সংবাদ শিরোনামঃ

অর্থ লুটের মহোৎসব ** ভোটে আগ্রহ নেই মানুষের ** সারাদেশে গুম হত্যা আতঙ্ক ** ড. মাসুদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের মিছিল ** প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দায় এই সরকারকেই নিতে হবে : খালেদা জিয়া ** পানির জন্য হাহাকার ** ক্ষমতার নিশ্চয়তা পেলেই আগাম নির্বাচন ** তিস্তা এখন ধু ধু বালুচর ** তেলের দাম কমানোর নামে প্রহসন ** সরকার দায় চাপানোর কৌশল নিয়েছে ** আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জনগণের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে ** ওনারা বললে দোষ হয় না! ** মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি কি সুদূর পরাহত? ** পার্বতীপুরে পানির জন্য হাহাকার ** টাঙ্গাইলের ছয় উপজেলায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই! ** কুষ্টিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু বাড়ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ বৈশাখ ১৪২৩, ২১ রজব ১৪৩৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

পাঠকদের মনে পড়তে পারে, কিছুদিন আগে এই কলামে আমি কথিত ওয়ান-ইলেভেনের প্রধান খলনায়ক জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদকে নিয়ে লিখেছিলাম। তার নিজের লেখা গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিলাম, কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি ভীরু কাপুরুষের মতো আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বিষয়টি যে এত বেশি আলোচিত হবে তা ভাবিনি। দিন কয়েক আগে কোনো এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মইন উ’কে নিয়ে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেখলাম। একজন, যিনি নিজেও এককালে সেনা অফিসার ছিলেন, সাবেক এই সেনা প্রধানকে ‘কাপুরুষ’ থেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ পর্যন্ত নানা নামে অভিহিত করে তুলাধুনা করেছেন। শেষে লিখেছেন, ‘গো টু দ্য হেল’। অর্থাৎ জেনারেল মইনকে ‘নরকে’ পাঠাতে চেয়েছেন তিনি। জবাবে আরেকজন লিখেছেন, নরকে নয়, মইন তো এরই মধ্যে পৃথিবীর ‘স্বর্গ’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছেন এবং সেখানে ভালোই কাটছে তার জীবন!

গণতন্ত্রকে বিতাড়িত করাসহ বাংলাদেশের সর্বনাশ ঘটিয়ে কেটে পড়া জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদকে দিয়ে শুরু করার কারণ সৃষ্টি করেছেন আরেক সাবেক সেনাপ্রধান এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সম্প্রতি তাকে আবারও নানামুখী তৎপরতায় ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। তিনি এমনকি নিজের স্ত্রী এবং এককালের ‘ফার্স্ট লেডি’ রওশন এরশাদকেও আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না (২৬ এপ্রিলের সংবাদপত্র দেখুন)। সাবেক এ স্বৈরশাসককে সাধারণভাবে একটি ‘ফানি ক্যারেক্টার’ হিসেবে তুলে ধরার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিষয়টিতে আমার কিন্তু ভিন্নমত রয়েছে। কারণ, ঘটনাক্রমে কখনো কখনো কৌতুক অভিনেতার মতো কাজকর্ম করলেও বাস্তবে হু. মো. এরশাদই ভারতীয়করণ থেকে সেনাবাহিনীকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বানানো পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বনাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ‘অবদান’ রেখে গেছেন। পরবর্তীকালে মইন উ তাকে অনুসরণ করেছেন মাত্র। সে ব্যাপারেও এরশাদের ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ।

কথাটা আমাদের নয়, বিভিন্ন সময়ে এ সম্পর্কে জানান দিয়েছেন স্বয়ং এরশাদ। সর্বশেষ একটি তথ্যের উল্লেখ করা যাক। গত ১২ এপ্রিল দলীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ জানাতে গিয়ে বলেছেন, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে অর্থাৎ জনাব এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বানানো হবে মর্মে চুক্তি হয়েছিল। চুক্তিতে জাতীয় পার্টিকে আনুপাতিক হারে মন্ত্রিত্ব দেয়ারও শর্ত ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সব ‘ভুলে যায়’। জাপার সঙ্গে ওয়াদা বরখেলাপ করে। এ পর্যন্ত এসেই থেমে যাননি সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। অন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমাদের কারণেই ওয়ান-ইলেভেন হয়েছিল’। অর্থাৎ এরশাদ এবং (আওয়ামী লীগসহ) তার অন্য সঙ্গীরাই ওয়ান-ইলেভেন ঘটিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানালেও ক্ষমতায় যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ যে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা à¦•à¦°à§‡à¦›à¦¿à¦²Ñ à¦ ধরনের আরো কিছু তথ্যও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এরশাদ। বলেছেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালেও তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে আওয়ামী লীগ। আর সে কারণেই তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। এরশাদ প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, ‘আমি ডার্টি পলিটিক্স (নোংরা রাজনীতি) করি না। যেটা সত্য তা-ই বলি। সেটা অপ্রিয় হলেও বলি, প্রিয় হলেও বলি।’

বলা দরকার, যথেষ্ট তাৎপর্যপূণ হলেও জনাব এরশাদের এসব বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিন্তু মোটেও আলোড়ন ওঠেনি। কারণ, তিনি আসলে নতুন কোনো কথাই বলেননি। শুধু একটি কথা নিয়ে অবশ্য বিশেষ কারণে কিছুটা আলেচনা চলছে। সে কথাটা হলো, ‘আমাদের কারণেই ওয়ান-ইলেভেন হয়েছিল’। এই ওয়ান-ইলেভেন এবং উদ্দিন সাহেবদের সরকারের সঙ্গে কথিত সহযোগিতা সম্পর্কিত স্বীকৃতির কারণে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ডজন-ডজন মামলার যে অভিযান চলছে, সে অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এরশাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কারণ, তিনি নিজেই জানান দিয়েছেন, তারাই ওয়ান-ইলেভেন ঘটিয়েছিলেন। এটা সত্য হলে ২০০৬ সালের অক্টোবরে সংঘটিত লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের দায়দায়িত্বও এরশাদদের ওপরই বর্তায়। আর সাবেক এ জেনারেল যেহেতু ‘ডার্টি পলিটিক্স’ করেন না এবং অপ্রিয় হলেও সত্য কথাই বলেন সেহেতু আওয়ামী লীগের পক্ষেও দায় এড়ানোর সুযোগ থাকতে পারে না।

এটা খুবই গভীর একটি বিষয় বলেই এখানে বরং এরশাদ-বর্ণিত সেই চুক্তি বা সমঝোতার ব্যাপারে কিছু তথ্যের উল্লেখ করা যেতে পারে। বস্তুত ‘ডার্টি পলিটিক্স’ এবং মিথ্যাচারের কারণে যতো অভিযোগই তার বিরুদ্ধে থেকে থাকুক না কেন, এই একটি বিষয়ে তিনি সত্য বলেছেন। কারণ, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। ঘটনাস্থল ছিল লন্ডন। এ ব্যাপারে এরশাদ নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর। সে সময়ও গুঞ্জনে শোনা গিয়েছিল, শেখ হাসিনার সঙ্গে লন্ডনে এরশাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়াও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু উপস্থিত ছিলেন। ঢাকায় ফিরে এরশাদ বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে তিনি ‘বোন’ ডেকেছেন। এরশাদ একই সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, আওয়ামী মহাজোট বিজয়ী হলে তিনিই রাষ্ট্রপতি হবেন। সবাইকে চমকে দিয়ে এরশাদ তখন আরো বলেছিলেন, এ শুধু তার ইচ্ছা নয়, শেখ হাসিনাও তাকে রাষ্ট্রপতি পদে মেনে নিতে রাজি হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বানানোর শর্তেই জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসতে হাসতে এরশাদ বলেছিলেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হতে ‘প্রস্তুত’ আছেন! সেবার লন্ডন থেকে ফেরার পরপর এরশাদ একই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও ঘোষণা করতে শুরু করেছিলেন।

নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তুলে ধরাসহ এরশাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও ঘোষণা সে সময় ১৪ দলীয় জোটে তীব্র টানাপোড়েনের সৃষ্টি করেছিল। বাম দলগুলো এ কথা পর্যন্ত বলেছিল যে, তারা আর ১৪ দলে থাকবে কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, তাদের বিচারে জাতীয় পার্টি ‘অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক দল’ এবং এরশাদ একজন ‘স্বৈরশাসক’। বামপন্থীরা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এরশাদের বিরুদ্ধে জনগণকে নয় বছর আন্দোলন করতে হয়েছে, অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী কোনো দলের পে অমন একজন চিহ্নিত ‘স্বৈরশাসকের’ সঙ্গে একই জোটে থাকা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ অবশ্য প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এরশাদকে ‘কোনোক্রমেই’ বাদ দেয়া সম্ভব নয়। জিল্লুর রহমান শুধু এটুকু বলতেই বাকি রেখেছিলেন যে, প্রয়োজনে ১৪ দলের সবাই কিংবা যে কোনো দল চলে যেতে পারে, কিন্তু এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ছাড়া আওয়ামী লীগের চলবে না। এমন এক কঠোর অবস্থান থেকেই ১৪ দলকে ‘অটুট’ রেখে জোটের সম্প্রসারণ করার অর্থাৎ একই সঙ্গে ১৪ দল এবং আওয়ামী মহাজোট নিয়ে তৎপরতা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। দুটিরই নেতৃত্ব গিয়েছিল আওয়ামী লীগের দখলে।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এভাবেই এক বিচিত্র কৌশল নিয়ে এগোনোর চেষ্টা চালিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে যুক্তি দেখাতে গিয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘বড় অপরাধীর’ বিরুদ্ধে ‘ছোট অপরাধীকে’ সঙ্গে নেয়ায় দোষের কিছু থাকতে পারে না। এরশাদ বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের দিক-পরিবর্তনকারী ছাত্রনেতা শহীদ ডা. মিলনের মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রাজ্জাক ‘বড় অপরাধী’ বিএনপির তুলনায় স্বৈরশাসক এরশাদকে ‘ছোট অপরাধী’ বানিয়ে ছেড়েছিলেন। প্রতিবাদও উঠেছিল সঙ্গে সঙ্গে। কারণ, ‘ছোট’ হলেও এরশাদকে আওয়ামী লীগ ‘অপরাধী’ই মনে করতো। তা সত্ত্বেও কথিত ‘বড় অপরাধী’ বিএনপিকে নির্বাচনে হারানোর ল্য নিয়ে দলটি এরশাদের সঙ্গে ঐক্য করেছিল। সে সময় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, জাতীয় পার্টিকে মহাজোটে নেয়ার বিষয়টি নাকি ‘ভোটের বোঝাপড়া’Ñ à¦à¦Ÿà¦¾ আদর্শগত কোনো জোট নয়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচনে জিতে মতায় যাওয়াটাই ছিল বড়কথা।

এসব তথ্যের আলোকে বলা যায়, এরশাদকে সঙ্গে রাখার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্যায়েই আগাম পরাজয় ঘটেছিল আওয়ামী লীগের। নির্বাচনী রাজনীতিতে ‘হর্স ট্রেডিং’ বা দর-কষাকষি কাকে বলে, সে কথাও আওয়ামী লীগের ‘ঝানু’ নেতাদের শিখিয়ে ছেড়েছিলেন জেনারেল এরশাদ। জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগকে ৫০টি আসন ছাড়তে হয়েছিল। ঘটনাপ্রবাহে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, এরশাদের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করেছিল আওয়ামী লীগ। ‘মতায় যাই যাই’ অবস্থানে এসে যাওয়া ‘এত বড়’ একটি দলকেও কেন মাত্র সেদিনের স্বৈরশাসক এরশাদের ইচ্ছা পূরণ করতে à¦¹à¦¯à¦¼à§‡à¦›à¦¿à¦²Ñ à¦¸à§‡ প্রশ্নের উত্তর দিতে আওয়ামী লীগের নেতারা রাখ-ঢাক করেননি। বলেছিলেন, তারা মতায় যেতে চান। আর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ তৎকালীন চারদলীয় জোটকে নির্বাচনে হারাতে হলে এরশাদের জাতীয় পার্টি ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই। নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ অনেকভাবেই করে দেখেছিলেন তারা। ১/১১-এর পর কিছুদিন পর্যন্ত মনে হয়েছিল যেন দমন-নির্যাতনে দুর্বল হয়ে পড়েছে বিএনপি। কিন্তু নির্বাচন এগিয়ে আসার পাশাপাশি দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেখানে মইন-ফখরুদ্দিনদের ‘নিয়ে আসা’সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছিল, বিএনপি সেখানে ছিল সুবিধাজনক অবস্থানে। বিএনপিতে ভাঙন ঘটানোর এবং বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে জোট থেকে বের করে আনার কোনো চেষ্টা ও পরিকল্পনাও সফল হয়নি। ঘটনাপ্রবাহে চারদলীয় জোট বরং আরো ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়েছিল। সে কারণে আওয়ামী লীগকে শুধু নয়, বিএনপি বিরোধী অন্য সকল পকেও নতুন করে হিসাব মেলাতে হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব অর্জন করেছিল এরশাদের জাতীয় পার্টি। এর কারণ, নির্বাচনের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গী অন্য দলগুলোর তুলনায় জাপা ছিল বেশি সম্ভাবনাময় একটি দল। সে সময় পর্যন্ত সর্বশেষ তথা অষ্টম সংসদেও জাতীয় পার্টির ১৪ জন এমপি ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ যে দলগুলোকে নিয়ে ১৪ দলীয় জোট করেছিল একমাত্র রাশেদ খান মেনন ছাড়া সে দলগুলোর প্রধান নেতারাও কখনো নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারেননি। তাছাড়া ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেনারেল (অব.) এরশাদের তৎপরতা শুরু হয়েছিল সবার আগে।

ঘটনাপ্রবাহের ওই পর্যায়ে অনেক বেশি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা, জনপ্রিয়তা ও উদ্দেশ্যসহ নানাদিক। কারণ, ‘বড় দল’ আওয়ামী লীগ সাধারণত খুব সহজে কারো সঙ্গে হাত মেলায়নি। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে এসে সে দলটিই যখন আগ বাড়িয়ে নাম সর্বস্ব কয়েকটি দলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল তখন আর বুঝতে বাকি থাকেনি যে, জোট না করে আওয়ামী লীগের কোনো উপায় ছিল না। কথাটা কঠিন সত্যও ছিল। কারণ, ২০০১ সালের নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পর থেকে চারদলীয় জোট সরকারকে ‘ফেলে’ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু জনগণ তার সমর্থনে এক পা-ও এগিয়ে অসেনি। এর কারণ, সরকার বিরোধিতার নামে একদিকে তিনি দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন, অন্যদিকে জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো একটি বিষয়েই তাকে কখনো আন্দোলন করার বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। কথায় কথায় হরতাল চাপানো থেকে দিনের পর দিন ধরে বর্জনের মাধ্যমে সংসদকে অকার্যকর করে ফেলার মতো বিভিন্ন উদাহরণের ভিড়ে যাওয়ার পরিবর্তে অল্প কথায় বরং বলা যায়, বিরোধী দলের নেত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনা কোনো একটি প্রশ্নেই জনগণের স্বার্থে সামান্য ‘অবদান’ রাখার প্রমাণ দিতে পারেননি। তাকে সব সময় শুধু সরকারের ‘পতন’ ঘটানোর কাজেই ব্যস্ত দেখা গেছে- যেন বেগম খালেদা জিয়ার স্থলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হলেই দেশ ও জাতির সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! জনগণকে বিপদের মধ্যে ফেলে বিদেশে পাড়ি জমানোর নজীরও শেখ হাসিনাই বারবার স্থাপন করেছিলেন। এভাবে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেননি বলেই শেখ হাসিনা জনগণের আস্থা অর্জন করতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। নিজেদের তো বটেই, ‘বন্ধুরাষ্ট্র’সহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার জরিপেও দেখা গিয়েছিল, আওয়ামী লীগ অন্তত নির্বাচনের মাধ্যমে মতায় যেতে পারবে না। মূলত এই হতাশা থেকেই ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে এসে আওয়ামী লীগকে কয়েকটি নাম সর্বস্ব দলের সঙ্গে জোট গঠন করতে হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে সামনে এসেছিল অন্য একটি à¦¸à¦¤à§à¦¯à¦“Ñ à¦†à¦“à¦¯à¦¼à¦¾à¦®à§€ লীগ যে কোনোভাবে মতায় যেতে চায়।

এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গিয়েছিল ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বানচাল করে দেয়ার কর্মকাণ্ড থেকে। চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছরে সরকাকে ‘ফেলে’ দেয়ার চেষ্টায় ক্রমাগত ব্যর্থতার পর নির্দলীয় এবং দুর্বল একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতেই কেন লগি-বৈঠার তাণ্ডব চালানো à¦¹à¦¯à¦¼à§‡à¦›à¦¿à¦²Ñ à¦ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে একটু চিন্তা করলেই আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যের দিকটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ, নির্বাচনে অংশ নেয়ার সামান্য ইচ্ছা থাকলেও যে কারো তখন নির্বাচনমুখী কার্যক্রমেই ব্যস্ত হয়ে ওঠার উচিত ছিল। অন্যদিকে লগি-বৈঠার হত্যা ও তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি দাবির পর দাবি তুলে আওয়ামী লীগ এবং তার সঙ্গি-সাথীরা শুধু ঝামেলাই বাড়িয়েছিল। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেও বাধাগ্রস্ত করেছিল তারা পাল্লা দিয়ে। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক দিনগুলোতে এমন কোনো বড়ো দাবির কথা বলা যাবে না যা পূরণ করা হয়নি। কিন্তু অযৌক্তিক ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক প্রতিটি প্রধান দাবি পূরণ করার পরও আওয়ামী জোট ঘাড় বাঁকিয়ে রেখেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিটি উদ্যোগকেই তারা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ব্যর্থ করে দিয়েছে। জোটের প থেকে সেই সঙ্গে বঙ্গভবন অবরোধ করার এবং বঙ্গভবনের ‘অক্সিজেন’ বন্ধ করার হুমকি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল গৃহযুদ্ধেরও ভয় দেখিয়েছিলেন। সব মিলিয়েই আওয়ামী জোটের উদ্যোগে পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক করে তোলা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের কাছেও তখন পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপে নির্বাচনের কথিত পরিবেশ সৃষ্টি করা উদ্দেশ্য হলে আর যা-ই হোক মানুষ হত্যার মতো নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড চালানো এবং দাবির পর দাবি তুলে ঝামেলা বাধানো হতো না। শেখ হাসিনা নিজেও আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা দিয়ে রেখেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, জেনারেল মইন উ ও ড. ফখরুদ্দিনদের সরকার তাদেরই আন্দোলনের ‘ফসল’Ñ à¦¤à¦¾à¦°à¦¾à¦‡ তাদের মতায় এনেছেন!

কিন্তু বিএনপিকে অনুসরণ করে ১৪টি দলকে নিয়ে জোট গঠন করলেও আওয়ামী লীগের জন্য সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়নি। বাম দলগুলো বরং দলটির জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছিল। এজন্যই আওয়ামী লীগ এরশাদের দিকে হাত না বাড়িয়ে পারেনি। এরশাদও সুযোগ নিতে ছাড়েননি। নিজে রাষ্ট্রপতি হতে চেয়েছেন, জাপার জন্য আদায় করেছেন কম-বেশি ৫০টি আসনের নিশ্চয়তা। অন্যদিকে এমন ১৪টি দলই আওয়ামী লীগের ‘নীতি-আদর্শগত’ জোটে ছিল যাদের ওপর একটি আসনের জন্যও ভরসা করা যাচ্ছিল না। এজন্যই আওয়ামী লীগের নেতারা এরশাদের কোনো বাড়াবাড়িকেই খারাপ বলতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, পাছে এরশাদ বেঁকে à¦¬à¦¸à§‡à¦¨Ñ à¦à¦‡ ভয়ে জাপা নেতাদের ‘সুধা সদনে’ ডেকে আনার ঝুঁকি এড়াতে আওয়ামী লীগের নেতারাই সে সময় এরশাদের ‘প্রেসিডেন্ট পার্কে’ গিয়ে বারবার হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন!

কিন্তু দলটি আওয়ামী লীগ বলেই ‘চুক্তি’ অনুযায়ী এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বানায়নি। অথচ এরশাদ নিজেই শুধু বলেননি, রটনাও রয়েছে, কথা নাকি ছিল, আওয়ামী মহাজোট মতায় গেলে তাকেই রাষ্ট্রপতি বানানো হবে। সমস্যা থাকলে নিদেন পে মাস ছয়েকের জন্য হলেও তিনি রাষ্ট্রপতি হবেন। কিন্তু আরেক ‘বৃদ্ধ’ জিল্লুর রহমানের কাছে তাকে হেরে যেতে হয়েছিল। এসব দুঃখ-বেদনা এরশাদ আরো অনেক উপলক্ষেই প্রকাশ করেছেন। যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের পর আওয়ামী লীগের এমপিরা যখন জাতীয় সংসদে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বক্তব্য রাখার পাল্লা দিচ্ছিলেন তখন, ৩ মার্চ জাতীয় পার্টির এক অনুষ্ঠানে অনেকটা গোপন তথ্য ‘ফাঁস’ করে দেয়ার ঢঙে এরশাদ বলেছিলেন, সেনাবাহিনী ‘সহযোগিতা না করলে’ আওয়ামী লীগের পে ‘জীবনেও’ মতায় আসা সম্ভব হতো না। এজন্যই সেনাবাহিনীর প্রতি আওয়ামী লীগের ‘কৃতজ্ঞ’ থাকা উচিত। সেবারও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিলেন এরশাদ। সুতরাং সব মিলিয়েই বলা যেতে পারে, নিতান্ত অসত্য কিছু বলেননি সাবেক এই স্বৈরশাসক।

বর্তমান পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছে অবশ্য অন্য কারণে। কে জানে, এরই মধ্যে বিশেষ কোনো সংরক্ষিত এলাকা কিংবা কোনো দক্ষিণী কেন্দ্রের কোনো ‘সিগনাল’ পাওয়া গেছে কি না। এমন অনুমানের কারণ, ‘ডার্টি পলিটিক্স’ করেন না বলে এরশাদ নিজে যতো সাফাই-ই গাইতে থাকুন না কেন, তার বিরুদ্ধে ‘ডার্টি পলিটিক্স’ করার অভিযোগ মোটেও নতুন নয়। গুরুতর এ অভিযোগটি প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে অনেক আগে। এজন্যই এতদিন পর হঠাৎ পুরনো দিনের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে ধরার অন্তরালে বিশেষ কোনো কারণ রয়েছে কি না সে প্রশ্ন উঠতেই পারে! ওয়ান-ইলেভেন ঘটানোর দায়দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টিকেও নিশ্চয়ই হাল্কাভাবে নেয়া যায় না! ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে যদি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ফাঁসানো হয় তাহলে এরশাদ এবং তার সঙ্গি-সাথীরা পার পেয়ে যাবেন কোন অজুহাতে? নাকি ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলেছেন বলেই ওনাদের কোনো দোষ থাকতে পারে না?

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।