সংবাদ শিরোনামঃ

ভোট ডাকাতির আশঙ্কা ** বাংলা সাহিত্য বিশ্বে ছড়িয়ে দিন ** দেশের রাজনীতি এখন ছাই চাপা তুষের আগুন ** বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত ** হারলেন ট্রাম্প, টিকলেন হিলারি ** মধ্যবর্তী নির্বাচনের চাপ ** বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিলেন খালেদা জিয়া ** অন্তর্দ্বন্দ্বে বিপর্যস্ত জাতীয় পার্টি ** মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ** শিশু নির্যাতন ও অপহরণ বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ** নিশ্চিত অনিশ্চয়তার মুখে দেশ ** নাজাত লাভের উপায় ** যেভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ** নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাস করছে ** করতোয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে তীরবর্তী স্থাপনা **

ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪২২, ২৫ রবিউস সানি ১৪৩৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ও জল্পনা-কল্পনার কোনো শেষ নেই। সবই যেন ডালপালা বিস্তার করে চলেছে। অসমর্থিত খবরে প্রকাশ, বেগম খালেদা জিয়াকে যে কোনোভাবে দণ্ডিত করে কারাগারে ঢোকানো হবে, যাতে তার পক্ষে আর নির্বাচন ও দলীয় রাজনীতি করা সম্ভব না হয়। একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যাপারেও। তেমন অবস্থায় বিএনপির নেতৃত্ব কারা দেবেন এবং দলটি আদৌ শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে পারবে কি à¦¨à¦¾Ñ à¦à¦¸à¦¬ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো নাকি জানার চেষ্টা চালাচ্ছে। মার্কিন কিছু সূত্রেই খালেদা জিয়া সম্পর্কিত প্রায় নিশ্চিত খবরটুকু জানা গেছে। এই খবরে তথ্যাভিজ্ঞরা কিন্তু বিস্মিত না হয়ে পারেননি। কারণ, মাত্র ক’দিন আগেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘অবাধে’ তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত ২৫ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর দেয়া এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেছেন, গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার দেশটির উন্নয়নে একটি প্রয়োজনীয় ভূমিকা রেখেছে। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়া দরকার। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আয়োজিত একতরফা সংসদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের সরকার গঠন থেকে সর্বশেষ পৌর নির্বাচন এবং বিরোধী দলের ওপর চালানো দমন-নির্যাতন পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য ও ঘটনাপ্রবাহের উল্লেখ করে বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটকে জানিয়েছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি বলে এই সরকারের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনও অনুপস্থিত। দূর্বিষহ এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজনৈতিক সঙ্কটও কাটিয়ে উঠতে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বেগম খালেদা জিয়া যে সমাধানের পন্থা উপস্থাপন করেছেন এবং ক্ষমতাসীনরা যে তার কোনো একটিও গ্রহণ à¦•à¦°à§‡à¦¨à¦¨à¦¿Ñ à¦¸à§‡ বিষয়েও জানানো হয়েছে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটকে।

ওদিকে ঢাকায় নবনিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেইকও পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অব্যাহত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত ২০ জানুয়ারি নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারের প্রতি সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি তারা অব্যাহতভাবে পর্যবেণ করছেন এবং করতে থাকবেন। দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট এবং নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছেন, ব্রিটেন সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক অতীতে নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে ব্রিটেনের যে উদ্বেগ ছিল সেটা গোপন করার কিছু নেই। কারণ, এসব নির্বাচনে অধিকাংশ ভোটার ভোট দেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ সংসদীয় গণতন্ত্রে সব দল ও সব ভোটারের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব পর্যায়ের সব নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় এবং নির্বাচনে সব পক্ষ যাতে অংশ গ্রহণ করতে পারে সে ব্যাপারেও বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার।

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের এ বক্তব্য বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে পুলিশের বাড়াবাড়ি সম্পর্কে শুধু নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট নীতি-মনোভাব ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার যথার্থ প্রকাশ ঘটেছে। দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট এবং নির্বাচন প্রসঙ্গেও তার বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন এবং একথা সত্যও যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে ব্রিটেন আদৌ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন সম্পর্কেও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি। এই প্রতিক্রিয়াকে দেশটি যে গোপন রাখেনি বা রাখছে না সে কথাটাও জানিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তিনি সেই সাথে সব দল ও পক্ষের অংশগ্রহণে এমন নির্বাচন অনুষ্ঠান করার তাগিদ ও পরামর্শ দিয়েছেন, যে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সহিংসতামুক্ত। এ লক্ষ্যে সরকার এবং সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুও হয় এবং সব দল যাতে সে নির্বাচনে বাধাহীনভাবে অংশ নিতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এলিসন ব্লেইকের বক্তব্যের মধ্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই। তার দেশ চায়, বাংলাদেশে অচিরেই সকলের অংশগ্রহণমূলক নতুন একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।

ওদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাটের মূলকথা এবং অন্তরালের মনোভাবও নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি অকারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘অবাধে’ মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানাননি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রধান উদ্দেশ্য থেকেই তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন। তার বক্তব্যেও সরকারের দমন-নির্যাতন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি এসেছে পরোক্ষভাবে। না হলে ‘অবাধে’ শব্দটির প্রয়োগ করতেন না তিনি। বলা দরকার, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডাসহ আরো অনেক রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ড ও দমন-নির্যাতন বন্ধ করার এবং পুলিশের বাড়াবাড়ি সম্পর্কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সর্বশেষ বক্তব্যের উল্লেখ করা যায়। গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত বার্ষিক রিপোর্টে ‘বাংলাদেশ : গভর্নমেন্ট শাটস ডাউন ক্রিটিকস’ শিরোনামের অধ্যায়ে সংস্থাটি বলেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্রমেই ‘কর্তৃত্বপরায়ণ’ হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে ভিন্নমত প্রকাশের বিষয়টি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। দেশটিতে বিরোধী রাজনীতিকদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলা দায়ের করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতন, হত্যা ও গুম হওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ অত্যন্ত কঠিন সময় পার করেছে। সরকারের সমালোচনা করার কারণে গণমাধ্যমগুলোকে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিক ও সম্পাদকদের অভিযুক্ত ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দু’জন রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। রাজনৈতিক সঙ্কট প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটির সংসদে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই। কারণ, বড় দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। মনে হচ্ছে, সংসদের বাইরেও কোনো বিরোধী দলকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দিতে চায় না সরকার। বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিধিবহির্ভূত গ্রেফতার ও বিচারবহির্ভূত হত্যার আতঙ্কে রয়েছে। গত বছর বিরোধী দলের আন্দোলনের আগে সহিংসতা ঠেকানোর নামে রাজপথে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করে সরকার। এ সময় হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মীকে আটক করার পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রাখা হয়। এভাবে সব মিলিয়েই দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে সরকার ‘কর্তৃত্বপরায়ণ’ হয়ে উঠেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, রিপোর্টে কোনো বিষয়েই সামান্য বাড়িয়ে বলা হয়নি।  বস্তুত সরকার ‘কর্তৃত্বপরায়ণ’ হয়ে ওঠার কারণে বিশেষ করে বিরোধী দলগুলো আন্দোলন করতে পারছে না। তাদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। রিপোর্টে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য সঠিকভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী তথা নিরাপত্তাবাহিনীগুলোকে দায়ী করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর রিম্যান্ডে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন, প্রতিহিংসামূলক গ্রেফতার, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের, গ্রেফতারের জন্য বাসাবাড়িতে তল্লাশি এবং গুম ও খুনের মতো বিভিন্ন তথ্য স্মরণ করলে স্বীকার করতেই হবে, রিপোর্টে সত্য ও সঠিক চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। বাস্তবেই গত বছর গুম ও গুপ্তহত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েছে। হত্যার পাশাপাশি নিরাপত্তা হেফাজতে নিষ্ঠুর নির্যাতন, ঢালাও গ্রেফতার অব্যাহত থেকেছে।

গণমাধ্যম প্রসঙ্গেও রিপোর্টে বাড়িয়ে বলা হয়নি। কারণ, সরকার সব দিক থেকেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করে ফেলেছে। দৈনিক আমার দেশ এখনো প্রকাশিত হতে পারছে না, এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদকে মিথ্যা মামলায় আটকে রেখেছে সরকার। ওদিকে দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি এখনো বন্ধ রয়েছে। সরকারের গণমাধ্যম বিরোধী নীতি ও কর্মকাণ্ডের সর্বশেষ একটি উদাহরণ হিসেবে এসেছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে বন্ধ করার পদক্ষেপ, যা আধুনিক বিশ্বে কল্পনা করা যায় না। এখনো কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রয়েছে। এসব কারণেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টের কোনো একটি বিষয়ের সঙ্গেই ভিন্নমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। বলা বাহুল্য, রিপোর্টটি সরকারের জন্য সুখবর হয়ে আসেনি। তা সত্ত্বেও অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করাটাই যথেষ্ট হতে পারে না। কারণ, সবই ঘটে চলেছে জনগণের চোখের সামনে, আক্রান্ত ও তিগ্রস্তও তারাই হচ্ছে। তাছাড়া সবদিক থেকেই রিপোর্টটিতে সত্যের প্রকাশ ঘটেছে। সুতরাং কেবলই ঘাড় বাঁকিয়ে প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে সরকারের জন্য রেহাই পওয়ার সুযোগ থাকতে পারে না। তেমন চেষ্টা করার পরিবর্তে মতাসীনদের বরং রিপোর্টের মূলকথা ও সুর অনুধাবন করা এবং সে অনুযায়ী নিজেদের সংশোধন করা দরকার। কারণ, প্রতিটি বিষয়েই তারা গণতন্ত্রের সীমা ছাড়িয়ে গেছেন, তাদের বাড়াবাড়ির ফলে দেশে মানবাধিকারের লেশ মাত্রও আর অবশিষ্ট নেই। রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত প্রত্যেককেই এখন নির্যাতনের কবলে à¦ªà§œà¦¾à¦°Ñ à¦à¦®à¦¨à¦•à¦¿ বেঘোরে প্রাণ হারানোর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় থাকতে হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যখন অভিযোগ উত্থাপন করে তখন বোঝা দরকার, এমন রিপোর্ট কোনো সরকারের ভবিষ্যতের জন্য শুভ হওয়ার নয়। সুতরাং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মামলা ও গ্রেফতারসহ বিরোধী দলের ওপর দমন-নির্যাতন বন্ধ করার পাশাপাশি সরকারের উচিত জাতীয় নির্বাচন নিয়েও এখনই উদ্যোগী হওয়া। কারণ, আলোচ্য রিপোর্টে সত্যের প্রকাশ ঘটিয়ে বলা হয়েছে, দেশটির সংসদে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই এবং বড় দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সব দলের অংশগ্রহণে যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়ার মধ্যেই সরকারের জন্য মঙ্গল নিহিত রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। ক্ষমতাসীনদের অনুধাবন করা উচিত, ‘সংসদের বাইরেও কোনো বিরোধী দলকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দিতে চায় না শেখ হাসিনার সরকার’Ñ à¦°à¦¿à¦ªà§‹à¦°à§à¦Ÿà§‡à¦° এই কথাটুকু তাদের জন্য অশুভ পরিণতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

 

উদ্বেগের কারণ শুধু এ ধরনের রিপোর্ট এবং বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয়নি। ক্ষমতাসীনদের নেতিবাচক মনোভাব, অবস্থান ও কর্মকাণ্ড এসেছে প্রধান কারণ হিসেবে। উদাহরণ দেয়ার জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা বিষয়ক বিতর্কের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। কিন্তু সহজবোধ্য কারণে বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াই ভালো। পরিবর্তে বরং বেগম খালেদা জিয়ার অন্য একটি বক্তব্যের উল্লেখ করা দরকার। গত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করলেও তিনি সমঝোতায় পৌঁছানোর এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজধানীর পল্টন এলাকায় অনুষ্ঠিত বিশাল জনসমাবেশে বলেছিলেন, সরকারকে সব দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিরও পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি। নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওই ভাষণে হিংসা ও শত্রুতা ভুলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার এবং দেশ ও জনগণকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার বিষয়কে প্রাধান্যে এনেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। গত বছর ২০১৫ সালের তিন মাসব্যাপী অবরোধ এবং আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাসহ প্রশ্নসাপেক্ষ নানা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অতি তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ও আহ্বানে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছিল। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা যথারীতি নেতিবাচক ও আক্রমণাত্মক অবস্থানই বজায় রেখেছেন। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়ায়। বেগম খালেদা জিয়া বক্তৃতা শেষ করতে না করতেই তারা সংলাপ ও সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন, ‘খুনীর’ সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়। কোনো কোনো নেতা খালেদা জিয়াকে এমনকি ভিন্ন রাষ্ট্র পাকিস্তানে পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।

এসবের মধ্য দিয়ে একটি কথাই আরো একবার স্পষ্ট হয়েছে। সে কথাটা হলো, ক্ষমতাসীনরা কোনো রকম সমঝোতা চান না। তারা বরং জিইয়ে রাখার পাশাপাশি রাজনৈতিক সঙ্কটকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান, যখন আর কোনো মীমাংসা বা সমাধান করাই সম্ভব হবে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এ ধরনের নীতি-কৌশল ও মনোভাব যে মোটেও গ্রহণযোগ্য হওয়ার নয়। বিশেষ করে বর্তমান বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এজন্য যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের নামে একদলীয় ও একতরফা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সেই থেকে গুম-খুন, মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেফতারসহ দমন-নির্যাতনের কারণে সামগ্রিক পরিস্থিতির কেবল অবনতিই ঘটে চলেছে। যৌথ অভিযানের নামে কোনো মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষকেও রেহাই দেয়া হচ্ছে না। এমন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আশা করা হয়েছিল, ৩০ ডিসেম্বরের পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার দমন-নির্যাতনের লাগাম টেনে ধরবে। কিন্তু নির্বাচনের প্রাক্কালে উল্টো দমন ও গ্রেফতারের অভিযানকেই আরো শক্তিশালী ও সর্বব্যাপী করা হয়েছিল। এর ফলে বেশিরভাগ এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষে কার্যকরভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া সম্ভব হয়নি। একই কারণে চারদিকে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে, জনগণও রয়েছে প্রবল আতংকের মধ্যে।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশপ্রেমিক সকল মহলের পক্ষ থেকে গ্রেফতার ও দমন-নির্যাতন বন্ধ করে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠেছে একযোগে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কিছুটা ঘুরিয়ে হলেও একই আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকাট এবং ব্রিটেনের হাই কমিশনার এলিসন ব্লেকও। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এখনো নেতিবাচক অবস্থান বজায় রাখা হয়েছে বলেই ধরে নেয়া যায়, সহজে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশ বরং নিশ্চিত অনিশ্চয়তার দিকেই এগিয়ে চলেছে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।