রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৫ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৬ এপ্রিল ২০২৪

এএফপি, মালে : মালদ্বীপে চীনের বিনিয়োগের ঘোর সমর্থক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর দল সংসদ নির্বাচনে ভালো ফল করবে কিনা, তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় ছিল। মালদ্বীপের দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতের বিরোধিতা করে তার অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে বলেও আলোচনা ছিল। তবে গত ২১ এপ্রিল রোববার অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে মালদ্বীপের জনগণ তার ও তার দলের প্রতিই অকুণ্ঠ সমর্থন জানাল। নির্বাচনে তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল। এ বিজয়ের মাধ্যমে মুইজ্জু ভারতের প্রভাব-বলয় থেকে বেরিয়ে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে জনগণের রায় পেয়ে গেলেন বলা যায়।
মুইজ্জুর ৪৫ বছরের পুরোনো দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রস (পিএনসি) ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে বিপর্যস্ত করে দিয়ে ৯৩ আসনের সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেল, মুইজ্জুর পিএনসি ৬৬ আসনে জয় পেয়েছে। সংসদ নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু তার প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশি দেরি করেননি। গত ২২ এপ্রিল সোমবার রাতেই তিনি বলে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বুঝতে পারবে, মালদ্বীপের মানুষ কার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
সমর্থকদের উদ্দেশে মুইজ্জু বলেন, মালদ্বীপের মানুষ বিদেশি শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে চায়। মালদ্বীপ রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, সেটা এ দেশের মানুষই ঠিক করবে।
প্রেসিডেন্টর পরিষ্কার বার্তা, ‘মালদ্বীপের বাইরে প্রত্যেকের কাছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের কাছে এটা এখন পরিষ্কার- আমরাই আমাদের সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে যখন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুইজ্জু প্রার্থী হন, তখন তিনি খুব একটা আলোচনায় ছিলেন না। এর আগে তিনি চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত আবদুল্লাহ ইয়ামিনের নির্মাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ইয়ামিন দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দী হওয়ার পর দলের হাল ধরেন মুইজ্জু। নির্বাচনে তিনি কৌশল ঠিক করে ফেলেন, হয় ভারত, না হয় চীনের দিকে যেতে হবে। এ সময় দেশবাসীর সামনে মোক্ষম এক কৌশল তুলে ধরলেন তিনি।  
ভারতবিরোধী অস্ত্র ব্যবহার করে মুইজ্জু নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয় পেলেন। এরপরই তিনি দীর্ঘদিনের মিত্র ভারতকে পরিত্যাগ করে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। তিনি ও তার দল অভিযোগ করে আসছিলেন, ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি, দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে দিল্লি সফর বাদ দিয়ে তিনি বেইজিং সফর করলেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর চীনের রাজধানী বেইজিং সফরকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে আবাসন, সেতু ও বিমানবন্দর নির্মাণে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেন।
সুতরাং সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর সমর্থকদের উদ্দেশে মুইজ্জুর বক্তৃতায় এটা পরিষ্কার- ভারতকে উদ্দেশ করেই তিনি এসব কথা বলেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ভারত মালদ্বীপের কোনো বিষয়ে নাক গলাক, সেটা মালদ্বীপের মানুষ মোটেই পছন্দ করে না।
আবদুল্লাহ ইয়ামিনের নির্মাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মুইজ্জু রাজধানী মালের বিমানবন্দরের সঙ্গে দ্বীপগুলোর সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে চীনের সঙ্গে ২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেন। এরপর তিনি মালের মেয়র নির্বাচিত হন।  
২০২২ সালে এক অনলাইন বৈঠকে মুইজ্জু চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, তার দল ক্ষমতায় ফিরে এলে ‘দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী’ গড়বে।
‘ভারত খেদাও’
নির্বাচনে মুইজ্জুর ধারাবাহিক সাফল্য মালদ্বীপের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ভারতকে কোণঠাসা করার মওকা এনে দেয়। তিনি ভারতবিরোধী অবস্থান ধরে রাখেন।
মুইজ্জুর এক জ্যেষ্ঠ সহযোগী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ভারত খেদাও’ (ইন্ডিয়া আউট) প্রচারণা মুইজ্জুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে দারুণভাবে সহায়তা করেছিল। আবার রোববার (২১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনেও সেই স্লোগান তিনি ও তার দলকে সাফল্য এনে দেয়।
ওই সহযোগী বলছিলেন, মালদ্বীপের মানুষও বিশ্বাস করে, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলে দেশে দ্রুত কাজ (নির্মাণ) করা সহজ হবে।
ঐতিহাসিকভাবে নয়াদিল্লির সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্কে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। ১৯৮৮ সালে একটি অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিতে সেখানে সৈন্য মোতায়েন করেছিল ভারত।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ভারতের প্রভাব পর্যায়ক্রমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি তৈরি করেছে।
২০২২ সালে রাজধানী মালের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে ভারতের সমর্থনে আয়োজিত একটি ইয়োগা অনুষ্ঠানে ইসলামপন্থীরা হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়েছিল।
মুইজ্জু উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশীর প্রভাব-বলয় থেকে মালদ্বীপকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেকে জাতীয় স্বার্থের জিম্মাদার হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
মালদ্বীপের ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুইজ্জু ১৫ মের মধ্যে তার দেশে মোতায়েন ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে একটি অংশ মালদ্বীপ ত্যাগ করেছে।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ভারতের দেওয়া তিনটি উড়োজাহাজের স্থলাভিষিক্ত করতে তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনেছেন। দেশের জলসীমার পাহারায় এসব উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হতো।
গত সপ্তাহে মালদ্বীপের একটি আদালত সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের সাজার রায় বাতিল করে তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
বেইজিংয়ের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্কের রূপকার হিসেবে আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে ভাবা হয়ে থাকে। চীনের রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট চীনের বিনিয়োগ এনেছিলেন। ঘুষ ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় তাকে ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর সরকারের সময় ১১ বছরের সাজা দেওয়া হয়।  
সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি
প্রায় ১ হাজার ১৯২টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত মালদ্বীপ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে মালদ্বীপের বিরাট এলাকা ডুবে যেতে পারে।
পানির উচ্চতা বৃদ্ধির পরও নিজেদের দ্বীপগুলোকে রক্ষায় দুর্গের মতো নির্মাণকাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মুইজ্জু।
মুইজ্জু ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশ কখনো পরিত্যক্ত হবে না। মুইজ্জুর এক পূর্বসূরি সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছিলেন, মালদ্বীপ যদি পানির নিচে চলে যায়, তাহলে তাদের অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোথাও দ্বীপ কিনে সেখানে চলে যেতে হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মুইজ্জু বলেছিলেন, পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে দ্বীপগুলো রক্ষা করতে এগুলো দুর্গের মতো করে গড়ে তুলতে চান তিনি। এজন্য ৫০ কোটি ডলার তহবিল খুঁজছেন।
মুইজ্জু বলেছিলেন, ‘আমাদের বসবাস বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বার্থে যদি ভূখণ্ড সম্প্রসারণ করতে হয়, সেটি আমরা করতে পারি। নিজেদের মতো করে টিকে থাকতে আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে।’



এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।