বিশেষ সম্পাদকীয়
আমাদের আগামী দিনের পথচলায় আপনাদেরকে পাশে চাই
॥ মো. তাসনীম আলম ॥
সাপ্তাহিক সোনার বাংলার ৬২ বছর পূর্তিতে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এ পর্যায়ে আসা সত্যিই একটি বিরল ঘটনা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ মুহূর্তে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বজনাব মহীউদ্দীন আহমদ, মাহবুবুল হক, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক মঞ্জু, কবি সোলায়মান আহসান, মোশাররফ হোসাইন, জয়নুল আবেদীন আব্দুল্লাহসহ অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তিকে, যারা সোনার বাংলাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়েছেন। শ্রদ্ধার সাথে আরো স্মরণ করছি প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ, লেখক, অকুতভয় সাংবাদিক, সোনার বাংলার ভূতপূর্ব সাবেক সম্পাদক জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে, যিনি অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জীবন দিয়েছেন। এ দুনিয়া থেকে চলে গেলেও অগণিত মানুষের হৃদয়ে রয়েছে তার স্থান।
সংবাদপত্র সমাজের দর্পণ। সংবাদপত্রের মাধ্যমেই আমরা সমাজের বাস্তব চিত্র বুঝতে পারি। তাই তো সকালে ঘুম থেকে ওঠেই সংবাদপত্র না দেখলে সচেতন মানুষের দিনটা যেন ভালো কাটে না। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে কিছুটা ব্যতিক্রম মনে হলেও নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের জন্য মানুষ প্রিন্ট মিডিয়া, অর্থাৎ মুদ্রিত পত্রিকার পাতায় চোখ বোলায়।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা বহুল প্রচারিত একটি পত্রিকা। বিভিন্ন সময় মার্কেটে অনেক সাপ্তাহিক পত্রিকা এসেছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাঠকপ্রিয়তা হারিয়ে অথবা ননা কারণে টিকে থাকতে পারেনি। তবে আল্লাহর মেহেরবানিতে অগণিত পাঠক, শুভাকাক্সক্ষী, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় সোনার বাংলাকে দুর্গম পথচলায় সাহস জুগিয়েছে। তাই বিশেষ এ মুহূর্তে অসংখ্য পাঠক, শুভাকাক্সক্ষী, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকারসহ সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ভালোবাসা পেশ করছি।
দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সোনার বাংলা কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে সোনার বাংলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে; বিশেষ করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সোনার বাংলার ভূমিকা সর্বজনবিদিত। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন ও বিশ্লেষণ করে পত্রিকাটি আন্দোলন ও সংগ্রামে রসদ জুগিয়েছে।
এবার পবিত্র রমযান মাসে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। রমযান তাকওয়া অর্জনের মাস, কুরআন নাজিলের এ মাস সেই মহাবিস্ময়কর ক্ষণটিকে ধারণ করে আছে এ জন্যই কুরআন এই মাসে আনন্দ উৎসব উদযাপন করে কাটাতে বলেছে। কুরআন মানবজাতির জন্য হিদায়েতের গ্রন্থ। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় যে সংকট চলছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে কুরআনের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে হবে। ফিলিস্তিনে চলছে গণহত্যা। নির্বিচারে নারী, শিশু নির্বিশেষে নিহত হচ্ছেন অগণিত মানুষ। ক্ষুধার জ¦ালায় খাবার সংগ্রহ করতে গিয়েও জীবন দিতে হচ্ছে বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায়। হাসপাতালসহ কোথাও নিরাপত্তা নেই। আজ আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সিয়াম সাধনা করছি ঠিকই, কিন্তু অন্তরের আনন্দে উৎসব উদযাপনে যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেছি। আমরা তাই মুসলিম দেশসহ বিবেকবান রাষ্ট্রগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। এদেশ আমাদের সকলের। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, তা কি পূরণ হয়েছে? দেশে গণতন্ত্র নেই। মানুষের ভোটাধিকার আজ ভূলুণ্ঠিত। মানুষ তার পছন্দমতো ভোট দিতে না পেরে ভোটকেন্দ্রে আর যাচ্ছে না। নানা ধরনের প্রচারণা, কলাকৌশল অবলম্বন করেও মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নেয়া যাচ্ছে না।
রাজনীতিবিদরা বলে থাকেন, তারা রাজনীতি করেন দেশের উন্নতির জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে এত দ্বন্দ্ব-সংঘাত কেন? জোর-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে, জনগণের রায়ের প্রতি তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রতি এত আগ্রহ কেন? দেশের উন্নয়নের কথা জোরেশোরে প্রচার করা হলেও বাস্তবে উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে? গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করতে পারে না। উন্নয়ন বলতে শুধু রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন বোঝায় না। উন্নয়ন হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকা, জবাবদিহি ও বাকস্বাধীনতা থাকা, অর্থনৈতিক বৈষম্য না থাকা, মানবাধিকার নিশ্চিত থাকায় জীবনের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন থাকা ইত্যাদিকেই বোঝায়। বাংলাদেশে কি এসব বিষয় বিদ্যমান আছে? যে কেউ বলবেন, মোটেও নেই। আমাদের দেশ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। আর এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্য। দেশের স্বার্থের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত না থাকায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। বরং বিরোধীদলের কণ্ঠরোধ করে রাখা হচ্ছে। অথচ বিরোধীদল সরকারেরই অংশ। শক্তিশালী বিরোধীদল ছাড়া শক্তিশালী সরকার আশা করা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলো সোনার বাংলা গড়ার স্লোগান দিয়ে থাকে। কিন্তু শুধু স্লোগান দিলেই তো সোনার বাংলা গড়া যাবে না। সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রয়োজন সোনার মানুষের। আর এজন্য প্রয়োজন নৈতিক ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সোনার মানুষ গড়ার পরিবর্তে বেকার লোক তৈরি করছে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে না। উচ্চশিক্ষার পাদপীঠ বিশ^বিদ্যালয়গুলোর চেহারা দেখলেই এর প্রমাণ মেলে। সরকারি ছাত্রসংগঠনের পেশিশক্তির নিকট অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নেই। র্যাগিং-এর নামে চরিত্রহীন আচরণ, চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা বিশ^বিদ্যালয়ের পবিত্রাঙ্গনে ঘটছে না। বিশ^বিদ্যালয়ের অঙ্গন কারো জন্য নিরাপদ নয়। বন্ধুকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করা হচ্ছে। শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলারের সংকট থাকলেও রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ছে না। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে সাধারণ মানুষের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি, সকল সংকট মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিকল্প নেই। গণতন্ত্র না থাকলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও থাকে না। এ উপলব্ধি সরকার, বিরেধীদল, নাগরিক সমাজসহ দেশের প্রত্যেকের মাঝে জাগ্রত করাই একটি দায়িত্বশীল সংবাদপত্রের কাজ।
দেশের প্রতিটি সংকটের চিত্র যথাযথভাবে তুলে ধরার সাথে সাথে সমাধানে বিশ্লেষকদের মতামত এবং সম্ভাবনার দিকনির্দেশনা দিয়ে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
শত সংকটেও আমরা আমাদের পথচলা অব্যাহত রাখতে পেরেছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের রহমত এবং অগণিত পাঠক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীর অব্যাহত ভালোবাসায়। আমরা আশা করি, তাদের এ পৃষ্ঠপোষকতা তারা আগামী দিনেও অব্যাহত রাখবেন। আপনাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক দাবিÑ সাপ্তাহিক সোনার বাংলায় প্রকাশিত তাদের ভালোলাগার বিষয়গুলো পরিচিতজনদের জানাবেন আর খারাপলাগার বিষয়গুলো কীভাবে আরো ভালো করা যায় তা আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ করছি। তবেই আরো সমৃদ্ধ হবে আমাদের আগামী দিনের পথচলা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সহায় হোন। আমীন।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- উৎকণ্ঠা বাড়ছে শাসকশিবিরে
- তৎপর হচ্ছে বিএনপি
- উন্নয়নের বয়ান ও স্বাধীনতার স্বপ্ন
- সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে নাস্তিকের কারখানা বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : ডা. শফিকুর রহমান
- আকাশচুম্বী ঋণের বোঝায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত
- স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত : মিয়া গোলাম পরওয়ার
- ঈদযাত্রা : পথে পথে দুর্ভোগের হাতছানি
- শহরাঞ্চলে গরিব মানুষ বাড়ছে