সংবাদ শিরোনামঃ

নির্বাচনী বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে ** ত্রুটিপূর্ণ আইনে জামায়াত নেতাদের বিচার করা হচ্ছে ** রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিন ** সরকার দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ** দেশ আজ গভীর সঙ্কটে॥ প্রয়োজন দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ** জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নয় উৎপাদন বাড়ান ** আরো এক কাপুরুষ জেনারেলের কাহিনী ** দুঃস্থ সাংবাদিকতা ** নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ** সিলেট বগুড়া ও রাজশাহীতে শিবিরের মিছিলে পুলিশের গুলি ** কবি ফররুখ আহমদ এক দুঃসাহসী সিন্দাবাদ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪২১, ২৭ মহররম ১৪৩৬, ২১ নভেম্বর ২০১৪

আশরাফ জামান
হালাক পাতলা উচ্চতায় প্রায় ছ’ফুট লম্বা অত্যন্ত সুদর্শন এক যুবক। গায়ের রং দুধে আলতা মেশানো। চোখের বর্ণ নীল। যেকোনো লোক দেখলে হয়তো ভুল করে ইংরেজ বলবে। নাম ইসরাফিল। ভালো নাম মোহাম্মদ আলী ইসরাফিল। আমার বড় ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে ইসরাফিল ভাই দ্বিতীয়। বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলে সামান্য পুলিশ কনস্টেবল। অবসরপ্রাপ্ত একজন পুলিশের পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর ছিল। অবশ্য তিনি ছোটখাট ব্যবসা করতেন। গ্রামের বাড়িতে কিছু আবাদি জমি ছিল।

আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বৎসর আগের কথা। ইসরাফিল ভাই অত্যন্ত অর্থকষ্টের মধ্যদিয়ে স্থানীয় কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিলেন। মা মারা গেছেন তার অল্প বয়সেই। ঘরে এলেন সৎমা।  যিনি সতীনের সন্তানদের ভালো চোখে দেখতেন না। সংসারে অর্থকষ্ট ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।

ইসরাফিল ভাই স্বপ্ন দেখতেন বড় হওয়ার। অর্থাৎ অনেক অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার। সংসারের কষ্ট বিশেষ করে ভাতের কষ্ট পর্যন্ত ছিল তাদের। লেখাপড়ার খরচ ছোট ভাইয়েরা নিজেরাই কষ্ট করে জোগার করে নিতো। বড় বোনের আগেই ভালো ঘরে বিয়ে হয়ে গেছে।

আমার বড় ভাইয়ের ফূর্তি করার অভ্যাস ছিল। দু’জনেরই ধূমপানের অভ্যাস ছিল। ছোটবেলা থেকেই ইসরাফিল ভাই খেতেন টেন্ডু পাতার বিড়ি। আর আমার ভাই দামী সিগারেট চেয়ারম্যান, এক্সপ্রেস, ব্রিস্টল ইত্যাদি।

মাঝে মধ্যে হাত বাড়াতেন। বলতেন, ভাই মতিন! একশলা সিগারেট দে না একটু টান দিয়ে দেখি।

বড় ভাই কখনো দিতেন আবার কখনো বা দিতেন না। বলতেন, দ্যাখ ইসরাফিল একটা সিগারেটের দাম দুই আনা।

একটু হাসি দিয়ে ইসরাফিল ভাই বললেন, আরে ভাই দে না সুদে আসলে তোর সিগারেট একদিন পুষিয়ে দেব। বড় লোক যখন হবো তখন এক সিগারেটের বদলে এক প্যাকেট দিয়ে দেবো।

বড় ভাই হেসে বলতেন, ঠিক আছে মনে রাখিস। ইসরাফিল ভাই ছিলেন আমার প্রতিবেশী বড় ভাই। তাঁর ছোট ভাই সাইফুল ছিল আমার বন্ধু। তখন পাড়ার সকলে অনেকটা  আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম। শহর ঘেষা গ্রাম আমাদের। নাম বিশ্বাস বেতকা। মাঝখান দিয়ে ঢাকা টাঙ্গাইল রোড।

॥ দুই॥

বাবার পুরাতন একটি সাইকেলে চড়ে ইসরাফিল ভাই কাগমারী কলেজে যেতেন। ভালো ছাত্র ছিলেন তাই ভালো রেজাল্ট করে বি.কম পাস করে ঢাকায় চলে আসলেন পিআইএতে একটি ভালো চাকরি নিয়ে। জীবনযুদ্ধে শুরু হলো তার নতুন অভিযাত্রা।

পিআইএতে চাকরি ছিল সেকালে সোনার হরিণ পাওয়ার মতো ব্যাপার। সুন্দর সুদর্শন কর্মঠ যুবক। একদিকে নায়কোচিত চেহারা অন্যদিকে মেধাবী তাই অল্প দিনেই প্রমোশন হলো ইসরাফিল ভাই’র। এরমধ্যে তার চোখে চোখ রাখলো ঢাকায় বাসকারী এক বিহারী পরিবারের সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ে। যার বাবা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। মোহাম্মদপুরে নিজস্ব বাসা। ঢাকা শহরে দু’টি নিজস্ব দোকানসহ জমিজমা আছে।

মেয়েটির নাম শবনম বিয়ে হয়ে গেল তাদের। অবশ্য বাবার অমতে বলা যায়।

ইসরাফিল ভাই বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু এ তিনটি ভাষা অনর্গল বলতে পারতেন। চাকরিতে ভালো বেতন ও অন্যান্য সুবিধা পেতেন।

দেশ স্বাধীন হলো। পিআইএর নাম পরিবর্তন হয়ে হলো বাংলাদেশ বিমান। ইসরাফিল ভাইর অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল হলো। ছোট ভাইদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করলেন। সৎমা ও বাবাকে নিয়মিত টাকা দিতেন। এসব ব্যাপারে স্ত্রী শবনম বাধা দিতেন না। বলতেন, হ্যাঁ কষ্ট করে বাবা মানুষ করেছেন লেখাপড়া করিয়েছেন তাকে বুড়ো বয়সে সংসারে টাকা পয়সা দেয়া আর সহযোগিতা করা ছেলের দায়িত্ব। ইসরাফিল ভাইর মনটাও ছিল খুব বড়। গরিব আত্মীয়-অনাত্মীয়দের প্রচুর দান করতেন। কোনোরূপ কৃপণতা ছিল না দু’জনের। ভাবীও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতেন।  এ জন্য তার স্বামী খুশী হতেন।

সুখের সংসার ইসরাফিল ভাই’র। মোহাম্মদপুরের বাসাটিও একটি দোকান বড় মেয়ে শবনমকে ও অন্য মেয়েকে কিছু সম্পত্তি দিয়ে পাকিস্তানে চলে গেলেন শ্বশুর-শাশুড়ি।

ইসরাফিল ভাই’র সংসারকে পূর্ণ কলায় ভরে দিতে এলো পর পর দু’টি পুত্র সন্তান। নাম রাখলেন জুমন ও রুমন। তখন বাংলাদেশ বিমানে সিনিয়র ট্রাফিক অফিসার পদে চাকরি করেন। মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা  রোডর বাসার গেটে নেমপ্লেটে লেখা ছিল মোহাম্মদ আলী ইসরাফিল ট্রাফিক অফিসার বাংলাদেশ বিমান।

শুনেছি চাকরিতে বেতন বোনাস ছাড়াও সুবিধা ছিল বৎসরে একবার স্বপরিবারে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের যে কোনো একটি দেশে ফ্রি এক মাসের সফর। সাথে হোটেলে থাকা ও খাওয়াসহ নিয়মিত কাজের মধ্যে একদিন বার ঘণ্টা কাজ করে পুরো দুইদিন ছুটি। বেতনের স্কেলও সুবিধাদি অন্য চাকরি থেকে স্বতন্ত্র অর্থাৎ অনেক বেশি। প্রায় একশটি দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন ইসরাফিল ভাই।

॥ তিন॥

আমি ভাগ্যক্রমে ইসরাফিল ভাইর বাসায় তিন মাস ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে চাকরি খোঁজা এবং বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করতে ঢাকা থাকতে চাইলাম। হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ডিপ্লোমা করার জন্য ভর্তি হলাম।

ইসরাফিল ভাই আমাকে থাকতে দিলেন। আদর ও যতেœà¦° সাথে তিনি বললেন, কামাল আমার  আপন ভাইয়ের মতো। ও বাসায় থাকলে উপকারই হবে।

আমার কাজ ছিল সকালে বাসার বাজার করা আর জুমন ও রুমনকে নিয়ে বিকেলে আশেপাশে বেড়ানো। সপ্তাহে তিনদিন আমার ক্লাস ছিল কলাবাগানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে ক্লাস করতাম। এদিকে রাস্তাঘাট প্রায়ই ফাঁকা থাকতো। লোকজন ছিল কম।

আমি আর ইসরাফিল ভাইর ছোট ভাই মতি রাতে বিছানায় শুয়ে নানা ধরনের গল্প করতাম। আমার বেকার জীবনের দুঃখের কথা। ও পাগলাটে বলে হয়তো কোনো চিন্তা ছিল না। ও বাস চালাতে জানে তাই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য চেষ্টা করছে।

আমরা ইসরাফিল ভাইর অর্থ সম্পদের কথা নিয়ে আলোচনা করতাম। ও বল তো, বড় ভাইতো অনেক বড় ধনী মানুষ। কুর্মিটোলায় পঞ্চাশ কাঠা জমি আছে। তাছাড়া ঐ বাড়ি ও মোহাম্মদপুরে একটি দোকান। ভাবীও খুব ভালো। তার মনটা বড়। ভাবীকে নিয়ে খুব সুখী তিনি।

আমি বলতাম, এত সম্পদ দিয়ে উনি কি করবেন?

ও বললো, আরে ব্যাটা যার আছে তাইরই তো আরো দরকার। দেখবি বড় ভাই এক সময় ঢাকার বিরাট একজন ধনী মানুষ হবে।

আমরা অনুমান করতাম উনার বেতন প্রাপ্তি ও অন্যান্য আয় নিয়ে। মতি বলতো বড় ভাই মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা বেতন পায়। তখন ১৯৭৮ সাল। তাছাড়া আছে বাড়ি ভাড়া ও পারটাইম। তবে মনটা ছিল খুব বড় একেবারে হাতির কলিজা যেন। কৃপণতা জানতেন না।

কিছুদিন পরের কথা। আমি একটি কলেজে চাকরি নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেলাম। একদিন হঠাৎ করে শুনলাম এত ভালো দুর্লভ চাকরির মায়া ছেড়ে দিয়েছেন ইসরাফিল ভাই। অতিলোভ মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। প্রবাদ আছে ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’। অথচ আল্লাহ সবরকারীকে ভালোবাসেন। তাঁর অনেক অর্থ সম্পদের ঝোঁক। বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সি খুলে বসেছেন দৈনিক বাংলা এলাকায়। আমার দু’আত্মীয়কে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।

কলেজ ছুটির কারণে বাড়ি গিয়েছিলাম। টাঙ্গাইল শহরে একটি দোকান ছিল আমাদের। সেখানে বসে আছি আমি ও এক পাশে বড় ভাই। আকস্মিক ভাবেই দোকানের সামনে সাদা চকচকে নতুন মডেলের একটি প্রাইভেট কার এসে থামলো।

গাড়ি থেকে পেছনের দরোজা দিয়ে মুখে হাসি আর বাম হাতের আঙ্গুলে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে নেমে এলেন ইসরাফিল ভাই। মিয়াভাই উঠে এসে কোলাকুলি করলেন।

বললেন, কিরে কেমন আছিস মতিন?

-ভালো, তুই কেমন আছিস ইসরাফিল?

শুনলাম তুই অনেক বড় লোক হয়েছিস?

ছেলেবেলার বন্ধু। দু’জনে দুপথে। একজনে বড় ধনী ব্যবসায়ী অন্যজন কলেজের অধ্যাপক। আমার সঙ্গেও হাত মেলালেন তিনি। কুশল জিজ্ঞেস করলেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ভাবী, জুমন-রুমন ওরা কেমন আছে?

ইসরাফিল ভাই সংক্ষেপে বললেন, সবাই ভালো আছি। তোমার কথা তোমার ভাবী বলে। ঢাকা গেলে বাসায় যেও।

আমি দৌড়ে গেলাম চায়ের দোকানে চা আনতে। দু’জনে বসে গল্প শুরু করলেন। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে দুজনের কথাবার্তা শুনছিলাম।

ইসরাফিল ভাই বললেন, বন্ধু! জীবনে বড় হতে চেয়েছিলাম। আল্লাহ তায়ালা আমার সব আশা পূরণ করেছেন। একদিন স্বপ্ন দেখেছিলাম গাড়িতে চড়ার তাও হয়েছে। ঢাকায় গাড়িবাড়ি সব হয়েছে আর কিছু প্রয়োজন নেই। আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

॥ চার॥

ইসরাফিল ভাইর ‘শাহজালাল ট্রাভেল এজেন্সি’ থেকে কয়েকবার লেবার সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় কযেকবার কয়েকশত লোক পাঠানো হয়েছে। পাঁচ বছরের মধ্যে বেশ সুনাম হলো এজেন্সির।

কিন্তু এ কাজে তো প্রচুর টাকা খাটাতে হয়। বাধ্য হয়ে তাই কুর্মিটোলার জমিটুকু প্লট করে বিক্রি করে তা ব্যবসায় খাটাতে লাগলেন।

বললেন, টাকা লাভ হলে কয়দিন লাগবে এসব জমি কিনতে?

ভাবী বাধা দিয়েছিলেন, তুমি ধীরে ধীরে কাজগুলো কর জমি বিক্রি করো না।

কিন্তু নিজের কষ্টে অর্জিত জমি বেঁচে ফেললেন, এভাবে কমতে লাগলো তার জমি ও নগদ অর্থ।

কিছুদিন পর ঢাকার প্রেস ক্লাব এলাকায় চলতে গিয়ে হঠাৎই দেখা হয়ে গেল ইসরাফিল ভাইর সঙ্গে। সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান কেমন আছেন? ভাবী-বাচ্চারা কেমন আছে?

আমার হাত ধরে ফেললেন। তারপর সংক্ষেপে বললেন, হ্যাঁ ভালো সবাই, তুমি কেমন আছ? চল কাছেই আমার অফিস। সেগুন বাগিচার একটা দালালের দোতলায় ছোট্ট রুমে অফিস। দশ বারো বছরের একটি ছেলে অফিস পিয়ন। দু’জন লোক বসা ছিল দু’টি চেয়ারে। আমার সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, আমার কাজিন কলেজের প্রফেসর।

আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম।

অফিসের অবস্থা দেখতে বুঝতে পারলাম তাঁর ব্যবসা ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে। সম্ভবত গাড়িটিও বিক্রি করে ফেলেছেন। অথচ আগের অফিসে এয়ারকুলার ছিল, ছিল পাঁচ ছয়জন কর্মচারী। তিনি ছিলেন চেয়ারম্যান। অন্ততঃ পাঁচ বছর পর আমাদের দেখা।

পারিবারিক অবস্থা জানতে চাইলাম। বললাম, ভাইজান! ভাবী কোথায়? জুমন-রুমন কেমন আছে?

জবাবে বললেন, হ্যাঁ ওরা তো বড় হয়ে গেছে। দু’জনেই স্কুলে পড়ে। তোমার ভাবীও ভালো আছে। তবে আমারই ভালো যাচ্ছে না। ব্যবসার অবস্থাও খারাপ। আমার এক পার্টনার ব্যাংকে যৌথ একাউন্ট থেকে আমার দশলাখ টাকা উঠিয়ে নিয়ে গেছে। মামলা করছি। কিন্তু ধরতে পারছি না। এদিকে দোকানটাও বিক্রি করে দিয়েছি। বাড়িটাও রাখতে পারলাম না। কুর্মিটোলার জমিটুকু  আগেই বিক্রি করেছি। এভাবে লস খাচ্ছি একটার পর একটা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার গাড়িটা? জবাবে বললেন, আর গাড়ি দিয়ে কি করবো ভাই। জিজ্ঞেস করলাম, রাজিয়া সুলতানা রোডের বাড়িটাও বিক্রি করেছেন?

হ্যাঁ। পাগল হওয়ার অবস্থা হয়েছে। অথচ আল্লাহর কছম আমি কাউকে ঠকাইনি।

জিজ্ঞেস করলাম, ভাবী কোথায় থাকেন? -ঐ মোহাম্মদপুরেই দু’হাজার  টাকা দিয়ে ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি। ভাবছি ঋণপত্র যতটা পারি শোধ করে আবার দেশের বাড়িতেই ওদের নিয়ে চলে যাবো। ওদের তো বাঁচতে হবে। আব্বা তো ফেলে দিবেন না। চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো।

কথাগুলো বলে হাফ ছাড়লেন। আমি অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম এত সুন্দর স্বাস্থ্য ও চেহারাটা খারাপ হয়ে গেছে। মনে খুব কষ্ট হলো মায়া হলো। এ অবস্থায় কি বাঁচা যায়?

ফেরার সময় বললেন, ভাই দোয়া করো আমার জন্য মতিনকে বলো দোয়া করতে।

আসলে তাঁর জন্য তো আমি দোয়া ছাড়া কিছু করতে পারবো না, সে সঙ্গতি আমার ছিল না। আল্লাহ আপনার সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন। আপনি ধৈর্য ধরুন বলে সালাম দিয়ে চলে এলাম।

বারবার আফসোস করলাম, আল্লাহতায়ালা তাকে কত বিষয়-সম্পত্তি টাকা-পয়সা দান করেছিলেন। এত ভালো একটা চাকরি করতেন যা করেই জীবনটা সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যেতো। কিন্তু তারপরও হতে চাইলেন অনেক বড় ধনবান।

একদিন ইসরাফিল ভাইর খবর পেলাম বৎসর খানেক পর ভাগ্নে বালার কাছে। এক পার্টনার নিয়ে গেছে প্রায় দুশ’ শ্রমিকের টাকা। তাদের পাঠাতে পারেননি। টাকাগুলো বিদেশী কোম্পানি মেরে দিয়েছে। চারদিকে ঋণ শুধু ঋণ। প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দেনা হয়েছেন ইসরাফিল ভাই। আজ থেকে পনেরো বিশ বৎসর আগের কথা।

তারপর বলতে গেলে কপর্দকহীন অবস্থায় হার্ট এটাকে হাসপাতালে মারা গেছেন ইসরাফিল ভাই। স্বামীর কাফন-দাফন করতে ভাবীর কষ্ট হয়েছিল টাকা-পয়সার জন্য। ইসরাফিল ভাই কপর্দকহীন অবস্থায় স্ত্রী ও দু’টি সন্তান রেখে পরপারে চলে যান।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।