মা-বাবার সামনে থেকে তুলে নিয়ে চাঁপাইতে শিবির নেতা তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা : চাঁপাইনবাবগঞ্জে র‌্যাবের হেফাজতে শিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিন নিহত হয়েছে। সে পৌর এলাকার চরমোহনপুর গ্রামের এনামুল হকের ছেলে এবং সিটি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজের শিবিরের সভাপতি। গত ২৬ জানুয়ারি সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

র‌্যাবের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামান পাভেল ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও মৌখিকভাবে জানান, গত ২৬ জানুয়ারি  সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ফুলকুঁড়ি ইসলামিক একাডেমি সংলগ্ন এলাকা থেকে আসাদুল্লাহ তুহিনসহ আরো ৪ জনকে আটক করা হয়। পরে সদর উপজেলার লালাপাড়া এলাকায় ককটেল উদ্ধারে গেলে র‌্যাবের গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালানোর সময় বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় আহত হলে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু নিহতের পরিবারের দাবি সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে আসাদুল্লাহকে বাড়ি থেকে পরিবারের সবার সামনে পেটাতে পেটাতে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব। যা ঐ এলাকার শতশত লোক দেখেছে। গত ২৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে লোকমুখে আসাদুলের মৃত্যুর কথা জানতে পারে তারা। তার মা বলেছে, আমার ছেলেকে যখন ঘরে ঢুকে র‌্যাব সদস্যরা পেটাতে থাকে তখন আমি আল্লাহকে চিৎকার করে ডাকতে থাকি তখন ঐ পিচাশরা বলে উঠে আল্লাহকে ডেকে কোনো লাভ নেই, আল্লাহ আর বাঁচাতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, তারা শুধু তাকে তুলে নিয়ে গেছে তাই নয় তার সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও তারা ছিড়ে ফেলে। পাশের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তারের ছেলে সরওয়ার্দী বলেছেন, আমাদের শত শত লোকের সামনে দিয়েই র‌্যাবরা তুহিনকে গাড়িতে করে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়।

এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার র‌্যাবকে দিয়ে দস্যুর মতো আচরণ করাচ্ছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, জমির দলিল, সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জ্বালিয়ে দিচ্ছে। খুন, গুম করে সরকার যদি মনে করে জনতার আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেবে তাহলে সরকার বোকার স্বর্গে বাস করছে। আমি অবিলম্বে খুন, গুম, ঘরবাড়ি জ্বালানো কাজে র‌্যাবকে ব্যবহার করা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

অন্যদিকে শিবিরের শহর শাখার সভাপতি গোলাম মোস্তফা দাবি করেন, সরকার র‌্যাবকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে তুহিনকে। খুন গুম করে সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না। তুহিন হত্যার প্রতিবাদে গত ২৮ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে রাজশাহী বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালিত হয়েছে ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অন্যায়ভাবে ৩ ছাত্রকে আটকের পর আদালতে না তোলায় পরিবার-স্বজনদের উদ্বেগ : ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে র‌্যাব কর্তৃক অন্যায়ভাবে আটকের পর ৩ ছাত্র রাফি, মাহদি ও আল আমিনকে গত ২৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার আদালতে না তোলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন তাদের অভিভাবকেরা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, আমাদের ৩ সন্তান রাফি, মাহদি ও আল আমিনকে গত সোমবার রাতে র‌্যাব আটক করলেও আদালতে না তোলায় আমরা উদ্বিগ্ন। গত সোমবার তাদের সহপাঠী মো. আসাদুল্লাহিল তুহিনকে সাথে নিয়ে আমাদের সন্তানদের গ্রেফতার করা হয়। ইতোমধ্যেই তুহিন খুন হয়েছে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আমাদের মনে হচ্ছে, তাদেরকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাতে অভিযানের নাম করে আইন বহির্ভূতভাবে হত্যা করতে পারে। আমাদের জানা মতে, আমাদের এই তিন সন্তান কোনো ধরনের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। এর পরও আমাদের সন্তানেরা যদি কোনো অপরাধ করেও থাকে, তাহলে এর জন্য দেশের আইন মেনেই বিচার হওয়ার কথা। আমরাও এটাই আশা করি। কিন্তু র‌্যাব বেআইনিভাবেই তাদের আদালতে হাজির করেনি। সেজন্য রাতেই র‌্যাব তাদেরকে বেআইনিভাবে হত্যা করতে পারে বলেও আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা সুবিচারের দাবিতে সরকার ও র‌্যাব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তারা আশা প্রকাশ করেন, এই ৩ ছাত্রকে অন্যায়ভাবে কোনো নির্যাতনও করা হবে না। তারা বলেন, আমাদের বিশ্বাস, সুবিচার হলে আমাদের নির্দোষ সন্তানেরা নিরপরাধ প্রমাণিত হবে এবং মুক্ত হয়ে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে  যেতে পারবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন, রাফির বাবা জালাল উদ্দিন, মাহদির বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও আল আমিনের বাবা রফিকুল ইসলাম।