রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৫ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৬ এপ্রিল ২০২৪

॥ জাফর আহমাদ ॥
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে আমরা ডুবে আছি। তাঁর দেয়া প্রতিটি নিয়ামতই যথাস্থানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ অসংখ্য নিয়ামতরাজির মধ্যে দুটি নিয়ামত এমন, যার কৃতজ্ঞতা আদায় করে শেষ করা যাবে না। নিয়ামত দুটি হচ্ছে- এক. আমাদের হিদায়াতের জন্য আল-কুরআন। দুই. পথপ্রদর্শনের জন্য একজন নবী দিয়েছেন, যাঁর নাম মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। দুটি নিয়ামতকে আল্লাহ তায়ালা ‘আজিম’ অর্থাৎ মহান বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রথম নিয়ামত আল-কুরআন: আল-কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ বিশ্বমানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ। এ মহাগ্রন্থ ছাড়া মানুষের মুক্তির চিন্তা করা একটি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমান এ বিপর্যস্ত পৃথিবীটাই এর প্রধান সাক্ষী। পৃথিবীজুড়ে মানবরচিত বা মানুষের মস্তিষ্ক তৈরি আইন ও কানুন দিয়ে শান্তি আনয়নের চেষ্টা সাধনা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তি তো দূরের কথা, বরং মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। আমরা অবশ্যই এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হব যে, আল্লাহ আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। এর পাশাপাশি অবশ্যই আমাদের এ কথাটিও স্বীকার করতে হবে যে, সেই সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র জানেন, কীসে মানুষের শান্তি এবং কীসে অশান্তি।
আল্লাহর সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে কুরআনই একমাত্র সঠিক ও নির্ভুল গাইড। দৈনন্দিন জীবনে কুরআনই আমাদের শক্তিশালী মিত্র। শয়তানের বিরুদ্ধে এবং কুরআনের পথের সংগ্রামে এ কিতাব আমাদের শক্তি জোগাবে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি ও আমাদের সৌভাগ্য যে, আজো অবিকৃত অবস্থায় আল-কুরআন আমাদের কাছে আছে, যা অন্য কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের কাছে নেই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কুরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়নে আমরা আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে এর সাথে জড়িত হই না। কুরআন থেকে পুরোপুরি ও সত্যিকার হিদায়াত লাভ সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত এর অর্থ অনুধাবন করা না যায়। শুধুমাত্র সওয়াবের উদ্দেশ্যে তেলাওয়াত করা এবং পবিত্র গ্রন্থ, আধ্যাত্মিকতার প্রতীক, পবিত্র মুজেজা ইত্যাদি বলে চিত্তকে শান্ত করার জন্য এ কিতাব অবতীর্ণ হয়নি। বরং কুরআন এসেছে মানবজীবনের আমূল পরিবর্তন করে দিতে এবং নবজীবনের দিকে পরিচালিত করতে।
গোটা পৃথিবীটা মুসলমানদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে কেন? উত্তর হচ্ছে, একমাত্র আল কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে এবং কুরআনের কিছু অংশ মানা ও কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়ার কারণে। আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণে (কুরআন) হতে বিমুখ হবে, তার জন্য দুনিয়ায় হবে সংকীর্ণ জীবন, আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে ‘হে আমার রব! দুনিয়ায় আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম। কেন আমাকে অন্ধ করে তুললে? আল্লাহ বলবেন, হ্যাঁ এমনিভাবেই তো আমার আয়াতগুলো যখন তোমার নিকট এসেছিল, তুমি তখন তা ভুলে গিয়েছিলে।’ ঠিক সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে। এভাবেই আমরা সীমালঙ্ঘনকারী এবং যে তার রবের আয়াতের ওপর ঈমান আনে না আর পরকালের আজাবই হচ্ছে খুব কঠিন এবং অধিক স্থায়ী।” (সূরা ত্বা-হা : ১২৪-১২৭)।
এত বড় নিয়ামত আল্লাহ তায়ালা আমাদের দান করলেন, কিন্তু আমরা তাকে বাস্তুচ্যুত করেছি। অর্থাৎ আমাদের জীবনের সর্বস্তর থেকে কুরআনকে উচ্ছেদ করেছি। এজন্য রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবেন, ‘হে আমার আল্লাহ! আমার জাতির লোকেরা এ কুরআনকে বাস্তুচ্যুত করেছে।’ (সূরা ফুরকান : ৩০)। যারা কুরআনের সমাজব্যবস্থা কায়েমের দাওয়াত দেয় না, বরং এর আদেশ-নিষেধকে গোপন করে তাদের শাস্তি সম্পর্কে আল-কুরআনের ঘোষণা হচ্ছে, ‘যারা আমার নাজিল করা উজ্জ্বল আদর্শ ও জীবনব্যবস্থা গোপন করে রাখবে অথচ আমরা তা সমগ্র মানুষের পথ-প্রদর্শনের জন্য নিজ কিতাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। নিশ্চিত যেন, আল্লাহ তাদের ওপর লানত করছেন, আর অন্যান্য সকল লানতকারীও তাদের ওপর অভিশাপ নিক্ষেপ করছে।’ (সূরা বাকারা : ১৫৯)। আল কুরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘বস্তুত যারা আল্লাহর দেয়া কিতাবের আদেশ-নিষেধ গোপন করে এবং সামান্য বৈষয়িক স্বার্থের জন্য তাকে বিসর্জন দেয়, তারা মূলত নিজেদের পেট আগুনের দ্বারা ভর্তি করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ কখনই তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র বলেও ঘোষণা করবেন না। তাদের জন্য কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে। (সূরা বাকারা : ১৭৪)। তাছাড়া কুরআনের কিছু অংশ পালন করে কিছু অংশের প্রতি ভ্রুক্ষেপই করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তবে তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? জেনে রাখ, তোমাদের মধ্যে যাদেরই এরূপ আচরণ হবে, তাদের এতদ্ব্যতীত আর কী শাস্তি হতে পারে যে, তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত এবং লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদেরকে কঠোরতম শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা কিছু করছ, তা আল্লাহ মোটেই অজ্ঞাত নন।’ (সূরা বাকারা : ৮৫)।
বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের অবস্থা এ আয়াতের বর্র্ণনার সাথে হুবহু মিলে যায়। প্রকৃতপক্ষেই আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আল-কুরআনের সহজ ও সরল হুকুমগুলো ঘটা করে পালন করে যাচ্ছি, কিন্তু জীবনের অধিকাংশ সমস্যার সমাধানের জন্য দ্বারস্থ হচ্ছি মানবরচিত মতবাদের কাছে। যার ফলে পার্থিব জীবনে আমরা বিশ্বময় অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছি। কুরআনের সাথে কী ধরনের আচরণ করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে অবশ্যই আল্লাহ জিজ্ঞাস করবেন, “যারা কুরআনকে টুকরো টুকরো করেছে। সুতরাং তোমার মালিকের শপথ, ওদের সবার কাছে আমি অবশ্যই প্রশ্ন করব। সেসব বিষয়ে, যা কিছু আচরণ তারা কুরআনের সাথে) করত। (সূরা হিজর : ৯১-৯৩)। আসলে নিয়ামত যত বড় হবে, বিপরীত দিকে তার প্রতি অকৃতজ্ঞ হলে তার শাস্তিও তত বড় হওয়া বিবেকের দাবি। এত বড় একটি নিয়ামত পাওয়ার পরও মুসলমানগণ তার কৃতজ্ঞতা করার কথা ছিল, তার শিক্ষাকে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে পৌঁছে দেয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা কুরআনের শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়েছি। সুতরাং আসুন এ নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আমরা এমনভাবে পালন করব যে, কুরআনের আলো জে¦লে মৃত্যুমুখে নিপতিত হব। কেউ পছন্দ করুক আর না-ই করুক।
দ্বিতীয় নিয়ামত মুহাম্মদ সা. : আমাদের দ্বিতীয় নিয়ামত পৃথিবী বিখ্যাত পথপ্রদর্শক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা.। তিনি আমাদের কালেমার পতাকাবাহী শেষ নবী, বিশ্বনবী ও বিশ্বনেতা। তিনি জীবনের সকল দিক ও বিভাগে আমূল পরিবর্তন করে সমগ্র সমাজ, সভ্যতাকে আল্লাহর রঙে রঙিন করে গেছেন। তিনি নিছক এমন কোনো ধর্মীয় নেতা ছিলেন না যে, শুধুমাত্র মসজিদে বসে মানুষের ধর্মীয় বাণী শুনাতেন অথবা শুধুমাত্র অধিকাংশ সময় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। আর সস্তুষ্টচিত্রে বাইরের পৃথিবীর নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন অসৎ, আল্লাহবিমুখ তাগুতি শক্তির হাতে। কুরআন-হাদীস সাক্ষী তিনি এমনটি করার জন্য প্রেরিত হননি। বরং পৃথিবীর অসংখ্য খোদার নাগপাশ থেকে সমাজ ও সভ্যতাকে মুক্ত করে এক আল্লাহর গোলামে পরিণত করার সকল কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তিনিই তো তার রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যেন এটিকে অন্যান্য সর্বপ্রকার দীনের ওপর বিজয়ী করে দেন- তা মুশরিকদের যতই অপছন্দ হোক না কেন।’ (সূরা আস-সফ : ৯) এবং এটিই রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রকৃত সুন্নাহ। এ সুন্নাহর অনুসরণ ব্যতিরেকে তাঁকে ভালোবাসার আর যত কিছুই প্রকাশ করুন না কেন, তা হবে মেকি ভালোবাসা।
তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে হিদায়াত তথা আল-কুরআন ও সত্য দীন তিনি পেয়েছেন তা মানুয়ের গোটা জীবন ব্যবস্থার প্রত্যেকটি বিভাগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেখানে কেবলমাত্র আল্লাহর আনুগত্য ও বিধানই বিজয়ী ছিল। সেখানে আল্লাহর আনুগত্য ও বিধানের বিপরীত সকল প্রকার চিন্তা, চেতনা নাম মাত্রও ছিল না। আর এটিই তাঁর কাজ এবং এ কাজ তাঁকে অবশ্যই করতে হয়েছে। কাফের ও মুশরিকরা মেনে লয় তবুও, না মেনে নেয় তবুও এবং বিরোধিতা ও প্রতিরোধের মুখে সমগ্র শক্তির মোকাবিলা করে রাসূল সা.-কে এ ‘মিশন’ অবশ্যই পূর্ণ করতে হয়েছে। পাহাড়সম বাধা আর বিরোধিতা নিয়ে তাবত তাগুতি শক্তির সাথে লড়ে গেছেন। এজন্য তাঁকে অসংখ্য নির্যাতন, দুঃখ-কষ্ট, কঠিন ষড়যন্ত্রসহ অত্যধিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লোভনীয় অফারের সম্মুখীনও হতে হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুই তার মিশনকে সম্মুখে এগিয়ে নেয়ার পথ রোধ করতে পারেনি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমরা দৈনন্দিন কুরআনের সাথে যে ধরনের আচরণ করে যাচ্ছি, আল্লাহর রাসূল সা.-এর জীবনচরিতের সাথে ঠিক সে আচরণই করে যাচ্ছি। প্রত্যেকেই আমরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কুরআনকে যেমন শতধা বিভক্ত করেছি। আল্লাহর রাসূল সা.-এর চরিত্রকেও আমরা আমাদের সুবিধামতো ভাগ করে বিশেষ অংশের ওপর আমল করে যাচ্ছি। এটি রাসূলুল্লাহ সা.-এর চরিতের সাথে সুস্পষ্ট অসদাচরণ।
আমরা এ নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা এমনভাবে পালন করবো যে, মৃত্যু অবদি তাঁর সুন্নাহর আলোকে সমাজের সর্বস্তরে আল্লাহর আনুগত্যকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।