কালের সাক্ষী দৃষ্টিনন্দন গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি
৩০ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:০৫
মেহেরুন নেসা, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) : দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বহু জমিদার বাড়ি। বিলুপ্ত জমিদারদের তৈরি বাড়িগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকমের ইতিহাস। কিশোরগঞ্জে তৎকালীন জমিদাররা তৈরি করেছিলেন অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর মধ্যে হোসেনপুরের গাঙ্গাটিয়ান জমিদার বাড়ি অন্যতম। যাকে এক নামে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ চেনেন মানব বাবুর বাড়ি হিসেবে।
কিশোরগঞ্জে হোসেনপুরের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি হতে পারে পর্যটন নগরী। কারণ ব্রিটিশ আমলের এ স্থাপনাটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক হিসেবে আজও টিকে আছে। যদি সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে আসে, তবেই তা খুলতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। দৃষ্টিনন্দন গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন হয় ব্রিটিশ শাসনামলের শেষের দিকে। এ জমিদার বাড়ির আছে অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ভোলানাথ চক্রবর্তী। এ জমিদার বাড়ির সাথে অন্য জমিদার বাড়ির পার্থক্যটুকু হলো এটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত না হয়ে এখনো পুরোপুরি টিকে আছে।
জেলার প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি ও জমিদার মানব বাবুর বিশাল মাছের খামার প্রকৃতির অন্যতম সৌন্দর্য বহন করে। প্রায় প্রতিদিনই জমিদার বাড়িটি দেখতে ভিড় জমায় অনেক দর্শনার্থী। জমিদারিত্ব না থাকলেও শেষ জমিদারের ছেলে শ্রী মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী (মানব বাবু) এখনো বেঁচে আছেন। তিনিই বাড়িটির রক্ষণশীল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জমিদার বাড়ির বিশাল কারুকার্যময় বাড়ির মূল ফটকে শ্রীধর ভবন লেখা রয়েছে সুস্পষ্টভাবে। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এ জমিদার বাড়িটি ১৮ শতকের গ্রীক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে বিশাল বড় পুকুর। বাড়িটিতে রয়েছে নহবতখানা, কাছারিঘর, দরবারগৃহ ও মন্দির। দরবারগৃহে এখনো শত বছরের পুরনো কিছু আসবাবপত্র রয়েছে।
বাড়িটির উত্তরপাশে রয়েছে বিশাল মাছের খামার। বর্তমান জমিদারের শেষ বংশধর মানব বাবু জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে নতুন করে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পিতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরে মানব বাবু সেখানে একটি সমাধিসৌধ তৈরি করেন।
জমিদার বংশের বর্তমান উত্তরাধিকারী মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরীর নামানুসারে পরিচিত। তাদের অতি প্রাচীন এ জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ১৮ শতকের প্রথম দিকে। দীননাথ চক্রবর্তীর হাত ধরে জমিদারির যাত্রা শুরু হয়। তিনি ইংরেজদের কাছ থেকে হোসেনশাহী পরগনার একটি অংশ কিনেন কিন্তু ইতিহাস থেকে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাবু অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী ‘পত্তনি’ সূত্রে আঠার বাড়ির জমিদার জ্ঞানদা সুন্দরী চৌধুরাণীর কাছ থেকে দুই-আনা অংশ গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি জমিদারিত্বে অন্তর্ভুক্ত করেন। এ জমিদার বংশের আদি বাসস্থান ছিল ভারতের কাইন্নকব্জিতে। প্রায় ৬০০ বছর আগে তারা সেখান থেকে হোসেনপুরে এসে বসতি স্থাপন করেন। তারপর দেশ বিভক্ত হওয়ার পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদারিও শেষ হয়ে যায়।
ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানায়, মানব বাবুর জমিদার বাড়িটি অনেক পুরনো। অবসর সময় কাটাতে এখানে কিছু সময়ের জন্য বেড়াতে আসি। মানব বাবুর বাড়িতে আসলে মনে হয় কোনো রাজপ্রাসাদে এসেছি। ওনার মাছের ফিসারিগুলোও দৃষ্টি নন্দিত। চোখের প্রশান্তি আর সবুজ প্রকৃতি উপভোগের জন্য বাড়ি এখানকার সকলের কাছেই জনপ্রিয় জায়গা।