আমিনুল ইসলাম মনে প্রাণে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় কামনা করেছেন

সোনার বাংলা রিপোর্ট : এই পৃথিবী আমাদের কারো আসল ঠিকানা নয়, এই সত্য মনটা সহজে বুঝতে চায় না। কিন্তু যখন প্রিয়মুখগুলো চোখের সমানে থেকে হারিয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনের মাঝে চির সত্য কথাটি বার বার বাজতে থাকে।  তেমনি এক প্রিয়মুখ,প্রিয় মানুষ ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ও কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারি আমিনুল ইসলাম। তিনি  গত ২১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চিরস্থায়ী ঠিকানা জান্নাতের পথে পাড়ি জমিয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন কাজ পাগল মানুষ। কাজ পাগল তারনামে এই নয় তিনি তার নিজের প্রতিষ্ঠা দুনিয়ার জীবনকে সাজানোর কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর আদর্শকে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য সদা ব্যস্ত থাকতেন। তার প্রিয় সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর অফিস সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিস বন্ধ। কিন্তু তার কর্মতৎপরতা কেউ বন্ধ করতে পারেনি। সকল ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তার ওপর অর্পিত আমানতের হেফাজত করতে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমীন।

আমিনুল ইসলাম মাত্র ৬২ বছর বয়সের কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াতের কাজে। তিনি মনে প্রাণে কামনা এই জমিনে আল্লাহর দীনের বিজয় কামনা করেছেন। তিনি গত ২০ জানুয়ারি সকালে হঠাৎ হৃদরোগে ও মস্তিষ্কে রক্তরণের কারণে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র ও ১ কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গিয়েছেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মরহুম অধ্যাপক মাহমুদ হোসাইন আল মামুনের কনিষ্ঠ ভ্রাতা।

তিনি ১৯৫৩ সালের ১৫ মার্চ বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ার হাসানপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। তিনি ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

গত ২২ জানুয়ারি বাদ জোহর ঢাকা মহানগরীর ধানমণ্ডিস্থ ঈদগাহ মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম। নামাজের পূর্বে বক্তব্য রাখেন মরহুমের একমাত্র ছেলে শফিকুল ইসলাম। নামাজে জানাজা শেষে আজিমপুর কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আমিনুল ইসলামের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান যুক্ত শোকবাণীতে বলেন, আমিনুল ইসলামের আকস্মিক ইন্তিকালে আমরা আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন সাথীকে হারালাম।

তারা বলেন, জনাব আমিনুল ইসলাম ছাত্র জীবন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত থেকে আল্লাহর এ জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন। জাতির এক সংকটকালে তার ইন্তিকালে বিরাট তি হয়ে গেল। আল্লাহ তার জীবনের সকল নেক আমল কবুল করে তাকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করুন। নেতৃদ্বয় তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে দোয়া করেন আল্লাহ যেন তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করেন।

ঢাকা মহানগরী আমীরের শোক : জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলামের ইন্তিকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। শোকবাণীতে মহানগরী আমীর বলেন, আমিনুল ইসলামের মৃত্যুতে ইসলামী আন্দোলন একজন নিবেদিতপ্রাণ অগ্রসৈনিককে হারালো। তার অকাল মৃত্যুতে ইসলামী আন্দোলনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজেই পূরণীয় নয়। তিনি আজীবন ইসলামী আন্দোলনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং দ্বীনকে বিজয়ী করার স্বপ্ন দেখতেন। মাওলানা খান মরহুমের নেক আমলগুলোকে কবুল করে নিয়ে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবাবে দোয়া করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের শোক : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি আমিনুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান। এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

চট্টগ্রাম মহানগরী : আমিনুল ইসলামের ইন্তিকালে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন শ্রমিককল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি আবদুল ওয়াছি ও সেক্রেটারি আবু তাহের খান এবং চট্টগ্রাম সদর অঞ্চল সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান সেক্রেটারি মকবুল আহমদ।