রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ২৮তম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ ॥ ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী ॥ ৪ অক্টোবর ২০২৪

॥ ফেরদৌস আহমদ ভূইয়া ॥
ক্ষমতা শব্দটির মধ্যেই আছে এক ঝাঁকুনি দেয়া অনুভূতি, শিহরণ ও চেতনা। ক্ষমতার ইংরেজি শব্দ হচ্ছে Power। ক্ষমতা শব্দটির ব্যাপক অর্থ রয়েছে। ক্ষমতা শব্দের অর্থ কর্তৃত্ব, প্রভাব, প্রতিপত্তি, আধিপত্য, কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, নিয়ন্ত্রণ করা, শাসন করা, পরিচালনা করা, নেতৃত্ব দেয়া, হুকুমদারি করা, শাসনভার হাতে নেয়া, রাজত্ব করা ইত্যাদি। তবে ক্ষমতার সাথে দক্ষতা, অধিকার ও দায়িত্বের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ক্ষমতা মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি, বিশেষ মর্যাদা আর সম্মানের বিষয়। বিশেষ করে রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির সাথেই এ ক্ষমতা শব্দটির জোরালো সম্পর্ক। তবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্তরেও ক্ষমতার একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে। আর রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, প্রভাবিত করা, নিয়ন্ত্রণ করা, শাসন করার সম্পর্ক রয়েছে।
ক্ষমতার সাথে রাজনৈতিক কারণে আরো কিছু শব্দবন্ধ ব্যবহার হয়ে থাকে এবং বাস্তবে তার প্রতিফলনও দেখতে পাওয়া যায়। যেমন ক্ষমতাটা কি বৈধ না অবৈধ, তাদের ক্ষমতা আরোহণ কি সাংবিধানিক নাকি অসাংবিধানিক। ক্ষুদ্র আকারে বলা হয়ে থাকে, তার ক্ষমতা গ্রহণটা কি আইন ও বিধিসম্মত হয়েছে নাকি আইনবহির্ভূত হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং রাজনীতির ইতিহাসে লেখা বা বলা ক্ষমতা শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। রাজনৈতিক ইতিহাস বলতে বা লিখতে গিয়ে বলা হয়ে থাকে, বিগত শতকে দশ বা পনেরো বছর অমুক দল বা মুসলিম লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। ১৯৭০-এর দশকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। ১৯৭০ থেকে শুরু করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, ২০০১ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চারদলীয় জোট সরকারের সাথে ক্ষমতায় ছিল ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে রাজনৈতিক আলোচনা ও ইতিহাসে।
ক্ষমতা বলতে মানুষের আচার-ব্যবহারকে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্যকে বোঝায়। অর্থাৎ ক্ষমতা হলো এক ধরনের শক্তি সামর্থ্য বা দক্ষতাপ্রসূত একরকম প্রভাব। অন্যভাবে বলা যায়, সামাজিক জীবনে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অন্যসব গোষ্ঠী বা গোষ্ঠীসমূহের ওপর প্রভাব বা আধিপত্য বিস্তার করাকেই ক্ষমতা বলে।
ক্ষমতাকে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাত্ত্বিক ও গবেষক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। হ্যারল্ড ল্যাসওয়েল ও আব্রাহাম ক্যাপলান বলেন, ‘Power is participation in the making of decision’. অর্থাৎ ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেয়ার অর্থ হচ্ছে ক্ষমতা।
আলফ্রেড ডি গ্রেজিয়া ক্ষমতার সুন্দর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাঁর মতে, ‘Power is the abilty to make decisions influencing the behaviour of persons.’ “ক্ষমতা হলো মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য।”
সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, ‘ক্ষমতা হলো অপরের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য, তাতে তাদের সম্মতি নাও থাকতে পারে।’ ডেবিড পোপিনোর মতে, ক্ষমতা হচ্ছে কোনো লোক বা গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করার যোগ্যতা, তাতে ঐ লোক বা গোষ্ঠীর সহযোগিতা করতেও পারে নাও করতে পারে। কিংসলে ডেভিসের মতে, ‘ক্ষমতা হচ্ছে কোনো লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে অপরের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা।’ স্মেলসার বলেছেন, ‘ক্ষমতা হলো এমন সামর্থ্য যা কারো ইচ্ছা অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যায় এবং সম্পদকে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কাজে লাগানো যায়। আরনল্ড গ্রিন বলেছেন, ‘ক্ষমতা হচ্ছে নিতান্তই অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য যাতে তারা যা চায়, তা সম্পাদন করতে পারে। এককথায় বলা যায়, ক্ষমতা হলো এক ধরনের সামর্থ্য।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডি র‌্যাফেল ক্ষমতাকে তিন দিক থেকে ব্যাখ্যা করেছেন, ক. সাধারণ অর্থে, ক্ষমতা হলো দক্ষতা বা শক্তি। খ. দ্বিতীয় অর্থে, ক্ষমতা এমন দক্ষতা যার মাধ্যমে এক ব্যক্তি অন্যের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। গ. তৃতীয় অর্থে, রাষ্ট্র ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট কাজ করতে বাধ্য করে।
ক্ষমতার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- ১. ভিত্তি, ২. আইনগত অধিকার, ৩. স্বীকৃতি, ৪. কর্তৃত্ব সৃৃষ্টি, ৫. হস্তান্তরযোগ্যতা, ৬. কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ।
ক্ষমতার সংজ্ঞা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ক্ষমতা হলো এক ধরনের রাজনৈতিক অগ্রাধিকার, যা দেশ ও দেশের পরিকাঠামোকে রাজনৈতিক নিরিখে শাসন করার অধিকার দেয়। এ ক্ষমতা এবং ক্ষমতার বণ্টন ও প্রয়োগ হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল বুনিয়াদ। ক্ষমতার বিভিন্ন উপাদান- ১. রাজনৈতিক শাসক, ২. শাসনাধীন প্রজা বা জনগণ, ৩. ক্ষমতা নির্ধারণের ব্যবস্থা, যা রাজতন্ত্র বা গণতন্ত্র ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, গোষ্ঠীগত, রাজনৈতিক, জোটগত, সরকার ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার আবার রকমফের আছে। এ ক্ষমতার যেমন বেশকিছু উপাদান আছে এবং এসব উপাদানের কারণে ক্ষমতার প্রকারভেদও আছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা রাজনৈতিক ক্ষমতাকের প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করছেন। সে দুটি হচ্ছে হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ার। সাম্প্রতিককালের আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ স্যামুয়েল ন্যাই এ দুই পাওয়ারের সমন্বয়ে আর একটি পাওয়ারের কথা বলেছেন, তা হচ্ছে ‘স্মার্ট পাওয়ার’। উল্লেখ্য, সফট পাওয়ার ও স্মার্ট পাওয়ার তত্ত্বের উদ্ভাবক হচ্ছে এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ স্যামুয়েল ন্যাই।
হার্ড পাওয়ার, সফট পাওয়ার ও স্মার্ট পাওয়ার শব্দবন্দগুলো হচ্ছে ইংরেজি ভাষার। এগুলোর সরল বাংলা করলে হার্ড পাওয়ারের অনুবাদ হচ্ছে কঠিন ক্ষমতা, সফট পাওয়ারের বাংলা অর্থ নরম ক্ষমতা আর স্মার্ট পাওয়ারকে বাংলা ভাষায় বলা যায় বুদ্ধিদীপ্ত সমন্বিত ক্ষমতা।
অবশ্য সফট পাওয়ারের বাংলায় শাব্দিক অর্থ ‘নরম ক্ষমতা’ এ শব্দবন্ধ দিয়ে এবং হার্ড পাওয়ারের বাংলা অর্থ কঠিন ক্ষমতা এ শব্দবন্ধ দিয়ে যথথাযথ ভাবটা ফুটে ওঠে না। তাই বাংলা ভাষায় আমরা হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ার শব্দবন্ধ দুটি ইংরেজি শব্দেই ব্যবহার করছি এবং ইংরেজি শব্দই শ্রুতিমধুর এবং তার আসল মর্মাথ পরিস্ফুট হয়।
হার্ড পাওয়ার
রাষ্ট্র, সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে হার্ড পাওয়ারের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক শক্তি, সামরিক বাহিনী, অর্থনৈতিক শক্তি, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণ।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হার্ড পাওয়ার বলতে একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, সামরিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তিকে বোঝানো হয়। একটি রাষ্ট্র তার সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি দ্বারা অন্য দুর্বল রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করাকে বোঝায়। ভূরাজনীতিতে যেসব রাষ্ট্র সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী তারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।
মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ ন্যাই হার্ড পাওয়ার বলতে বুঝিয়েছেন, যারা অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে ক্ষমতাশালী তারা এ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যদের তাদের কথা মানতে বাধ্য করে। এর অর্থ যে শক্তিশালী দেশগুলো দুর্বল দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের ওপর নানা প্রকার বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করে অথবা সামরিক নিরাপত্তা প্রদান করে অথবা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে। এছাড়া অনেক সময় ভীতি প্রদর্শন করে এবং বল প্রয়োগের আশ্রয় নেয়।
হার্ড পাওয়ার বা কঠিন ক্ষমতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো দমন। সুতরাং কঠিন ক্ষমতা প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে তাদের নিজের ইচ্ছামতো পরিচালনা করা। একটা দেশের পরিচয় হলো তার আকৃতি, ক্ষমতা এবং সম্পদের ব্যবহার। এছাড়া জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ, আঞ্চলিক বিষয়, সেনাবাহিনী, অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রভৃতিও এর সঙ্গে যুক্ত। একটি জাতি বা দেশের হার্ড ক্ষমতার প্রয়োগ প্রকাশ পায় তার সম্পদের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে।  
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মূল বিষয় প্রোথিত রয়েছে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর। সার্বভৌমত্বের ওপর ভিত্তি করেই একটি রাষ্ট্র ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে।
সফট পাওয়ার
মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ ন্যাই হলেন ‘সফট পাওয়ার’-র তত্ত্বের প্রবক্তা। সফট পাওয়ার হচ্ছে ক্ষমতার একটি সূক্ষ্ম রূপ। এ সফট পাওয়ার তথা ক্ষমতাকে মূলত ব্যবহার করা হয় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সম্পর্ক, জাতির সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে। তবে জাতীয় পর্যায়েও সফট পাওয়ারের গুরুত্ব ও প্রভাব প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
জোসেফ ন্যাইয়ের মতে, সফট পাওয়ার হলো দমনমূলক ক্ষমতার বিপরীতে ক্ষমতার একটি আকর্ষণীয় এবং সহনীয় রূপ। সফট পাাওয়ার হার্ড ক্ষমতার মতো শক্তি অথবা দমনমূলক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়।জোসেপ ন্যাই ১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে সফট পাওয়ার তত্ত্বটি জনপ্রিয় করে তোলেন।
সফট পাওয়ারের প্রধান প্রধান উপাদান হচ্ছে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম, সভা সমাবেশের স্বাধীনতা, জনগণের বাকস্বাধীনতা, আদর্শিক মূল্যবোধ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, কূটনৈতিক যোগাযোগ ও স্বাধীন বিচার বিভাগ। আধুনিক বিশ্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় রাজনীতিতে সফট পাওয়ারের প্রভাব খুবই শক্তিশালী এবং প্রতিনিয়ত তার প্রয়োগ বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সফট পাওয়ার প্রয়োগ করে তাদের নিজেদের পছন্দকে প্রতিষ্ঠা করে এবং অন্যদের পছন্দ বা ইচ্ছাকে সরাসরি দমন করে না। জোসেফ ন্যাইয়ের মতে, একটি জাতির সফট পাওয়ার ৩টি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যেমন: ১. সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ২. রাজনৈতিক মূল্যবোধ, ৩. বৈদেশিক রাজনীতি।
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ১৯৮৫ থেকে ‘সফট পাওয়ার তথা নরম ক্ষমতা’ শব্দবন্ধটি রেকর্ড করে। এখানে একটি জাতি, রাষ্ট্র, জোট ইত্যাদির জবরদস্তি বা বলপ্রয়োগ বা সামরিক শক্তির পরিবর্তে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবকেই সফট পাওয়ার হিসেবে বলা হয়েছে।
ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে সফট পাওয়ার বিষয়ে একটি সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, The use of a country's cultural and economic influence to persuade other countries to do something, rather than the use of military power. অর্থাৎ সামরিক শক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে অন্য দেশকে কিছু করতে রাজি করাতে একটি দেশের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের ব্যবহার।
জোসেফ ন্যাই বলেছেন, আধুনিক বিশ্বে একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির জন্য সফল কৌশল হচ্ছে হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ারের উপাদানগুলোর সমন্বয় করা। শুধুমাত্র হার্ড পাওয়ার বা শুধু সফট পাওয়ার প্রয়োগ করা পর্যাপ্ত নয়। তিনি সন্ত্রাসবাদের উদাহরণ টেনে বলেছেন, সফট পাওয়ার দিয়ে সন্ত্রাসীদের মন-মানসিকতা পরিবর্তন চেষ্টা অকার্যকর হবে তাই এখানে হার্ড পাওয়ার উপাদান ব্যবহার দরকার। তিনি তার লেখায় আফগানিস্তানের তালেবানদের উদাহরণ দিয়েছিলেন। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হার্ড পাওয়ার উপাদান ব্যবহার করে তালেবানদের পরাজিত করতে পারেনি। এখানেও প্রমাণিত হচ্ছে যে সফট পাওয়ারই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সংক্ষেপে বলা যায়, হার্ড পাওয়ার হলো আগ্রাসন আর সফট পাওয়ার হলো সহযোগিতা এবং সহাবস্থান। হার্ড পাওয়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো সামরিক হস্তক্ষেপ, অর্থনৈতিক অবরোধ, বাণিজ্যিক বাধা-নিষেধ প্রভৃতি। অন্যদেিক সফট পাওয়ার হলো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও তার বিকাশ, রাজনৈতিক ধারণার, জনমত ও জনসমর্থন ও কূটনৈতিক প্রভাব।
জাতীয় রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক নেতা, কর্মী, সাংগঠনিক কমিটি, আর্থিক সংস্থান তথা দলের তহবিল ও অঙ্গ সংগঠনগুলো হচ্ছে তার হার্ড পাওয়ার। অপরদিকে একটি দলের রাজনৈতিক আদর্শ ও মূল্যবোধ, রাজনৈতিক দর্শন, জনমত, জনসমর্থন ও ভোটারবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সংবাদমাধ্যম, কূটনৈতিক যোগাযোগসহ চৈন্তিক কর্মকাণ্ডগুলো হচ্ছে সফট পাওয়ারের উপাদান। হার্ড পাওয়ারের কর্মকাণ্ড অনেকটা প্রকাশ্যও সরব তৎপরতা; অন্যদিকে সফট পাওয়ারের কাজগুলো হচ্ছে অনেকটা পরোক্ষ ও নীরব তৎপরতা। হার্ড পাওয়ারের কাজ হচ্ছে স্বল্পস্থায়ী আর সফট পাওয়ারের কাজগুলো হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ও দীর্ঘস্থায়ী। সফট পাওয়ারের টুলসগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক তথা দলীয় আদর্শ ও মূল্যবোধ, রাজনৈতিক দর্শন, নীতি-নৈতিকতা, সংবাদমাধ্যম তথা সংবাদপত্র ও টেলিভিশন, সাহিত্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, থিঙ্কট্যাঙ্ক ইত্যাদি।
স্মার্ট পাওয়ার
জোসেপ ন্যাইই পরবর্তীতে স্মার্ট পাওয়ার নামে আর একটি তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন। স্মার্ট পাওয়ার হচ্ছে সফট পাওয়ার ও হার্ড পাওয়ারের সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ শক্তি। রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির উদ্ভব ঘটে তাকে তিনি স্মার্ট পাওয়ার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, স্মার্ট পাওয়ার হচ্ছে হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ারের সমন্বয়ে একটি সফল কৌশল যা একটি রাষ্ট্রের জন্য আরো শক্তি অর্জন করা। বর্তমান বিশে^র অনেক শক্তিধর রাষ্ট্র প্রতিদ্বন্ধি রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য হার্ড ও সফট পাওয়ারের সমন্বয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এ স্মার্ট পাওয়ারকে ব্যবহার করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় রাজনীতিতেও হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ারের সমন্বয়ে স্মার্ট পাওয়ারের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে যেসব রাজনৈতিক দল হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ারের সমন্বয়ে স্মার্ট পাওয়ার অর্জন করতে পারে, তারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় পৌঁছাতে পারছে।
প্রেক্ষিত বাংলাদেশ
পরাশক্তিগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে হার্ড পাওয়ার, সফট পাওয়ার ও স্মার্ট পাওয়ারের টুলসগুলো অহরহ ব্যবহার করে থাকে। উন্নত দেশের চৌকষ রাজনীতিকরা তাদের নিজ দেশের জাতীয় রাজনীতিতেও খুবই সন্তর্পণে সফট পাওয়ারকে কাজে লাগায়। অবশ্য বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলোয় হার্ড পাওয়ার, সফট পাওয়ার ও স্মার্ট পাওয়ার বিষয়ক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তেমন একটি নেই। হার্ড পাওয়ার অর্জন, সফট পাওয়ার ডেভেলপ করে স্মার্ট পাওয়ারের সমন্বয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এত মেধা ও বুদ্ধিশ্রম খাটানোর পথে রাজনীতিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেই। এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও তার নেতাদের একটিমাত্রই লক্ষ্য- যেকোনো উপায়ে জোরজবরদস্তি ক্ষমতায় যাওয়া।
বাংলাদেশের রাজনীতিতেও আমরা হার্ড পাওয়ার ব্যবহার করে ক্ষমতায় আরোহণ ও থাকার ইতিহাস জানি। যেমন বিদেশি শক্তির ক্রীড়নক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হার্ড পাওয়ার তথা সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল। রাজনৈতিক অপশক্তি ও সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে স্বৈরাচার এরশাদ প্রায় ৯ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এরশাদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের কোনো রাজনৈতিক আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং কোনো রাজনৈতিক দর্শন ছিল না, তাই তার দলটি আস্তে আস্তে রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছে।
অতি সম্প্রতি ক্ষসতাচ্যুত পতিত আওয়ামী লীগেরও চরম পরিণতি হয়েছে সফট পাওয়ারের বিপরীতে শুধু হার্ড পাওয়ারকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার অপচিন্তা ও অপকর্মের কারণে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুধুমাত্র হার্ড পাওয়ারকে ব্যবহার করেই বিগত সাড়ে ১৫ বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে প্রকৃত মূল্যবোধ ও আদর্শ এবং জনমত ও জনসমর্থনকে কোনোই গুরুত্ব দেয়নি। যার পরিণতিতে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে এবং দলের কথিত রাজনৈতিক শক্তি তথা হার্ড পাওয়ারকে অতি ব্যবহারের কারণে আজকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকারটুকুও হারিয়ে বসেছে।
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হার্ড পাওয়ার নিয়ে ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ম্যাগাজিন টাইম পত্রিকা একটি কভার স্টোরি প্রকাশ করে। টাইম ম্যাগাজিনের কভারে শেখ হাসিনার ছবি দিয়ে কভার শিরোনাম করা হয়েছিল, ‘HARD POWER, PRIME MINISTER SHEIKH HASINA AND THE FATE OF DEMOCRACY IN BANGLADESH. শিরোনামটির বাংলা অর্থ হচ্ছে , ‘হার্ড পাওয়ার প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভাগ্য।’
রাজনীতি ও সংবাদমাধ্যম দুনিয়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে যে টাইম ম্যাগাজিনে যেসব রাজনীতিক তথা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের নিয়ে কভার স্টোরি করেছে তাদের কপাল ফেরেনি বরং পুড়েছে। টাইমের এ কভারকে শনির কভার বলা হয়।         
টাইমের এ শনির কভারে ঠাঁই হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি থেকে শুরু করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো, মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত, ভারতের শীর্ষ রাজনীতিক মহাত্মা গান্ধী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রাফিক হারিরি, ইতালির প্রধানমন্ত্রী বারলুসকোনি, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনসহ এমন অসংখ্য রাষ্ট্রপ্রধানের। শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা সবারই জানা। তাদের সবারই শেষ পরিণতি সুখকর হয়নি।
বাংলাদেশের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীও টাইম ম্যাগাজিনের কভারে এসেছিলেন। ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া টাইমের কভারে আসার পর থেকে আর ক্ষমতায়ই আসতে পারেননি। ২০২৩ সালে হার্ড পাওয়ার শিরোনামে শেখ হাসিনাও টাইম ম্যাগাজিনের কভারে এসেছিলেন।
শেখ হাসিনা টাইম ম্যাগাজিনের কভারে আসার বছর ঘোরার আগেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়তে হয় শেখ হাসিনাকে। তাই অনেকে বলছেন, তবে কী টাইমের কভারেই কপাল পুড়ল শেখ হাসিনার?
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন ও কোনো মূল্যবোধ নেই, শুধু রাজনীতিতে পেশিশক্তি তথা হার্ড পাওয়ার ব্যবহার করেই বার বার ক্ষমতায় এসেছে আবার ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিপতিত হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন ঠিকই তাকে চিনতে পেরেছে।
বাংলাদেশের মধ্যমপন্থি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি রাজনৈতিক দর্শন থাকলেও তার চর্চা নেই এবং বিকাশ ঘটানোর কোনো থিঙ্কট্যাঙ্ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান নেই। সফট পাওয়ার বাড়ানোর কোনো উদ্যোগও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অথচ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়েই সফট পাওয়ারের শক্তিশালী টুলস সংবাদপত্র প্রকাশে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক দলকে একটি রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শনকে লালন করতে হয় এবং ঐ আদর্শের বিকাশ করতে হয়। তাই রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শনের বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে সংবাদপত্র। তাই দৈনিক বাংলা ও বাংলাদেশ টাইমসের মতো রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র থাকার পরও তিনি দলের জন্য দৈনিক দেশ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি দেশের বাইরে, তবে নিকট প্রতিবেশী দেশেও বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারের জন্য বাংলা ভাষায় পত্রিকা প্রকাশে সহযোগিতা করেছিলেন।
অপরদিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফট পাওয়ারের বেশকিছু উপাদান লালন করে এমন একটি দল হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিগত দেড় দশক ধরে এ দলটির নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুমসহ অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন সত্ত্বেও সফলতার সাথে টিকে আছে রাজনৈতিক ময়দানে। আর সফলভাবে টিকে থাকার কারণ হচ্ছে দলটি সফট পাওয়ারের অন্যতম টুলস রাজনৈতিক আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ ও লালন করা। জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক দল আর দলের আদর্শ হচ্ছে ইসলাম। এ দলের যেমন আদশিক দর্শন রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাজনৈতিক দর্শন। জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামী আদর্শের রাজনৈতিক দল হিসেবে হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ারের সমন্বয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী সফট পাওয়ার নিয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে বেশকিছু সেক্টরে ঘাটতি আছে, আর এ ঘাটতি কোয়ালিটি তথা গুণগতমানের।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগসহ ডান, বাম, ইসলামী ও মধ্যপন্থিসহ বাংলাদেশে কয়েকশত রাজনৈতিক দল রয়েছে। তন্মধ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ৫০। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চার অভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনীতি ও আদর্শের বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা ও কাজ নেই বললেই চলে। তাই রাজনৈতিক দলকে হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ারের মাধ্যমে স্মার্ট পাওয়ারের সমন্বয় ঘটিয়ে শক্তিশালী করার উচ্চমার্গের চিন্তা নেই। এ ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তাশীল নেতা যেমন নেই, তেমনি কর্মী-সমর্থক নেই। একবাক্যে বলা যায়, বাংলাদেশে হার্ড পাওয়ার ও সফট পাওয়ারের উপাদানের সমন্বয়ে স্মার্ট পাওয়ার সমৃদ্ধ রাজনৈতিক দলের বিকাশ এখনো হয়নি।
ইমেইল: ferdous.ab@gmail.com

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।