রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ২৮তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ ॥ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী ॥ ৪ অক্টোবর ২০২৪

॥ একেএম রফিকুন্নবী ॥
বাংলাদেশের জনগণকে তাদের দেশের ভালোমন্দ যাচাই-বাছাই করে ভালোকে ভালো বলতে হবে আর মন্দকে দূরে নিক্ষেপ করতে হবে। ৫৩ বছরের বাংলাদেশ দুনিয়ার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সব ব্যবস্থা আমাদের ধর্ম-বর্ণ, ছোট-বড় সবাইকে নিয়েই দেশে-বিদেশে প্রচার ও ভাবমর্যাদা বাড়াতে হবে।
দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্মীয় সহাবস্থান, ছোট-বড় ভেদাভেদ ভুলে আমরা বাংলাদেশি মনোভাব নিয়ে চলতে হবে। কেউ আমাদের বাংলাদেশের ভাবমর্যাদাবিরোধী কাজ করলে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। বিশেষ করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে, কারো প্রতি ঘৃণা বা অসম্মানজনক কথা বা কাজ করা যাবে না। মহান আল্লাহ তার ইচ্ছায়ই এ ভূখণ্ডে আমাদের জন্ম দিয়েছেন। আমাদের কোনো হাত নেই জন্মের জায়গা চয়েস করার, তাই যে যেখানে জন্ম নিয়েছি, সেখানের ভাবমর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা আমাদর প্রত্যেক দেশপ্রেমিক নাগরিকের অন্যতম কাজ।
দেশের আইন বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে চলা এবং বিচারকার্য চাপমুক্ত অবস্থায় চলতে দেয়া, দেশের ভাবমর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার মধ্যে পড়ে। ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়সঙ্গত অধিকার। এ অধিকার সংরক্ষণ করা দেশের সরকারের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোনোভাবেই বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি করা বা হস্তক্ষেপ করা যাবে না। বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যেমন সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে, তেমনি বিচারকাজে জড়িত বিচারকদের নিরাপত্তার দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কার্যপরিচালনার স্বার্থেই বিচারকদের উচ্চ নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে।
দেশের পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন হতে হবে। সব দেশের সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি প্রভুত্ব বা বিরোধ নয়।  নতজানু পররাষ্ট্রনীতি কোনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। ছোট দেশ হিসেবে ব্যালান্স করে চলতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সবার স্বার্থেই শক্ত অর্থনীতির আওতায় চালাতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ব্যবহার্য পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যালান্স অবস্থায় করতে হবে। সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বাণিজ্য ঘাটতির ব্যাপারে। দেশের অর্থনীতির প্রতি লক্ষ রেখে আমদানি-রফতানির নীতি মেনে চলতে হবে।
প্রতিবেশী দেশগুলার সাথে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত রাখতে হবে। চোরাচালানির প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। কোনোভাবেই সীমান্ত হত্যা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ‘ফেলানী’, স্বর্ণা, জয়ন্তের মতো কিশোর-কিশোরী হত্যাকাণ্ড আমরা দেখতে চাই না। নিজেদের প্রয়োজনেই প্রত্যেক দেশ তাদের জনগণের ভালোর জন্য ন্যায়নীতি অনুসরণ করে সীমান্ত রক্ষা করা প্রত্যেক দেশের নিয়মনীতি মেনেই সীমান্তবিরোধমুক্ত রাখতে হবে। শান্তি চাই, অশান্তি দূর করতে চাই।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে এক নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপ দিতে হবে। আর হানাহানি নয়। চেতনার কথা বলে আর দেশের বিভক্তি নয়। আমরা দেশের ১৮ কোটি মানুষ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়ে ৫৪ হাজার বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী উন্নত দেশ গড়ে তুলতে চাই। সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চিন্তা-চেতনায় এক হয়ে দেশকে এগিয়ে নেব, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহও এ কাজে আমাদের সাহায্য করবেন সন্দেহ নেই।
এবার জাতিসংঘে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ভিত রচনা করে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে হাস্যোজ্জ্বলভাবে কোলাকুলি দুনিয়াব্যাপী প্রশংসার বন্যা বয়ে দিয়েছে। এছাড়া আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশের নেতাদের সাথেও তিনি বৈঠক করেছেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ব্যাপারে মতবিনিময় করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সাথে বৈঠক করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ভূমিকা রাখার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশ থেকে পালানো হাসিনা অপমানের ওপর অপমান করে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছেন। মহান আল্লাহ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানিত করেছেন আর হাসিনাকে করেছেন বেইজ্জতি। আল্লাহ সবই জানেন ও বিচার করতে কোনো দ্বিধা করেন না।
নতুন সরকারের মেয়াদ বেশিদিন হয়নি। ইতোমধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাজার হাজার নিরপরাধ মজলুম ব্যক্তিকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহত গতিতে বেড়ে চলছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের এয়ারপোর্টে ভিআইপি মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থনৈাতিক কর্মকাণ্ডের কাজ অনুকূল করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঋণখেলাপি দূর করার ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা সব ভালো কাজের বরকত কামনা করছি।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। আর এখানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কাজ প্রকাশ্যে বীরদর্পে হবে না, তা তো হতে পারে না। আমরা যখন এ বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, তখন ‘তাহের-কাদের’ প্যানেলে ডাকসুর নির্বাচনে আমিও ক্রীড়া সম্পাদকের পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। আমরা প্রকাশ্যে মধুর কেন্টিনে মিটিং করেছি। কলা ভবনসহ হলে হলে মিটিং-মিছিল করেছি, এখন ২০২৪ সাল। আগামীতে ডাকসুতে শিবির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।
শিবিরের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। শিবির বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেÑ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেঈ। বিশ^বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে শিবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন এবং তাদের কাজের ঘোষণা সাংবাদিকদের কাছে বর্ণনা দিয়েছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনকেও তারা তাদের সাথে একসাথে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান করেছেন। আমরা তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য হিসেবে আমরা আমাদের সময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছি। এখনো দেশের উজ্জ্বল ভাবমর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদেরই ভূমিকা রাখতে হবে।
মনে পড়ে গেল বর্তমান বিপ্লবের পূর্বে দেশের আবাসন শিল্পের সংগঠন ‘রিহাবের’ নির্বাচনে প্রথম হাসিনাবিরোধী প্যানেল আমরাই দিয়েছি। আমরাই ২৯ পদে স্বচ্ছ নির্বাচন করে ২৫ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ। তাই সর্বক্ষেত্রে আমরা যদি দুর্নীতিমুক্ত, সৎলোকেরা দেশের গ্রামের মেম্বার, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কমিশনার, জাতীয় সংসদের সদস্য প্রার্থী দিতে পারি, জনগণ আমাদের নির্বাচিত করবে, ইনশাআল্লাহ। শর্ত আমাদের সৎ, যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত প্রার্থী দাঁড় করাতে হবে। কোনো দলবাজি করা যাবে না। আত্মীয়বাজি করা যাবে না। সততার সাথে আমাদের প্রার্থী বাছাই করতে হবে। মুসলিম ভোটের সাথে হিন্দু ভোটও পেতে হবে। বিরোধীদলের ভালো লোকদেরও আমাদের কাছে টানতে হবে। ভালো লোকের কদর যেমন দুনিয়ায় আছে, তেমনি ভালো লোককে আল্লাহও মদদ দেন।
মুসলিম দেশগুলোয় মানবসম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ যদি পারস্পরিক ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যায়, তবে আমাদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উচ্চ শিখরে আমরা নিয়ে যেতে পারব।
ইতোমধ্যে জানা গেল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম ৪ অক্টোবর বাংলাদেশে আসছেন। প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ হবে। ভালো উদ্যোগ। আনোয়ার ইব্রাহীম ছাত্রনেতা হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেছেন। ছাত্রদের সমাবেশে বায়তুল মোকাররম মসজিদের চত্বরে বক্তব্য রেখেছেন। আমরা তখন ছাত্র ছিলাম। এবারের সফরে দুই দেশের সম্পর্ক আরো ভালো হবে। শ্রমিক নিয়োগ আরো বৃদ্ধি পাবে, ইনশাআল্লাহ। দেশের ভাবমূর্তি অনেকগুণে বেড়ে যাবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে পরিণত হয়ে গত ৫ আগস্ট বিজয় লাভ করে।
নতুন স্বাধীনতার বাস্তব রূপ দেখে এলাম আমার নিজের জেলা পাবনায়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীর দিনব্যাপী সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে সমাবেশ। সকাল-বিকাল দুইভাগে সমাবেশ। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ছিলেন প্রধান অতিথি।
সমাবেশস্থল ছিল আনন্দঘেরা শত বছরের শ্রেষ্ঠ সমাবেশ। সকালে নির্ধারিতদের সমাবেশ। আর বিকেলে ছিল সাধারণ সমাবেশ। কলেজ মাঠ ছাড়িয়ে গোটা পাবনার অলিগলি মানুষের উপস্থিতি মনে করিয়ে দেয়, ঢাকায় গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের কথা। মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা আবদুস সুবহানের এবং বর্তমান সময়ে পাবনার যারা শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদের ত্যাগ মহান আল্লাহ কবুল ও মঞ্জুর করেছেন।
আমরা যারা বেঁচে আছি, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো শহীদের প্রেরণা আল্লাহর সাহায্যের কথা মনে করে দেশের পথে-প্রান্তরে আল্লাহর নিবেদিত কর্মী বাহিনীকে আল্লাহর দীন কায়েমে এগিয়ে আসা। বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তির উসিলা করা এবং দেশের ভাবমর্যাদা গোটা দুনিয়ার বুকে মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা। আল্লাহ আমাদের বিজয় দেবেন।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল : rnabi1954@gmail.com

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।