ঢাকা-সিলেট সড়কপথে যাত্রীদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে
৪ জুন ২০২৫ ১২:৫৮
আবদুল বাছেত মিলন, সিলেট : ঢাকা থেকে ৬ লেনের নির্মাণকাজে ধীরগতি ও ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতায় ঢাকা-সিলেট সড়কপথে যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে নির্মাণাধীন রাস্তার বেহাল দশায় দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এছাড়া ঈদুল আজহা সামনে রেখে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। এতে বেড়েছে যানজট। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকছে যানবাহন।
এ কারণে ঢাকা থেকে সিলেটে আসতে এখন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগছে। রাত ১১টায় মহাখালী থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস সিলেট পৌঁছেছে পরদিন দুপুর ১২টা থেকে ১টায়। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা বাসের সিলেট আসতে সময় লাগছে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত। ঈদযাত্রায় মহাসড়কের এ অংশে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট থেকে ঢাকায় যাওয়ার যে তিনটি মাধ্যম রয়েছে, সেগুলোয় রয়েছে চরম ভোগান্তি। ৬ লেনের কাজ চলমান থাকায় ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। গত এক যুগে এ সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। নির্মাণকাজের কারণে এমনিতেই বিভিন্ন স্থানে লেগে আছে তীব্র যানজট। এর মধ্যে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। ফলে যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙাচুরা থাকার কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনাও।
একজন যাত্রী শুক্রবার দিবাগত রাত ১০টায় সায়েদাবাদ থেকে রওনা দিয়ে সিলেট পৌঁছায় দুপুর সাড়ে ১২টায়। ঢাকা থেকে সিলেট আসতে যেখানে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগার কথা, সেখানে লাগছে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন এ পথের যাত্রীগণ।
গত ৩১ মে শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ ও সংস্কারকাজ ধীরগতিতে চলায় এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শুরু করে হবিগঞ্জ পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট। কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে শায়েস্তাগঞ্জে আসার পর সেখানেও দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। ভৈরব, আউশকান্দি ও শেরপুর টোলপ্লাজাও এ যানজটের অন্যতম কারণ বলে অভিযোগ চালকদের। টোল দেয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কয়েকজন যাত্রীর অভিযোগ ঢাকা-সিলেট রুটে গাড়ির চাপ অনেক বেড়েছে। যানজট লাগলেই হাজারো গাড়ির জটলা লাগে। সহজেই এ যানজট যায় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট রুটে বিমানের টিকিট মূল্য অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় টিকিট মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্স কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-সিলেট আকাশপথে বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও ইউএস বাংলা, নভোএয়ার, এয়ার এস্ট্রো ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু প্রতিটি ফ্লাইটের টিকিট মূল্য এখন বেশি। এ নিয়ে বিরক্ত সিলেটের যাত্রীগণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়কপথে যানজট বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা-সিলেট রুটের ফ্লাইটে এখন যাত্রী চাপ অনেক বেড়েছে। ফলে শেষ সময়ে এসে যারা টিকিট কেনেন তারা উচ্চমূল্যে টিকিট কেনেন। তবে আগে টিকিট কিনলে সেই মূল্য অনেক বেশি কমে আসবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি কেবল সিলেটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। গোটা বিশ্বেই মৌসুমে টিকিটের দাম বেড়ে যায়। তবে কয়েকদিন আগে টিকিট ক্রয় করে রাখলে যাত্রীদের শেষ সময়ে এসে বেশি অর্থ দিয়ে টিকিট কেনার ভোগান্তি কমে আসবে।
এদিকে সড়কপথে যানজটের কারণে যাত্রী চাপ বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের ট্রেনের টিকিট এখন সোনার হরিণ। অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। যাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ে অনলাইলে টিকিট মিলে না। ওইসময়ে সার্ভার ডাউন থাকে। এতে করে টিকিট কেনা সম্ভব হয় না। কাউন্টারে গেলেও টিকিট মিলে না। তবে ট্রেনের কালোবাজারিরা আগের মতোই সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাছে দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে টিকিট মিলে। ট্রেনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কালোবাজারিদের সংযোগ রয়েছে। বেশিরভাগ টিকিটই কালোবাজারিরা অনলাইনে বুকিং করে রাখে। পরে সেগুলো বেশি দামে বিক্রি করে।
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিম সাপ্তাহিক সোনার বাংলাকে বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিরসনে আমরা পরিবহন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কার্যত কোনো ফলাফল মিলেনি। শিগগিরই আমরা আবারো ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করবো।
তিনি বলেন, চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ সায়েদাবাদ কিংবা ফকিরেরপুল থেকে গাড়ি ভৈরব আসতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। আশুগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতের বেলা ট্রাফিক না থাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বর্তমান আধুনিক যুগে এসেও ঢাকা থেকে সিলেটে আসতে-যেতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগা খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
একই সাথে ৬ লেনের কাজে ধীরগতি এর ওপর বৃষ্টির কারণে নির্মাণাধীন সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রাস্তা সংকুচিত হচ্ছে। ট্রাফিকিং ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় সড়কে শৃঙ্খলা নেই। সিলেটের কদমতলী টার্মিনাল থেকে শুরু করে চালক ও পরিবহন শ্রমিকরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লোক নিয়োগের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখছে। এভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ভোগান্তি কমার সম্ভাবনা নেই। তবে ট্রাফিকিং সিস্টেম ভালো থাকলে দুর্ভোগ কিছুটা কমবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।