কথিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল করতে হবে

জনগণের বিশ্বাস ও আদর্শের আলোকেই প্রণয়ন করতে হবে বিধিবিধান


২৯ মে ২০২৫ ১০:১২

নারী সংস্কার প্রতিবেদন

॥ শাহানারা স্বপ্না ॥
নারী অধিকারের বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কথিত একটি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের মূল্যবোধবিবর্জিত একটি সুপারিশ পেশের পর এ আলোচনা একটা বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে। বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ লোক মুসলিম, কিন্তু সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার কারণে বেশিরভাগ মানুষই ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখে না। তাই বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি অংশ মনে করেন, ইসলাম নারীদের কোনো অধিকার দেয়নি। বরং বিশ্বে ইসলামই প্রথম মানবাধিকার সনদ রচনা করেছিল এবং নারীদের দিয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা। কিন্তু না জানার কারণে অনেকেই মনে করেন, ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা ও যথাযথ অধিকার দেয়নি। এসব বিষয়ে পশ্চিমা প্রভাবিত দেশের কিছু নারীবাদী সংগঠন ইসলামের নীতিমালা ও নির্দেশনা বিলোপ চেয়ে সেমিনার ও জনমত গঠনে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সরকারকে দেয়া প্রস্তাবিত সুপারিশ পেশের পর নারীদের অধিকার বিষয়ক আলোচনা জোরদার হয়ে উঠেছে।
ইসলাম স্বাধীন চিন্তাধারার বিপক্ষে নয়। আমাদের দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যার অন্ত নেই। সমাজের প্রায় একান্ন শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি নারীও সমস্যাসংকুল অবস্থার সম্মুখীন হন। তারপরও তারা পিছিয়ে নেই। চব্বিশের জুলাইয়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের পুরুষের সাথে লড়াই করেছে সমানতালে। শিক্ষা ও পেশা সর্বত্রই নারীর পদচারণা বাড়ছে। কিন্তু এতসবের পরও ধর্ষণ, নিপীড়ন, সুবিচার, সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা এসবের রয়েছে প্রচুর ঘাটতি। এসব সমস্যা নিরসন এবং নারীর যথাযথ অধিকারের প্রতি দৃষ্টি দেয়া জরুরি। তবে তা হতে হবে আমাদের কৃষ্টি, কালচার, ঐতিহ্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী। আমাদের দেশের নব্বই ভাগ জনসাধারণ মুসলিম এবং সমাজের নারীদের সবাই লালন করেন ইসলামী ধ্যান-ধারণা ও ঐতিহ্যবোধ।
গত ৫ মে নারী কমিশনের দশজন এনজিও নারী কর্মী প্রধান উপদেষ্টার কাছে নারীদের নিয়ে একটি সুপারিশ পেশ করে। এটি ছিল প্রায় সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠার একটি বিশাল নথি। এতে রয়েছে ১৭টি অধ্যায় এবং ১৫টি সুপারিশ। দেখা যায় সুপারিশের কিছু প্রস্তাবনা আংশিক ভালো কিন্তু বেশিরভাগই আমাদের দেশের সামাজিক-পারিবারিক মূল্যবোধ, ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। সর্বমহল থেকে ক্ষোভ দিনকে দিন সাগরের ঢেউয়ের মতো ফেনিয়ে উঠছে। জুলাই-বিপ্লব পরবর্তী সময়ে দেশের পলাতক সরকারের রেখে যাওয়া অভ্যন্তরীণ সংকট, সুবিধাবাদী মহলের আরোপিত অস্থিরতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেই চলছে সংস্কার কার্যক্রম। এ সুযোগে মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে দেশি-বিদেশি সুযোগসন্ধানীরা। এনজিও এবং বিদেশি ডোনারদের মদদপুষ্ট সেক্যুলার নারীবাদী সংগঠন ‘দাবি আদায়’ এর সুরতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
মূলত বর্তমান সময়ের তথাকথিত নারীবাদীরা নারীদের বিভিন্ন দাবি আদায়, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আর লড়াই করে না। তারা এখন লড়াই করছে মুসলিম ঐতিহ্যের সমাজবিধ্বংসী পরিকল্পিত এক নীলনকশা বাস্তবায়নে। ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’ নীতিতে তারা হাজির করে ডোনার প্রভুদের প্রজেক্ট প্রকল্প। সমাজে অস্থিরতা উসকে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার তাদের অন্যতম এজেন্ডা। নারীর প্রতি সুবিচার, সাম্য, ন্যায্য অধিকার, পুনর্বাসন এসব বাদ দিয়ে তারা ইন্ধন জোগাচ্ছে পুরুষের প্রতি নারীর বৈরিতা লালনের। নারী-পুরুষকে একে অপরের প্রতিপক্ষরূপে হাজির করছে। এ ধরনের মারাত্মক প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকাণ্ড ঘৃণার চাষ করছে সমাজে। এতে নারীর প্রতি কমনভাবে জেগে উঠছে শত্রুতার মনোভাব। জাগিয়ে তুলছে সন্দেহ এবং ভয়ভীতি। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে নারী-পুরুষের প্রীতিময় পারস্পরিক সহাবস্থান। এমনিতে সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ আশঙ্কাজনক। এ টক্সিক ফেমিনিজমের প্রচারণায় তরুণ সমাজ বিয়ে-বিমুখ হয়ে উঠবে। বিশ্বাসভঙ্গ ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত নষ্ট করে নারীদের সত্যিকারের মর্যাদা পড়বে হুমকির মুখে।
নারী কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবনায় বিতর্কিত বিষয়গুলো একটু দেখা যাক।
প্রতিবেদনের ৩৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘গণিকাবৃত্তির বিষয়টি বাদ দিতে হবে। কারণ জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার নামে যৌনকর্মীদের পেশাকে নিরোধ করা মানবাধিকার লঙ্ঘন’। এছাড়া ৩৭ পৃষ্ঠায় ‘যৌনপেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইনে একে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।’ শুধু ইসলাম নয় বিশ্বের সব ধর্ম গণিকার কাজকে নৈতিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। একটি সুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্রে গণিকার কাজকে অনুমোদন করতে পারে না।
গণিকার কাজ কেউ স্বেচ্ছায় করে না। জোরপূর্বক কারো দ্বারা বন্দী, নিগৃহীত, নিপীড়িত, প্রতারিত হয়ে নারীরা এ পথে আসতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব গণিকার কাজ করতে বাধ্য নারীদের নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার ও পুনর্বাসন করা, সুস্থ জীবনযাপনের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া। গণিকাবৃত্তির সাথে যুক্ত রয়েছে অনেকগুলো ফ্যাক্টর, যা এখন অবৈধভাবে চলছে। যেমন নারী ও শিশু অপহরণ, পর্নোফিল্ম তৈরি, সেক্সুয়াল কন্টেন্ট তৈরি, বিকৃত যৌনতা, বেশ্যাবৃত্তি, মাদক, জুয়াখেলা, পর্নো ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি অসামাজিক কাজ ও ব্যবসা। একে স্বীকৃতি দিলে রাষ্ট্র ও সমাজ বিপদাপন্ন হবে। এসব অপরাধের সাথে জড়িতরা বৈধতা পেয়ে যাবে। যার ফলে সমাজে স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পাবে অপরাধ। অবক্ষয়, অশ্লীলতা চরম পর্যায়ে চলে যাবে, যা কোনো আইন দিয়েই রোধ করা যাবে না। দেশের কোনো সুস্থ নাগরিক এ ধরনের অমানবিক, নিকৃষ্ট ও অপরাধপ্রবণ কাজ বাস্তবায়নের সুপারিশ করতে পারে না। অথচ নারী সংস্কার কমিশন গণিকার মতো একটি নিকৃষ্ট কাজকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতির সুপারিশ করেছে। এটা বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম রাষ্ট্রে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
প্রতিবেদনে ৩.২.১.১.৩ এর ২ক অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়েছে, যাতে রাষ্ট্রের কোনো ধর্মীয় পরিচয় না থাকে। নব্বই শতাংশ মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে এ ধরনের প্রস্তাবনা রাষ্টদ্রোহের শামিল। একই অনুচ্ছেদের ‘ছ’ এ বলা হয়েছে, মুছে ফেলতে হবে ‘শালীনতা’ ‘নৈতিকতা’ শব্দসমষ্টি! অর্থাৎ তারা সুপারিশ করছেন এমন একটি অশ্লীল সমাজ কায়েমের, যেখানে থাকবে না কোনো শালীনতা ও নৈতিকতার বালাই। কোনো সভ্য সমাজে কি এটি হওয়া সম্ভব? আন্দামানের জঙ্গলে হয়তো তারা এটি করতে পারেন।
প্রতিবেদনের ১২২ পৃষ্ঠায় পারিবারিক আইন সংশোধন করে ‘সমান হিস্যা সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অনার্জিত সম্পত্তির উত্তরাধিকার ভিত্তিতে সমান অধিকার চাওয়া হয়েছে।’ এটি সরাসরি পবিত্র কুরঅনের সাথে সাংঘর্ষিক। মুসলিম নারী উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তির পাওয়ার বিধান রয়েছে এবং তাদের কোনো ভরণপোষণের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। অন্যদিকে ভাইয়ের ভাগ বেশি রেখে তার ওপর পরিবারের সকলের ভরণপোষণের দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এবং ইসলাম এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি প্রণয়ন করেছে। ইসলামে নারী ও পুরুষের দায়িত্ব-কর্তব্য ভিন্ন হওয়ায় উত্তরাধিকার বণ্টনেও ভিন্নতা রয়েছে। সমানভাগ সবসময় ন্যায়বিচার হতে পারে না। নারী কমিশন এর বিরোধিতা করে অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে এনেছে। এক্ষেত্রে আমাদের শরিয়া বোর্ড ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন রয়েছে। তারা এর চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটি যৌক্তিক সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। সম্পতির হিস্যা বা ভাগের বিষয়ে ইসলাম যে বিধান দিয়েছে তা খুবই ভারসাম্যপূর্ণ।
দশম অধ্যায়ের তাদের স্লোগান হলোÑ ‘শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার’। এটি একটি মারাত্মক বিভ্রান্তিকর প্রচারণা। নতুন প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। অল্প বয়সের বিচারবুদ্ধির অপরিপক্বতার সুযোগে এ ধরনের স্লোগানের বশবর্তী হয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। একদিকে তারা বলছে ‘শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার’; অন্যদিকে বলছে স্ত্রীর মত ছাড়া স্বামী শরীরিক সম্পর্ক করলে ধর্ষণের মামলা করা যাবে! একই সাথে তারা বেশ্যাবৃত্তিকে লিগ্যালাইজ করতে চায়। অর্থাৎ স্ত্রী-সহবাস ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু পতিতালয় গমন নিরাপদ! তাদের এসব মূল্যবোধহীন সুপারিশ হচ্ছে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকে ভেঙে একটি হুমকির মধ্যে ফেলা।
নারীবিষয়ক এ কমিশনের নারীরা মূলত পশ্চিমা ভোগবাদী সমাজের অন্ধ অনুসারী। তবে তাদের মডেল অনেক পুরনো। পাশ্চাত্যে সেক্যুলারিজমের দুটি রূপ আছে, একটি পুরনো- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীতে গড়ে ওঠা। আরেকটি সাম্প্রতিককালের। পশ্চিম এতদিন ধর্মকে অস্বীকার করে চলেছিল। অবশ্য এর কারণও ছিল। চার্চের সীমাহীন অত্যাচারের ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে সেখানে চার্চের বিরুদ্ধে মানুষ বিস্ফোরিত হতে বাধ্য হয়েছিল। জন্ম নিয়েছিল ধর্মহীন চরম সেক্যুলারিজম এবং জন্ম নিয়েছিল সেক্যুলার নারীবাদিতাও। এখন পরিবর্তিত বিশ্বে তাদের ভিশন-মিশনেরও চেঞ্জ আসছে। পশ্চিমে এখন ধর্ম এবং কালচারকে যতভাবে পারা যায় একমোডেট করার চেষ্টা করছে। অথচ বাংলাদেশের নারীবাদীরা এখনো আমাদের আঠারো শতাব্দীর সেক্যুলারি সবক দিতে চায়!
গত ১৭ মে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে নারী কমিশন উদ্যোগ নিয়ে কিছু এনজিও নারীদের একত্রিত করে এবং সমাবেশের নাম দেয় ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’। তারা এমনসব স্লোগান সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন বহন করছিল যা, সাধারণ শিষ্টাচারবহির্ভূত এবং আমাদের সাধারণ মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, ধর্মীয় চেতনা ও সৌজন্যতার সাথে সাংঘর্ষিক। ‘আমরা সবাই বেশ্যা, বুঝে নেবো হিস্যা, আমার শরীর আমার ইচ্ছা’ ইত্যাদি এমন সব কথা যা লিখাও যায় না! এ ধরনের বাক্যাবলি কেউ প্রকাশ্যে লিখে শরীর প্রদর্শন করতে পারে, এ যে কল্পনারও অতীত! তাদের চোখ-মুখ ছিল নেশাতুর, বেশভূষা ছিল অশ্লীল, অঙ্গভঙ্গি ছিল শ্লীলতাবর্জিত। স্পষ্টত বোঝা যায়, অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িতদেরই তুলে আনা হয়েছে। এ ধরনের আপত্তিকর অশালীন বক্তব্য ন্যূনতম সভ্যতার সাথে যায় না। তাই সমাজের বৃহত্তর নারী সমাজ এ ডাকে সাড়া দেয়নি, বরং ঘৃণা প্রদর্শন করেছে।
আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রচলিত সদাচরণের ভেতর ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়ে একটি সীমা-সরহদ্দ রয়েছে। যার ভেতরে পারিবারিক মূল্যবোধ, সদাচরণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ধরনের অশালীন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তা ভেঙে ফেলার উসকানি দেয়া হচ্ছে, যা অত্যন্ত ভয়াবহ। সমাবেশে উপস্থিত অনেকের কথাবার্তা, চালচলন ছিল অসংলগ্ন, মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মাদকসেবনের প্রভাবও লক্ষ করা য়ায়। এরা কি স্বেচ্ছায় জঘন্য কাজ করছে নাকি অন্য কারোর ইন্ধনে এক প্রকার ‘ফিল্ড টেস্টিং’ করে দেখছে- সমাজ কতটুকু সহ্য করতে পারে?
মাঠপর্যায়ে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারে জানা যায়, অনেক গ্রামীণ নারীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যারা নারী কমিশনের ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। এরই মধ্যে সমাবেশে নোংরা বাক্যের প্ল্যাকার্ডধারী এক নারী নেত্রীকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, নারী নেত্রীটি তার এক বান্ধবী, অল্প বয়সের একটি মেয়েকে প্রচুর পরিমাণে গাঁজা সেবন করার পর ঘুমের ভাব এলে তাকে বেডরুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এরপর একত্রে বসে গাঁজা টানারত কয়েকটি ছেলে সে ঘরে ঢুকে মেয়েটিকে রেপ করে। এ ঘটনায় মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখানো হলে সে অনেক পরে নারী নেত্রীটির বিরুদ্ধে মামলা করে। একজন প্রশ্ন তুলেছেন যে, ‘মেয়েদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্যই কি আপনারা বেশ্যাবৃত্তির বৈধতা চান? আপনারাই তো নারীদের শত্রু’! ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অনেক সময় সমাজে নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে একটি জাতিকে দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। তেমন কোনো গোপন প্রচেষ্টা চলছে না তো? এসব প্রশ্নের সমাধান হওয়া জরুরি। নারী কমিশন ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’ নামে বাংলাদেশের পরিবার-ধর্ম ও সমাজের বিরুদ্ধে একটি সূক্ষ্ম লড়াইয়ের অবতারণা করেছে।
বর্তমানে গঠিত নারী কমিশনের সুপারিশ ও প্রস্তাবনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখানের বৃহত্তর নারীগোষ্ঠী ধর্মপরায়ণ। তারা ধর্মীয় পরিবেশে থাকতে চায়, ধর্মকে লালন করে এবং পারিবারিক সংস্কৃতি পালন করে। বংশধারা তৈরির পারিবারিক অবকাঠামো ভেঙে পড়লে সুস্থ সমাজকাঠামো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সকল ধর্মের নারীরাই ধর্ম বজায় রেখে জীবনযাপন করতে চায়। তাই সমাজের সব শ্রেণি-পেশার নারী, ধর্মীয়-জ্ঞান বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞসহ সকল শাখার প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি নতুন কমিশন গঠন করা হোক। বর্তমান নারী কমিশনের নারীরা সমাজের এক পার্সেন্ট নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এ ধরনের কমিশনে বৃহত্তর নারীদের অংশগ্রহণ জরুরি। সামাজিক বিশৃঙ্খলা কারো কাম্য নয়। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে, সকলের মতামতের ভিত্তিতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে। বর্তমান নারী কমিশন বিলুপ্ত করে নতুন একটি সামগ্রিক নারী অধিকার সংরক্ষণকারী কমিশন গঠন করা হোক। এটাই সারা দেশের নারীসহ জনগণের দাবি। বাংলাদেশের মতো একটি ধর্মীয় মূল্যবোধসংবলিত সমাজের মানুষের বোধ-বিশ্বাস ও জীবন-বিধিকেই সমুন্নত করতে হবে। তারই আলোকে নতুন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে সংস্কার, সংশোধন ও কল্যাণকর বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। অন্য কোনো বস্তুগত ও নাস্তিক্যবাদ প্রভাবিত পশ্চিমা সংস্কৃতির আলোকে প্রণীত বিধান বা সুপারিশ বাংলাদেশের নারী সমাজ মেনে নেবে না।
লেখক: আইনজীবী ও সাহিত্যিক।