রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৫ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৬ এপ্রিল ২০২৪

॥ এডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নী ॥
ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য বানাতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো প্রদান আবারো প্রমাণ করলো, সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের গণহত্যা কার্যক্রমের প্রধান মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্র! ফিলিস্তিনকে এবারও জাতিসংঘের সদস্য হতে দিল না যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের আবেদনের ওপর নিরাপত্তা পরিষদে ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার। ২০১১ সালে প্রথম এ আবেদন করা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়ে বার বারই এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে। গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের মধ্যে এপ্রিলের শুরুতে ফিলিস্তিনিরা সদস্যপদ পাওয়ার আবেদনটি পুনরুজ্জীবিত করে।
ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তবে তাদের এ আর্জি প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পেতে হবে এবং তারপর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এর পক্ষে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে। পূর্ণ সদস্য না হলেও ফিলিস্তিন ২০১২ সালে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে।
কূটনীতিকরা জানান, ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ স্থানীয় সময় ১৯ এপ্রিল বিকাল ৩টার দিকে খসড়া প্রস্তাব নিয়ে ভোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ প্রস্তাবে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে স্বীকার করে নেয়া হোক।’
নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব পাস হতে এর পক্ষে অন্তত ৯টি ভোট প্রয়োজন ছিল। এ প্রস্তাবের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের কোনো ভেটো পড়া যাবে না। কূটনীতিকরা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ফিলিস্তিনকে পূর্ণ জাতিসংঘ সদস্য করার পক্ষে সমর্থন জানাতে নিরাপত্তা পরিষদের ১৩ সদস্য রাজি থাকলেও  প্রস্তাবটি আটকানোর জন্য শেষ পর্যন্ত ভেটো দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেয়ার বিষয়ে খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল আলজেরিয়া। আঞ্চলিক ব্লক আরব গ্রুপ গত ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার একটি বিবৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের আবেদনের প্রতি তাদের ‘অটল সমর্থন’ নিশ্চিত করেছিল। তারা বিবৃতিতে বলেছে, ‘আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক রেজ্যুলেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফিলিস্তিন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সদস্যপদ ন্যায়সংগত এবং সঠিক পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মধ্য দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত, জাতিসংঘের মাধ্যমে নয়। এ বিষয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড গত ১৭ এপ্রিল বুধবার বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস করেই যে আমরা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে এগোনোর মতো একটি অবস্থানে পৌঁছতে পারব, তেমন সম্ভাবনা দেখি না।’ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এ প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্যপদ দেওয়া হোক’। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১২ সদস্য এতে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত থাকে যুক্তরাজ্য ও সুইজারল্যান্ড। পাঁচ স্থায়ী সদস্যের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে এ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।
ভেটো না পড়লে প্রস্তাবটি পাস হতে ৯ ভোটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের কোনো প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনÑ এ স্থায়ী পাঁচ সদস্যের কোনো একটি দেশ বিপক্ষে ভোট দিলে ওই প্রস্তাব আর গৃহীত হয় না।
জাতিসংঘে যেকোনো এক বা একাধিক দেশ কোন জোরালো প্রস্তাব আনলেও তার বিপক্ষে ভোট দিয়ে প্রস্তাবটিকে অচল করার ক্ষমতাই হচ্ছে ভেটো। আর এ ভেটো দেয়ার ক্ষমতা আছে কেবল নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের। স্থায়ী সদস্য দেশগুলো সব যেন আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে।’ এ পাঁচ স্থায়ী সদস্যদের স্বার্থের বাইরে জাতিসংঘ কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে না। এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান হয় না। যেমন চীন ও রাশিয়ার ভেটোর কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
আজ ফিলিস্তিন বলতে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিমতীরের শুধু দুই টুকরা জমি অবশিষ্ট আছে। এরপরও প্রতিনিয়ত গাজা ও পশ্চিমতীরে বোমা নিক্ষেপ করছে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, তাদের অবরুদ্ধ করছে, তাদের সন্তানদের পঙ্গু করে দিচ্ছে। এমনকি অমানবিকভাবে ত্রাণকাজেও বাধা দিচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই!
জাতিসংঘ শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বাস্তবায়নেই ব্যর্থ হয়নি, বরং সংস্থাটি তার নিজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। যে পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব একটি রাষ্ট্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল।
যথাযথ তদারকি ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদ এখন এক ‘অতিকায় দানব’-এ পরিণত হয়েছে। এখন এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, যার বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত। তাতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। নোংরা দরকষাকষিও জড়িত। সাধারণ পরিষদের কাছে জবাবদিহি করার মতো কোনো দায়বদ্ধ কাউন্সিলও এখানে নেই।
মজলুম ও দুর্বলের সুরক্ষার যে মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ গড়ে উঠেছিল, তা আজো অধরাই থেকে গেছে। সফলতার চেয়ে বিশ্ব এ সংস্থাটির ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। বিশ্বজুড়ে বর্তমান  যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধ করে কার্যকর শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবি। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এর তথাকথিত পরাশক্তি বা (পঞ্চ দৈত্যে) পাঁচ সদস্য দেশ ও তাদের ভেটোক্ষমতা। জাতিসংঘের বৈধতা ও কার্যকারিতার নিরিখে যেকোনো কল্যাণকর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ‘ভেটো’ ক্ষমতা একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।