॥ একেএম রফিকুন্নবী॥
কালের পরিক্রমায় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার ৬২তম বছর কেটে গেল। অনেক চড়াই-উৎরায়ের মধ্যেই কেটে গেল অর্ধশত বছরের বেশি সময়। পত্রিকাজগতে টিকে থাকা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কাগজের দাম বৃদ্ধি, সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়া সমস্যা, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না থাকায় ব্যবসায়ীরাও বিজ্ঞাপন দিতে চান না ইত্যাদি কারণে পত্রিকা চালানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাপ্তাহিক সোনার বাংলা যেহেতু একটি শাশ^ত আদর্শে লালিত-পালিত পত্রিকা, তাই এর প্রকাশনা নানা সমস্যা মোকাবিলা করেই বের করতে হচ্ছে।
৬২ বছর একনাগাড়ে পত্রিকা প্রকাশ করা মহান আল্লাহ তায়ালার অসীম কৃপায়ই সম্ভব হয়েছে। আমরা অনেক দূর পর্যন্ত এগোতে চাই। দেশকে সত্য ও ন্যায়ের মহিমায় আল্লাহর বাণীর আলোকে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে চাই। পরের ওপর ভরসা না করে নিজেরাই নিজেদের দেশ পরিচালনা করতে চাই কোটি কোটি মানুষের দোয়া আর আল্লাহর সাহায্য নিয়ে।
কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানিসহ সর্বক্ষেত্রে সততা ও বিশ^স্ততার নজির রেখে দেশের মানুষকে আমরা গাইড করতে চাই। যারা একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে এবং তারই ওপর নির্ভর করে চলে, তাদের কেউ গতিরোধ করতে পারে না। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত যদি সততার মহিমায় ও বিশ^স্ততার সাথে উৎপাদন, বিপণনসহ দেশের সব কাজ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে, তবে এ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেলে পৌঁছাতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
দেশের মানুষ যদি সৎ নেতৃত্ব পায়, তবে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসনসহ সব ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে বেশি সময় লাগবে না।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখার দিকনির্দেশনামূলক লেখার মাধ্যমে মানুষকে সততা ও বিশ^স্ততার সাথে কাজ করার উৎসাহ দিয়ে যাবে। দেশের মানুষকে দুনিয়ার সাথে পরিচিত করার ওপর প্রায়ই আমাদের লেখা ছাপা হয়Ñ যাতে করে দেশের মানুষ অন্যান্য দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ঈমান ও আকিদার প্রচার ও প্রসার ঘটাতে পারে।
ইদানীং দেখা যাচ্ছে অনেক নাট্যকার, সিনেমাজগতের নামকরা ব্যক্তিরাও ইসলামের ছায়াতলে আসছে। রাশিয়ার মতো দেশে ইসলাম গ্রহণের হার আশাব্যঞ্জক। জার্মানিতে প্রচুর লোক ইসলামের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে কালেমার পথে আসছে।
দুনিয়ায় যদি আমরা প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারি, তবে বিদেশের মানুষও ইসলামের ছায়াতলে সমবেত হবে, ইনশাআল্লাহ।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা ৬২ বছর যাবত সততার সাথে এ প্রচারকাজে শরিক থেকে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের পাঠক সমাজের চাহিদানুযায়ী আমাদের লেখক সমাজকে আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত লোকদের শিক্ষা-সংস্কৃতি, উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজের দিকনির্দেশনা লেখকরা দিয়ে থাকেন। বিদেশি সংস্কৃতির মোকাবিলায় আমরা শিক্ষা-সংস্কৃতি জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষ সহজ-সরল। দেশের মাটি উর্বর ও পানি ভালো। তাই জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে দেশকে একটি আদর্শ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে আমরা পারব, ইনশাআল্লাহ।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা নির্দিষ্ট পন্থা নিয়ে দেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী সততার বলে বলীয়ান দেশ হিসেবে গড়ার চেষ্টা করছে। ভয়ভীতি, প্রলোভন উপেক্ষা করেই সোনার বাংলা তার লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের কল্যাণ চাই, দেশের উন্নয়ন চাই, দেশের মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে চাই। আল্লাহর এ দুনিয়ায় আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণকে সততার সাথে কাজ করে দুনিয়ার সব ভালো কাজের নমুনা পেশ করতে চাই। বিনিময়ে সীমাহীন আখিরাতে নিয়ামতভরা জান্নাত চাই।
সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পরিচালনার সাথে যারা জড়িত আছেন এবং ছিলেন, তাদের সবার অবদান সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে তাদের দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ কামনা করছি। যেসব সাংবাদিক সততার সাথে সোনার বাংলা চালাতে সহযোগিতা করছেন, তাদের অবদানও আমরা স্মরণ করছি। সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পিয়ন-দারোয়ান-ঝাড়ুদারসহ পত্রিকার সাথে জড়িত সবার সহযোগিতার হাতকে আরো মজবুতির সাথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সোনার বাংলায় যারা বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা করছেন, তাদেরও অবদান স্মরণ করছি। সোনার বাংলা মুদ্রণে যারা কাজ করছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সর্বোপরি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা প্রকাশ ও প্রচারের সাথে যারাই জড়িত, তাদেরও স্মরণ করছি। দেশের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সোনার বাংলা পৌঁছে দেয়ার জন্য পত্রিকার এজেন্সি, হকারদের ভূমিকাও স্মরণ করছি।
দেশ ও দেশের বাইরে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার পাঠকসমাজকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে সোনার বাংলার প্রচার-প্রসারের জন্য তাদের সাহায্য কামনা করছি। কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। এ পত্রিকার মাধ্যমে মানুষকে যেমন সঠিক তথ্য জানাতে চাই। দেশ ও দেশান্তর থেকে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্যও পাঠকদের সহযোগিতা চাই। বাস্তবধর্মী সমালোচনাই আমরা পেতে চাইÑ যাতে করে ভবিষ্যতে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা আরো তথ্যযুক্ত সংবাদ প্রকাশ করতে পারে।
সংবাদপত্রের সাথে জড়িত লেখকদের জাতির বিচারক বলা হয়। কিন্তু ইদানীং কিছু সাংবাদিক একপেশে বা নিজের স্বার্থে বিবেক বিক্রি করে দেশ ও দেশের ক্ষতি সাধন করছে। আমরা বিবেকবান সাংবাদিকদের উৎসাহ দিতে চাই। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও সত্য প্রকাশ বা বলার মানসিকতাসম্পন্ন সাংবাদিকরা দেশ ও দশের জন্য উপকার করতে পারে। সমাজকে দিতে পারে পথের দিশা। সোনার বাংলা মিডিয়ায় সত্যের সন্ধানী জাতির বিবেকসম্পন্ন সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করে এবং তাদের সামনে চলার পথকে সুগম করতে চায়। সাময়িক নিজের লাভ থেকে দেশের লাভকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশনের মধ্যেই জাতির কল্যাণ, ব্যক্তির কল্যাণ। দেশ ভালো চললে আমরা সবাই ভালো থাকব, ইনশাআল্লাহ।
সব শেষে সংবাদপত্রের সাথে জড়িত সরকারি-বেসরকারি সব লোক এবং প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে সাপ্তাহিক সোনার বাংলার আগামী দিনের পথচলা সুন্দর হোক, দেশ ও জাতির কল্যাণ হোক। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে চলার সার্থক হিসেবে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে মহান আল্লাহর সাহায্য চেয়ে শেষ করছি।
লেখক : সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এ পাতার অন্যান্য খবর
- ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’ ভোটাধিকার গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে
- ‘সাপ্তাহিক সোনার বাংলা’র বহুল প্রচার উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি
- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
- সাংবাদিকতার সর্বজনীনতা ও সংবাদমাধ্যমের প্রভাব
- আত্মার বোধ ও বিশ্বাস
- সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদীর সাংবাদিক জীবন
- অনুভূতি
- কেউ ভালো নেই
- ফজলুল হক তুহিন-এর দুটি কবিতা
- কবি আল মাহমুদের সাংবাদিক জীবন
- সাংবাদিক কবি কাজী নজরুল ইসলাম
- অপরাধ দমনে সংবাদমাধ্যম
- ইসলামী ধারার রাজনীতির বিকাশ ও সোনার বাংলার ভূমিকা
- আর নয় আত্মহত্যা : আল কুরআনে আছে শান্তির বারতা
- প্রচার, অপপ্রচার ও সংবাদমাধ্যম