সংবাদ শিরোনামঃ

নির্বাচনী বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে ** ত্রুটিপূর্ণ আইনে জামায়াত নেতাদের বিচার করা হচ্ছে ** রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিন ** সরকার দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে ** দেশ আজ গভীর সঙ্কটে॥ প্রয়োজন দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ** জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নয় উৎপাদন বাড়ান ** আরো এক কাপুরুষ জেনারেলের কাহিনী ** দুঃস্থ সাংবাদিকতা ** নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ** সিলেট বগুড়া ও রাজশাহীতে শিবিরের মিছিলে পুলিশের গুলি ** কবি ফররুখ আহমদ এক দুঃসাহসী সিন্দাবাদ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪২১, ২৭ মহররম ১৪৩৬, ২১ নভেম্বর ২০১৪

সানজীদ নিশান চৌধুরী
দেশব্যাপী এবার পৌষ মাসেই তিনটি শৈত্যপ্রবাহ, দৈত্যের মতো শরীরের উষ্ণতা চুষে নিল বাংলাদেশের জনসাধারণের। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে রাত্রে তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা কোথাও কোথাও তারো নিচে নেমে গেলো। জমে উঠেছে পুরাতন গরম কাপড়ের বেচাকেনা। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোর প্রায় সব ফুটপাতেই বসেছে পুরাতন কাপড়ের জমজমাট ব্যবসা যা প্রতিবছরই বসে। চাচাতো ভাই মনসুরের হাজার চল্লিশের টাকার শেয়ার কেনা ছিল। শেয়ার বাজারের উত্থান ঢাকার হাস্যোজ্জল রমনীদের পর্যন্ত ধমনী নাচিয়ে ছেড়েছে। ওদের শেয়ার বিক্রয় করে টাকা ধার দিতে বললো। কি হবে টাকা? পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায় লাগাবে বলে জানালো। আরো যেভাবে শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়ছে, এই মুহূর্তে ওগুলো ভাঙ্গানো ঠিক হবে?

আমাকে যদি জিজ্ঞেস করে, তাহলে আমি বলবো এই মুহূর্তে ওগুলো ভাঙানোর মোক্ষম সময়। নয়তো লুটেরার দল দরপতন ঘটিয়ে আগের মতো শেয়ার বাজার লুটপাট করতে ছাড়বে না। আমায় ধারে টাকা দাও, চাই না দাও সে অন্য ব্যাপার। শোন কথা ধার দিয়ে জোরের সাথে বললো হয় না। পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায় আমি লাগাইবো। পাঁচ হাজার টাকায় গাইট কিনে ন্যূনতম পক্ষে বিশ হাজার টাকা আয় করা কোনো ব্যাপারই নয়। যা হোক বিপ্লবের পরামর্শ, অনুরোধ, কাকুতি-মিনতিতে চল্লিশ হাজার টাকার শেয়ার ষাট হাজার টাকায় বিক্রয় করে মনসুর পুরাতন শীতবস্ত্র কেনাবেচার ব্যবসায় লাগানোর জন্য বিপ্লবকে টাকাগুলো ধার দিল। রীতিমতো ব্যবসায়ী বনে গিয়ে জিপিওর সম্মুখের ফুটপাতে পুরাতন বস্ত্র বিক্রয়ের দোকান দিয়ে বসলো।

এরই কিছুদিন পর শেয়ার বাজারে নিদারুণ ধস নামলো। লক্ষ টাকার শেয়ার হাজার টাকায় নেমে আসলো। অফিসের কেরানী ঘরের কন্যা জায়া জননী, রাজপথের বেকার যুবক যারা ধার দেনা করে এতদিন শেয়ার বাজার নিয়ে মেতেছিল, তারা বুকফাটা ক্রন্দনে মিছিল মিটিংয়ে যোগদান করলে। কেউবা এই দুঃসহ যন্ত্রণা সইতে না পেরে গলায় রশি লাগিয়ে আত্মহত্যা করে পরপারে পাড়ি দিল, কেউবা রেলগাড়ির ওজন মাপার পাগলামি করে চাকায় পিষ্ট হয়ে খণ্ডিত-বিখণ্ডিত হলো। এ দেশের গরিবের টাকা মেরে আকাশচুম্বী অট্টালিকা বানাচ্ছে অভিজাত লোভীর দল।

গাড়ি-বাড়ি, নারীতে ফুর্তিতে টাকা উড়াচ্ছে বাতাসে; সে বাতাস আবার ভারি হচ্ছে লুণ্ঠিত দুর্গত নিঃশেষ দীর্ঘশ্বাসে। মনসুর আনন্দে কৃতজ্ঞতা জানালো। সে তাগাদা না দিলে কখনো তার সঞ্চিত শেয়ার বিক্রয় করতো না। শেয়ারগুলো জমা রাখলেই সে পথের ফকির হয়ে যেতো। তার সংসারে সঞ্চয় বলতে আর কিছুই নেই। থাক না সে যতদিন ইচ্ছে ঢাকায় তার বাসায়। ইদানীং ব্যবসা করে সে তার খাওয়া বাবদ মাসিক ছয়-সাতশত টাকা তাকে দিতে শুরু করেছে। শীত জেকে বসেছিল বটে বিপ্লবও তার ব্যবসার ঋণে নেয়া মূলধন ইতোমধ্যে তুলে ফেলেছে এবং মনসুরের ষাট হাজার টাকা পরিশোধ করে দিল, পুরাতন সার্ট-সোয়েটার-মাফলার-গেঞ্জী-টুপি-পায়জামা ইত্যাদি এখনো জমা রয়েছে বিক্রীত মালের দ্বিগুণ। কিন্তু জানুয়ারির মাঝামাঝি হঠাৎ করে শীত কমে গেলো ঢাকায়। ফুটপাতে দোকান মেলে বসে থেকে কোনো কিছু বিক্রয় করতে পারছে না তার মতো হকার শীতবস্ত্র বিক্রেতারা। শুধু শুধু রোদে পোড়া, ধুলোয় দূষিত হওয়া আর পুলিশের ধাওয়া খাওয়া। তাই অবিক্রীত বস্ত্রগুলো গাইট বেঁধে বাসার আঙ্গিনায় এনে ফেললো সে। এমনিতেই ছোট বাসা, ওগুলো রাখবার স্থান সংকুলান করবার কোনো উপায় নেই। খোলা আঙ্গিনয় ফেলে রাখলেও নষ্ট হয়ে যাবে।

কী যে করবে! উপায়হীনের মতো বুদ্ধি খুঁজে বেড়ায় আর হতভাগার মতো ছটফট করে বিপ্লব। ঢাকায় শেরেবাংলা নগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চলছে বলে জেনেছে সে।

সেদিন বিকেলে বাণিজ্যমেলা দেখতে গেলো বিপ্লব। ওরে মা! কী যে ভীড়; দ্রব্যের শেষ নেই। ক্রেতাও অফুরন্ত। কার্পেটের  দোকানগুলোতে গিয়ে চোখ ধাঁধিয়ে উঠলো তার। পাকিস্তানী, ইরানী ও তুরস্কের কার্পেটের দোকানগুলোয় ক্রেতারা ভীর জমিয়েছে। হঠাৎ করে বিপ্লবের মাথায় একটা পরিকল্পনা আসলো। রঙ-বেঙয়ের অবিক্রীত শীতবস্ত্র ব্যবহার করে একটা জমকালো কার্পেট বানিয়ে বাণিজ্য মেলায় বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসবে সে। বাসায় ফিরেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিল। পাশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীর সেলাই পটু নারীদের অবসর সময়কে অতি দ্রুত কাজে লাগানোর ব্যবস্থা পোক্ত করলো। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরাট চত্বরেও শুরু হলো একটি বিরাট কার্পেট-কাম-কম্বল বানানোর কাজ। ৮০ ফুট বাই ৮০ ফুটের ক্ষেত্রফল এই কার্পেটের, যা শীতের সময় উষ্ণ কম্বলের উপকারিতাও দান করবে। বঙ-বেঙয়ের উষ্ণ বস্ত্রে সুই সেলাইয়ের কাজ করে আটদিনের মধ্যে অপূর্ব সুন্দর বৈচিত্র্যের কার্পেট তৈরি করলো চল্লিশজন মহিলা কর্মী। ঠেলাগাড়িতে তোলা হলো সেই কার্পেট। পুলিশদের অনুরোধ করে বিপ্লব ম্যানেজ করলো কার্পেট বিছানোর জায়গা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রবেশ পথের একটু দূরে মাঠের মধ্যে বিছানো হলো হরেক বর্ণে চাকচিক্যময় এই কার্পেট। এটি দেখতে ছুটে এলো কৌতূহলপ্রিয় শত শত বাঙালি দর্শক। এক ভারতীয় ব্যবসায়ী কাওয়ালী গানের জলসায় ব্যবহারের জন্য বিপ্লবের হাঁকা মূল্য ৪ লক্ষ টাকার বিপরীতে তিন লক্ষ টাকায় কিনে নিলেন কার্পেটটি।

সারা রাতব্যাপী চলে কাওয়ালী গানের জলসা। সেই জলসায় খানাপিনা চলে, সামাজিক কুশল বিনিময়ের সাথে সাথে গল্প-গুজব চলে, আর কাওয়ালীর বসরত তো চলতেই থাকে হরেক কণ্ঠে রকমারি ঢঙ্গে। কেউ আবার ঘুমায়, কেউ তন্দ্রার ঘোরে গান শোনে। শীতের রাতে কেউ আবার বিছানার উষ্ণতা চায়। কার্পেটের  বিশেষ ব্যবস্থার বোতাম খুলে জানালার মতো উন্মুক্ত করবার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবেন শ্রোতা, তখন কার্পেট ব্যবহৃত হবে কম্বল হিসেবে। বিপ্লবের অপূর্ব সৃষ্টি বৈকি! সাথে কি আর কার্পেটের মূল্য তিন লক্ষ টাকা! না, কার্পেট প্রস্তুতকারী চল্লিশ জন গার্মেন্ট কর্মীকে কারখানা মালিকদের মতো ঠকায়নি বিপ্লব। প্রত্যেকে নগদ সাড়ে তিন হাজার টাকা ভাগে পেয়ে আনন্দে স্লোগান ধরলো, বিপ্লব ভাই বিপ্লব ভাই। জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ!

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।