সংবাদ শিরোনামঃ

অর্থ লুটের মহোৎসব ** ভোটে আগ্রহ নেই মানুষের ** সারাদেশে গুম হত্যা আতঙ্ক ** ড. মাসুদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের মিছিল ** প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দায় এই সরকারকেই নিতে হবে : খালেদা জিয়া ** পানির জন্য হাহাকার ** ক্ষমতার নিশ্চয়তা পেলেই আগাম নির্বাচন ** তিস্তা এখন ধু ধু বালুচর ** তেলের দাম কমানোর নামে প্রহসন ** সরকার দায় চাপানোর কৌশল নিয়েছে ** আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে ** ওনারা বললে দোষ হয় না! ** মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কি সুদূর পরাহত? ** পার্বতীপুরে পানির জন্য হাহাকার ** টাঙ্গাইলের ছয় উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই! ** কুষ্টিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু বাড়ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ বৈশাখ ১৪২৩, ২১ রজব ১৪৩৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

মতিউর রহমান আকন্দ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

এ সময়ে মা’বাদ ইবনে আবু মা’বাদ খাজায়ী রাসূলে করিমের (সা.) নিকট হাজির হয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। এর আগে তিনি শেরেকের ওপর অটল ছিলেন কিন্তু রাসূলে করিমের (সা.) কল্যাণ কামনা করলেন। কাযাআ এবং বনু হাশেম গোত্রের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি বিদ্যমান ছিল। এই চুক্তির কারণেই তিনি প্রিয় নবীর (সা.) হিতকামী ছিলেন। রাসূলে করিমকে (সা.) তিনি বললেন, আপনি এবং আপনার সঙ্গীরা যুদ্ধের ময়দানে যেরূপ কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন এতে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। আমি মনে প্রাণে কামনা করেছিলাম, আপনি যেন ভালো থাকেন। এ ধরনের সমবেদনা প্রকাশের পর রাসূলে করিম (সা.) মা’বাদকে (রা.) বললেন, আবু সুফিয়ানের কাছে যাও এবং তার উদ্যম নষ্ট করে তাকে নিরুৎসাহিত করো।

মোশরেকরা পুনরায় মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হতে পারে বলেন নবী করিম (সা.) যে আশঙ্কা করেছিলেন সেটাই সত্য হলো। মদীনা থেকে ছত্রিশ মাইল দূরবর্তী রওহা নামক জায়গায় পৌঁছে মোশরেকরা একে অন্যকে দোষারোপ করতে লাগলো। তারা একদল অন্য দলকে বলছিল, তোমরা কিছুই করোনি। ওদের শক্তিহীন করার পরও ছেড়ে দিয়েছ। ওদের এতো বেশি মাথা এখনো বিদ্যমান রয়েছে যা কিনা পুনরায় তোমাদের মাথা ব্যথার কারণ হবে। চলো ফিরে যাই, ওদেরকে সমূলে উৎপাটন করি।

যারা এ প্রস্তাব দিয়েছিল মনে হয় তারা উভয় পক্ষের শক্তি সম্পর্কে সঠিক অবহিত ছিল না। এ কারণে দায়িত্বশীল একজন সফওয়ান ইবনে উমাইয়া এই অভিমতের বিরোধিতা করে বলল, তোমরা অমন করো না। আমি আশঙ্কা করছি যে, যে সকল মুসলমান ওহুদের যুদ্ধে অংশ নেয়নি এবার তারাও আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। কাজেই জয়লাভ আমরাই করেছি এরূপ আত্মপ্রসাদ নিয়ে মক্কায় ফিরে চলো। অন্যথায় মদীনার ওপর হামলা করলে বিপদে জড়িয়ে পড়বে। কিন্তু অধিকাংশ কাফের এ মতামত গ্রহণ করল না এবং তারা মদীনার ওপর হামলা করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলো। তারা মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হওয়ার আগেই মা’বাদ ইবনে মা’বাদ খাযায়ী সেখানে পৌঁছুলেন। আবু সুফিয়ান তখনো জানত না যে মা’বাদ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। সে জিজ্ঞাসা করলো মা’বাদ পেছনের খবর কি? মা’বাদ কৌশলের মাধ্যমে বললেন, মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে তোমাদের অনুসরণে বেরিয়ে পড়েছেন। তারা সংখ্যায় এতো বেশি যে, এতো বড় সেনাদল এর আগে আমি কখনো দেখিনি। সবাই তোমাদের বিরুদ্ধে ক্রোধে জ্বলছেন। ওহুদের যুদ্ধে যারা যোগদান করেনি এবার তারাও যোগদান করেছেন। তারা যুদ্ধে যা কিছু হারিয়েছেন সে জন্য লজ্জিত। বর্তমানে তোমাদের বিরুদ্ধে এমন ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন যে, আমি এ রকম ক্রোধের উদাহরণ ইতঃপূর্বে দেখিনি।

আবু সুফিয়ান বলল, আরে ভাই, তুমি এসব কি বলছ?

মা’বাদ বললেন, হ্যাঁ সত্যি বলছি। আমার ধারণা তোমরা এখান থেকে চলে যাওয়ার আগেই ঘোড়ার দলটি দেখতে পাবে। সৈন্যদের অগ্রবর্তী দল এই টিলার পেছনে থেকে বেরিয়ে আসবে।

আবু সুফিয়ান বলল, আল্লাহর শপথ, আমরা শপথ নিয়েছি, ওদের ওপর পাল্টা হামলা করবো এবং তাদের নির্মূল করে দেব।

মা’বাদ বললেন, অমন করো না। আমি তোমাদের ভালোর জন্য বলছি।

এসব কথা শুনে কাফেরদের মনোবল ভেঙ্গে গেল। তারা মক্কায় ফিরে যাওয়াই কল্যাণকর মনে করলো। তবে আবু সুফিয়ান মুসলিম বাহিনীকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এবং তাদের সাথে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য একটা কৌশল অবলম্বন করলো। মদীনার পথে চলমান বনু আবদে কায়সের একটি কাফেলার লোকদের ডেকে আবু সুফিয়ান বলল, আপনারা কি মুহাম্মদের নিকট আমার একটা পয়গাম পৌঁছে দিতে পারবেন? যদি পৌঁছে দেন তবে আমি কথা দিচ্ছি যে, আপনারা মক্কায় এলে ওকাযের বাজারে আপনাদের এতো বেশি কিসমিস দেবো যতোটা এই উটনী বহন করতে পারে।

বনু আবদে কায়েসের লোকেরা আবু সুফিয়ানের অনুরোধ রক্ষা করতে রাজি হলো।

আবু সুফিয়ান বললো, আপনারা মুহাম্মদকে বলবেন যে, আমরা তাকে এবং তার সঙ্গীদের নির্মূল করার উদ্দেশ্যে পাল্টা হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।

এরপর এই কাফেলা ‘হামরাউল আছাদ’ নামক জায়গা অতিক্রম করার সময় নবী করিম (সা.) এবং মুসলমানদের নিকট আবু সুফিয়ানের এই বার্তা পৌঁছালো। সাথে সাথে বললো যে, ওরা আপনাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে কাজেই ওদেরকে ভয় করুন। কাফেলার লোকদের নিকট এই খবর পেয়ে মুসলমানদের ঈমান আরো চাঙ্গা হয়ে উঠলো। তারা বললো, আল্লাহ পাকই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্ম সম্পাদনকারী।

ঈমানের এই শক্তির কারণে মুসলমানরা আল্লাহ পাকের নেয়ামত এবং ফযলের সাথে মদীনার পথে রওয়ানা হলেন। কোন প্রকার অকল্যাণ তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। তারা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের রেযামন্দির অনুসরণ করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক অপরিসীম রহস্যের অধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম রোববার দিন, হামরাউল আছাদে গমন করেন। সোম, মঙ্গল ও বুধ অর্থাৎ তৃতীয় হিজরীর ৯, ১০ ও ১১ই শাওয়াল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন এরপর তিনি মদীনায় ফিরে আসেন। মদীনায় ফিরে আসার আগেই আবু আযযা জুমাই তাঁর নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। এই লোকটি বদরের যুদ্ধের সময় মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়েছিল। কিন্তু তার দারিদ্র্য এবং কন্যা সন্তানের সংখ্যাধিক্য থাকায় তাকে মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তবে সে অঙ্গীকার করেছিল যে, আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করবে না। কিন্তু সে তার কথা রাখেনি। কবিতার মাধ্যমে সে আল্লাহ রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরামদের বিরুদ্ধে সাধারণ লোকদের উদ্দীপিত করতে থাকে। এরপর মুসলমানদের সাথে লড়াই করার উদ্দেশ্যে নিজেও ওহুদের যুদ্ধেও অংশ নিয়েছে। এই লোকটিকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পর আল্লাহর রাসূলের সামনে হাজির করা হলো। সে বলল মুহাম্মদ আমার ভুল ক্ষমা করে দাও। আমার ওপর দয়া করো। আমার কন্যা সন্তানদের কথা ভেবে আমাকে ছেড়ে দাও। আমি প্রতিজ্ঞা করছি ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর করব না। আল্লাহর রাসূল বললেন, এখন আর এটা হতে পারে না যে, তুমি মক্কায় গিয়ে মুখমণ্ডলে হাত বুলাতে বুলাতে বলতে মুহাম্মদকে আমি দ্বিতীয়বার ধোঁকা দিয়েছি। মুমিন এক গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয় না। এরপর আল্লাহ রাসূল হজরত যোবায়েরকে মতান্তরে হজরত আসেম ইবনে ছাবেতকে নির্দেশ দিলেন এবং তারা সেই বেঈমানের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন।

এমনি করে মক্কার অন্য একজন গুপ্তচরও নিহত হয়। তার নাম ছিল মাবিয়া ইবনে মুগিরা ইবনে আবুল আস। সে ছিল আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ানের নানা। ওহুদের দিনে মক্কার মোশরেকরা মক্কা ছেড়ে যাওয়ার পর এই লোকটি মদীনায় তার চাচাতো ভাই হজরত ওসমানের (রা.) কাছে আল্লাহর রাসূলের নিকট তার জন্য নিরাপত্তার আবেদন জানায়। আল্লাহর রাসূল এই শর্তে তাকে নিরাপত্তা দেন যে, সে তিনদিন মদীনায় থাকতে পারবে এরপরও যদি তাকে মদীনায় দেখা যায় তবে হত্যা করা হবে। মুসলিম মোহাজেররা ওহুদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য যাওয়ার পর মাবিয়া ইবনে মুগিরা কোরায়েশদের গুপ্তচর বৃত্তির জন্য মদীনায় তিনদিনের পরও থেকে যায়। মুসলিম মোহাজেররা ফিরে আসার পর সে পলায়নের চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হজরত যায়েদ ইবনে হারেসা এবং হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসেরকে নির্দেশ দেন। উভয় সাহাবী মাবিয়াকে তাড়া করে পাকড়াও করেন এবং তাকে হত্যা করেন। (ইবনে হিশাম)।     (চলবে)

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।