সংবাদ শিরোনামঃ

ভোট ডাকাতির আশঙ্কা ** বাংলা সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিন ** দেশের রাজনীতি এখন ছাই চাপা তুষের আগুন ** বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত ** হারলেন ট্রাম্প, টিকলেন হিলারি ** মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ** বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন খালেদা জিয়া ** অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত জাতীয় পার্টি ** মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ** শিশু নির্যাতন ও অপহরণ বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ** নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মুখে দেশ ** নাজাত লাভের উপায় ** যেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ** নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাস করছে ** করতোয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে তীরবর্তী স্থাপনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪২২, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

হামিদ মীর
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক বড় পরীার মুখোমুখি হয়েছেন। উভয়ে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ লাহোরে পাক-ভারত আলোচনা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ২ জানুয়ারি ২০১৬ পাঠানকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে হামলার পর আলোচনার ভবিষ্যতের ওপর শঙ্কার ছায়া ছেয়ে পড়ছে। ভারত সরকার পাঠানকোট হামলার জন্য কিছু পাকিস্তানীকে দায়ী করলেও পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করেনি। পাকিস্তান সরকার ভারতের অভিযোগ তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যানের পরিবর্তে ওই অভিযোগ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। পাঠানকোট হামলার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যে সঙ্কট ও শঙ্কার মুখোমুখি হয়েছেন তা ওই সব ব্যক্তিও অনুভব করছেন, যারা নওয়াজ শরিফের সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কা সফরে তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। ওই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের কাছ থেকে জেএফ থান্ডার বিমান ক্রয়ের ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার সাথে চুক্তি করা। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকারকে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে আতঙ্কগ্রস্ত মনে হলো। এক দিকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের সহযোগিতার জন্য বারবার শুকরিয়া জানাচ্ছিলেন। অপর দিকে, বড় অসহায়ভাবে এটাও বলছিলেন যে, ভারত হুমকি দিয়েছে, পাকিস্তানের কাছ থেকে জেএফ থান্ডার কেনা যাবে না। তা না হলে আপনাদের ঋণ ও সাহায্য সহযোগিতা বন্ধ করে দেবো। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উৎপাদনমন্ত্রী রানা তানভীর অত্যন্ত ভদ্রতার সাথে মেজবানদের কাছে স্পষ্ট করে দেন, যদি আপনাদের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাহলে এখনই নিতে হবে। কেননা মিয়ানমার, নাইজেরিয়া ও মিসরও জেএফ থান্ডার বিমান ক্রয়ের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যদি তারা আগে অর্ডার দেয়, তাহলে ডেলিভারিও তাদের আগে দেয়া হবে। আর আপনারা বিমান পাবেন অনেক দেরিতে। তার কথা শুনে শ্রীলঙ্কান মেজবানরা চুক্তির জন্য রাজি হয়ে যান তবে আবেদন করেন, ওই চুক্তির কথা যেন প্রকাশ করা না হয়। শ্রীলঙ্কা সরকারের এ আচরণ এমন কিছু বাস্তবতাকে সামনে এনে হাজির করছিল, যা মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত নই।

শ্রীলঙ্কান সাধারণ নাগরিকেরা মনে করেন, তাদের দেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে বের করে আনতে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কায় ভারতের প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেক বেশি। আফগানিস্তানের সাথে ভারতের কোনো সীমান্ত সম্পর্ক নেই। তবুও আফগানিস্তানেও পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের প্রভাব বেশি। অথচ আফগানিস্তান একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। বাংলাদেশও একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তথাপি সেখানেও ভারতের প্রভাব বেশি। ইরানের সাথে পাকিস্তানের সীমান্ত সম্পর্ক রয়েছে। পাকিস্তান কখনো ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রে উৎসাহ জোগায়নি। গত কয়েক দশকে ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্কের মাঝে উষ্ণসম্পর্ক বিদ্যমান সত্ত্বেও পাকিস্তান ইরান ও সৌদি আরবের টানাপড়েনে কোনো এক পক্ষ গ্রহণ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখে। তারপরেও ইরানে ভারতের প্রভাব বেশি।

চীন ছাড়া এ অঞ্চলের সব গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের সম্পর্ক বেশ ভালো। এটা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা নয় কি? এই ব্যর্থতার জন্য কি তারা দায়ী নন, যারা মূলত পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার জন্য বেশ আগ্রহী? এমন কোনো বাহাদুর নেই, যে কমপক্ষে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করবেন। এ কারণে স্বদেশের বাহাদুর কলমবাজরাও ওই ব্যর্থতার দায়ভার অন্য কারো ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের বিশ্বাসের ঝাণ্ডা উত্তোলন করছেন। যদি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ একজন নিয়মতান্ত্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্ধারণ করতেন তাহলে দুর্বল রাজনীতিবিদদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণকারী কলামিস্ট ও টিভি ব্যক্তিত্বদের এই আপত্তি তো শেষ হতো যে, যে দেশে কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেই, ওই দেশের পররাষ্ট্রনীতি কিভাবে সফল হবে? কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী কোয়েটার সাবেক কোর কমান্ডার নাসির খান জানজুয়াকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন। আশা করা হয়, জানজুয়া রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করে কমপক্ষে আফগানিস্তান ও ভারতের সাথে বিবাদ মিটাতে এক প্রভাব বিস্তারকারী ভূমিকা পালন করবেন। নাসির খান জানজুয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হওয়ার পর তার ব্যাপারে কানাঘুষার মাধ্যমে অনেক গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। তবে কানাঘুষাকারী নিজে সামনে আসার জন্য প্রস্তুত নয়। নাসির খান জানজুয়ার প্রথম পরীা ছিল ব্যাংককে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত কুমার দোভালের সাথে তার চার ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক। ওই বৈঠকে একজন সাদাসিধা সামরিক লোকের সামনে এমন এক পুলিশ অফিসার ছিলেন যার সারা জীবন কেটেছে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে। তবে উভয়ের বৈঠক শেষে যে যৌথ ঘোষণা সামনে আসে তাতে কাশ্মিরের কথা বিদ্যমান ছিল। উফার (রাশিয়ার বাশকোরতোস্তান স্টেটের রাজধানী) যৌথ ঘোষণায় কাশ্মির ছিল না। তবে ব্যাংককের যৌথ ঘোষণায় কাশ্মির ফিরে আসার মর্ম হচ্ছে নাসির খান জানজুয়া তার সাদাসিধা ও সরল কথা দিয়ে অজিত দোভালকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করেছেন।

মোদি নওয়াজ শরিফকে প্যারিসেই উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রথমে এ বৈঠক সিঙ্গাপুরে হওয়ার কথা ছিল, পরে ব্যাংককে এ বৈঠকের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়। ওই বৈঠকের ফলস্বরূপ সুষমা স্বরাজ ইসলামাবাদ এবং নরেন্দ্র মোদি লাহোর আসেন। ভারতে বিরোধী দল কংগ্রেস ও পাকিস্তানে তেহরিকে ইনসাফের নেতৃবৃন্দের দাবি, নওয়াজ শরিফ ও মোদির মাঝে গোপন সম্পর্কের দায়িত্ব পালন করেন ভারতীয় শিল্পপতি সাজন জিনদাল। নওয়াজ শরিফ ২০১৪ সালে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দিল্লি যান। তিনি ওই সময় জিনদালের বাসায় চা পান করেছিলেন। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ মোদি লাহোর আসেন। ওই সময় জিনদাল আগে থেকেই লাহোরে অবস্থান করছিলেন। তবে নওয়াজ শরিফ ও মোদির বৈঠকের সময় তাকে দেখা যায়নি।

ভারত ও পাকিস্তানের মিডিয়া জিনদালের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেপে গেছে। জিনদালের পরিবারের সম্পর্ক সর্বদা কংগ্রেসের সাথে। তার ভাই ও বিজনেস পার্টনার নবীন জিনদাল কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচনে লড়াই করেছেন। তাহলে জিনদাল মনমোহন সিং ও নওয়াজ শরিফকে কাছে আনতে গোপন কূটনীতি কেন করেননি? নওয়াজ শরিফ জিনদালকে বেশ কয়েক বছর ধরে জানেন। তবে ২০১৪ সালে নওয়াজ শরিফকে মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব অজিত দোভাল করেছিলেন, জিনদাল করেননি। জিনদাল নিজেই স্পষ্ট বাক্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তিনি কখনো নেপাল বা পাকিস্তানে মোদি ও নওয়াজ শরিফের বৈঠকের ব্যাপারে কোনো ভূমিকা পালন করেননি। এ বিষয়টি লক্ষণীয় যে, পারভেজ মোশাররফ যখন মতায় ছিলেন তখন তার সাথেও জিনদালের সম্পর্ক ছিল। কেননা জিনদাল রাজস্থানের পথ দিয়ে পাকিস্তানের কাছে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রয় করতে আগ্রহী ছিলেন।

মূল কথা হচ্ছে, পাক-ভারত বিবাদ নিরসনে শুধু এক সাজন জিনদালের উপকার হবে না বরং পুরো অঞ্চলের উপকার হবে। পাঠানকোট হামলার পর পাকিস্তানের কাছে দাবি করা হয়েছে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করেছে, কিন্তু ভারত প্রশাসন ওই দায় স্বীকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কেননা হামলাকারীদের ফোনকল হামলার আগে ট্রেস করা হয়েছিল। তবে ভারতের পুলিশ ও ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলো তাদের অযোগ্যতার কারণে হামলা প্রতিরোধ করতে পারেনি। অবশ্য ভারত প্রশাসন হামলার আগে পাকিস্তানকে হামলার আশঙ্কার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল।

এটা বেশ ভালো সংবাদ যে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বে পাঠানকোটের ঘটনা নিয়ে চিন্তাভাবনার জন্য যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তাতে আর্মি চিফ এবং আইএসআইয়ের ডিজিও উপস্থিত ছিলেন। পাঠানকোটে হামলার ঘটনা মোদি সরকারের জন্য এক বিশাল ধাক্কা। কেননা এ নিয়ে তার সমালোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করো না। তবে যদি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দ পাঠানকোট ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নেয়, তাহলে পাক-ভারত আলোচনার কার্যক্রম সঠিক দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে। পাকিস্তান তার রাজনৈতিক উত্তম চরিত্র গঠন করে বিশ্বের সামনে এ দাবি তুলে ধরতে পারবে, পাকিস্তান ও ভারতের মূল বিবাদ জম্মু কাশ্মির। যতক্ষণ পর্যন্ত কাশ্মিরিদের সাথে নিয়ে এ সমস্যা সমাধান না হবে, ততক্ষণ এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের উচিত, তিনি কাশ্মির নিয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করবেন এবং পার্লামেন্টকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন। তা না হলে পাঠানকোটের মতো সমস্যা বন্ধ হবে না।

পাকিস্তানের জাতীয় পত্রিকা দৈনিক জং ১১ জানুয়ারি ২০১৬

উর্দু থেকে ভাষান্তর ইমতিয়াজ বিন মাহতাব

*  লেখক : পাকিস্তানের জিও টিভির নির্বাহী সম্পাদক

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।