সংবাদ শিরোনামঃ

নতুন কৌশলে আন্দোলনের মাঠে ২০ দলীয় জোট ** সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে বিএনপি ** ভরাডুবির আশঙ্কা আ’লীগে ** নেতানিয়াহুর জয় মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট ঘনীভূত করবে ** গণতন্ত্র ছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় না ** স্বাধীনতা হোক অর্থবহ ** আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মার্কিন দলিলপত্র ** আগৈলঝাড়ায় খাল বিল বেদখল ** গ্রেফতার নির্যাতন উপেক্ষা করে সারাদেশে হরতাল অবরোধ অব্যাহত ** রাজনীতি ও সহিষ্ণুতা ** আমাদের স্বাধীনতার ৪৪ বছর **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ চৈত্র ১৪২১, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৫

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত॥
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত প্রথমে পরোক্ষ তারপর প্রত্যক্ষ বা সরাসরিভাবে অংশগ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ভারতের প্রথম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় ২৬ মার্চ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং তাঁর সরকারের উদ্বেগের কথা জানান। পরদিন ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক হয়। রাজ্যসভায় এক বক্তৃতায় ইন্দিরা গান্ধী সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার কথা বলেন। নইলে পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড ভারতের জন্য যে সুযোগ তৈরি করেছে, তা হয়তো নষ্ট হবে। এই সতর্কতামূলক মনোভাব নিয়ে ভারত নিজের গণমাধ্যম, প্রতিনিধি ও অন্যান্য উপায় কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ভারতের ওপর এর প্রভাব, বিশেষত উদ্বাস্তুদের প্রসঙ্গ তুলে ধরতে থাকে। কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতেও তারা দেরি করেনি।’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতের পর থেকে ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে বিষয়টি এমন নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামেও তারা অব্যাহতভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। ১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ূব খান  সরকার উৎখাত ও পাকিস্তানকে ভারতের সহযোগিতায় বিভক্ত করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ‘ষড়যন্ত্র’র অভিযোগে একটি মামলা করেছিলেন। রাজনৈতিক কারণে সেই সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রচারণা চালানো হতো মামলটি মিথ্যা। কিন্তু আসলে একটি ছিলো বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিকল্পণারই একটি অংশ। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ তাঁর প্রসঙ্গে বলেন,‘আমাদের জাতীয় স্বার্থেই আমরা শিশুদের কিছু কিছু ভুল বা অসত্য তথ্য শেখাই। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হল সেরকমই একটি সত্য মামলা যা শিশুতোষ বইতে মিথ্যা বলে প্রকাশ করা হয়। তিনি বললেন, সেই সময় সংবাদ সংগ্রহের সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাস করেছিলেন, ষড়যন্ত্রটি আদতেই কি সঠিক ছিল? বঙ্গবন্ধু নাকি বলেছিলেন, ষড়যন্ত্রটি সঠিক ছিল।’

একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হকের বড় ভাই আমিনুল হক। তিনি অনুষ্ঠানটির সময় বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনিও নাকি তার ভাইকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছিলেন, ঘটনা সঠিক ছিল। কিন্তু সকল ঘটনার জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সেই সময়ের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও বর্তমানের সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী মহান সংসদেই ঘোষণা করেছিলেন, এ ঘটনা পুরোপুরি সত্য ছিল। শুধু তাই নয়, ২০১১ সালে তার লেখা ‘সত্য মামলা আগরতলা’ বইয়ের ভূমিকাতেই তিনি বলেন,‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমরা যাঁরা মামলাটিতে অভিযুক্ত ছিলাম, ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি তাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। কারণ আমরা ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মতি নিয়ে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠন করেছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, একটি নির্দিষ্ট রাতে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা বাঙালিরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব কটি ক্যান্টনমেন্টে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্র কেড়ে নেব, তাদের বন্দী করব এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করব। শওকত আলীর  লেখা প্রথমা প্রকাশন থেকে ২০১১ সালে প্রকাশিত বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৭। এর পঞ্চাশ পৃষ্ঠারও বেশি হল সংযোজনী ও পরিশিষ্ট। বইটির  ১৪২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়লে মামলার তদন্ত, বিচার ও বিচার প্রক্রিয়ার পরিণতির কথা জানা যায়।

সরকারি কাগজপত্রে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যরা’ নাম থাকলেও পরিকল্পিতভাবে মামলাটিকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে প্রচার করে পাকিস্তানি শাসকগণ বাঙালিদের ভারত বিরোধী মনোভাবকে উসকে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন হয়েছিল যে আইয়ূব শাহি শুধু বঙ্গবন্ধুকেই নয়, অভিযুক্ত ৩৫ জনকেই ছেড়ে দিতে ও মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। আর এর পরপরই যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, স্বৈরাচারী আইয়ুব খানকেই সে অভ্যুত্থান ক্ষমতাচ্যুতই শুধু নয়, পাকিস্তানচ্যুত পর্যন্ত করেছিল।

১৯৬১ সাল থেকেই কতিপয় বাঙালি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অফিসার বাংলাদেশকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন করার জন্য রীতিমত গোপন সংস্থা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিল। এ জাতীয় কাজের অগ্রভাগে ছিলেন নৌবাহিনীর কয়েকজন সিনিয়র বাঙালি অফিসার যাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডা. খুরশীদ উদ্দীন আহম্মদ যিনি প্রেষণে নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন ও লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (পৃষ্ঠা-৯৮)।

সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সর্বপ্রথম যে পরিকল্পনা বা সংগঠনটি তৈরি হয়েছিল তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি সেনাবাহিনীর মেজর পদতুল্য নৌ কর্মকর্তা ছিলেন। শওকত আলী ১৯৬৬ সালের জুন মাসে কুমিল্লায় কর্মরত থাকাকালীন আর্মি রিক্রুটিং মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন ডা. সামসুল আলমের কাছ থেকে এ পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন (পৃষ্ঠা-৯৩)। লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য উদগ্রীব থাকলেও একটি সফল অভ্যুত্থান করার মতো মেধাজ্ঞান ও সাংগঠনিক দক্ষতা কিংবা যোগাযোগ পদ্ধতি তার জানা ছিলনা। তার পরিকল্পনার সিংহভাগ সেনাবাহিনীরি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের নিয়ে হলেও তিনি তাদের সাথে কার্যত কোনো যোগাযোগই করতে পারেননি । তবে তিনি মনে করতেন যে সবাই তার মতো করে কাজ করবে।

পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন শওকত আলী, ডা. ক্যাপ্টেন সামসুল আলম, ক্যাপ্টেন খোন্দকার নাজমুল হুদা ও আলীমসহ চারজন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা কুমিল্লার দাউদকান্দি ডাকবাংলোতে বসে এ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করে ধীরে চলার নীতি অবলম্বন করেন। তারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ধরা পড়ার ভয়ে আপাতত তাদের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নেন।(পৃষ্ঠা-১০৪)এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পরিবল্পনার সাথে প্রথম দিকে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোনো সংযোগই ছিল না। পরিকল্পনাকারীগণ সর্বপ্রথম এর সাথে অবসর প্রাপ্ত কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের বিষয়টিতে উৎসাহিত ছিলেন না। বরং নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনের ফলে স্বায়ত্তশাসন আদায়ের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো বিপ্লবই রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাইরে ফলপ্রসু ও স্থায়ী হতে পারে না। তাই দাউদকান্দির বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমানকেই সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল: রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিষয়ে আমরা সবাই একমত ছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আমাদের রাজনৈতিক নেতা এবং তার নেতৃত্বেই স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। যদিও আমাদের মধ্যে কেউই তখন পর্যন্ত মুজিব ভাইকে সামনাসামনি দেখিনি বা তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। তা ছাড়া ওই মুহূর্তে তিনি কারাগারে ছিলেন।(পৃষ্ঠা-১০৬)

ক্যাপ্টেন শওকত আলী ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে করাচিতে মালির ক্যান্টমেন্টের অর্ডিন্যান্স স্কুলের ইন্সট্রাক্টর হিসেবে বদলী হয়ে যায়। কিন্তু এর মাঝে অন্যরা কোনো না কোনোভাবে তাদের পরিকল্পনা চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমের অতি আগ্রহের ফলেও অন্যান্যদের ধীরে চলা নীতির জন্য পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারছিল না। ইতোমধ্যেই সেনা গোয়েন্দারা বিষয়টি জেনে ফেলেছিল।

 à¦†à¦‡à¦à¦¸à¦†à¦‡ ১৯৬৬ সালের শুরুতে বিপ্লবী সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছিল। আইএসআই সঙ্গে সঙ্গে মোয়াজ্জেম গ্রুপের মধ্যে চর ঢুকিয়ে দিয়েছিল এবং সেই চর বিপ্লবীদের একজন হিসেবে ১৯৬৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোয়াজ্জেমের সঙ্গে কাজ করেছিল। চর কর্তৃক সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার পরই পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের গ্রেফতার কার্যক্রম শুরু করেছিল।(পৃষ্ঠা-১০৪)

পরবর্তী কার্যক্রমগুলো সবার জানা। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামি করে ৩৫ জন অভিযুক্তের বিচার শুরু হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের একটি অফিসার্স মেসে। অভিযুক্তদের সেনা আইনে বিচারের পায়তারা চললেও পরে দণ্ডবিধির দেশদ্রোহিতার অপরাধে বিচার করা হয়। গঠন করা হয় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এস এ রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। বেসামরিক আদালত হলেও তার নিরাপত্তা ও পদ্ধতি ছিল সামরিক ধাঁচের।

বিচার চলাকালে দুই জন অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক ও ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হককে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গার্ড কমান্ডার হাবিলদার মঞ্জুর হোসেন গুলি করে হত্যা করেন। এক দিকে বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকে দেশদ্রোহিতার জন্য ফাঁসিতে ঝোলানোর পায়তারা অন্যদিকে অভিযুক্তদের বিনা বিচারে হত্যা করা সব কিছু মিলে সারাবাংলা ফুঁসে উঠল। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গণরোষে পড়ে ঢাকা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের বাসা থেকে নাইট ড্রেস পরা অবস্থায় পালিয়ে তেজগাঁ বিমান বন্দরে আশ্রয় নেন। লাহোরগামী প্রথম বিমানটি ধরে তিনি সেই যে প্রাণ নিয়ে পাকিস্তান পলায়ন করেন, বিচার তো দূরের কথা ঢাকাভিমুখী হওয়ার চিন্তাও আর কোনো দিন করেননি।(পৃষ্ঠা-১৪৬)তবে বিচারের শুরু থেকেই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু তার দূরদর্শিতায় সব কিছুই আঁচ করতে পেরেছিলেন। পাকিস্তানি শাসককূল যে বাঙালি নেতৃত্বের বিচার করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং তাদের অবস্থা তলে তলে ছিল ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচির’ অনুরূপ- তা বঙ্গবন্ধু সহজেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই বিচারের ফলাফল নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথাই ছিল না। বরং তিনি এই মামলায় পাকিস্তানিদের ভরাডুবির পর কি হবে সে নিয়েই পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়ঃ

এখান থেকে বের হয়ে আমি জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়ার জন্য একটা নির্বাচন করব। সেই নির্বাচনে আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা আমাদের হাতে ক্ষমতা দেবে না। তখনই একটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে। সেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থেকো। (পৃষ্ঠা-১৩৩)

আগরতলা পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ছিলো তা অব্যাহত থাকে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে লিখেছেন, ‘একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের জনগণের ওপর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা মৃত্যুও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। স্বভাবতই মানুষ এমন আবহ থেকে পালাতে চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতই হয়ে ওঠে আশ্রয়স্থল। এর পেছনে ভারতের গণতন্ত্র বা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি আবেগ বা উৎসাহের ভূমিকা যতটা না ছিল, তার চেয়ে মুখ্য ছিল ভৌগোলিক নৈকট্য এবং কৌটিল্যের ভাষায় এই যে, ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’। এপ্রিল নাগাদ প্রায় তিন লাখ মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ শরণার্থী হতে শুরু করে। ফলে গুণগতভাবে একদম ভিন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। এ সংকট তখন বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ কাজে ভারত কালবিলম্ব করেনি।’

ভারত প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর। তারা অংশগ্রহণ করার পরই শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করার পর পাকিস্তান বাহিনীর মনোবল ভাঙতে শুরু করে। খুব দ্রুত বিজয়ের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে অগ্রসর হয় মুক্তিযুদ্ধ।  ভারতের যোগদানের মাত্র তেরো দিনের মাথায় বিজয় অর্জিত হয়।  ভারতীয় মিত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন জগজিত সিং অরোরা, ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ’, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাগত সিং, মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব” আর এই মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। তাঁর পুরো নাম জ্যাক ফ্রেডেরিক রালফ জ্যাকব। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাগদাদী (ইরাক) ইহুদি বংশদ্ভুত ইহুদি। তাঁর জন্ম কলকাতায়। তাঁর সামরিক কৌশলের কাছে হেরে গিয়েই আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিলো পাকিস্তানী জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী। তিনি জেনারেল নিয়াজিকে বলেন, “জেনারেল, আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, যদি আপনি পাবলিকের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেন ও শর্তগুলো গ্রহণ করেন, আমরা আপনাকে এবং আপনার সৈন্যদের দেখব। ভারত সরকার কথা দিয়েছে আপনার ও আপনার সিভিলিয়ানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আপনি যদি আত্মসমর্পণ না করেন, আমরা কোনো দায়িত্ব নিব না। আমি আপনাকে ৩০ মিনিট সময় দিব। আপনি যদি মেনে না নেন, আমার কোনো উপায় নাই কিন্তু যুদ্ধবিগ্রহ এর পুনরারম্ভ অর্ডার দিতে চাই।” এ কথা বলার পর তিনি পরে জ্যাকব চিন্তায় পরে যান : “যদি তিনি (নিয়াজি) না করেন, আমি কি করব? আমার হাতে কিছুই নেই। নিয়াজির আছে ২৬,৪০০ সৈন্য আর আমাদের আছে প্রায় ৩,০০০ সৈন্য।”

পাকিস্তান এর প্রধান বিচারপতি হামিদুর রহমানের যুদ্ধ তদন্ত কমিশনের প্রধানের কাছে ছত্রভঙ্গ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখার জিজ্ঞাসা ছিল, কেন জেনারেল নিয়াজি এ ধরনের একটি লজ্জাজনক পাবলিক নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ স্বীকার করেছে, যখন তার ঢাকার মধ্যে ২৬,৪০০ সৈন্য ছিল এবং ভারতের মাত্র কয়েক হাজার সৈন্য ছিল?” জেনারেল নিয়াজি উত্তরে বলেছেন : আমি জ্যাকব দ্বারা ব্লাকমেইলড হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হই ।

তারপর জেনারেল জ্যাকব তার বিবৃতিতে বলেন,‘পূর্ণ ক্রেডিট মুক্তিযোদ্ধা এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। তারা জয়ের জন্য আসল কাজটি করেছেন এবং তাদের বীরত্বের জন্য জাতি স্বাধীনতা লাভ করেছে।’

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।