সংবাদ শিরোনামঃ

নতুন কৌশলে আন্দোলনের মাঠে ২০ দলীয় জোট ** সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে বিএনপি ** ভরাডুবির আশঙ্কা আ’লীগে ** নেতানিয়াহুর জয় মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট ঘনীভূত করবে ** গণতন্ত্র ছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় না ** স্বাধীনতা হোক অর্থবহ ** আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মার্কিন দলিলপত্র ** আগৈলঝাড়ায় খাল বিল বেদখল ** গ্রেফতার নির্যাতন উপেক্ষা করে সারাদেশে হরতাল অবরোধ অব্যাহত ** রাজনীতি ও সহিষ্ণুতা ** আমাদের স্বাধীনতার ৪৪ বছর **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ চৈত্র ১৪২১, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৫

॥ মনসুর আহমদ॥
বাংলাদেশের মুসলিম রেনেসাঁ আন্দোলন, মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও আজাদীর প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ আলেম সমাজের ইতিহাস আমাদের কাছে বড় একটা স্পষ্ট নয়। বালাকোটের মুজাহিদ আন্দোলন, ওহাবী আন্দোলন ও সিপাহী বিদ্রোহ-এর মাধ্যমে মুসলমানদের প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় তদুপরি ব্রিটিশদের জেল জুলুমের শিকার হওয়ায় এদেশের মুসলিম সমাজ যখন ঝিমিয়ে পড়ে তখন এদেশের পীর মাশায়েখ তাদের দূরদৃষ্টি দিয়ে বঙ্গীয় মুসলমানদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষার পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। বঙ্গ বিভাগ সমর্থন ও পরবর্তী পাকিস্তান আন্দোলনে সহায়তাকারী পীর মশায়েখদের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য। এখানে অল্প কয়েক জনের কথা তুলে ধরা হলো। যেমন-

পীর বাদশা মিঞা

ফরায়েযী আন্দোলন ছিল বাংলা তথা উপমহাদেশের সর্বপ্রথম সক্রিয় আন্দোলন। এই আন্দোলনের উদগাতা হাজী শরিয়ত উল্লাহ (১৭৮০- ১৮৪৪ হি.) এই উপমহাদেশকে দারুল হরব মনে করতেন। হাজী শরিয়ত উল্লাহ কর্তৃক ফরায়েযী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত ১৩০ বছর এ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন উঁচু মানের আলেম ও পীর মাশায়েখগণ।

১৯০৬ সালে মাওলানা রশীদুদ্দীন ওরফে পীর বাদশা মিঞা ফরায়েযী আন্দোলনের ৪র্থ গদীনশীন হন। ১৯০৬ সালের ২৭-২৯ ডিসেম্বর নওয়াব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে ঢাকায় সর্বভারতীয় মুসলমান শিক্ষা সমিতির যে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ঐ অধিবেশন শেষে ৩০ ডিসেম্বর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যে সভায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠিত হয়, তাতে পীর বাদশা মিঞা ফরায়েযী দলের প্রধান রূপে যোগদান করেন। শুধু তাই নয়, ঐ অধিবেশনের ব্যয় নির্বাহের জন্য তিনি জাতির শুভাকাক্সক্ষীদের নিকট হতে চাঁদা সংগ্রহ করে নওয়াব সাহেবের হাতে তুলে দিয়ে বিরাট সহযোগিতা করেন।

পীর বাদশা মিঞা খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তুর্কী খিলাফত অক্ষুণœ রাখার জন্য তিনি ভারতীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। ঐ আন্দোলনের অভিযোগে তাঁকে এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। ১৯২৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভায় সিমলা অধিবেশনে ইসলাম বিরোধী সার্দা আইন পাস করা হয়। পীর বাদশা মিঞা প্রাদেশিক মুসলিম সমিতির সভায় যোগদান করে ঐ আইন অমান্য করার অভিমত ব্যক্ত করেন এবং পরে ঐ আইন ভঙ্গ করা হয়।

১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ পাকিস্তান ইস্যুর উপরে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তখন মুহম্মদ আলী জিন্ন্াহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পীর বাদশা মিঞা মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান কায়েমের লক্ষ্যে অবতীর্ণ হন। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন জনসভায় বক্তৃতা দিয়ে মুসলিম লীগের বিজয় পথ সুগম করেন। মুসলিম বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পীর বাদশা মিঞার অবদানের ঐতিহাসিক মূল্য অনস্বীকার্য।

হজরত মাওলানা আবুবকর সিদ্দিকী (ফুরফুরার পীর সাহেব : ১৮৫৮- ১৯৩৯)

হুগলী জেলার ফুরফুরা নিবাসী হজরত মাওলানা আবুবকর সিদ্দিকী ইসলাম ধর্ম ও মহান আল্লাহর বাণী প্রচারকে জীবনের মূল কর্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এ মহান আধ্যাত্মিক সাধক আজীবন ইসলাম প্রচার, মুসলমান সমাজ থেকে কুসংস্কার দূরীকরণ এবং নানা প্রকার ইসলাম বিরোধী আক্রমণের প্রতিরোধ কার্যে ব্যাপৃত ছিলেন। তিনি ‘মুসলিম হিতৈষী,’ ‘হানাফী’, ‘সুন্নাত আল জামায়াত’ ‘মোসলেম’, ‘শরিয়তে এসলাম’, ‘হেদায়াৎ’ ও ইসলাম দর্শন প্রভৃতি পত্রিকার পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এ সব পত্র পত্রিকা মুসলিম বাংলার পুনর্জাগরণের অগ্রদূতেরও ভূমিকা পালন করেন।

মাওলানা সিদ্দিকী ছিলেন রাজনৈতিক চেতনা সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি নিজে রাজনীতি করাকে প্রয়োজন মনে করতেন এবং আলেমদেরকেও রাজনীতিতে উৎসাহিত করাকে দায়িত্ব মনে করতেন। তিনি বলেন : “শরিয়ত তরিকত, হাকিকত, ও মারেফাত পূর্ণ রূপে আমল করিয়া দেশ ও কওমের খেদমতের জন্য আলেমদেরকে রাজনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতিতে যোগ দেওয়া আবশ্যক। রাজনীতি ক্ষেত্র হইতে আলেমদিগের সরিয়া পড়িবার দরুণ আজ মুসলিম সমাজে নানাবিধ অন্যায় ও বেশরা কাজ হইতেছে। ”

মাওলানা সিদ্দিকী খেলাফত আন্দেলন সমর্থন করেন এবং তার মুরীদদের ঐ আন্দোলনে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি কংগ্রেস এবং এর অধীনে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন না। ১৯৩০ সালে মি. গান্ধী কর্তৃক আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনা করা হয়। মাওলানা সাহেব এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেন।

মাওলানা সিদ্দিকী ছিলেন মুসলিম লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি ১৯৩৬- ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে তাঁর মুরিদানদের মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ড মনোনীত প্রার্থীদের অনুকূলে ভোট দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তাদের এই সমর্থনের কারণে মুসলিম লীগ বিশেষভাবে উপকৃত হয়। এই সমর্থনের কারণে লীগ পার্টি ও জমিয়তে ওলামার মনোনীত সদস্যগণ অধিক সংখ্যক নির্বাচন-সংগ্রামে বিজয় অর্জন করতে সমর্থ হন। এই মহান সাধক প্রায় একশত বছর বয়সে নিজ বাস ভবনে ইন্তিকাল করেন।

পীর মাওলানা আবুবকর সিদ্দিকীর একটি বড় রাজনৈতিক সফলতা পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা অটুট রাখা। উপমহাদেশের দীর্ঘদিনের মতবিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক তথা সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‌্যামজে ম্যাগডোনাল্ড ‘কমিউন্যাল অ্যাওয়ার্ড’ অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ এর প্রস্তাব করেন। ‘কমিউন্যাল অ্যাওয়ার্ডে’ মুসলমানদের দাবি দাওয়া পুরোপুরি স্বীকৃতি না পেলেও আইন সভায় তাদের আসন সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি করা হয় এবং পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়। এ ব্যবস্থা হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হলো না। অ্যাওয়ার্ডের বিরোধিতা করে হিন্দু নেতাগণ ভারত সচিব লর্ড জেটল্যান্ডের কাছে একটি স্বারকলিপি প্রেরণ করেন। এ সময় ধর্মীয় নেতা পীর আবুবকর সিদ্দিকীর নেতৃতে মুসুলিম নেতৃবৃন্দ রোয়েদাদ বহাল রাখার জন্য আন্দোলন পরিচালনা করেন। তাঁদের প্রচেষ্টার ফলে ভারত সচিব জেটল্যান্ড হিন্দুদেরকে জানিয়ে দেন যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রোয়েদাদ ও পৃথক নির্বাচনের পূর্ব ব্যবস্থা উভয় অটুট থাকবে।

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত জমিয়তে ওলামায়ে বাংলাকে ১৯৩৬ সালে পুনর্গঠিত করা হয়। এবং এর পরিধি বৃদ্ধি করে নাম রাখা হয় জমিয়তে বাংলা ও আসাম। এর প্রেসিডেন্ট করা হয় পীর আবুবকর সিদ্দিকীকে।

১৯৩৫ সালের এ্যাক্টের পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এ সময় জমিয়ত প্রেসিডেন্ট পীর আবুবকর সিদ্দিকী আলেম, পীর মাশায়েখগণকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আবেদন জানিয়ে বলেন : “এতদ্বারা আমি আমার মুরীদ ও মোজাহিদীন এবং সর্বসাধারণ মুসলমান ভাইদেরকে জানাইতেছি যে, বাংলার আইন সভায় আগামী নির্বাচনে বাংলার মুসলমানদের পক্ষে একত্রে মিলিত হয়ে এক দলভুক্ত হওয়া জরুরী ... আমার অনুরোধ এই যে, আপনারা সকলে একযোগে উক্ত খাটি মুসলমান ও প্রকৃত প্রজা দলের এবং জমিয়তে ওলামার মনোনীত প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আইন সভায় পাঠাবেন। আশা করি আমার এ অনুরোধ রক্ষা করে আপনারা কেবলমাত্র মুসলিম দলের মনোনীত প্রার্থীগণকে ভোট প্রদান করবেন।

 à¦¤à¦¿à¦¨à¦¿ শুধু মুসলিম লীগের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করে ক্ষান্ত হননি। তিনি জমিয়তে ওলামার পক্ষ থেকে ৪৪ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন পত্র প্রদান করেন। এভাবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

হজরত মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকী

হজরত মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকী( ১৯০৩-১৯৭৭) ছিলেন ফুরফুরার পীর হজরত মাওলানা অবুবকর সিদ্দিকীর সুযোগ্য পুত্র। পিতার অবর্তমানে জমিয়ত- উলামায়ে বেঙ্গল ও অসাম-এর সভাপতির দায়িত্বভার অর্পিত হয় তাঁর উপরে। তিনিও তাঁর পিতার ন্যায় পাকিস্তান আন্দেলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৪৫ সালে কলিকাতায় অনুষ্ঠিত জমিয়তের ১ম অধিবেশনের উদ্বোধন তিনিই করেন। মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যই ঐ জমিয়ত গঠিত হয়েছিল। মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকী সেই দায়িত্ব পুরাপুরি পালন করেছিলেন।

সিলেট রেফারেন্ডামে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট ঘোষণা করল যে উপমহাদেশের শাসন ক্ষমতা পাকিস্তান ও ভারত ডমিনিয়ন এই দুই দেশের হাতে অর্পণ করা হবে। এ ঘোষণায় এ শর্তও জুড়ে দেয়া হয় যে, আসামের সিলেট জেলা এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ পাকিস্তান ভুক্ত হবে, না, কি ভারতের অঙ্গ রূপে থাকবে, সে বিষয়টা স্থানীয় অধিবাসীদের ভোটে নির্ণয় করা হবে।

গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিন পূর্ব থেকে আসাম মুসলিম লীগ ও বেঙ্গল মুসলিম লীগের নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সিলেটে সমবেত হতে থাকেন। এ সময় পাকিস্তান সমর্থক বহু আলেম সিলেটকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। এর মধ্যে ছিলেন ফুরফুরার পীর হজরত মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকী। ১৯৪৬ সালে আইন সভার নির্বাচনে আব্দুল হাই সিদ্দিকী সাহেবের হুঁশিয়ারি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যময়। তিনি বলেন, ‘‘আজ ভারতের সকল মুসলমানের লাজেম হইয়া পড়িয়াছে মুসলিম লীগকে শক্তিশালী করিয়া তোলা। ইহা আমার ব্যক্তি বিশেষের নির্দেশ নহে। ইহা মহান আল্লাহর কালাম কুরআন মজিদেরই বিধান। দিনের আরাম ও রাতের বিশ্রামকে হারাম করিয়া লীগ আন্দোলনে সকলকে ঝাপাইয়া পড়িতে হইবে। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করিতেছে। এই নির্বাচনের ভবিষ্যৎ মুসলিম লীগ জয়ী হইলে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। পরাজিত হইলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।” এভাবে পীর সাহেব পাকিস্তান অর্জনের আন্দোলনে নিজকে জড়িয়ে আন্দোলনকে গতিশীল করেছিলেন।

হজরত মাওলানা মুহাম্মাদ রুহুল আমীন

মাওলানা মুহাম্মাদ রুহুল আমীন ছিলেন হজরত মাওলানা আবুবকর সিদ্দিকীর অন্যতম প্রধান খলিফা এবং তিনি তাঁর নির্দেশে ওয়াজ নসিহত, সাংবাদিকতা ও সাহিত্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন আঞ্জুমানে ওয়ায়েজীন-এ বাংলার সেক্রেটারি ও প্রধান প্রচারক। হজরত মাওলানা মুহাম্মাদ রুহুল আমীন ছিলেন স্বতন্ত্র মুসলিম জাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক। তিনি তার মুর্শিদ মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকীর পথ ধরে মুসলিম লীগের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। আলেম সমাজে মুসলিম লীগকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে মাওলানা রুহুল আমীনের অবদানই ছিল সর্বাধিক। মুসলিম লীগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ১৯৪১ সালে তিনি এক আলোচনায় বলেন, “বাংলার মোছলমানের এখন বাঁচিবার একমাত্র উপায় মুসলিম লীগ। তাহাদিগকে এই লীগের রজ্জু মজবুত করিয়া ধরিতে হইবে। প্রকৃত ঈমানদার মোছলমানের কাছে শয়তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের কোনো মূল্য নাই। সুতরাং বাংলার মোছলমানের এখন শ্রেষ্ঠ কর্তব্য সর্বপ্রথম দলাদলি, বিবাদ, বিসম্মাদ ভুলিয়া লীগের পতাকা তলে সমবেত হইয়া লীগকে আরও শক্তিশালী করা।” মাওলানা দুই দফা বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এই মহান সাধক ১৯৪৫ সালের ২ নভেম্বর ইন্তিকাল করেন।

হজরত নেসারুদ্দীন আহমদ (শর্ষিণার পীর সাহেব)

শর্ষিণার পীর হজরত মাওলানা নেসারুদ্দীন আহমদ পাকিস্তান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩০ সালের ৫-৭ মার্চ ফুরফুরায় অনুষ্ঠিত জমিয়তে ওলামায়ে বাংলার ৫ম বার্ষিক অধিবেশনে হজরত নেসারুদ্দীন আহমদ সভাপতিত্ব করেন। উক্ত সভায় সার্দা বিলের প্রতিবাদ করা হয়। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান ইস্যুভিত্তিক নির্বাচনের প্রাক্কালে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এর সদস্যরূপে পীর সাহেব পাকিস্তান আন্দোলনের সহায়তা ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা প্রদর্শন করেছিলেন। ১৯৪৬ সালের আইন সভার নির্বাচন পূর্ববর্তী সময় পীর সাহেব তাঁর মুরীদদের যে নির্দেশ দেন তা স্মরণীয়। তিনি বলেন, “বিগত ২৮ অক্টোবর কলিকাতা ওলামায়ে ইসলাম কনফারেন্সে আমার খোতবায়ে সাদারাতে মুসলিম লীগের প্রতি আমার সমর্থন ও উহার ইসলাহের কথা ব্যক্ত করিয়াছি। বর্তমানেও আমি মুসলিম লীগকে মুসলমানের জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং উহার লক্ষ্য মুসলমানের জাতীয় আত্মপ্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র অর্থাৎ পাকিস্তান লাভের পন্থা হিসেবে স্বীকার করিতেছি। আমি সমগ্র মুসলমান ভ্রাতাকে এই জেহাদে এক যোগে কাজ করার জন্য অনুরোধ করিতেছি।” ১৯৪৫ সালে নিখিল ভারত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর তৃতীয় অধিবেশনে মাওলানা বলেন, “ওলামায়ে কেরামের প্রচারের ও প্রভাবের ফলেই বাংলা আসাম পাঞ্জাব প্রভৃতি স্থানে আজ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হইতে চলিতেছে। ইহার বুনিয়াদ পড়িয়াছে বহু শতাব্দী পূর্র্বে। খাজা অহমদ সেরহিন্দী মোজাদ্দেদে আলফেসানী (রহ.), মাওলানা ইসমাইল শহীদ, মাওলানা সৈয়দ আহমদ বেরলভী, মাওলানা ইমাম উদ্দীন নোয়াখালভী, সূফী নূর মেহাম্মদ ইসলামাবাদী, সূফী ফতেহ আলী সাহেব, মাওলানা কেরামত আলী সাহেব জৈনপুরী, মাওলানা কাসেম সাহেব, মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী, আমার পীর মাওলানা শাহসূফী আবুবকর সিদ্দিকী সাহেব যে অন্দোলন করিয়াছেন এবং যাহার জন্য বহু আলেম দুঃখ বরণ করিয়াছেন সেই আন্দেলনের মূল শিক্ষা হইতেছে পাকিস্তান।”

মাওলানা আশরাফ আলী থানভী

উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পীর ও আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ছিলেন মুসলিম লীগের সমর্থক। তিনি ১৯৩৮ সালে পাটনায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক অধিবেশনে মুসলিম লীগের সমর্থনে একদল প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে ফেব্র“য়ারিতে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ -এর সভায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি তাতে যোগদানের অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে এ ধারণা পোষণ করছি যে আমার মতে মুসলমান বিশেষত আলেমদের পক্ষে কংগ্রেসে যোগদান করা ধর্মের দিক থেকে ধ্বংসাত্মক কাজ। তাই কংগ্রেসের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করা অত্যন্ত জরুরী। আলেমদের উচিত মুসলমানদের জন্য নিখুঁত ধর্মনীতি ভিত্তিক স্বতন্ত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠ করা। কংগ্রেসে মুসলমানদের যোগদান করা বা তাতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করা আমার মতে ধর্মের দিক থেকে তাদের মৃত্যুর শামিল।

এভাবে শত শত আলেমদের সাথে মুসলিম জাতির বিভিন্ন আধ্যাত্মিক নেতা ও পীর মাশায়েখগণ পাক ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে মুসলমান জাতির মঙ্গল সাধনার পথকে সহজ করেছেন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।