রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৩য় সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২২ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ২৫ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ৫ এপ্রিল ২০২৪

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : গত বছরের শেষের দিকে লাভজনক ড্রাগন ফল চাষে বড় রকমের আঘাত আসে। ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ড্রাগন নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা হয়। ফল বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েন আড়তদার ও চাষিরা। অনেক চাষির ফল ক্ষেতেই নষ্ট হয়। এ বছরে ফল বিক্রি ও বাজার কেমন যায়, সেদিকে তাকিয়ে আছি আমিসহ উপজেলার কয়েকশত কৃষি উদ্যোক্তা। কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহরাব হোসেন শিহাব।
উদ্যোক্তা শিহাব বলেন, ‘আমাদের কিছুসংখ্যক ড্রাগন চাষি ছোট ফল বড় করতে গত দুই বছর ধরে ইন্ডিয়ান একটি টনিক ও পরবর্তীতে দেশীয়ভাবে তৈরি টনিক ব্যবহার করেন। এতে ফলের আকার ও ওজন বৃদ্ধি পেলেও স্বাদ ও রং নষ্ট হয়ে যায়। টনিক ব্যবহারে লাল কালারের ফলগুলো লাল-সবুজ ও হলদেটে কালারে পরিণত হয়। কিছু কিছু ফল উদ্ভট আকৃতির হয়। এ নিয়ে এক শ্রেণির ইউটিউবার ও ফেসবুকাররা ড্রাগন ফল নিয়ে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে। দু-একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় অন্যরাও ভিউ পেতে শত শত ভিডিও তৈরি করেন, যার অধিকাংশই নেতিবাচক। যদিও কৃষি গবেষণা অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করেন যে, নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন ব্যবহার সারা বিশ্বেই স্বীকৃত। এছাড়া ওই সকল ফলের ল্যাবটেস্টেও ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তারপর ড্রাগনে ভোক্তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। পাইকারি বাজারে বড় আকারের ফলগুলো বিক্রি করা যায়নি। যার কারণে এ বছর ফল বিক্রি বেশ আতঙ্কে আছেন ড্রাগন চাষিরা।
এদিকে উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের আরেকজন কৃষি উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান জানান, ‘২০২২ সালে ছোট ফল বড় করতে চাষিরা যখন ড্রাগনে টনিক ব্যবহার শুরু করেন। তখনই আগামীতে ড্রাগন চাষে বড় রকমের ধাক্কার আঁচ করি। আমি টনিকে না গিয়ে হাঁটলাম ভিন্ন পথে। ফল বড় করতে ও স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে সমাধান খুঁজলাম জাতে। জাত সংগ্রহের কাজটি সহজ করে দেয় ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ কৃষি ভাই। আমার এ দুই প্ল্যাটফর্মে দেশের মানুষের পাশাপাশি যুক্ত আছেন অনেক প্রবাসী ভাই, যারা দেশকে ভালোবেসে নীরবে সবুজের বিস্তরণ ঘটাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এমন দুইজন অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী আমার পাশে দাঁড়ান। তারা হলেন মোহাম্মদ মাসুম মাহমুদ ও আরিফুর রহমান। একদিন মেসেঞ্জারে কল দিয়ে আরিফ ভাই বলেন, কৃষি নিয়ে আপনার ভিডিও কন্টেন্টগুলো আমি নিয়মিত দেখি। টনিক ব্যবহারে ড্রাগন চাষে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে শীর্ষক আলোচনাও আমি শুনেছি। ভিন্ন জাতের ড্রাগন চাষই এর সমাধান হতে পারে। কথা শেষে তিনি ড্রাগনের নামের লম্বা একটি লিস্ট পাঠান। আমাদের দেশে যেমন বিভিন্ন জাতের আম আছে, ঠিক তেমনি ড্রাগনের বিভিন্ন জাতের নাম দেখি। আরিফ ভাইকে অনুরোধ করি কয়েকটি জাতের ড্রাগনের চারা পাঠাতে। তিনি বলেন, দেশে আমার বাড়ির ছাদে কয়েকটি জাতের ড্রাগন আছে, আমি আপনার জন্য কাটিং পাঠাচ্ছি। তিনি ট্রিশ রেড, ওবান’স ডটার, অজি গোল্ড, ক্যাথিভান অরামসহ আরও কয়েকটি জাতের ড্রাগন কাটিং পাঠান। আরিফ ভাইয়ের আগে পরিচয় হয় মাসুম ভাইয়ের সাথে তিনি মূলত সাইট্রাস নিয়ে কাজ করেন। তারপরও তাকে ড্রাগনের কিছু কাটিং সংগ্রহ করে দিতে অনুরোধ করি। তিনি আমাকে অস্ট্রেলিয়ার দুইটি বাণিজ্যিক জাত কলম্বিয়ান সুপ্রিম রেড ও ট্রিশিয়া হাইব্রিড গিফট করেন। এপর থেকে বিভিন্ন জাতের ড্রাগনের কাটিং সংগ্রহের কাজ অব্যাহত থাকে।’ উদ্যোক্তা মিজান আরো জানান তার মধুবন কৃষি খামারে বর্তমানে ৪০টির বেশি জাত আছে। যেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি জাত আছে, যেগুলোর ফল কোনো প্রকার টনিক স্প্রে ছাড়াই ৪০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের হবে। গত বছর দুই একটি জাতে ফলন পেলেও এ বছরে অধিকাংশ জাতেই ফলনের আশা করছেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন জাতের ড্রাগন ফল স্বাদে ভিন্নতা আনবে। ফলে টনিক ব্যবহার নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবে এবং ভোক্তারা আবার ড্রাগনে ফিরবে- এমনটি আশা তার। পুষ্টিকর এ ফল খাওয়া থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে, কৃষকের পাশে থাকতে অনুরোধ জানান উদ্যোক্তা মিজান।
এ নিয়ে কথা হয় কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনির সাথে। তিনি জানান, উপজেলায় প্রায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। চাষিরা যাতে টনিক ব্যবহার না করে, সে ব্যাপারে তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঝিনাইদহ জেলা ড্রাগন চাষি কল্যাণ সমিতির সদস্যরাও টনিক বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। দেশে ড্রাগন উৎপাদন চাহিদার তুলনায় বেশি হচ্ছে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড্রাগন চাষ মূলত ঝিনাইদহ জেলায় বেশি হচ্ছে অন্য এলাকায় এ ফলের চাষ খুবই কম। তাই এমন আশঙ্কার কথা তিনি ভাবছেন না। ড্রাগন চাষে আধুনিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ ও রোগবালাই দমনে উপজেলা কৃষি অফিস চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।