সংবাদ শিরোনামঃ

নির্বাচনী বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে ** ত্রুটিপূর্ণ আইনে জামায়াত নেতাদের বিচার করা হচ্ছে ** রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিন ** সরকার দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ** দেশ আজ গভীর সঙ্কটে॥ প্রয়োজন দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ** জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নয় উৎপাদন বাড়ান ** আরো এক কাপুরুষ জেনারেলের কাহিনী ** দুঃস্থ সাংবাদিকতা ** নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ** সিলেট বগুড়া ও রাজশাহীতে শিবিরের মিছিলে পুলিশের গুলি ** কবি ফররুখ আহমদ এক দুঃসাহসী সিন্দাবাদ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪২১, ২৭ মহররম ১৪৩৬, ২১ নভেম্বর ২০১৪

কবি ফররুখ আহমদ এক দুঃসাহসী সিন্দাবাদ

মনসুর আহমদ
আরব্য উপন্যাসের দুঃসাহসী সার্থক নাবিক সিন্দাবাদ কঠিন বিপদসঙ্কুল মুহূর্তে জাহাজের হাল ধরে যেমনি জাহাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন, জাহাজকে নিরাপদে সমুদ্রবন্দরে নোঙর করাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তেমনি অসহায়তা, অলসতা ও পশ্চাদপদতার অন্ধকার ঘূর্ণাবর্তে নিপতিত মানবতা রক্ষার্থে ‘নোনা দরিয়ার ডাক’ শুনে দরিয়ার সাদা তাজী নিয়ে নতুন সফরে বেরিয়ে পড়লেন আমাদের সাহিত্য ভূবনের অহঙ্কার সিন্দাবাদ কবি ফররুখ আহমদ। কবির ‘সাত সাগরের মাঝি’ কাব্যের প্রথম কবিতা ‘সিন্দাবাদ’-এর শুরুর স্তবকটির উচ্চারণের মাধ্যমে জাতি উদ্বেলিত হয়ে ওঠে, জাগে জাতির প্রাণে জীবনের স্পন্দন। সিন্দাবাদকে আহ্বান জানিয়ে কবির উচ্চারণ-

‘কেটেছে রঙিন মখমল দিন নতুন সফর আজ

শুনছি আবার নোনা দরিয়ার ডাক,

ভাসে জোরওয়ার মওজের শিরে সফেদ চাঁদির তাজ

পাহাড়- বুলন্দ ঢেউ বয়ে আনে নোনা দরিয়ার ডাক

নতুন পানিতে সফর এবার হে মাঝি সিন্দাবাদ।’

মানবতাবাদের কবি ফররুখ আহমদ। হিউম্যানিজম বা মানবতাবাদের আশ্রয়ে থেকে তার সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞানকে স্বীকার করে নিয়ে কেমন করে উচ্চতম আদর্শে তা নিজের চরিত্রে রূপায়ন করা যায়, কেমন করে আধুনিক বিশ্ব সংস্কৃতি অবগাহন করেও স্বভূমিতে স্বমহিমায় অবস্থান করা যায় এবং নিজের চরিত্রের মহামূল্যবান ঐশ্বর্য নিয়ে কেমন করে সাধারণ সংসারের মানুষের কল্যাণে তা নিয়েজিত করা যায় তার দুরূহ উদাহরণ দেখালেন ফররুখ আহমদ।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ১৯১৮ সালে যশোহর জেলার মাঝাইল গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী ইসলামী পারিবারে ফররুখ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবালের মতো ফররুখ ইসলামী জীবনাদর্শের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। ফররুখের সমকালীন কবি বিশেষত তিরিশোত্তর যুগের প্রধান কবিগণ অনেকেই ছিলেন পাশ্চাত্যপন্থী, কেউবা সমাজতন্ত্রী, কেউবা নাস্তিক এবং নৈরাশ্যবাদী। কিন্তু এমন আবহে বেড়ে ওঠার পরেও ফররুখ আহমদের ওপর এদের কারও প্রভাব প্রতিফলিত হয়নি। তিনি ছিলেন স্বীয় আদর্শে আস্থাশীল একজন শক্তিমান বিশ্বাসী কবি।

 à¦¤à§à¦°à¦¿à¦¶ ও চল্লিশ দশকের আধুনিক কবিদের অনুকরণে তিনি আধুনিক ভঙ্গি রপ্ত করে প্রথম দিকে কিছু কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অবিলম্বে সে পথ থেকে ফিরে এসে তিনি নিজের ভাষার রূপ ও আঙ্গিক পরিবর্তন করেন এবং এক আদর্শ চিন্তার দিগন্ত উন্মোচন করেন। তিনি ধর্মীয় অনুশাসনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মানবিক জীবনের পক্ষপাতী ছিলেন এবং ইসলামকে শুদ্ধ সংযত এবং মানবিক কল্যাণে সর্বোপযোগী ও সৌন্দর্য সম্পন্ন ধর্ম মনে করাতে অন্য কোনো মানব হিতৈষণার দর্শনে আত্মসমর্পণ করাকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন। তিনি ইসলামকে মানবজীবনের জন্য সর্বাঙ্গ সুন্দর জীবনাদর্শ বলে বিশ্বাসী ছিলেন। ইসলামী জীবনাদর্শই মানব জীবনের জন্য সর্বোত্তম ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র নিয়ামক শক্তি এ বিশ্বাস ও শিক্ষাকে তিনি ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘সিরাজাম মুনিরা’ , ‘নৌফেল ও হাতেম’ এবং সর্বশেষে ‘হাতেম তা’য়ী’ গ্রন্থে উত্তম ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি তাঁর মনভূমিতে উদগত বিশ্বাসকে প্রকাশ করেছেন শিল্প ধর্ম রক্ষা করে কবির ভাষায়, শিল্পীর ভাষায়।

বাঙালি কবিদের মধ্যে ফররুখ আহমদ ছিলেন ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠ রূপকার। নজরুল পূর্ববর্তী মুসলিম কবিদের রচনায় নিজেদের স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধাবোধ এবং সাহিত্য কর্মে তার রূপায়ন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেলেও তখন তা মাইকেল ও রবীন্দ্রনাথের বিস্ময়কর প্রতিভার আলোকে ছিল সমাচ্ছন্ন। নজরুল ইসলামের আবির্ভাবের পর বাংলা কাব্যে মুসলিম ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্যের ধারাটি বলিষ্ঠ ও বেগবান হয়ে উঠেছে , ফলে তাঁর সমসাময়িক ও উত্তরসূরী কবিদের পক্ষে নিজস্ব ধারায় কাব্যচর্চা স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে। নজরুলের সমসাময়িক ও উত্তরসূরী কবিরা কাব্যের উপকরণ হিসেবে মুসলিম ঐতিহ্যমণ্ডিত বিষয়াবলীকে গতানুগতিকভাবে অনুসরণ করে এসেছেন মাত্র। ফররুখ আহমদের পূর্ব পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ বিবর্তন সাধিত হয়নি। ফররুখ আহমদ এসে নজরুলের কাব্য ধারায় এক নতুন ¯à§à¦°à¦¾à§‡à¦¤à¦§à¦¾à¦°à¦¾ প্রবাহিত করলেন।

যেকোনো সার্থক কবিকে প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত সাহিত্যের পটভূমিতে নবযুগের চেতনাসিক্ত ভাবধারা ও বক্তব্যকে রূপায়িত করে তুলতে হয়। আর এই সূত্রেই তিনি ঐতিহ্যের অনুসরণ করেন। ঐতিহ্যের অনুসারী ফররুখ আহমদের রচনায় মুসলিম ঐতিহ্যমূলক বিষয়ের ব্যবহার অবারিত। দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবন চেতনার দিক থেকে নজরুলের সঙ্গে ফররুখের পার্থক্য সুস্পষ্ট । নজরুল তাঁর কাব্যে হিন্দু মুসলিম ঊভয় সম্প্রদায়ের জীবন ধারা , পুরা কাহিনী ও ইতিহাস থেকে সাহিত্য- উপাদান গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ফররুখ আহমদ রূপকল্প কিংবা কাহিনী সংগ্রহের জন্য সার্থক শিল্প -সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে পুঁথি সাহিত্যের অনুসরণ করেছেন। রচনার উপজীব্য বিষয় সংগ্রহে তিনি পুঁথি সাহিত্যকে অবলম্বন করেছেন নিজের আত্মীয় রূপে। এ কারণে তাঁর রচনাতে গভীরতর আবেগ ও সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয়েছে।

ফররুখ আহমদের ঐতিহ্য উৎস বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের পুঁথি সাহিত্য, যার সম্বন্ধ সূত্র আরবী ও ইরানি ঐতিহ্য। ‘হাতেম তাই’ সেই ঐতিহ্যের পথ বেয়ে তাঁর মানস ভূমিতে স্থান লাভ করে এবং সেই সঙ্গে সেবাব্রত মানুষের পূর্ণ মানবিক প্রতীক হিসেবে প্রতিভাত হয়।

জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে মানব সমাজের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন প্রতিভার জন্ম হয়। ফররুখের আবির্ভাবও একটি ঐতিহাসিক পটভূমিতে। উপমহাদেশের পাকিস্তান আন্দোলনের পটভূমিতে বাংলা সাহিত্যে রেনেসাঁ আন্দোলনের সূচনা। রেনেসাঁ আন্দোলন মুসলিম কাব্য ধারার সংগঠনে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে , তেমনি নতুন কবি প্রতিভার আবির্ভাব ও বিকাশের পথকেও প্রশস্ত করে তুলেছে। সামগ্রিক নবজাগরণ ও আত্মস্ততার বাণীকে মূর্ত করে তুলতে গিয়ে রেনেসাঁ যুগের মুসলিম কবিরা অতীত সম্পদ সম্ভার ও কাব্য উপাদানের দিকে ফিরে তাকিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তরুণ মুসলিম কবিদের সমবেত উদ্যোগ যতখানি ভূমিকা পালন করেছে, তার চেয়ে বেশি তাৎপর্যময় হয়েছে ফররুখ আহমদের একক সৃজনবুদ্ধি ও ক্লান্তিহীন কাব্য প্রচেষ্টা । ফররুখ আহমদ রেনেসাঁ আন্দোলনের শিক্ষা ও প্রেরণাকে সংগঠনমুখী ও কর্মোদ্যমের মাধ্যমে বিস্তৃত করে দিয়েছেন। তাঁর সৃজনশক্তির সাথে ঐতিহ্য বোধ ও গভীরতর বিশ্বাসের সমন্বয় সাধিত হওয়ার ফলেই তাঁর সৃজনপ্রচেষ্টা এতখানি সার্থকতামণ্ডিত হতে পেরেছে। রেনেসাঁ আন্দোলনের পটভূমিতে নিজস্ব আদর্শ ও ঐতিহ্যের ধারায় যারা কাব্য সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে একমাত্র ফররুখ আহমদ ছাড়া আর কেউই বিশিষ্টতা অর্জন করতে সক্ষম হননি। ফররুখ আহমদের পক্ষে এই সার্থকতা অর্জন সম্ভব হয়েছিল এ কারণে যে, তিনি বিশ্বাসের সঙ্গে বক্তব্যের দৃঢ়তার বন্ধনের সাথে সাথে ঐতিহ্যের নবরূপায়নের প্রেরণাকেও প্রয়োগ ক্ষেত্রে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলেছেন। অপর দিকে তাঁর সমসাময়িক সাহসী কবিদের মধ্যে যারা ইসলামী আদর্শের ও মুসলিম ঐতিহ্যের রূপকার হিসেবে কাব্য রচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন , তারা বিশ্বাসে স্থিরতার বিন্দুতে অবস্থান করতে না পেরে ক্রমন্বয়েই অস্পষ্টতায় বিলীন হয়ে গেছেন।

ফররুখ আহমদ একজন বড় কবি। তার প্রতিভার অমিতশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন মনের গহীন থেকে আপনা থেকেই করতে হয়। তাঁর লেখায় ছবি-ছন্দ-ভাষা সংবদ্ধ হয়ে অপরূপ রূপ ধারণ করেছে। অকরুন- চিত্তনন্দন তাত্ত্বিকের কুঞ্চিত ভ্রুকেও তা প্রসারিত করে দেয়। অস্থিমজ্জায় তিনি ইসলামী আদর্শে উজ্জীবিত হয়েও একই সঙ্গে তিনি একজন অকৃত্রিম আধুনিক কবি। কবিতার একটি কৌতূহলোদ্দীপক জগৎ আছে যার অনেকখানি সম্পর্ক স্বপ্নের সঙ্গে, কল্পনাকে যা জীবন রস যোগাতে সাহায্য করে। ফররুখ সেই জীবন রসের উৎসকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন আরবী উপন্যাস, পুঁথিতে; যা তাঁর কল্পনাকে শক্তি যোগাতে সাহায্য করেছিল।

ফররুখ সাহিত্যে মুসলিম পুঁথি পুরাণ ও ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য যত ব্যাপকভাবে স্থান পেয়েছে দেশজ ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উপাদান তত বেশি স্থান করে নিতে পারেনি। কারণ শিল্পী-মানসলোকে যে নিজস্ব সত্তা থাকে সেই স্বাধীন সত্তার ভালো লাগা না লাগার ব্যাপারটি সব সময় ব্যতিক্রমধর্মী । তাইতো দেখা যায় বায়রন ইংরেজ হয়েও গ্রিস ও গ্রিক প্রিয় ছিলেন। মধুসূদন খ্রিষ্টান হয়েও রামায়ণ মহাভারত নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। তাই ফররুখের ভালো লাগাকে, কাব্যের উপাদান হিসেবে বিশেষ ঐতিহ্য ¯à§à¦°à¦¾à§‡à¦¤à¦§à¦¾à¦°à¦¾ বেছে নেয়াকে সংকীর্ণতার বিশেষণে চিহ্নিত করা অনুচিত। তা ছাড়া ফররুখের সমগ্র সাহিত্য জুড়ে কেবল আরব ইরানের সংস্কৃতিও প্রকৃতি একতরফাভাবে ঠাঁই পেয়েছে এ কথা সত্য নয়। কবির ‘ময়নামতির মাঠে’, ‘দোয়েলের শিস’, ‘বৃষ্টির ছড়া’ ‘শ্রাবনের বৃষ্টি’ সহ বিভিন্ন ছড়া কবিতায় দেশী প্রকৃতি, দেশজ ঐতিহ্য সংস্কৃতির রূপ ফুটে উঠেছে। কবির বিখ্যাত কবিতা ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘পাঞ্জেরী’, ‘ডাহুক’ প্রভৃতি কবিতায় দেশী প্রকৃতি ও উপাদানের বর্ণনা এসেছে অতি প্রাঞ্জল ও হৃদয়াগ্রাহী ভাসায় । যেমন -

‘শুকনা বাতাসে তোমার রুদ্ধ কপাট উঠেছে বাজি;

এ নয় জোছনা -নারিকেল শাখে স্বপ্নের মর্মর

--- --------------------

কাঁকর বিছানো পথ,

কত বাধা, কত সমূদ্র পর্বত

---------------

তবে তুমি জাগো , কখনো সকালে ঝরেছে হা¯œà§à¦¾à¦¹à§‡à¦¨à¦¾

--------

ফেলেছি হারায়ে তৃণ ঘন বন , যত পুষ্পিত বন,’ ( সাত সাগরের মাঝি।)

‘ পাঞ্জেরী’ কবিতায়Ñ

‘ এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?

সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?

তুমি মাস্তুলে আমি দাঁড় টানি ভুলে;

অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।’

‘ডাহুক’ কবিতায়Ñ

‘রাত্রির পেয়ালা পুরে উপচিয়ে পড়ে যায় ডাহুকের সুর।

শুধু সুর ভাসে

বেতস বনের ফাঁকে চাঁদ ক্ষয়ে আসে

রাত্রির বিষাদ ভরা স্বপ্নাচ্ছন্ন সাঁতোয়া আকাশে।’

এমনিভাবে ফররুখের বিভিন্ন কবিতায় আমাদের দেশজ উপাদান প্রধান্য অর্জন করেছে যথোপযুক্ত ভাবে। অবশ্য অনেক কবি মজা নদী, প্রসারিত গাছপালা, অন্ধকার বন, উজ্জ্বল সমুদ্র তীর, তরাঙ্গায়িত বালিয়াড়ি দেখে বার বার মুগ্ধ হয়ে কবিতা রচনা করেন। ফররুখ তেমন প্রকৃতির নন। প্রকৃতি এসেছে তাঁর কবিতায় এক বিরাট সত্য ও আদর্শকে ফুটিয়ে তোলার অনুসঙ্গ হিসেবে। ফ্রস্ট যেমনি ওয়ার্ডস ওয়ার্থের মন্ত্রমুগ্ধ অনুসারী নন, ফররুখও তেমনি প্রকৃতি বিষয়ে কোনো দার্শনিকতত্ত্ব উচ্চারণ করেননি। কিন্তু এর পরেও তাঁর প্রচুর কবিতায় এমন অনেক চিত্র ফুটে উঠেছে , যা মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় সম্পর্ককেই তুলে ধরে।

একজন মহৎ কবির কাব্য রচনা ও জীবন রচনা একই রচনার অন্তর্গত। এ সত্যটি ফররুখ জীবনে সুস্পষ্ট। ইসলামের জীবনাদর্শ নৈরাশ্য বোধকে অনুৎসাহিত করে। এই উন্নত জীবনাদর্শই ফররুখকে নৈরাশ্যের বিষবাষ্প অক্রান্ত থেকে রক্ষা করেছে। কবির উন্মেষ কাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। পৃথিবীর মানুষ অন্যায় অমানবিকতা, মৃত্যুবিভীষিকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা ও নৈরাশ্যে মুহ্যমান। আধুনিক কবিরা এই ধসে পড়া বিশ্বাস ও নৈরাশ্যের সুরটিকে তাদের কাব্য বীণায় বাজিয়ে চলছিলেন। বিশ্বযুদ্ধ মহামারী, বাংলার পাথর অগ্নি প্রজ্জ্বলিত পরিবেশের ভেতরে ত্রিশের স্বপ্নাচারী কবিরা যে ভাবে আলোড়িত হয়েছিলেন তার উদভ্রান্ত প্রতাপের ঢেউ আদিগন্ত ছেয়ে আছড়ে পড়ে ছিল চল্লিশ দশকের কবিদের হৃদয় তটে। কিন্তু কবি ফররুখ ঐসব প্রচণ্ড প্রভাব ধেকে নিজকে বিচ্ছিন্ন রেখে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে তাঁর সৃষ্টি কর্মকে সফল করার চেষ্টা করেন। ফররুখকে রক্ষা করলো তাঁর ঐতিহ্যগত বিশ্বাস ও চেতনা।

ফররুখ আহমদ সেই জাতের কবি নন যারা শুধু কাব্যকে ভালোবেসে কবি। কবি ফররুখ সেই কবি যিনি তাঁর জাতিকে ভালোবেসেছেন, তার দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন। তিনি তাঁর ধর্ম ও মানবতার ধর্মকে ভালোবেসেছেন। কবির জীবনে এই ভালোবাসার গুণটি আকাশ থেকে হঠাৎ করে পড়া কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়, তাঁর কবি জীবনের স্বাভাবিক পরিণতি।

কবি ফররুখ তার জাতিকে, দুর্গত মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন। ধরণীর দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের , নিজের জাতির অপরিসীম দৈন্য লাঞ্ছনা এবং নিগ্রহ তাঁর মনে যে অশান্ত বেদনা জাগিয়ে তুলেছিল সেগুলোই পরিণত করেছিল ফররুখকে সাহসী নাবিক সিন্দাবাদে, জাতিকে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে। গোধূলি তন্দ্রা টুটাতে কবির দীর্ঘ পথযাত্রা। কবির ভাষায়Ñ

‘আমারে কি দেবে দীক্ষা তোমার মন্ত্রণায়

যাযাবর বেদুইন !

যাত্রা করিব দিগন্ত ধরি’ পথ সন্ধান -হীন

ভাঙিব গোধূলি - তন্দ্রা ধরার মরু ধুলায়।’

 à¦—োধূলি-তন্দ্রাকে ভঙ্গ করে কবি পথে বেরিয়ে পড়েছিলেন সিন্দাবাদের মতো। তাইতো কবি ফররুখ মুসলিম জাতির মুক্তির দিশারী কবি হিসেবে সাহিত্য অঙ্গনে আসন গড়ে নিয়েছেন অনেক শীর্ষে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।