যুদ্ধ নয় গণহত্যা

বর্বর ইসরাইলি হামলায় নিহত শিশু কোলে গাজার রাজপথে বিক্ষোভ

বিশ্বব্যাপী শক্তির চর্চাকারী রাষ্ট্রীয় পরিচালকদের রয়েছে দুটি গ্রুপ। একদল বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধ, সংঘাত ও সংঘর্ষকে পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করে। অন্যদল যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে আঁৎকে উঠে এর নিন্দা জানায়। Antiwar.com  à¦¹à¦šà§à¦›à§‡ Randolph Bourne Institute. এর একটি প্রকল্প যা বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরে এর নানামাত্রিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে প্রকৃত তথ্য বের করে আনে এবং যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানায়। প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টন যখন বলকান যুদ্ধ শুরু করেন তখন এ অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এই সাইটটির যাত্রা শুরু হয়। সে থেকে তৎপরবর্তী সকল যুদ্ধকালীন সময়ে এটি যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়ে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এই সাইটটি বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরোধী, শান্তিকামী ডান কিংবা বাম সকলের জন্য একটি সাধারণ প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে। এর অবস্থান হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত কল্যাণের পথে ধাবিত হবার পথ বের করা এবং মানবতার পক্ষে কাজ করা। সে প্রেক্ষিতেই এই সাইটটিতে সচল রয়েছেন বিশ্বব্যাপী শান্তকামী সকল বোদ্ধারা। মূলত গাজা যুদ্ধের  উপর নোয়াম চমস্কির অসাধারণ কিছু বিশ্লেষণ ও মন্তব্য নিয়ে ছোট্ট এই প্রবন্ধটি সাজিয়েছেন জন গ্ল্যাসার। অনুবাদ করেছেন আবু সুলাইমান।  

গাজা আক্রমণ নিয়ে নোয়াম চমস্কির একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি রয়েছে। তাঁর সে উদ্ধৃতিটি হচ্ছে- “গাজায় ইসরাইলি এই আক্রমণ এবং মিশাইল নিক্ষেপ হামাস কে ধ্বংস কিংবা ইসরাইলে হামাসের রকেট নিক্ষেপ বন্ধ করার জন্য নয়। শান্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে নয় এই অভিযান ।

গাজার যে মৃতবৃষ্টি এবং ধ্বংসলীলা, গাজার বেসামরিক মানুষের উপর সর্বাধুনিক ও ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্র ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত ইসরাইল নিয়েছে তা যুগব্যাপী সময়ের মধ্যে ফিলিস্তীনকে মানবশূন্য করার যে বৃহৎ পরিকল্পনা তারই চূড়ান্ত রূপ।

এই অভিযানে ইসরাইল ব্যবহার করেছে অত্যাধুনিক জেট বিমান এবং নৌ-ভেসেল। তারা আক্রমণ চালিয়েছে জনবহুল আশ্রয় শিবিরে, স্কুল আঙ্গিনায়, আবাসিক এলাকায়, মসজিদে এবং বস্তি এলাকায়। এমন সব লোকের উপর তারা আক্রমণ চালিয়েছে যাদের ছিল না বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, কোনো ভারী অস্ত্র, কোনো আর্টিলারি ইউনিট, কোনো সশস্ত্র শাখা। যাদের কোনো সেনাবাহিনী নেই, নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ... অথচ তারা একে অভিহিত করছে যুদ্ধ বলে। এটি কোনো যুদ্ধ নয়, এটি স্পষ্টত একটি গণহত্যা।   

যখন ইসরাইল অধিকৃত এলাকায় ইসরাইলিরা দাবি করে যে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় এবং তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষার উপায় বের করতে হবে, তখন মনে হয়- যেন তারা অন্য কোনো সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাস করছে যেখানে নিয়ন্ত্রক সামরিক বাহিনী ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। তুমি যেখানে নিজেই সামরিক শক্তি দিয়ে অন্যের এলাকা অধিকার করে রেখেছ সেখানে তুমি প্রতিরক্ষা চাইতে পারনা। এটি কোনো প্রতিরক্ষা নয়। অন্য যে নামেই ডাকা হোক না কেন, কমপক্ষে একে প্রতিরক্ষা নামে অভিহিত করা ঠিক হবে না।”

সম্প্রতি নোয়াম চমস্কি গাজা সফর করেছেন। গাজা সফর শেষে তিনি লিখেছেন, “গাজা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ উম্মুক্ত জেলখানা।”

যে ভাবেই চিত্রিত করা হোক না কেন, ইসরাইলিরা যা করছে তাকে আগ্রাসন নামেই চিত্রিত করা ঠিক হবে। ইসরাইল নিজেই শুরু করেছিল এই সংঘর্ষ।  ইসরাইলের অনেক উপায় ছিল এই অবস্থা থেকে উত্তরণের। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করার, যুদ্ধ-বিরতি দীর্ঘায়িত করার এমনকি সামগ্রিক পরিস্থিতি উন্নয়নের। এখন বেসামরিক এবং সরকারি কাঠামোগুলো আক্রমণের টার্গেট করা হচ্ছে। এটি যখন লিখা হচ্ছে তখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ ছাড়িয়ে গেছে। এদের মধ্যে রয়েছে শিশু ২২, বৃদ্ধ ৯। আহত সংখ্যা ৭০৯ যাদের মধ্যে ২০৩ শিশু, বৃদ্ধ ৫০। হামাসের রকেট হামলায় এ পর্যন্ত মোট ০৩ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে।

ওবামা এখনও ইসরাইলের একজন আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন। এখনও ইসরাইল গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকান নাগরিকদের পরিশোধিত ট্যাক্সের টাকায়, আমেরিকান সমর্থনে এবং আমেরিকার নৈতিক বিচ্যুতির বিনিময়ে অর্জিত ইমিউনিটি তথা অনাক্রম্যতার আড়ালে থেকে।