সংবাদ শিরোনামঃ

তুরস্কে জনতার বিজয় ** এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ রুখে দিল সেনা অভ্যুত্থান ** সঙ্কট নিরসনে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ** ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র ** তুর্কী গণপ্রতিরোধে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান ** রফতানি বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ : রাজনৈতিক অস্থিরতা ** মানবতাবাদী বিশ্ব ও সন্ত্রাসবাদী বিশ্বের মাঝখানে মুসলমানদের দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে ** সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্য : নজরুল ইসলাম খান ** তুর্কী জনগণকে অভিনন্দন ** জাতীয় স্বার্থ বনাম হুকুম তামিল করার দৌড়ঝাঁপ ** এ শিক্ষা আমাদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ** দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও হরিলুটের অভিযোগ ** দুর্ভোগের আরেক নাম পাইকগাছার কপিলমুনি শহর ** কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট : সেবা কার্যক্রম ব্যাহত ** কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা ** ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ ** বাংলা ভাগের জন্য মুসলমানরা নন হিন্দুরাই দায়ী ** কবির বিশ্বাস ** সানজিদা তাহসিনা বেঁচে থাকবে সবার মাঝে ** জাতির নিকট রেখে গেলেন অনেক প্রশ্ন **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ শ্রাবণ ১৪২৩, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৭, ২২ জুলাই ২০১৬

॥ সামছুল আরেফীন॥
সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে দেশের অর্থনীতিতে নেতবিাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন ও গার্মেন্টস খাতে অশনি সঙ্কেত বয়ে আনবে। বিশেষ করে গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার পর বিদেশীদের মাঝে নিরাপত্তার আস্থা ফিরিয়ে আনতে না পারলে এতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দোষারোপের রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করাই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ঈদের আগে গুলশানের ঘটনায় ১৭জন বিদেশী নিহত হয়েছে। ঈদের দিন শোলাকিয়ায় হামলা হয়েছে। নিহত বিদেশীদের মধ্যে জাপান ও ইতালির নাগরিকই বেশি ছিলেন। জাপানিরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জড়িত ছিলেন আর ইতালিয়রা যুক্ত ছিলেন গার্মেন্টসের সঙ্গে। এ বর্বরোচিত ঘটনার পর গার্মেন্ট পণ্যের ক্রেতারা অর্ডার দেয়া-নেয়া সংক্রান্ত আলোচনার জন্য ঢাকার বদলে বিদেশে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতিবছরই ঈদের সময় বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক এসে থাকেন। এবার অনেকেই তাদের বুকিং বাতিল করেছেন। পর্যটন স্পটগুলোতেও তাদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।

পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে অংশীজনেরা। বর্তমান পরিস্থিতি বিদেশী বিনিয়োগসহ রফতানির সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাকের ওপর প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকদের সফর বাতিল ও দেশী পর্যটকদের ভ্রমণও কমায় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য এটি একটি অশনি সংকেত। এছাড়া বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশী বিনিয়োগেও দেখা দিতে পারে অনিশ্চয়তা। পাশাপাশি উন্নয়নের বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ অধিকাংশ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন বিদেশী নাগরিক। সংশ্লিষ্টদের মতে, ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের দুটি সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশী ব্যবসায়ীরা তাদের সফরগুলোও বাতিল করেছে। যে কারণে হোটেল ব্যবসায়ও মন্দা শুরু হয়েছে। নতুন করে তারা কোনো বুকিং পাচ্ছে না।

পোশাক শিল্পে ধসের আশঙ্কা : দেশের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে পোশাক শিল্পের বিদেশী ক্রেতা জোট এখন উদ্বিগ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে সহসা এই উদ্বেগ দূর করতে না পারলে সম্ভাবনাময় পোশাক শিল্পের জন্য বড় ধরনের ধস অপেক্ষা করছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদেশী ক্রেতা জোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে আশঙ্কা রয়েছে রফতানি আয় কমে যাবার। আর রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক খাতেও নেমে আসবে কালো ছায়া।

পোশাক রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জনমনে আতঙ্ক ও সংশয় ছড়ানোর পাশাপাশি সম্প্রতি জঙ্গি হামলার প্রভাব পরেছে দেশের অর্থনীতিতেও। ওইসব হামলার ঘটনায় পোশাক শিল্পে মন্দাভাব সুস্পষ্ট। সদ্য সমাপ্ত ঈদের বাজারেও এই প্রভাব ছিল নেতিবাচক। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন এই হামলার প্রভাবে দেশে কমে যাবে বিদেশী বিনিয়োগ। এছাড়া আশঙ্কা আছে কমবে রফতানি আয়ও। আর রফতানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক খাতেও নেমে আসবে কালো ছায়া।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতে যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তা আবার এই খাতের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। এর ফলে ২৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক শিল্প চরম ঝুঁকির মুখে পরতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই হামলা পশ্চিমা ক্রেতাদের বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকারের ব্যাপারে ফের সতর্ক করেছে।

তবে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে কাজ করা জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্ক সেফটি জানিয়েছে তাদের সদস্য পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদন ও কাজে এই হামলার প্রভাব পরবে না। সদস্য কারখানাগুলো তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। জোটটি জানিয়েছে কারখানা আগেও যেমন কাজ করেছে, প্রতিকূল পরিবেশ টেক্কা দিয়েছে এবারও সেভাবেই তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। জোটটির কান্ট্রি ডাইরেক্টর জেমস এফ মরিয়ার্টি বলেছেন, হামলার ঘটনায় কোনো বিদেশী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কাজ গুটিয়ে নেবে এমন আশঙ্কা আমি কখনও করিনি। আমি আশা করি আমাদের জোটভুক্ত ২৮টি বড় বড় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক নেয়, তারা তাদের চুক্তি মোতাবেক স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

জাপানি মালিকানার পোশাক ব্রান্ড ‘ইউনিকলো’ সূত্রে জানা যায়, তাদের সব কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশে ইউনিকলো’র ১০ জন জাপানি কর্মকর্তা কাজ করছেন। মার্কস, স্পেন্সার ও গ্রাপ-এর মতো বড় কোম্পানিতে তৈরি পোশাক সরবরাহ করে স্প্যারো গ্রুপ। কোম্পানিটির প্রধান শোভন ইসলাম জানান, গত বছর জাপানি ও ইতালিয় নাগরিক জঙ্গিদের হাতে খুন হন। ওই ঘটনার পরেই আমাদের অর্ডার পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। অনেক বিদেশী বায়ার বাংলাদেশে তাদের মিটিং বাতিল করে। পরে সেই মিটিং ব্যাংকক, দিল্লি ও হংকং গিয়ে করতে হয়েছে। গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ ‘হলি আর্টিজান বেকারি’ বিদেশী হত্যার ঘটনায় পর আমাদের অবশ্যই অর্ডার পেতে বেশ কষ্ট করতে হবে।

আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বিদেশী পর্যটক॥ পর্যটন শিল্পে অশনি সংকেত : গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটন খাতে। গেলো ঈদে এর প্রভাব দেখা গেছে পর্যটন এলাকাগুলোতে। বিশেষ করে কক্সবাজার এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বিদেশী পর্যটক। নিরাপত্তাহীনতার কারণে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, টেকনাফসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে দর্শনার্থী অনেক কমে গেছে। এর ফলে সম্ভাবনাময় এ খাতের ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারে। নিরাপত্তা ইস্যুতে এই শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে একই ঘটনার কারণে হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ধস নেমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে পর্যটন শিল্পে সরকারের বৈদেশিক আয় ৪ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১০ সালে এ শিল্পে আয় ছিল ৫৫৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে বেড়ে হয় ১ হাজার ২২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ২০১১ সালে ৬২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৮২৫ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০১৩ সালে ৯৪৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে সরকারের। এছাড়া ঘোষিত শিল্প নীতিতে পর্যটন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিল সরকার। পাশাপাশি ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা ১০ লাখ এবং এ খাত থেকে আয়ের পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

সাধারণত সেপ্টেম্বরে পর্যটকদের আগমন বাড়ে। এ সময়কে ঘিরে অনেক দেশ থেকে পর্যটকরা আগাম বুকিং দিয়েছেন। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আগের বুকিংগুলো বাতিল করা হচ্ছে। পাশাপাশি এখন বিদেশীরা একদম আসছে না। ফলে পর্যটন শিল্প ঘিরে গড়ে ওঠা হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মন্দা চলছে। অলস পড়ে আছে পর্যটন কেন্দ্রের লঞ্চ, ট্রলার, জালিবোট।

সুন্দরবন লাইভ ট্যুরসের গোলাম রহমান বিটু বলেন, ঈদের ছুটিতে সাতজন জার্মানিসহ মোট ১৩ জন বিদেশীর সুন্দরবন ভ্রমণে আসার জন্য আগাম বুকিং ছিল। কিন্তু গুলশানে হামলার কারণে সেসব বিদেশী তাদের বুকিং বাতিল করেছেন। ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের সিইও মিন্টু রতœ বলেন, প্রতি মাসে বিদেশীদের বাংলাদেশ ভ্রমণের মাধ্যমে নি¤à§‡œ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার আয় হতো। এখন ৫ হাজার ডলার হচ্ছে না। তার দেয়া তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক মানের ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি মাসে বিদেশীদের ভ্রমণের মাধ্যমে এক লাখ মার্কিন ডলারও আয় করছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ৯০ শতাংশ আয় কমেছে। জাপান ও ইউরোপের ভ্রমণকারীরা আসা বাদ দিয়েছে বাংলাদেশে। এসব দেশের মধ্যে জাপান ও ইউরোপের ভ্রমণকারীরা উত্তরবঙ্গ এবং রাঙ্গামাটিতে বেশি ভ্রমণে আগ্রহী থাকতেন।

ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশী পর্যটকদের আসা কমেছে ঢাকায় প্রথম ইতালি নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যার পর থেকে। এরপর আরও কয়েক বিদেশীর ওপর হামলা চলে বাংলাদেশে। সর্বশেষ গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা ১৭ বিদেশীকে হত্যা করে। ফলে বাংলাদেশে সফরে আসার ব্যাপারে অধিক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিদেশী নাগরিকরা।

ভ্রমণপিপাসু বিদেশীদের পছন্দের অন্যতম স্থান সুন্দরবন। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্র জানায়, বনের করমজল, হাড়বাড়িয়াসহ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের আগের দিন থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। তবে এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটকের আগমন কম হয়েছে।

পর্যটন কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান কক্সবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গুলশানের ঘটনার পর কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ঈদের ছুটিতে বুকিং দেয়া বিদেশীরা তাদের বুকিং বাতিল করেছে। এমনকি নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করে অনেক দেশীয় পর্যটকও কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে অনীহা প্রকাশ করছে।

নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় ২৩ থেকে ২৮ জুলাই অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং গ্রুপ (এপিজি) সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে। সেখানে ৪১টি দেশ থেকে চারশ’ বিদেশী প্রতিনিধি অংশ নেয়ার কথা। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় আরেকটি আন্তর্জাতিক মানের আইসিটি সম্মেলনও বাতিল করা হয়েছে। সেখানে প্রায় সাড়ে তিনশ’ বিদেশী অংশ নেয়ার কথা ছিল।

ট্যুর অপারেটরদের মতে, ভ্রমণ ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের কাজে বিদেশীরা বাংলাদেশে প্রায় সময় সফর করেন। তাদের সফরের ওপর সংশ্লিষ্ট দেশগুলো সতর্কতা জারি করেছে। ফলে বিদেশী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের ঘিরে কার্যক্রম থেকেও আয় কমছে।

প্রতি বছর কত সংখ্যক বিদেশী বাংলাদেশ ভ্রমণে আসেন তার কোনো সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেনি পর্যটন বোর্ড (বিটিবি)। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিদেশী পর্যটকের বাংলাদেশ ভ্রমণ থেকে আয় হয়েছে ১১৬২১ কোটি টাকা। তবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, বছরে ৫-৬ লাখ বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে আসেন। তবে যেসব বাংলাদেশী বিদেশের নাগরিক তাদেরও বিদেশী পর্যটক হিসেবে দেখানো হয়।

বেসরকারি পর্যটন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রথম সহ-সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, গুলশান এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে আসার বিষয়ে রেড এলার্ট জারি করেছে। তিনি বলেন, যে সকল দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে রেড ও ইয়োলো অ্যালার্ট জারি করেছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে হবে। এসব দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা উচিত।

তবে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) পরিচালক তৌফিক রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার দুই ঘটনা এখনো দেশের পর্যটন খাতে সেভাবে প্রভাব ফেলেনি। এ মুহূর্তে দেশে যেসব বিদেশী পর্যটক অবস্থান করছেন, তাদের পাশাপাশি ভ্রমণের স্পটগুলোয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নজর রাখছে। তিনি আরো জানান, সামনের দিনগুলোয় যেসব বিদেশী পর্যটকের আসার কথা রয়েছে, তারা বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। ট্যুর অপারেটরদের পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পূর্ণ আশ্বাস দেয়া হচ্ছে।

ফেডারেশন অব হোটেল গেস্টহাউজ আ্যন্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফ. ম. আলাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পর্যটন মাসেই এ রকম পদক্ষেপের ফলে এই শিল্পে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ লাখ পরিবারের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।

এদিকে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভয়াবহ ব্যবসায়িক মন্দার কবলে পড়েছে দেশের পাঁচ তারকামানের হোটেল ও অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো। নিরাপত্তা শঙ্কায় বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশ সফর স্থগিত, সম্ভাব্য আগন্তুকদের একের পর এক বুকিং অর্ডার ক্যানসেল এবং অবস্থানরত বিদেশীদের হোটেলমুখী না হওয়াই এর মুখ্য কারণ। একই সঙ্গে দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও বিত্তবানদের জাঁকজমকপূর্ণ সেলিব্রেশন অনুষ্ঠান আয়োজনেও ভাটা পড়েছে।

নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বিদেশীরা আসবেন না : ইতালি-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সহসভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেছেন, যেকোনো বিনিয়োগকারী সবার আগে নিরাপত্তা চান। নিরাপত্তা না থাকলে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। সে ক্ষেত্রে গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনার একটা প্রভাব পড়তে পারে বলে আমার মনে হয়। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য সব সময় নিরাপদ গন্তব্য চান। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বিদেশীরা বিনিয়োগে আসতে আগ্রহী হবেন না। তৈরি পোশাকের ব্যবসা বাংলাদেশে এসেছিল শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের কারণে। বিনিয়োগকারীরা সেখানে নিরাপত্তা পাননি বলেই বাংলাদেশমুখী হয়েছিলেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে নিরাপত্তা-সঙ্কটে পড়তে হবে, কোনো বিদেশী বিনিয়োগকারীর মধ্যে এ ধারণা জন্মালে তারা অন্য নিরাপদ গন্তব্য খুঁজবেন।

চার থেকে পাঁচ মাস পড়ে এটা বুঝা যাবে : এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, যে কোনো দুর্ঘটনাই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের ঘটনা মোটেও সুখকর না। এতে অর্থনৈতিক কি পরিমাণ ক্ষতির সম্মুুখীন হবে এ মুহূর্তে হিসাব করা সম্ভব হবে না। আগামী চার থেকে পাঁচ মাস পড়ে এটা বুঝা যাবে। আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে কেবল আশ্বাসই নয়, কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার সবাইকে আশ্বস্ত করবেন এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে- মির্জা আজিজ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ তার ইমেজ সঙ্কটে পড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে। বায়াররা ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহী হবে। যেহেতু বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশীদের টার্গেট করে এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। ফলে এ দেশে অবস্থানরত বিদেশীরা দেশ ত্যাগ করবে। যদি কেউ এখানে থেকে যায় তারা শঙ্কার মধ্যে জীবনযাপন করবে। শঙ্কায় থেকে তারা কখনো বিনিয়োগ করবে না।

পর্যটনশিল্পে প্রভাব ফেলবে-মেনন : বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দেশে আইএস ও জঙ্গি হামলার কারণে পর্যটক সাময়িকভাবে কম হওয়াই স্বাভাবিক। তারপরও আমরা আশাবাদী, দেশের মানুষ যেভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে অচিরেই তা থেকে পরিত্রাণ পাব। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার কারণে পর্যটনশিল্পে কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে।

বিনিয়োগে সামান্য ধাক্কা লেগেছে-অর্থমন্ত্রী : গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি দেশের ওই দুটি স্থানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দেশের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে এসব ঘটনায় এই সেক্টরে সামান্য ধাক্কা লেগেছে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।