প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশকে সংঘাত ও নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়ার আলামতই প্রকাশ পেয়েছে : রফিকুল ইসলাম খান

গত ১৮ আগস্ট গণভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “আগামী নির্বাচন নিয়ে যা কিছু হওয়ার তা সংবিধান মোতাবেকই হবে। সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বো না” মর্মে যে একগুঁয়েমিপূর্ণ, উস্কানিমূলক ও অযৌক্তিক বক্তব্য প্রদান করেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গত ১৯ আগস্ট সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত ১৮ আগস্ট সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ খামখেয়ালীপূর্ণ, অযৌক্তিক বক্তব্যে দেশকে সংঘাত, সংঘর্ষের ও নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়ার আলামতই প্রকাশ পেয়েছে। দেশের জনগণ তার এ একরোখা ও দূরভিসন্ধিপূর্ণ বক্তব্য ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে। অতীতেও স্বৈরাচারী সরকার এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। তিনি বলেন, সব স্বৈরাচারী সরকার মতায় থাকতে এরকম কঠোর বক্তব্য দেয়। কিন্তু গণআন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত জনগণের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। অতীতে যতবার দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই হয়েছে। এবারেও যদি কোনো সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি হয় তা আওয়ামী মহাজোট ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কারণেই হবে। আর তার দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার মতো জাতির ঘাড়ে একদলীয় বাকশালী অবৈধ স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। আদালতের যে রায়ের দোহাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভোটারবিহীন এক তরফা নির্বাচনের প্রহসন করার পাঁয়তারা করছেন সে রায়ের মধ্যেই আরো দুটো নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রায়ের ঐ অংশ বাদ দিয়ে তার সুবিধামত সংবিধান প্রণয়ন করে এখন একদলীয় বাকশালী শাসন চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনেকটা সেই রকম যে, ‘শালিস মানি, কিন্তু তাল গাছটা আমাকে দিতে হবে।’

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার যেখানে সংবিধান মানেন না সেখানে তার মুখে সংবিধানের দোহাই দেয়া মানায় না। সরকার গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়ে ২৩১ জন লোককে হত্যা করেছে এবং গত ৫ মে রাতের আঁধারে মতিঝিল শাপলা চত্বরে আলেমদের হত্যা করেছে ও গত পবিত্র রমজান মাসে জামায়াত-শিবিরের ১০ জন লোককে হত্যা করেছে। এ সরকারের আমলে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ খুন হয়েছে। ৭০ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। বিচার বাহির্ভূতভাবে ৭০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সংবিধান কি সরকারকে এভাবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার অধিকার দিয়েছে? তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে বিগত সাড়ে চার বছর যাবত শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সকল জেলা কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছে। এভাবে সরকার সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে। যে সরকার নিজেই সংবিধান লঙ্ঘন করে তার মুখে সংবিধান অনুসরণের ঘোষণা মানায় না।

তিনি বলেন, সংবিধানের দোহাই দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখে মানুষ হত্যা করে জাতির ঘাড়ে বাকশালী শাসন চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র দেশের জনগণ কখনো বাস্তবায়ন হতে দেবে না। দেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন চায়। বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে দেশের জনগণ অংশগ্রহণ করবে না এবং সে নির্বাচন জনগণ প্রতিহত করবে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান সংবিধানে পুনর্বহাল করে পদত্যাগ করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।