সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

সতর্ক শীর্ষ নেতৃত্ব

২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র

॥ সৈয়দ খালিদ হোসেন॥
‘জামায়াত থাকলে ঐক্য নয়’ জাতীয় ঐক্য সংহতির বিরোধী এমন বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে যারা ঐক্যের কথা বলে তারা আসলে বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপরতা অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শক্তির ক্রীড়নক। বিএনপির একাধিক নীতি নির্ধারক মনে করেন, এদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে ২০ দলীয় জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থার চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে সরকার। বিশ্ব রাজনীতিতে এ ঘটনায় প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ প্রভাবশালী দেশগুলো নড়েচড়ে বসে। বিদেশী বিনিয়োগকারী ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো শঙ্কায় পড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ১ জুলাইয়ের ঘটনাকে অশনি সঙ্কেত বলে আশঙ্কা করছে। এসব ঘটনা অব্যাহত থাকলে শুধু গণতন্ত্র নয়, সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কাও করা হচ্ছে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। হলি আর্টিজানের ঘটনার দু’দির পরই তিন জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি চলমান ভয়াবহ সঙ্কট নিরসনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কে ক্ষমতা ছাড়ল আর কে ক্ষমতায় গেল সেটি বড় কথা নয়, দেশে এখন যে ভয়াবহ সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে বিরাজ করছে তা মোকাবেলায় সব শ্রেণি পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিএনপি নেত্রীর ওই ঐক্যের আহ্বানকে বিভিন্নভাবে সমালোচনা করতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।  আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও সরকারের বিতর্কিত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী জাতীয় ঐক্যের ডাককে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। জুড়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন শর্ত। এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা। ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতে ইসলামীকে আলাদা করে সরকার বিরোধী এই বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল করার অপচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। জামায়াতে ইসলামী থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া বা জোটে জামায়াতে ইসলামীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার কোনো ইঙ্গিত বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতার পক্ষ থেকে না দেওয়া হলেও সংবাদ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কল্প-কাহিনী ছড়ানো হচ্ছে বিশেষ একটি মহলের পক্ষ থেকে।  ওই মহলটি ২০ দলীয় জোট ভেঙে বিএনপি-জামায়াতকে আলাদা করার মিশন নিয়ে মাঠে রয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপির শীর্ষ নেতারা জামায়াতে ইসলামীর ওপর ক্ষিপ্ত এমন আজগুবী গল্পও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। অথচ ভেতরের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপি-জামায়াতের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোও নয় শুধু, বিদেশী লবিস্টদের মধ্যে যারা ২০ দলের ভাঙন চায় তারাও ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে হয়তো জানেন না। বিএনপি যখন তাদের রাজনৈতিক বলয় আরও বাড়াতে চায় তখন, তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে জোট থেকে আলাদা করার বক্তব্যকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে দলটির শীর্ষ নেতারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ইচ্ছা হচ্ছে, বিএনপি থেকে জামায়াতকে আলাদা করা। কারণ, বিএনপির পর পরই জামায়াতের রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। রয়েছে গোছানো সংগঠন। সরকারের মাথায় রয়েছে জামায়াতকে নিয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এর সেই মন্তব্যের কথা। মনমোহন বলেছিলেন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে ২৫ শতাংশ লোক সমর্থন করেন। সব মিলিয়ে এই দলটির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কে ফাঁটল ধরানোর সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে সরকার, এমন অভিযোগ বিরোধী জোটের। 

গত ১৩ জুলাই ২০ দলীয় জোটের এক জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। ওই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলের সব শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয় এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তও হয়। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনার এক পর্যায়ে জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ২০ দলীয় জোটের বলয় বৃদ্ধি ও বিরোধী দলের পক্ষে জনমত গঠনের জন্যে একটি জাতীয় কনভেনশন করা যায় কি-না তা নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করেন। ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই প্রস্তাবকে আলোচনার টেবিলে উত্থাপন করেন। বেশিরভাগ নেতাই এ প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দেন। একপর্যায়ে আলোচনার টেবিলে প্রশ্ন ওঠে বৃহত্তর প্লাটফর্মে আসতে জাতীয় কনভেনশন ডাকা হলে  জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি তুলতে পারে।

সেক্ষেত্রে জোটের পক্ষ থেকে কী করণীয় রয়েছে, এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে। পরে জোট নেতারা এই মর্মে একমত হন যে, ২০ দলীয় জোট অটুট থাকা অবস্থায় যারা সঙ্কটময় মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মানসিকতা রাখেন তাদের নিয়েই জাতীয় কনভেনশন করা যেতে পারে। আলোচনায় উঠে আসে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি করা প্রসঙ্গ। এ প্রসঙ্গে জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া (বৈঠকে) বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট করার জন্যে বিএনপিকে দোষারোপ করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বারবারই বলার চেষ্টা করি যে, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিয়ে অতীতে জোট করেছে, বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।

সেই একই জামায়াত এখন আমাদের জোটের অংশীদার। আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে ভালো আর বিএনপির সঙ্গে থাকলে খারাপ কেন? খালেদা জিয়া জামায়াতের প্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিভিন্নভাবে আপনারাও তো (জামায়াত) এসব বিষয় নিয়ে বক্তৃতা করতে পারেন। তাহলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম সঠিক ধারণা পাবে। এরপর জামায়াতের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে অংশ নেওয়া দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম দলীয় অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। ২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামীর থাকা না থাকা নিয়ে ওই বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি এবং ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে অংশ নেওয়া কোনো দলের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনো আলোচনা আসেনি। ১৩ জুলাই ২০ দলীয় ওই বিশেষ জরুরি বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি দলের চেয়ারম্যান এ প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত দীর্ঘদিনের। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু, এই জোট ভাঙনের ষড়যন্ত্র আপাতত সফল হচ্ছে না। বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো চিন্তা ভাবনাও করা হচ্ছে না। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দেশী-বিদেশী যতো চাপই আসুক না কেনো জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি করা হবে না। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীকে আরও সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখতে চান। মাঠের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের বাইরে জোটের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান দৃশ্যমান। সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর মতো গোছানো ও ডেলিগেটেট কর্মীবাহিনীর এই দলটিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে সহযোদ্ধা হিসেবেই দেখতে চায় বিএনপি।  

২০ দলীয় জোটে থাকা অন্য একটি দলের মহাসচিব এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ২০ দলীয় জোটের ঐক্য ভাঙার ষড়যন্ত্র এর আগেও হয়েছে। বর্তমানেও হচ্ছে। ষড়যন্ত্র বা চাপ যতোই আাসুক না কেনো খালেদা জিয়া  ২০ দলের ঐক্য ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। ২০ দলীয় জোটের শরিকরাও জামায়াতে ইসলামীকে পাশে চায়। সেক্ষেত্রে কোনো চাপই কাজে আসবে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি বা ২০ দলের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায় থেকে সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হলে সরকারের পক্ষ থেকে নানা অযৌক্তিক শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব আরও কমানো দরকার বিএনপির। কারণ, বিএনপি ছাড়া জোটের শরিকদের মধ্যে জামায়াত একটি বড় শক্তি। এটা অন্য শরিকরাও জানেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে জাতীয় ঐক্য না করতেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শর্ত দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়েছে। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, আমরা ভেবেছিলাম এবার হয়তো আওয়ামী লীগ জাতীয় ঐক্যে আন্তরিক হবে। কিন্তু না, তারা শুধু শর্ত দিচ্ছে।

আসেম সম্মেলন থেকে ফিরে ১৭ জুলাই গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাস দমনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলগুলো পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবের বিষয়ে তার সরকারের অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। প্রশ্নকারী সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আপনি কি মনে করেন না জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে? সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো।

প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই সোমবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে মর্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে’। তিনি বলেন, ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে দেশে বিরাজমান সন্ত্রাস-উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য সম্পর্কিত যে বক্তব্য রেখেছেন, তার প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ‘জাতীয় ঐক্য ইতোমধ্যে সৃষ্টি হয়ে গেছে’ এবং ‘যাদের সঙ্গে ঐক্য প্রয়োজন, তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে ঐক্য হয়ে গেছে’ বলে যে বক্তব্য রেখেছেন তা জাতিকে হতাশ করেছে।

এই প্রসঙ্গে গত ১৮ জুলাই সোমবার জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। “দেশে ইতোমধ্যেই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে” মর্মে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির পরিবর্তে দোষারোপের রাজনীতি করে জাতিকে বিভক্তির দিকেই ঠেলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশ-বিদেশের সচেতন মানুষ ও বুদ্ধিজীবীগণ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য জাতিকে হতাশ ও হতবাক করেছে। সেই সাথে আমরাও (জামায়াত) হতবাক হয়েছি। তার এ বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্য ইতোমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে।’ জাতীয় ঐক্য বলতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের কথা যদি প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে তার বক্তব্য ঠিক আছে।

কিন্তু একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে যে, এর নাম জাতীয় ঐক্য নয়। প্রধানমন্ত্রী যদি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সকল শ্রেণি-পেশার লোকদের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিতেন, তাহলে তা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান হত। কিন্তু তার পক্ষ থেকে সকলের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো তো দূরে থাক, এখানেও তিনি দোষারোপের রাজনীতি করেছেন।

সন্ত্রাস যেখানে আজকে জাতীয় দুর্যোগের রূপ ধারণ করেছে, দেশের কোনো নাগরিক যেখানে স্বস্তিতে নেই, গোটা জাতি যেখানে আতঙ্কগ্রস্ত, সেখানে প্রধানমন্ত্রী সরকারি দল, বিরোধী দল নির্বিশেষে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গসহ গোটা জাতির দাবি এবং প্রত্যাশাকে উপেক্ষা করে কার্যতঃ জাতিকে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। জঙ্গি দমনের নামে বহুলাংশে নাটকীয়তা সৃষ্টি করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে অব্যাহতভাবে খুন করা হচ্ছে। অনেকেই গুম হয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকের ওপর সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে বিভিন্ন ঘটনার দায় স্বীকার করার জন্য মিথ্যা জবানবন্দী আদায় করা হচ্ছে। এ সমস্ত কার্যক্রম প্রকারান্তরে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীদেরকেই আড়াল করা এবং আস্কারা দেয়ার শামিল। সন্ত্রাসের এ দুর্যোগ থেকে জাতিকে মুক্ত করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দেয়ার জন্য দলীয় একচোখা রাজনীতির বৃত্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বেরিয়ে আসতেই হবে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে’ বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা একেবারেই অন্যায্য ও অর্থহীন। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে আবারও অনুরোধ করবো, দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গির ঊর্ধ্বে ওঠে এবং দোষারোপের রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সরকারি দল, বিরোধী দল নির্বিশেষে চিন্তাশীল, বিবেকবান এবং সকল পর্যায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার।” আর এতেই জাতির কল্যাণ আসবে।

১৭ জুলাই রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাগপা সভাপতি ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা শফিউল আলম প্রধান প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন- ‘খালেদা জিয়াসহ সকল বিরোধীদল, বুদ্ধিজীবী ও সর্বস্তরের জনগণকে বাদ দিয়ে এই রহস্যময় ঐক্য কাদের সাথে?’

‘যাদের সাথে ঐক্য হলে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হবে তাদের সাথে ঐক্য হয়েছে’ শীর্ষক প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধান বলেন, দেশবাসী জানতে চায় তারা কারা? এই রহস্যময় ঐক্য কাদের সাথে। এ কার খেলা-কিসের খেলা। ইতিহাসই একদিন এই প্রশ্নের জবাব দেবে। তবে মনে রাখা দরকার বাংলাদেশ কারো রায়ত-প্রজা নয়। দেশ ও জনগণের ভবিষ্যৎ নিয়ে তামাশা করার এখতিয়ার দেশবাসী কাউকে দেয় নাই।

তিনি আরও বলেন, ‘উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকে নাকচ করে শেখ হাসিনা জাতির প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষাকে উপেক্ষা করেছেন। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ যখন অস্তিত্ব গভীর সঙ্কটে, আতঙ্কিত দেশবাসী যখন জাতীয় ঐক্যের সোনালী রেখা দেখতে চায় তখন প্রধানমন্ত্রীর নেতিবাচক বক্তব্য উগ্রবাগ ও জঙ্গিবাদকেই উৎসাহিত করবে।’

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।