সংবাদ শিরোনামঃ

ভারতকে করিডোর দেয়া হয়েছে ** সরকারের পতন ঘটাতে ঢাকা যেতে হবে ** কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের অন্যায় অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের জবাব দেয়া হবে ** বিজয়ের ব্যাপারে সবাই আশাবাদী ** রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ভুলে গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিন ** যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে খালেদা জিয়া : এপিঠ-ওপিঠ ** একান্ত অনুভবে আব্দুল মান্নান তালিব ** নাব্য সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুট ** ওভারলোডিং যানবাহন চলাচলে মহাসড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে **

ঢাকা শুক্রবার ৬ কার্তিক ১৪১৮, ২২ জিলকদ ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০১১

অধ্যাপক আশরাফ জামান
॥ এক ॥

গত  ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ২০১১ বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ইসলামী চিন্তাবিদ সুস্থ চিন্তাধারার লেখক ও সংগঠক মওলানা আব্দুল মান্নান তালিব এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার আহ্বানে চলে গেলেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হলো যা কোনোদিন পূরণ হওয়ার নয়।

একজন আদর্শবাদী সাহিত্যিক এবং সংগঠক হিসেবে সারাজীবন তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন বিশ্রাম নিতে পারেননি। মহান করুণাময় এ জন্যই বোধ হয় তাকে চিরবিশ্রাম দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমীন।

তালিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার দীর্ঘ চৌত্রিশ বৎসর পূর্বে পরিচয় হয় তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সম্ভবত দৈনিক সংগ্রাম অফিসে এ পরিচয়। তারপর থেকে ঘনিষ্ঠতা। এর কিছুদিন পর তিনি তখন এলিফ্যান্ট রোডস্থ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারে বসতেন তখন আমি গাজীপুর জেলার জামালপুর কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি করি। সে সময় তিনি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কলম’ ও মাসিক পৃথিবী পত্রিকা দু’টি সম্পাদনা করতেন। ‘কলমে’ আমার লেখা কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশ করতেন। কয়েকটি লেখা প্রকাশ পেলে ঢাকায় এসে তার সম্মানি নিয়ে যেতাম। সে তরুণ বয়সে লেখার জন্য সম্মানি পাওয়া আমার কাছে বিরাট পাওয়া ছিল। সম্ভবত সময়টা ৮২, ৮৩ সাল হবে। তিনি আমাকে লেখা পাঠানোর তাগিদ দিতেন উৎসাহ দিতেন ভালো লেখার জন্য।

তালিব ভাইয়ের কাছে দেশের ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ধারা সম্পর্কে অনেক কিছু শুনতাম। একদিন আমি তাকে সাহিত্য সংগঠন তৈরির ব্যাপারে প্রস্তাব রাখলাম। বললাম, তালিব ভাই, দেখুন দেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে ইসলামপন্থীদের কোনো সাহিত্য সংগঠন নেই। অথচ বামপন্থী লেখক শিবিরসহ অনেক সংগঠন আছে। নাস্তিক্যবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনে আমরা যেতে পারি না।

পরবর্তী সময়ে বাংলা সাহিত্য পরিষদ গঠিত হলো। অবশ্য আমি দূরে থাকার জন্য যোগাযোগ রাখতে পারিনি। তবে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হলো। আমি একজন সদস্য হিসেবে সুদূর টাঙ্গাইল থেকে এসেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতাম।

১৯৮৭ সালের শেষের দিকে টাঙ্গাইলে একটি কলেজে চাকরির উদ্দেশ্যে চলে গেলাম। মাঝেমধ্যে ঢাকায় এসে মগবাজারে সংগ্রাম ও সোনার বাংলা অফিসে যেতাম লেখার সম্মানি বিলও লেখা দেয়ার জন্য। এ সময় তালিব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম বাংলা সাহিত্য পরিষদ অফিসে। তিনি ছিলেন সাহিত্য পরিষদের পরিচালক। আমাকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করতেন তালিব ভাই। আমি তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ ছিলাম। তার সাক্ষাতে কোনোদিন চা-বিস্কুট বা অন্য কিছু না খেয়ে চলে আসছি মনে পড়ে না। এ গুণ দেখেছি মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মধ্যে। এক সময় সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গেছি তার সন্তোষের বাড়িতে। ভাসানী হুজুর কখনো কিছু না খেয়ে আসতে দেননি।

নিরহংকারী এই জ্ঞান তাপস অত্যন্ত ভদ্র, শান্ত ও বিনয়ী ছিলেন। বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, আরবী ও ফার্সি ভাষা জানতেন। তার রচিত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় দুইশত। আল্লামা ইকবালের কবিতার বঙ্গানুবাদ করেছেন। মওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদীর তাফহীমুল কোরআনের তরজমা করেছেন। তার পদ্য ও গদ্যের ভাষা অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল। সব জাতীয় লেখায় তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ।

॥ দুই ॥

সুসাহিত্যিক আব্দুল মান্নান তালিব ছিলেন সাহিত্য আন্দোলনের পথিকৃত। তার রচিত ও প্রদর্শিত সাহিত্যধারা গড্ডলিকা প্রবাহের মত নয় ছিল আদর্শভিত্তিক। এক সময়কার অনেক নবীন লেখক তার পরিচর্যায় ধীরে ধীরে পরবর্তীকালে লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমার মতো লেখকের তিনি ছিলেন শিক্ষক। সাহিত্য সাধনার পথিকৃত।

তালিব ভাই সাহিত্য সৃষ্টি সম্পর্কে অনেক মূল্যবান উপদেশ দিতেন। একটা ধারণা দিয়ে বলতেন, দেখুন গল্প, উপন্যাস এভাবে লিখুন। বলতেন, তার মধ্যে থাকবে গল্প এবং সমাজকে দিতে হবে নির্দেশনা। আমি উপন্যাস লিখি জেনে আমাকে উপন্যাস লেখার স্টাইল ও বক্তব্য কি হওয়া উচিত এমন ধারণা দিলেন।

তালিব ভাই বললেন, আপনি কলকাতার লেখক সমরেশ মজুমদারের ‘কাল পুরুষ’ বইটি পড়–ন। এর নায়ক অর্ক চরিত্রটি লেখক কত সুন্দরভাবে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেছেন লক্ষ্য করুন। সেখানে সমাজের চিত্র অপূর্ব দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। ভাষার ব্যাপারে শরৎচন্দ্রের সহজ সরল ভাষা ব্যবহারের পরমার্শ দিয়েছেন।

তালিব ভাইয়ের সাহিত্য সম্পর্কিত উপদেশ শুনে বুঝতে পারতাম তার অগাধ পাণ্ডিত্য সম্পর্কে। উপন্যাস না লিখলেও ইংরেজি ও বাংলা উপন্যাস সম্পর্কে অসাধারণ জ্ঞান রয়েছে তার। একদিন আমাকে একটি উপন্যাস লেখার উপকরণ বা ধারণা দিলেন। বললেন, ভালো হলে তা বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশ করবেন। নতুন সূর্য নামে একটি উপন্যাস লিখে তার পাণ্ডুলিপি দিয়েছিলাম।

আমার লেখা প্রকাশিত প্রতিটি গ্রন্থের একটি করে শুভেচ্ছা কপি তালিব ভাইকে উপহার দিতাম। আমার প্রকাশিত অধ্যাপক নামক উপন্যাসটি পড়ে প্রশংসা করেছিলেন তালিব ভাই।

॥ তিন ॥

তালিব ভাই ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও সদালাপী। তার অফিসে গেলে লেখার কাজ বন্ধ করে কথা বলতেন। কখনো একটু বিরক্ত হতে দেখিনি। আমি তাকে কখনো অধীনস্থদের সঙ্গে জোরে বা ধমকের সুরে কথা বলতে শুনিনি। বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের দূরবস্থা, ইসলামী আন্দোলনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তালিব ভাই অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভমূলক প্রবন্ধ লিখতেন। মাসিক পৃথিবী, দৈনিক সংগ্রাম, সোনার বাংলাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ হতো। তিনি ছিলেন নিরলস কলম সৈনিক। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তিনি লিখে গেছেন।

সাহিত্য সম্পর্কিত আলোচনাসভা ও সেমিনারে তালিব ভাই গঠনমূলক বক্তব্য পেশ করতেন। মাত্র তিন মাস আগে সুসাহিত্যিক অধ্যাপক মতিউর রহমান এর জন্ম দিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য শুনলাম। অনুষ্ঠান শেষে দেখা হলো কুশল বিনিময় হলো। এটাই ছিল আমার শেষ দেখা। দুরারোগ্য কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তিনি এ ধরাধাম থেকে চলে গেলেন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।