সংবাদ শিরোনামঃ

ভোট ডাকাতির আশঙ্কা ** বাংলা সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিন ** দেশের রাজনীতি এখন ছাই চাপা তুষের আগুন ** বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত ** হারলেন ট্রাম্প, টিকলেন হিলারি ** মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ** বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন খালেদা জিয়া ** অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত জাতীয় পার্টি ** মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ** শিশু নির্যাতন ও অপহরণ বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ** নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মুখে দেশ ** নাজাত লাভের উপায় ** যেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ** নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাস করছে ** করতোয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে তীরবর্তী স্থাপনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪২২, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সোনার বাংলা রিপোর্ট : দেশের প্রধান দুই শক্তিশালী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দশম জাতীয় সংসদে নেই। বামদল কমিউনিস্ট পার্টিও সংসদে নেই। ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে নবম সংসদের ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যক আসনের অধিকারী হয়ে দশম সংসদে সরকারি দল হিসেবে আছে। অপরদিকে ১৪ দলীয় জোটের শরিক স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃতত্বাধীন জাতীয় পার্টি ৪০ আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হলেও বাস্তবে বিরোধী দল নেই। কারণ এক আজগুবি ফর্মুলায় জাতীয় পার্টি আবার সরকারেও আছে। শুধু তাই নয় আইন প্রণয়ন, মুলতবি প্রস্তাব আনা, সংসদীয় কমিটিগুলোতে সক্রিয়তা, সরকারের সাধারণ সমালোচনা কোনো কিছুতেই বিরোধী মেজাজে নেই জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির। গত দুই বছরে ৪৮টি আইন প্রণয়ন হয়েছে, এর কোনোটিতেই সরকারকে বিরোধী দলের মুখোমুখি হতে হয়নি। এই সময়ে জাতীয় পার্টির প থেকে কোনো মুলতবি প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়নি। বরং জাতীয় পার্টি সরকারের সমর্থনেই সংসদে ভূমিকা রাখছে।

৪০ এমপির প্রধান বিরোধী দলের এই অবস্থানের বিপরীতে ১৬ জন স্বতন্ত্র সাংসদের মোর্চা অনেক বেশি সক্রিয় ছিল এই দুই বছর। এই জোটের হাজি মো. সেলিম ও রুস্তম আলী ফরাজী সরকারের সমালোচনা করে সংসদকে এখনো কিছুটা জিইয়ে রেখেছেন। স্বাতন্ত্র সদস্য হাজী মো. সেলিম অবশ্য সরকারি দলের মহানগরীর নেতা। তাঁরা অবশ্য সংসদেই জাতীয় পার্টিকে ‘কাগুজে বিরোধী দল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

তবে সরকারি দল মনে করছে, দশম জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আড়াই দশকের সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি ভেঙে দিয়েছে। তারা সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করছে। সরকারি দলের মুখে বিরোধী দলের প্রশংসাও এই সংসদের অন্যতম আকর্ষণ। বিএনপি ও জামায়াতসহ দেশের প্রধান বিরোধী দলবিহীন বর্তমান জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে এই সংসদের দুই বছর পূর্তি। নবম অধিবেশন পর্যন্ত ১৬৮ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন ১৪৩ দিন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ছিলেন ৯৬ দিন। সংসদের কার্যক্রম বিশ্লেষণকারীদের মতে, জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মুজিবুল হক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করায় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে তাঁদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী, হাজি সেলিমসহ আরও কয়েকজন একাধিকবার জাপাকে কাগুজে বিরোধী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অবশ্য এ বিতর্কে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ এমপিরা জাপার সমর্থনে কথা বলেছেন। বিরোধী দল হিসেবে জাপা বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ওয়াকআউট করেছিল। এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন কারণে একাধিকবার ওয়াকআউট করেছে। এর বাইরে গত দুই বছরে সরকারি ও বিরোধী দলকে কোনো বিষয়ে বড় ধরনের বিতর্কে জড়াতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ সময়ে দুটি দল সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সমালোচনা করে সময় কাটিয়েছে।

আইন পাসে নিষ্ক্রিয় বিরোধী দল : দশম সংসদের অষ্টম অধিবেশন পর্যন্ত বর্তমান সংসদে ৪৮টি আইন পাস হয়েছে। এসব বিল পাস নিয়ে সরকারি দলকে কখনো প্রধান বিরোধী দলের বাধার মুখে পড়তে হয়নি। আইন পাসের সময় বিরোধী দলের এমপিদের অংশগ্রহণও ছিল কম।

তবে জাপার সাংসদ ফখরুল ইমাম নিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিলের ওপর নোটিশ দিয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি বিলের ওপর নোটিশ দিয়েছেন এম এ হান্নান, রওশন আরা মান্নান, নুরুল ইসলাম ওমর, মাহজাবীন মোরশেদ, সেলিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও পীর ফজলুর রহমান। বাকিরা ছিলেন নিরব শ্রোতা।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিল পাস হয়। জাতীয় পার্টি তাদের সংসদীয় দলের বৈঠকে সংবিধান সংশোধন বিলের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিলেও অধিবেশনে এসে সমর্থনই জানিয়েছিল।

বিল নিয়ে সরকারকে অনেক বেশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে স্বতন্ত্র এমপিদের দিক থেকে। হাজি সেলিম ও রুস্তম আলী ফরাজী প্রতিটি বিলের ওপরই ধারাবাহিকভাবে নোটিশ দিয়ে গেছেন। তাঁদের সমর্থনে কমবেশি নোটিশ দিয়েছেন অপর দুই স্বতন্ত্র এমপি আবদুল মতিন ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী। যে কারণে অন্তত দেড়-দুই মিনিটে বিল পাস হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

মুলতবি প্রস্তাবে নেই প্রধান বিরোধী দল : গত দুই বছরে বিরোধী দল হিসেবে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি থেকে একটি মুলতবি প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়নি। স্বতন্ত্র এমপি হাজি সেলিম ১২টি ও রুস্তম আলী ফরাজী তিনটি মুলতবি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। মুলতবির বিষয় ছিল জলবায়ু প্রকল্পে লুটপাট, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশে না কমানো, গ্যাস-সঙ্কট, পেট্রোলবোমা মেরে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলের ট্যাংকারডুবি ইত্যাদি বিষয়ে। তবে যথাযথ মনে না করায় স্পিকার প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করেননি। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিরোধী দল একটি মুলতবি প্রস্তাবও দেয়নি এই একটি উদাহরণ বলে দেয় তারা সত্যিকারের বিরোধী দল নয়। আর কোনো ব্যাখ্যার দরকার হয় না। আসলে মন্ত্রিসভায় থেকে কখনো বিরোধী দল হওয়া যায় না।

বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের অভিমত, কমিটির সভাপতিদের মধ্যে কয়েকজন আগের সরকারের একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকায় কমিটিগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাঁদের মধ্যে আছেন এ বি তাজুল ইসলাম (মুক্তিযুদ্ধ), রমেশ চন্দ্র সেন (পানিসম্পদ), ফারুক খান (বিমান), দীপু মনি (পররাষ্ট্র), রেজাউল করিম (ভূমি), হাছান মাহমুদ (পরিবেশ ও বন), ওমর ফারুক চৌধুরী (শিল্প), মন্নুজান সুফিয়ান (শ্রম) এবং মোতাহার হোসেন (প্রাথমিক ও গণশিা)।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের দেওয়া ক্রেস্টে জালিয়াতির অভিযোগ আছে। সংসদীয় কমিটি কয়েক মাস আগে এই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে তারা কমিটির সভাপতির কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি।

এ বিষয়ে কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, ‘যিনি অভিযুক্ত, তিনিই সভাপতি। কীভাবে তাঁর বিরুদ্ধে বলি। চুলজ্জা বলেও কিছু একটা আছে।’

সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি একই সঙ্গে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান। সম্প্রতি ঋণ বিতরণে অনিয়মের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁর ব্যাংকে পর্যবেক নিয়োগ করেছে। এই নিয়োগের চার দিনের মাথায় এই কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক নিরীা দাবি করেছে। যদিও তিনি বলেছেন, এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এসবের মধ্যেও অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত কমিটি ব্যাংকগুলোর অনিয়ম নিয়ে একাধিক কার্যকর বৈঠক করেছে। তারা বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করার জন্য একাধিকবার দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলেছে। কমিশন তাদের সুপারিশ আমলে না নেওয়ায় এ নিয়ে তা দুটি কমিটি ােভও প্রকাশ করেছে।

সাধারণ আলোচনায় শুধু সরকার-বন্দনা : দুই বছরে আটটি বিষয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ভারতের সংসদে বাংলাদেশ-ভারতের স্থলসীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় ভারতের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ওই আলোচনায় ৩২ জন সাংসদ ২ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট বক্তব্য দেন।

সংসদে জাতীয় পার্টির দুই বছরের মূল্যায়ন করতে বললে দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের  বলেন, জাতীয় পার্টি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। জনগণের পে এবং জনগণের কথা সরকারের কাছে পৌঁছানোই বিরোধী দলের কাজ। সে কাজটি জাতীয় পার্টি করতে পারেনি।

ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আপনারা কী পদপে নেবেন জানতে চাইলে জিএম কাদের বলেন, বিরোধী দলের সদস্যরা সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকলে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়। তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন না। তাতে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়। তাই তাঁরা সরকারের কোনো বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি। এভাবে চললে ভবিষ্যতেও জনগণের জন্য কাজ করতে পারবেন না।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।