সংবাদ শিরোনামঃ

নতুন কৌশলে আন্দোলনের মাঠে ২০ দলীয় জোট ** সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে বিএনপি ** ভরাডুবির আশঙ্কা আ’লীগে ** নেতানিয়াহুর জয় মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট ঘনীভূত করবে ** গণতন্ত্র ছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় না ** স্বাধীনতা হোক অর্থবহ ** আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মার্কিন দলিলপত্র ** আগৈলঝাড়ায় খাল বিল বেদখল ** গ্রেফতার নির্যাতন উপেক্ষা করে সারাদেশে হরতাল অবরোধ অব্যাহত ** রাজনীতি ও সহিষ্ণুতা ** আমাদের স্বাধীনতার ৪৪ বছর **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ চৈত্র ১৪২১, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৫

রাজনীতি ও সহিষ্ণুতা

॥ প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ॥
দেশে পারস্পরিক সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে এক ধরনের দুর্ভিক্ষ। সমাজে সব আছে, নেই শুধু সুসম্পর্কের সবুজ আচ্ছাদন। অসহিষ্ণুতার উত্তাপে চারদিক খাঁ খাঁ করছে। বাক্যবিনিময়ে নেই কোমলতার কোনো চিহ্ন। কথোপকথনে গালাগালের প্রাবল্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠেছে। সমাজে সব সময় কিছু ব্যক্তি থাকে, যাদের কথাবার্তা দুর্গন্ধময়। সব কথায় তাদের ঝগড়ার গন্ধ। তারা এত দিন ছিল ব্যতিক্রম। এখন তারাই সমাজের স্বাভাবিক মানুষ। বাংলাদেশে এই রূপান্তর অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এ দেশের মানুষ কিন্তু মিষ্টি কথা শুনতে অভ্যস্ত। ভালো কথার প্রতি তাদের দুর্বলতার অন্ত নেই। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলেও সেই অভিযোগ পেশ করা হয় গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায়। রুচিশীল ও শালীন কথাবার্তার মাধ্যমে। অশালীন উচ্চারণ সব সময় ঘৃণ্য বলে বিবেচিত। আজ সেই বাঁধন টুটেছে। এই দুঃসময় কাটাব কিভাবে? এ সমাজে কেউ একা থাকতে চায়নি। অনাত্মীয় পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গেও মনগড়া সম্পর্ক তৈরি করে সবাই বসবাস করেছে। কাউকে ভাইবোন সম্বোধন করে, কাউকে বা চাচা-চাচি, আবার কাউকে দাদা-দাদি, খালা-খালু বলে ডাক দিয়ে, অনাত্মীয়কে আত্মীয় করে, একত্রে কাল কাটিয়েছে সবাই। দেশের শ্রেষ্ঠতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভবত এই সনাতন ট্রাডিশনকে অনুসরণ করেই সম্বোধনের ক্ষেত্রে ভাই শব্দটি প্রয়োগ করা হয়। একজন অনুজতুল্য জুনিয়র সব সময় তার সিনিয়রকে তার নামের শেষে ভাই শব্দ প্রয়োগ করেই সম্বোধন করেছে। আজও তা বহাল রয়েছে। মোট কথা, এই সমাজে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই সবাই বেঁচে থেকেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। অনাত্মীয়কে আত্মীয় করে, পরকে আপন করে, দূরকে কাছে টেনে, পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সূত্রে আবদ্ধ হয়ে সমাজজীবনকে বাসযোগ্য করে তুলেছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। সহনশীলতা এ ক্ষেত্রে কাজ করেছে মূল্যবান মণিমুক্তার মতো। কোমলতা ছিল কাক্সিক্ষত মূল্যবোধ। অপরের প্রতি শ্রদ্ধার ভাব ছিল সামাজিক সম্পদ। উত্তেজিত না হয়ে ধীরস্থিরভাবে বক্তব্য উপস্থাপন, কারো মর্যাদা ক্ষুণœ না করে প্রতিবাদ করা, কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলেও অতি সাবধানে তা পেশ করা বরাবরই এ সমাজে প্রশংসিত হয়ে এসেছে। কারো সঙ্গে প্রথম দেখায় সালাম, আদাব জ্ঞাপন ও কুশলাদি জানার আগ্রহ ছিল সামাজিক শিষ্টাচার। রাজনীতি ও সহিষ্ণুতা প্রাচ্য দেশে সামাজিক মূল্যবোধ (Social Values) যে ভূমিকা পালন করেছে, পাশ্চাত্যে সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে রাজনৈতিক মূল্যবোধ বা রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Political Culture)। ব্রিটেনে এটি সংসদীয় সংস্কৃতি (Pragmatism) নামে পরিচিত। আমেরিকায় তা প্রয়োগবাদ ও পশ্চিম ইউরোপে যুক্তিবাদ (Pragmatism) (Rationalism)  à¦¨à¦¾à¦®à§‡ চিহ্নিত। সংসদীয় সংস্কৃতির মর্মমূলে রয়েছে এই ভাবনা যে যা শুনে আমি ব্যথিত হই, তা অন্যের জন্য আমি উচ্চারণ করব না। যে কথা আমার জন্য অবমাননাকর, সে কথা আপনার জন্য আমি উচ্চারণ করব না। এভাবে শ্লীল ও অশ্লীলের পার্থক্য রচিত হয়েছে। যা সুরুচিকর, যা সুনীতিসমর্থিত, তা-ই উচ্চারিত হওয়া প্রয়োজন। আমেরিকায় উইলিয়াম জেমস, চার্লস পিয়াস, মার্ক টোয়েন প্রমুখ চিন্তাবিদের হাতে প্রয়োগবাদের সার্থক বাস্তবায়ন ঘটেছে। এই মতবাদে কোনো বক্তব্য বা উক্তি বা ধারণা বা নীতি মানবকল্যাণে কতটুকু প্রাসঙ্গিক, সেই মানদণ্ডে তার বিচার হয়। প্রয়োগবাদিতায় এই প্রশ্ন তুলে ধরা হয়, আপনি যা বললেন, তা যে সত্য, তা প্রমাণ করুন (Show me)। অসত্য উচ্চারণ পরিহার করুন। অরুচিকর বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য। কোনো মানহানিকর কথা পরিত্যাজ্য। ইউরোপের যুক্তিবাদও খানিকটা এমনই। যুক্তিই কথা বলবে, তা যত মৃদুস্বরে উচ্চারিত হোক না কেন। ঝগড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার বক্তব্যে যুক্তি থাকলে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই হয়ে তা-ই হয়ে উঠবে সত্যের সোনা। সুতরাং অযথা চিৎকার করবেন কেন? কেন বিশ্রী মুখ ব্যাদানে অপরকে বিব্রত করবেন। আপনি যুক্তির ভিত্তিতে অগ্রসর হোন, তা যতই ছোট হোন অথবা হোন প্রভাবশালী সম্রাট বা দিগি¦à¦œà§Ÿà§€ মহাবীর। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে তাঁরা কাছাকাছি এসেছেন। তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হন বটে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে হাতে হাত মিলিয়ে, একে অপরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বিদায় হন। আমাদের দেশেও এমনই পরিবেশ বিরাজ করত সামাজিক মূল্যবোধের প্রভাবে। বর্তমানের নির্মমকালে সামাজিক মূল্যবোধের বড্ড বেশি আকাল পড়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সমাজের উঁচু স্তরেই এই আকালের প্রকোপ বড্ড বেশি মনে হয়। রাজনীতিকদের কেউ কেউ মুখে যা আসে তা-ই বলেন, প্রতিপক্ষের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করেন। অকথা ও কুকথার কণ্টক ছড়িয়ে দর্শক-শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পল্টন ময়দানে অথবা অন্য কোনো স্থানে, জনসভায়। পরবর্তী পর্যায়ে পল্টন ছাড়িয়ে তা জাতীয় সংসদে প্রবেশ করে। যেকোনো অধিবেশনে অনুষ্ঠিত সংসদ-বিতর্কের দিকে দৃষ্টি দিন, এর ভূরি ভূরি প্রমাণ মিলবে। আমাদের জাতীয় নেতাদের সম্পর্কেও কোনো কোনো রাজনীতিকের অশ্লীল বক্তব্য চোখে পড়বে। সম্প্রতি সমাজের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে তেমনি অসংসদীয় বক্তব্য। মাত্র কয় দিন আগে বিনিয়োগ বোর্ডের সম্মানীয় চেয়ারম্যান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল তার প্রকাশ যেভাবে ও যে ভাষায় হয়েছে, তা-ও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাঁদের সবাই কৃতী ব্যক্তি। সবাই সমাজে সম্মানীয়। তাঁদের কাছ থেকে সবার প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাঁদের মুখে যা উচ্চারিত হয়েছে, তা রুদ্ধদ্বার কক্ষে হলে কেউ তা জানত না। কেউ কিছু বলত না। কিন্তু জাতীয় দৈনিকের সংবাদ সংগ্রাহকদের ডেকে-হেঁকে, সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করে প্রতিপক্ষকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে, শুধু ঘায়েল করার লক্ষ্যে যেসব শব্দ উচ্চারণ করেছেন, তা নিজেরা যদি আর একবার নিজ কানে শোনেন, তাহলেই অনুভব করবেন অসহিষ্ণুতার কোন পর্যায়ে আমরা উপনীত হয়েছি। সারা জীবন কাটিয়েছি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। গালমন্দ খেয়ে। কোনো কোনো সময় ধমক দিয়ে, ধমক খেয়েও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনে অনেক সময় তাদের দেখা মিলবে। বিভিন্ন দল-মতের অনুসারী তারা। একসঙ্গে চা খায়। তর্ক করে। কোনো কোনো সময় ঝগড়া করে। ঝগড়া থেকে হাতাহাতি। মাঝেমধ্যে রক্তারক্তিও ঘটে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে আবার তারা একত্র হয়ে একসঙ্গে চা খায়, আবারও তর্ক করে। তাদেরও প্রতিপক্ষ রয়েছে। প্রতিপক্ষকে তারা কিন্তু শত্রু জ্ঞান করে না। স্থায়ী শত্রুরূপে তো কখনো নয়। এসব কারণেই তাদের দিকে তাকিয়ে আশান্বিত হই। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। আমাদের সমাজটা এখনো অনগ্রসর। অনেক ক্ষেত্রেই পশ্চাৎপদ। তাই এ সমাজে আলোর গতিটা যেমন কেন্দ্র থেকে প্রান্তে যায়, প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে নয়, তেমনি অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকারও কেন্দ্র থেকে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের ভয়টা এইখানে। এ জন্যই আমরা ভীত হই। সন্ত্রস্ত হই। যাদের কাজকর্ম ও কথাবার্তা সামাজিক জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যাদের শালীনতাবোধ ও সহিষ্ণুতা সবার জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে তাদের একটু বেশি সতর্ক হওয়াই বাঞ্ছনীয়, নয় কি? কোনো অভিযোগ করছি না। তবে অনুযোগ রইল। বাচ্চাদের ছেলেমানুষি উপভোগ্য। বুড়োদের ছেলেমানুষি নিছক বিরক্তিকর। অন্তত এ সমাজে তা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। নিজেদের গবেষণার ফল বিবেচনার ভার অপরের ওপর ছেড়ে দিন। নিজেরাই কর্মের বিচারক নাই বা হলেন। এখন সহনশীলতার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজন এখন অনেক বেশি ধৈর্যের। প্রচুর সমঝোতার। রুচিশীলতার। পারস্পরিক হৃদ্যতার। একত্রে পথ চলার। মাথা ঠাণ্ডা রাখার। উত্তেজিত না হওয়ার সময় তো এটিই।

লেখক : সাবেক ভিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।