সংবাদ শিরোনামঃ

ভারতকে করিডোর দেয়া হয়েছে ** সরকারের পতন ঘটাতে ঢাকা যেতে হবে ** কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের অন্যায় অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের জবাব দেয়া হবে ** বিজয়ের ব্যাপারে সবাই আশাবাদী ** রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ভুলে গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিন ** যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে খালেদা জিয়া : এপিঠ-ওপিঠ ** একান্ত অনুভবে আব্দুল মান্নান তালিব ** নাব্য সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুট ** ওভারলোডিং যানবাহন চলাচলে মহাসড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে **

ঢাকা শুক্রবার ৬ কার্তিক ১৪১৮, ২২ জিলকদ ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০১১

অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান
পাতলা, একহারা, রোগাটে চেহারা। সদা স্মিত হাসি স্নিগ্ধোজ্জ্বল মুখ। মাথাভর্তি ঘন কালো কুচকুচে চুল, মুখভর্তি দাড়ি। শান্ত, নির্বিরোধ, সৌম্য  কান্তির একজন সদালাপী ব্যক্তি। নিম্নস্বরে কথা বলেন। সকলের সাথেই চলেন-ফেরেন কিন্তু কারো সাথেই তার কোনো বিরোধ নেই। অনেক বিষয় সম্পর্কেই তার জানা-শোনা, কথা বলায় পারঙ্গম, রূপ-রস-গন্ধে ভরা পৃথিবীর প্রতি নির্মোহ একজন ব্যক্তি অথচ পৃথিবী সম্পর্কে মোটেই নির্বিকার নন।

বার-তারিখ সঠিক মনে নেইÑউনিশ শো ষাট সাল। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম. এ কাসের ছাত্র। থাকি পুরনো ঢাকার ৩০ নং আশেক লেনে। সেবার ঢাকাতেই ঈদ করেছি, তাই বাড়িতে বাবা-মা- ভাইবোন ও নিকটজনদের আনন্দঘন সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। ঈদের নামায পড়ে ঘরে ফিরে মনে হলো বাইরে বেরিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে আসা যাক। প্রথমেই গেলাম ১৩ নং কারকুন বাড়ি লেনে। যে সময়কার কথা বলছি, সে সময় ঐ বাড়িটি নানা কারণে ছিল বিখ্যাত ও বিশেষ আকর্ষণীয়। ইসলামী আন্দোলনের একমাত্র মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক জাহানে নও’ ওখান থেকেই প্রকাশিত হতো, ইসলামী আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল ওটা। সেখানে গিয়ে দেখি বিশাল বাড়িটা একেবারে শূন্য, যেন খাঁ খাঁ করছে। ভাবলাম আসাটাই বৃথা হলো, কারো দেখা পাওয়া যাবে না। ইতঃস্তত পায়ে দোতলা টিনের ঘরে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। দেখি, দরজা খোলা। আশা-নিরাশার দোদুল্যমানতায় মন দোলায়মান। দরজার ফোকর দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেখি নিবিষ্ট মনে তিনি খচ্ খচ্ করে লিখে কাগজের পাতা ভর্তি করে চলেছেন। আমার আগমনে তার লেখায় ছেদ পড়লো। আমি অবাক-বিস্ময়ে তার দিকে তাকালাম। বিস্ময়ের ঘোরে বোধ করি তাকে সালাম দিতেও ভুলে গেলাম। তিনিই আমাকে সালাম জানিয়ে স্মিত হাস্যে সম্ভাষণ জানালেন। চাদরটা একটু নাড়া-চাড়া করে বিছানার এক পাশে আমাকে বসার জায়গা করে দিলেন।

বিস্ময়ের ঘোর তখনো আমার কাটেনি। অনেকটা অবিশ্বাসের সুরে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তালিব সাহেব, এ ঈদের দিনে আপনি একা একা ঘরে বসে লেখালেখি করছেন?’

‘কী আর করবো, ঈদের নামায পড়েছি এখন নিরিবিলি লেখাপড়া করছি। লেখাপড়ার জন্য এ নির্জনতা তো খুবই ভালো। তাছাড়া হাতে কিছু কাজ আছে। ছুটির দিন ছাড়া তো অবসর নেই। ভাবলাম এ ঈদের ছুটিতেই কাজটা সেরে ফেলি।’

আমার দম বন্ধ হবার জোগাড়। মনে হচ্ছিল ছুটে বেরিয়ে আসি ঐ নিরানন্দ নির্জনপুরী থেকে আনন্দ- কোলাহলময় খোলা পৃথিবীর মুক্ত আলো-হাওয়ায়। কিন্তু পারলাম না। তার স্মিত হাস্যময়, স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের  কোমল উষ্ণতা ক্রমে আমাকে আকর্ষণ করতে লাগলো। সে আকর্ষণ কি মায়ার, শ্রদ্ধার, ভালোবাসার না সহানুভূতির? আমি সঠিক বলতে পারবো না। হয়ত সব রকম অনুভূতির একটা মিশ্র যোগফল।

 à¦¯à§‡ সময়ের কথা বললাম সে সময় আব্দুল মান্নান  তালিব সাপ্তাহিক ‘জাহানে নও’ পত্রিকার সাব এডিটর। দিনরাত কাজ করেন। বেতন সত্তর টাকা। দায়িত্বের বোঝা অপরিসীম। বিপ্লবের ঝাণ্ডাবাহী আদর্শবাদী পত্রিকা। পয়সা নেই। কিন্তু পয়সার চিন্তা তার মধ্যে কখনো আছে বলেও মনে হয়নি। ১৩ নং কারকুন বাড়ির নিচের তলায়  ‘জাহানে নও’ পত্রিকার অফিস। উপর তলায় তিনি থাকেন। রাতদিন কাজ করেন। শোবার সময় হলে উপরে গিয়ে ঘুমান। এর কিছুদিন আগে তিনি এসেছেন লহোর থেকে। সম্পূর্ণ একা। আপনজনরা কেউ সঙ্গে আসেনি। জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলায়। আদর্শের সৈনিক হিসেবে মহানবীর (সা.) সুন্নত পালনার্থে তিনি হিজরত করেন প্রথমে লাহোরে, পরে ঢাকায়, ঢাকার সংখ্যাগুরু মুসলিম সমাজে ইসলামের কাজ নির্বিঘেœ করা যাবে বলে। পশ্চিমবঙ্গের ভাষা, জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির সাথেও এখানকার অনেক মিল রয়েছে, তাই এখানে তিনি কাজের অনুকূল পরিবেশ খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই ঢাকায় এসে তিনি এখানেই স্থায়ীভাবে থেকে গেলেন। ধীরে ধীরে এ সমাজের সাথে একাত্ম হলেন। শান্তিবাগের আর এক আদর্শবাদী ব্যক্তির একমাত্র কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার পরিবারের একজন হয়ে গেলেন। সেটাই হলো তার স্থায়ী ঠিকানা। ছেলেমেয়ে নাতি-নাতকুর নিয়ে ধীরে ধীরে নিরিবিলি শান্তির নীড় গড়ে উঠলো তার ওখানেই।

আমার সাথে যখন তার প্রথম পরিচয় তখন তিনি কবি আব্দুল মান্নান তালিব নামে খ্যাত। প্রচুর কবিতা লেখেন। মহাকবি ইকবালের ভাবশিষ্য। ইকবাল সম্পর্কে  তার প্রচুর পড়াশোনা। মাদ্রাসায় উচ্চ শিা লাভ করার ফলে আরবি, উর্দু, ফারসি ভাষায় তার যথেষ্ট দতা জন্মে। এসব ভাষায় নামকরা লেখকদের অনেকের লেখা কেতাবাদি তিনি পড়েছেন। পড়াশোনা, জানাশোনার প্রতি তার অদম্য আগ্রহ। বাংলা ভাষায়ও তিনি প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। কাব্য-চর্চার েেত্র তিনি ইকবাল ও ফররুখের অনুসারী। এ দুই মহান কবির দ্বারা তিনি অনেকখানি প্রভাবিত। এ দু’য়ের প্রভাবের অন্তরালে তার নিজস্ব স্বকীয়তাও জ্যোৎস্নালোকের মতো স্মিত হাসি ছড়ায়। পাঠকের মনে তা অমল মাধুর্যের গভীর দোলা সৃষ্টি করে।

আব্দুল মান্নান তালিবের জন্ম ১৯৩৬ সনে ১৫ মার্চ চব্বিশ পরগণা জেলার অর্জুনপুর গ্রামে। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৫১ সালে শিউড়ির ‘জিয়াউল ইসলাম’ পত্রিকায়। স্বরচিত কবিতা ছাড়া কাব্যনুবাদে তার যথেষ্ট পারদর্শিতা পরিলতি হয়। লাহোর থাকাকালে নজরুল ইসলাম ও ফররুখ আহমদের বহু কবিতা উর্দু ভাষায় অনুবাদ করে সেখানকার পত্রিকায় প্রকাশ করেন। ইকবালের ফার্সি কবিতাগ্রন্থ ‘রমূযে বেখূদী’ বাংলায় অনুবাদ ও ব্যাখা সহকারে প্রকাশ করেন। করাচির ইকবাল একাডেমির তত্ত্বাবধানে ইকবালের অন্য আরো একটি কাব্য ও বহু সংখ্যক কবিতার অনুবাদ করেন। পরে তিনি আল-কুরআনের বিভিন্ন সূরার স্বচ্ছন্দ বাংলা অনুবাদ করে সাপ্তাহিক ‘জাহানে নও’ ও স্বসম্পাদিত মাসিক ‘পৃথিবী’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেন। তবে মোটামুটি ১৯৫১-৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর তিনি কাব্য-চর্চায় সক্রিয় ছিলেন। পরে এেেত্র ভাটা পড়ে, কারণ তখন তিনি মননশীল রচনা, গদ্যানুবাদ, গবেষণা ও শিশু-কিশোর সাহিত্য-চর্চায় অধিক মনোনিবেশ করেন।

আব্দুল মান্নান তালিবের কবি-খ্যাতি খুব একটা বিস্তৃতি লাভ করেনি। এর দু’টো কারণ হতে পারে। প্রথমত তিনি মাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় (যেগুলোর প্রচার সংখ্যাও দুর্ভাগ্যবশত নানা কারণে সীমিত) লেখেছেন। ফলে বৃহত্তর পাঠক-সমাজ তাকে জানার তেমন সুযোগ পায়নি। দ্বিতীয়ত কম লেখলেও তার রচিত কবিতা বা কাব্যানুবাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়, অথচ এ যাবত তার একটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়নি। একাধারে দারিদ্র্য এবং কাব্যগ্রন্থ প্রকাশে প্রকাশকদের অনীহাই সম্ভবত এজন্য দায়ী। ফলে তার অনেক কবিতা শুধু পত্র-পত্রিকার কালো কালো অরের জালে আবদ্ধ হয়ে আছে। এখন তার সব কবিতা সংগ্রহ করা সম্ভব কিনা জানি না, কিন্তু সংগ্রহের চেষ্টা করা উচিত এবং তা প্রকাশের ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন। এ কাজের মাধ্যমে পাঠক সমাজ কবি আব্দুল মান্নান তালিবের সঠিক পরিচিতি লাভে সম হবে।

আব্দুল মান্নান তালিব শুধু কবি নন, অর্ধ-শতাব্দীর অধিক কালব্যাপী তিনি সাংবাদিকতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৭ সালে লাহোরে উর্দু দৈনিক ‘রোজনামা তাসনীম’-এ সাব এডিটর হিসেবে তার সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। ১৯৫৯ সালে লাহোর থেকে ঢাকায় এসে তিনি দৈনিক ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬০ সালে ইত্তেহাদ বন্ধ হয়ে গেলে সাপ্তাহিক ‘জাহানে নও’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬২ সালে ‘জাহানে নও’-এর সম্পাদনার দায়িত্ব লাভ করেন। একই সাথে ১৯৭০ এর জানুয়ারিতে দৈনিক সংগ্রাম আত্মপ্রকাশ করলে সেখানে ‘শাহীন শিবির’ নামে শিশু-কিশোর পাতার সম্পাদনার দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে কলকাতায় ‘সাপ্তাহিক মীযান’ প্রকাশে সহায়তা করেন এবং ১৯৭৪ পর্যন্ত এর প্রকাশনা ও সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে ১৯৭৭ সালে ত্রৈমাসিক ও পরে মাসিক কলম এবং ১৯৮১ সনে মাসিক পৃথিবী পুনঃপ্রকাশের পর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়া, ১৯৭৭ সালে ত্রৈমাসিক ও পরে মাসিক কলম এবং একই সাথে ১৯৮১ সালে মাসিক পৃথিবী পুনঃপ্রকাশের পর এর সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৭ সালে দৈনিক সংগ্রাম পুনঃপ্রকাশের পর এর শিশুকিশোর পাতার সম্পাদনার সাথে সাথে পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগেও যোগ দেন। মাঝে শিশু বিভাগের দয়িত্ব অন্যের উপর ন্যস্ত হওয়ায় তিনি শুধু ফিচার বিভাগে ‘ইতিহাস ঐতিহ্য’ পাতার দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা সাহিত্য পরিষদের পরিচালক হিসাবে পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত বার্ষিক ‘বাংলা সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা’ তিনি আজীবন সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া, তিনি ইসলামিক ল’ রিসার্চ  সেন্টার ও লিগ্যাল এইডের মুখপত্র ‘ইসলামী আইন ও বিচার’ পত্রিকার আজীবন সম্পাদক ছিলেন।  

পরিচ্ছন্ন সাংবাদিকতা, সুস্থ সমাজ ও সাহিত্য-চিন্তা আব্দুল মান্নান তালিবের সাংবাদিকতার প্রধান ল্য ছিল। সাংবাদিক হিসেবে তার দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি গতানুগতিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, এটা ছিল তার জীবনের এক নিরবচ্ছিন্ন মিশন। এ মিশন পালনে  তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ও আলোর শপথে উদ্দীপ্ত হয়ে সর্বদা কাজ করেছেন। নিজে দারিদ্র্য-সংকুল সাংবাদিকতার বন্ধুর, শ্বাপদঘেরা জনারণ্যে যেমন পথ করে নিয়েছেন, অন্যদেরও তেমনি সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন, হাত ধরে একত্রে পথ চলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাই সাংবাদিক হিসেবে তার সার্থকতাও কম নয়। সাহিত্য, সংগঠন ও গবেষণার েেত্র যেমন, তেমনি সাংবাদিকতার েেত্রও তিনি ছিলেন অনেকের নিকট শিকতুল্য।

গবেষক, সংগঠক, অনুবাদক ও সাহিত্যিক হিসেবে আবদুল মান্নান তালিবের খ্যাতি সমধিক। সাহিত্য ও সামাজিক চিন্তার েেত্র তার মৌলিক গবেষণা-প্রসূত লেখা বিদগ্ধ, মননশীল পাঠককে যথার্থই অভিভূত করে। তার রচিত গ্রন্থাবলিকে মোট চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। ১. মৌলিক রচনা, ২. অনুবাদ, ৩. সম্পাদনা ও ৪. শিশু সাহিত্য। 

তার এ যাবত প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা মোট ১১টি। এগুলো যথাক্রমেÑ১. অবরুদ্ধ জীবনের কথা (১৯৬২), ২. মুসলমানের প্রথম কাজ (১৯৭৫), ৩. বাংলাদেশে ইসলাম (১৯৭৯), ৪. ইসলামী সাহিত্য : মুল্যবোধ ও উপাদান (১৯৮৪), ৫. আমল ও আখলাক (১৯৮৬), ৬. ইমাম ইবনে তাইমিয়ার সংগ্রামী জীবন (১৯৮৭), ৭. ইসলামী আন্দোলন ও চিন্তার বিকাশ (১৯৮৮), ৮. সাহিত্য সংস্কৃতি ভাষা : ঐতিহ্যিক প্রোপট (১৯৯১), ৯. ইসলামী জীবন ও চিন্তার পুনর্গঠন (১৯৯৪), ১০. সত্যের তরবারি ঝলসায় (২০০০), ১১. আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ ও ইসলাম (২০০১)। এছাড়া, ‘আল-কুরআনে সাহিত্যের উপাদান’ বিষয়ক তার একটি মূল্যবান গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি আকারে বিদ্যমান। অন্যান্য বিষয়েও তাার রচিত আরো কিছু মৌলিক গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি অপ্রকাশিত থাকা অসম্ভব নয়।

তার রচিত মৌলিক গ্রন্থের তুলনায় অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা অনেক বেশি। আল-কুরআন, আল-হাদিস ও ফিকাহ্ শাস্ত্রে তার অধ্যয়ন ও জ্ঞান ছিল অসাধারণ। এসব েেত্র রচিত অনেক খ্যাতনামা গ্রন্থের তিনি স্বচ্ছন্দ বাংলা অনুবাদ করেছেন। এছাড়া,  আরবি ও উর্দু ভাষা থেকে তিনি বহু সংখ্যক মূল্যবান গ্রন্থ অনুবাদ করে বাংলা ভাষায় ইসলামী জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাার অনুবাদ অত্যন্ত সহজ ও স্বচ্ছন্দ। বাংলা অনুবাদ সাহিত্যে তাার অবদান অসাধারণ। অনেকটা লোকচুর অন্তরালে, অবিচল নিষ্ঠা  ও দতার সাথে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক কাল ধরে বহু মূল্যবান গ্রন্থ অনুবাদ করে তিনি বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তা আমাদের বিস্ময়-আনন্দে নিরতিশয় অভিভূত করে। ফলে কৌতূহলী পাঠকের শ্রদ্ধাপণ্ডত চিত্তে তিনি স্থায়ী আসন করে নিতে সম হয়েছেন। এ পর্যন্ত তার অনূদিত যে সব গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, তার একটি তালিকা নিম্নরূপ : অনুবাদ সাহিত্য : ১. খতমে নুবুওয়াত (১৯৬২), ২. ইসলামের  নৈতিক দৃষ্টিকোণ (১৯৬৪), ৩. ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন (১৯৬৫), ৪. ইসলামের দৃষ্টিতে জীবন বীমা (১৯৬৬), ৫. পয়গামে মোহাম্মদী (১৯৬৭), ৬. ইসলামের সমাজ দর্শন (১৯৬৭), ৭. ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মূলনীতি (১৯৬৮), ৮. চরিত্র গঠনের মৌলিক উপাদান (১৯৬৮), ৯. ভাষাভিত্তিক জাহেলিয়াতের পরিণাম (১৯৭৫), ১০. ইসলামী আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী (১৯৭৫), ১১. আত্মশুদ্ধির ইসলামী পদ্ধতি (১৯৭৬), ১২. আত্মশুদ্ধি কিভাবে? (১৯৭৬), ১৩. কুরবানীর শিা (১৯৭৬), ১৪. মহররমের শিা (১৯৭৭), ১৫. সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং, (১৯৭৯), ১৬. সীরাতে সারওয়ারে আলম, ১ম খণ্ড (১৯৮১), ১৭. মুসলিম নারীর নিকট ইসলামের দাবি (১৯৮২), ১৮. ইরান বিপ্লব : একটি পর্যালোচনা (১৯৮২), ১৯. সহীহ আল বুখারী, ৪র্থ খণ্ড (১৯৮২), ২০. রিয়াদুস সালেহীন, ২য় খণ্ড (১৯৮৬), ২১. রিয়াদুস সালেহীন, ৩য় খণ্ড (১৯৮৬). ২২. রিয়াদুস সালেহীন, ৪র্থ খণ্ড (১৯৮৭), ২৩. তাফহীমুল কুরআন, ১ম খণ্ড  (১৯৮৯) ২৪. রাসায়েল ও মাসায়েল, ২য় খণ্ড  (১৯৯১), ২৫. তাফহীমুল কুরআন, ১৯ খণ্ড (১৯৯১), ২৬. রাসায়েল ও মাসায়েল, ৩য় খণ্ড (১৯৯১), ২৭. তাফহীমুল কুরআন, ২য় খণ্ড (১৯৯৩), ২৮. যরবে কালীম (১৯৯৪), ২৯. রসূলের যুগে নারী স্বাধীনতা, ৩য় খণ্ড  (১৯৯৪), ৩০. তাফহীমুল কুরআন ৩য় খণ্ড (১৯৯৪), ৩১. তাফহীমুল কুরআন, ৪র্থ খণ্ড, ৩২. তাফহীমুল কুরআন ৫ম খণ্ড, ৩৩. তাফহীমুল কুরআন ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৪. তাফহীমুল কুরআন ৭ম খণ্ড, ৩৫. তাফহীমুল কুরআন ৮ম খণ্ড, ৩৬. তাফহীমুল কুরআন, ৯ম খণ্ড, ৩৭. তাফহীমুল কুরআন, ১০তম খণ্ড, ৩৮. তাফহীমুল কুরআন, ১১তম খণ্ড, ৩৯. তাফহীমুল কুরআন, ১২ তম খণ্ড, ৪০. তাফহীমুল কুরআন, ১৩তম খণ্ড, ৪১.ভারত যখন ভাঙলো (২০০২), ৪২. প্রত্যয়ের সূর্যোদয় (২০০০), ৪৩. অপরাজিত (২০০৩) প্রভৃতি।

আব্দুল মান্নান তলিব যেসব গ্রন্থের আংশিক অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন, সেসব মূল্যবান গ্রন্থের একটি তালিকা : ১. আমাদের শিা ব্যবস্থা (১৯৬৯), ২. সত্য সমুজ্জ্বল (১৯৮১), ৩. সহীহ্ আল বুখারী, ১ম খণ্ড  (১৯৮২), ৪. রিয়াদুস সালেহীন, ১ম খণ্ড  (১৯৮৫), ৫. নির্বাচিত গল্প (১৯৮৫),  ৬. মুসলিম শরীফের মুকদ্দমা (১৯৮৬), ৭. রসুলের যুগে নারী স্বাধীনতা, ১ম খণ্ড  (১৯৯৫), ৮.সহীহ আল বুখারী ২য় খণ্ড  (১৯৯৬), ৯. সহীহ্ আল বোখারী ৩য় খণ্ড  (১৯৯৬) ১০. রসুলের যুগে নারী স্বাধীনতা ১ম খণ্ড, ২য় খণ্ড  (১৯৯৫) ও ৪র্থ খণ্ড  (২০০৪)।

আব্দুল মান্নান তালিব শিশু-কিশোরদের জন্য বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। এগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠ্যতালিকাভুক্ত। শিশুদের আগ্রহ, মনোস্তত্ত্ব ও আদর্শ চরিত্র গঠনমূলক বিভিন্ন গ্রন্থ রচনায় তিনি বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। তার রচিত এসব গ্রন্থের একাটি তালিকা নিম্নরূপ : ১. আমাদের প্রিয় নবী (১৯৭৫), ২. এসো জীবন গড়ি, ১ম ভাগ (১৯৭৫), ৩. ইসলাম শিা, ১ম ভাগ (১৯৭৬), ৪. ইসলাম শিা, ২য় ভাগ (১৯৭৬), ৫. এসো জীবন গড়ি, ২য় ভাগ (১৯৭৬), ৬. মজার গল্প (১৯৭৬), ৭. ছোটদের ইসলাম শিা, ১ম ভাগ (১৯৮০), ৮. কে রাজা? (১৯৮১), ৯.ছোটদের ইসলাম শিা, ২য় ভাগ (১৯৮১), ১০. সহজ পড়া (১৯৮২), ১১. ছোটদের ইসলাম শিা, ৩য় ভাগ (১৯৮২), ১২. আদাবু আরাবীয়া (১৯৮৪). ১৩. হাতিসেনা কুপোকাত (১৯৯০) ১৪. পড়তে পড়তে অনেক জানা (২০০০), ১৫. মা আমার মা (২০০১)।

উপরোক্ত গ্রন্থসমূহের তালিকা থেকে আবদুল মান্নান তালিবের সাহিত্য-চর্চা সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা লাভ করা যায়। অনেকটা লোকচুর অন্তরালে, অবিচল নিষ্ঠা ও দতার সাথে দীর্ঘ  প্রায় পাঁচ দশক কাল ধরে বিভিন্ন ধরনের বহু গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত থেকে তিনি একাধারে বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের জ্ঞানের জগতকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। এটা আমাদের যুগপৎ বিস্ময় ও আনন্দে নিরতিশয় অভিভূত করে। এর দ্বারা কৌতূহলী পাঠকের শ্রদ্ধাপণ্ডুত চিত্তে তিনি স্থায়ী আসন করে নিতে সম হয়েছেন এতে সন্দেহ নেই।

আবদুল মান্নান তালিবের রচিত ‘বাংলাদেশে ইসলাম’ একটি অতি মূল্যবান গবেষণামূলক গ্রন্থ। লেখকের ইতিহাস-দৃষ্টি এবং তত্ত্বানুসন্ধান আমাদের অনেক অজানা বিষয়ের সন্ধান দিয়েছে। আমরা যতটা জেনেছি, তার চেয়ে অধিক আমাদের জিজ্ঞাসাকে তিনি জাগ্রত করতে সম হয়েছেন। সেদিক দিয়ে তিনি ইতিহাস-পাঠকের সামনে এক নতুন দিক-নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছেন। ‘ইসলামী সাহিত্য: মূল্যবোধ ও উপাদান’ এবং ‘সাহিত্য সংস্কৃতি ভাষা: ঐতিহ্যিক প্রোপট’ এ দুটো গ্রন্থ সাহিত্য-সংস্কৃতি চিন্তার েেত্র মৌলিক গবেষণাপ্রসূত দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আধুনিক সমস্যা-সংকুল জীবনে পরিপূর্ণরূপে এর বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-গবেষণা চলছে। ইসলামের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিা-ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্য-সংস্কৃতির কী রূপ, পরিচয়, উপাদান ও প্রেতি হতে পারে আবদুল মান্নান তালিব তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনা করেছেন। তার আগে এ সম্পর্কে দু’চারটি প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচিত হলেও কোনো পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচিত হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তীতে হয়ত আরো অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচিত হবে, কিন্তু আব্দুল মান্নান তালিবের উপরোক্ত দুটি গ্রন্থ এ েেত্র পথিকৃতের ভূমিকা পালন করবে বলে আমার ধারণা।

শিশু-কিশোর সাহিত্যেও আবদুল মান্নান তালিবের অবদান কম নয়। শিশু-কিশোরদের বয়স অনুপাতে তিনি বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। শিালাভের সাথে সাথে আদর্শ ও নৈতিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তার এ জাতীয় গ্রন্থসমূহ রচিত হয়েছে। তার  সম্পাদিত গ্রন্থ ও পত্রিকার সংখ্যাও কম নয়। সম্পাদনার কাজে তার নিষ্ঠা, শ্রম, গভীর পাণ্ডিত্য ও দতার পরিচয় পাওয়া যায়। অনুবাদ কর্মেও তার নৈপুণ্য অসাধারণ। বিভিন্ন ভাষায় তার দতা, কঠিন বিষয়কে সহজ, মনোগ্রাহী ভাষায় রূপান্তর এবং অনুবাদকে মূল রচনার মতো সাবলীল গতিসম্পন্ন করে তোলার অনায়াস সমতা আব্দুল মান্নান তালিবের অনুবাদকে পাঠকের কাছে অতিশয় আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সহজ বাংলায় আল-কুরআনের অনুবাদ ও বিভিন্ন হাদিসগ্রন্থ, ফেকাহ্ এবং ইসলামি সাহিত্যের তর্জমায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এসব মূল্যবান গ্রন্থ অনুবাদের দ্বারা তিনি বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের ভাণ্ডারকে যেমন পূর্ণ করেছেন, তেমনি বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে দ্বীনি এলেম প্রচার-প্রসারের েেত্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

সংগঠক হিসাবে আবদুল মান্নান তালিবের ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের েেত্র সংগঠনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬০ সালে আমি পাবনা থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। পাবনা ত্যাগের আগ পর্যন্ত আমি পাবনা জেলা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে পড়ার সময় আমার শিক ছিলেন অধ্যাপক আনোয়ার পাশা (পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী)। তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আমি বাংলা ভাষা-সাহিত্য সম্পর্কে যেমন বিশেষভাবে জানার সুযোগ পাই, তেমনি বাংলাদেশে বিভিন্ন যুগে বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের সমাজ গঠনমূলক চিন্তাধারার সাথেও পরিচিতি লাভের সুযোগ পাই। তার কাছ থেকেই আমি ১৯২৬ সালে গঠিত ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ ও এর উদ্যোক্তাদের বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা লাভ করি। সে ধারণা থেকেই আমার প্রতীতি জন্মে যে, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চিন্তার মাধ্যমেই সমাজ বদলের ধারাকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। তাই ঢাকাতে এসে আমি আমার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে একটি আদর্শবাদী সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি। প্রাথমিকভাবে এ ব্যাপারে বন্ধু নূরুল আলম রইসী ও শাহ আব্দুল হান্নানের সাথে পরামর্শ করে সংগঠনের একটি গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র তৈরি করি। সর্বসম্মতভাবে সবকিছু অনুমোদনের পর কমিটি গঠিত হয়। আবদুল মান্নান তালিব তখন সাপ্তাহিক ‘জাহানে নও’ এর সহকারী সম্পাদক এবং কবি হিসেবে যথারীতি খ্যাতি অর্জন করেছেন। বয়সে এবং অভিজ্ঞতায় তিনি আমাদের সকলের উপরে। তাই আমরা তাকেই নবগঠিত ‘পাক সাহিত্য সংঘের’ সভাপতি নির্বাচন করলাম। আমি সাধারণ সম্পাদক। কমিটির অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে শাহ আব্দুল হান্নান (সহ-সভাপতি), নূরুল আলম রইসী, সালেহ উদ্দিন আহমদ (কোষাধ্য), এ কে এম নাজির আহমদ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠার পর দু’বছর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। বিশেষত ১৯৬১ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘পাক সাহিত্য সংঘে’র উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা তিন দিনব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করি। সেমিনারের প্রথম দিনের বিষয়বস্তু ছিলёইসলামী সাহিত্যের রূপরেখা’, দ্বিতীয় দিনের বিষয়বস্তু ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ’ ও তৃতীয় দিনের বিষয়বস্তু ছিল ‘ইসলামী সংস্কৃতি’। এসব বিষয়ের উপর প্রবন্ধ পড়েছিলেন à¦¯à¦¥à¦¾à¦•à§à¦°à¦®à§‡Ñ à¦•à¦¬à¦¿ গোলাম মোস্তফা, মুহম্মদ মতিউর রহমান (লেখক) ও ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ। এতে অংশগ্রহণ à¦•à¦°à§‡à¦›à¦¿à¦²à§‡à¦¨Ñ à¦¡à¦•à§à¦Ÿà¦° মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রফেসর মুহম্মদ আব্দুল হাই, প্রফেসর মুনীর চৌধুরী, প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, আবুল হাশেম, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, মওলানা মোহাম্মদ আব্দুর রহীম, অধ্যাপক গোলাম আযম, শাহ আব্দুল হান্নান, নূরল আলম রইস এবং আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

এরপর ১৯৬২-১৯৬৩ সালে আমাদের সকলের বিশ্ববিদ্যালয় শিা-জীবন সমাপ্ত হওয়ার পর প্রায় সবাই বিভিন্ন চাকরিতে যোগদান করে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ঢাকাস্থ সিদ্ধেশ্বরী কলেজে অধ্যাপনা এবং ফ্রাঙ্কলিন বুক প্রোগ্রামস-এ চাকরি করার সুবাদে ঢাকাতে বসবাস করার ফলে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিকে সক্রিয় রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গনে ইসলামী চেতনার বিকাশ ও ইসলামী ভাবধারায় সাহিত্য সৃষ্টির েেত্র অনুপ্রেরণা দানে এ প্রতিষ্ঠানটি সর্বদা সচেষ্ট থেকেছে। প্রথম যৌবনে স্বপ্নমুগ্ধ আবেগঘন মুহূর্তে আমাদের  চোখে-মুখে তখন ইসলামের শাশ্বত কল্যাণময় আদর্শ, রাসূলুল্লার (সা.) সর্বোত্তম জীবনাদর্শ এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের উন্নত সমাজ-ব্যবস্থা বাস্তবায়নের তাগিদ বিদ্যমান ছিল। সাহিত্য-সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা সে মানবিক কল্যাণময় আদর্শ বাস্তবায়নের স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। আবদুল মান্নান তালিব ছিলেন আমাদের সামনে এক উজ্জ্বল বাতিঘর। তার নির্মল সুন্দর জীবনাচার আমাদের সকলের জন্যেই ছিল বিশেষ অনুসরণীয় ও অনুপ্রেরণাময়।     

আবদুল মান্নান তালিব ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলা সাহিত্য পরিষদে’র পরিচালক এবং এর প্রধান প্রাণ-পুরুষ হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করে গেছেন। একদিকে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সাহিত্য সৃষ্টি, অন্যদিকে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার েেত্র এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একদল আদর্শনিষ্ঠ তরুণকে সাহিত্য-চর্চায় উৎসাহী করে তোলা, তাদের বই-পুস্তক প্রকাশ ও প্রবীণদের যথাসাধ্য পৃষ্ঠপোষকতা দানের েেত্র এ প্রতিষ্ঠান আন্তরিকভাবে সচেষ্ট। এ প্রতিষ্ঠানের সকল কর্ম-প্রচেষ্টার সাথে আবদুল মান্নান তালিবের আন্তরিক প্রয়াস অবিছিন্নভাবে জড়িত। বাংলাদেশে সুস্থ সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস কখনো লেখা হলে সেেেত্র তার গঠনমূলক উজ্জ্বল ভূমিকার কথা অবশ্যই বিশেষ স্থান লাভ করবে।

‘দৈনিক সংগ্রাম’-এ আবদুল মান্নান তালিবের সাথে আমার আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়। আমি সাহিত্য সম্পাদক এবং তিনি শিশু-কিশোর পাতার সম্পাদক হিসেবে দৈনিক সংগ্রামে আমাদের কাজ শুরু হয়। আমি সেখানে দু’বছর কাজ করেছি। পরে নব পর্যায়ে দৈনিক সংগ্রাম যখন আবার আত্মপ্রকাশ করে তখন আবদুল মান্নান তালিব পুনরায় সেখানে যোগদান করেন আর আমি জীবিকান্বেষণে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ১৯৭৭ সালে দুবাই গিয়ে সেখানেই আমার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করি। কিন্তু আব্দুল  মান্নান তালিবের সাথে আমার সংযোগ ছিন্ন হয়নি। তার সাহিত্য-চর্চা এবং সাংগঠনিক তৎপরতার সাথে আমি সব সময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রা করে চলেছি। সেখানে দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর জীবিকার্জনের পাশাপাশি শিা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সর্বদা ব্যাপৃত রাখি। প্রবাসী বাংলাদেশী ছেলেময়েদের বাংলা শিাদানের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা, বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এবং স্বদেশের বহু গুণী ব্যক্তিদের বিদেশে নিয়ে সম্মানিত করার মাধ্যমে আমি আমার সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার প্রয়াস পেয়েছি। সেেেত্র আমি সর্বদাই বাংলা সাহিত্য পরিষদ তথা আব্দুল মান্নান তালিবের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি।

আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংগঠনিক তৎপরতার েেত্র আব্দুল মান্নান তালিব দীর্ঘ প্রায় অর্ধ-শতাব্দী কাল নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। সাংগঠনিক কাজের েেত্র আমি দীর্ঘকাল তার সহযাত্রী হিসেবে কাজ করেছি।  এভাবে আমি বিদেশে থেকেও আবদুল মান্নান তালিবের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। ১৯৯৪ সালে আমি তাকে ‘‘বাংলাদেশ ইসলামিক ইংলিশ স্কুল, দুবাই’’ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করি। পুরস্কার প্রদান উপলে ওই সালে জুলাই মাসে ঢাকাস্থ ‘জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রে’ এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বহু গণ্যমান্য কবি-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিসেবীর উপস্থিতিতে সেদিন অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আমি তার হাতে পুরস্কারের টাকা ও সনদ তুলে দিয়েছিলাম। সাহিত্য-কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ, আমার জানা মতে, এটাই ছিল তার প্রথম পুরস্কার।

২০০০ সনে আবদুল মান্নান তালিব ‘কিশোর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। ২০১০ সনে তিনি ‘বাংলা সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার’ লাভ করেন। তার মত নিরলস সাহিত্য ও সংস্কৃতি-কর্মী এ যাবত যেসব পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন তার চেয়ে বড় পুরস্কার ও স্বীকৃতি তার পাওনা বলে মনে করি। তবে পুরস্কার ও স্বীকৃতির দ্বারাই সব সময় সব কিছুর মূল্যায়ন হয় না, হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যথার্থ প্রতিভাবান ব্যক্তি কখনো পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করেন না, তাদের কাজের পেছনে একটা প্রেরণা ও ল্য কাজ করে। সে প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, ল্য বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করাতেই তাদের যথার্থ আনন্দ। আব্দুল মান্নান তালিবও তার জীবনের মিশন পূরণের জন্য নিরলসভাবে একাগ্রচিত্তে কাজ করে গেছেন। জীবনকালে তার যথার্থ মূল্যায়ন না হলেও আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এখন তার যথাযথ মূল্যায়ন হওয়া একান্ত অপরিহার্য।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।