজকে এ পর্যায়ে এসেছে। কোনো ক্রেডিট যদি দিতে হয় ক্রেডিট হলো তাদের। আমরা তোদের সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি এবং তাদেরকে স্যালুট জানাই।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে এ দেশের বিচার ব্যবস্থাকে এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। অর্থনৈতিকভাবে দেশকে দেউলিয়া করেছে। বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করেছে। কেউ ভোট দিতে পারতো না। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ভোট দেওয়া শেষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক একটি গল্প বলেছিলেন, দশ বছর আগে এক লোকের স্ত্রী মারা গেছে। কিন্তু যতবার ভোট হয়, ততবার ভোটার লিস্টে তার নাম দেখে টিক চিহ্ন দেয়া, তিনি ভোট দিয়ে চলে গেছেন। ২০২৪ সালে ভোটের সময় লাঠি হাতে নিয়ে তিনি কেন্দ্রর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। লোকেরা জিজ্ঞাস করে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন। ভোট দেয়ার জন্য তো আমরাই যথেষ্ট। তিনি বলেন, আমি তো ভোট দিতে আসি নাই। আমি আসছি আমার জীবনসঙ্গীনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কারণ সে প্রত্যেক বছর ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে আসে। আজকে আমি আসছি তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। এই ছিল বাংলাদেশের ভোটের চিত্র। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে গত পরশু দিন এ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ধিক্কার দিয়েছে। তিনজন আপিল বিভাগের বিচারক তারা বলেছেন, আপনারা লির্ভারটি (আপনার স্বাধীন) আপনারা কী করছেন। জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই যে নির্বাচন ব্যবস্থার কবর রচনা করা হলো এ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ব্যতীত বাংলাদেশে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে সকল মৃত ব্যক্তিরা ভোট দিতে আসবে, জীবিত ব্যক্তিরা ভোট দিতে পারবে না। এ জন্যই আমরা বলেছি, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের গোটা আসমান এবং জমিনে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আমাদের মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় যে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন আমরা বাংলাদেশেও সেই রকম ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই। আমাদের বাংলাদেশ বিগত ৫৪ বছর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ বাংলাদেশে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতিতে সয়লাব করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তন্ত্র-মন্ত্র বাদ দিয়ে কুরআন হাদিসের আলোকে একটি ইসলামিক কল্যাণরাষ্ট্র বানাতে চাই। উপস্থিত জামায়াত কর্মীদের তিনি আরো বলেন, ঘুম এবং বিশ্রাম বাদ দিয়ে বাংলা দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে আল কুরআনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে এসে যদি শুনতে হয় ‘ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবো, থুতু মেরে ভাসিয়ে দেওয়া হবে।’ প্রস্রাব করে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। এটা দুর্ভাগ্যই শুধু নয়, এটা আরেক নতুন ফ্যাসিস্টের পদধ্বনি। এ বাংলাদেশের মানুষ নতুন ফ্যাসিস্টদের মোকাবিলা করবে। জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তে ভেজা বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিস্টদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও কটিয়াদী উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, কিশোরগঞ্জ ৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের জামায়াত প্রার্থী কর্নেল অব. ডা. জিহাদ খান, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের প্রার্থী এডভোকেট শেখ মো. রোকন রেজা, কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা আমীর অধ্যাপক মো. রমজান আলী, কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে সাবেক ছাত্রনেতা ও ভৈরব উপজেলা আমীর মাওলানা মো. কবির হোসাইন।
কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকে জেলার ১৩টি উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। কিশোরগঞ্জের সারা শহর মিছিলের নগরী এবং উৎসবমুখর নগরীতে পরিণত হয়। স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়েও সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বেলা ১টায় কর্মী সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনটি পরিচালনা করেন কিশোরগঞ্জ শহর আমীর আ ম ম মাওলানা আবদুল হক।