তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থান : রাজপথে নারী ও শিশুদের ‘বিরল দৃষ্টান্ত’

তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান প্রতিরোধে দলমত নির্বিশেষে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ বণিতাসহ সর্বস্তরের জনতা রাজপথে নেমে আসে

আরটিএনএন, আঙ্কারা : তুরস্কে রজব তৈয়ব এরদোগান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র একটি অংশ যে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল তা জনপ্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে। গত ১৫ জুলাই শুক্রবার রাতে এরদোগানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। এতে অংশ নেয় দলমত নির্বিশেষে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ বণিতাসহ সর্বস্তরের জনতা। এমন কি বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও।  

এই আন্দোলনে জনতার বিজয় হয়েছে। তুরস্ক রক্ষা পেয়েছে বড় ধরনের বিপদ থেকে। মিসরের পরিণতি ভোগ করতে হয়নি তুরস্ককে। এই আন্দোলনের অনেক বিষয়ই প্রকাশিত হয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। এক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের ভূমিকা অনেকটাই অন্তরালে থেকে গেছে। যেভাবে তাদের বিষয়টি উঠে আসার কথা ছিল তা হয়নি বলে মনে করেন দীর্ঘদিন থেক তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশী রাশেদ হাসান।

তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থান প্রতিরোধে নারী-শিশুদের ভূমিকা এক ‘বিরল দৃষ্টান্ত’। এটা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান এবং প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমের দৃষ্টি কেড়েছে। সোমবার এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান নারী-শিশুদের সাহসী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

গত শুক্রবার রাতের কথা। তুরস্কের সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র একটি অংশ অভ্যুত্থান চেষ্টাকালে দেশের ক্ষমতা গ্রহণের কথা ঘোষণা দেয়। সেই সঙ্গে তারা দেশে কারফিউ জারি করার কথা জানায়। ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলে নেয় তারা। বিপদগামী সেনা সদস্যদের হঠাৎ এমন ঘোষণায় হতভম্ব গোটা তুরস্কবাসী। তারা তখন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তাদের কী করা উচিত। এর কিছুক্ষণ পরই সিএনএন তুর্কি টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠে প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের চেহারা। যেখানে তিনি রাজধানী থেকে অনেক দূর দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন স্থান মারমারিসের অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে ভিডিও বার্তায় জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যে যেভাবে আছেন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। যড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হবে। দেশের জনগণ যাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল, তিনিই দায়িত্বে আছেন। আমরা যতক্ষণ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়াব, ততক্ষণ তারা সফল হতে পারবে না।’

এরদোগানের এই আহ্বান শোনার পরপরই লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে যেতে শুরু করে তুরস্কের পরিস্থিতি। ওই রাতে ইস্তাম্বুলের তাসকিম স্কয়ারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেসব বিশাল জমায়েত হয়েছিল তাদের মধ্যে নারী-শিশুদের অবস্থান ছিল লক্ষণীয়। এমন কি বিপদগামী সেনাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা উদ্ধারেও নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।