ফাহিমের ঈদ

মো. ইয়াহিয়া হোসাইন
আর কটা দিন বাদ্ইে ঈদ। ফাহিমের মনে তাই খুব আনন্দ। বন্ধুদের সাথে সে ঈদের মাঠে যাবে। সেমাই ফিরনি খাবে। ভাবতেই ভালো লাগে ফাহিমের। লাল পাঞ্জাবি তার দারুণ পছন্দ। সে চিন্তা করেছে এবার লাল পাঞ্জাবি পরে ঈদের মাঠে যাবে। অলরেডি সে তার আম্মুকে বলে দিয়েছে তার ইচ্ছার কথা।

ফাহিমের আব্বু একজন গার্মেন্ট শ্রমিক। ঢাকা শহরে থাকে। কদিন পরে ঈদ বলে কাজের চাপটাও বেড়ে গেছে। তার ইচ্ছা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সবার সাথে ঈদ করা। অনেক দিন হলো বাড়িতে যাওয়া হয় না। বাড়ির লোকজনের চেহারা তার হৃদয়ে ভাসে, আর দিন গোনে।

এদিকে ফাহিমের আম্মু ফাহিমের জ্বালাতনে পড়ে। আব্বু আসবে কবে, লাল পাঞ্জাবি নিয়ে আসতে বলো ইত্যাদি নানারকম কথা। তার আম্মু বলে, এই তো ঈদের আগের দিন চলে আসবে। তোমার জন্য সুন্দর দেখে পাঞ্জাবি নিয়ে আসতে বলে দিয়েছি। ফাহিমের মনটা আশ্বস্ত হয়। আর আব্বুর জন্য অপেক্ষার প্রহর গোনে।

ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি। ইতোমধ্যে গার্মেন্ট থেকে ছুটি পেয়ে গিয়েছে ফাহিমের আব্বু। ঈদের জন্য মোটামুটি কেনাকাটাও সেরে ফেলেছে। ফাহিমের জন্য সুন্দর টুকটুকি একটি পাঞ্জাবি, সুন্দর সাদা পাজামা এবং বাড়ির অন্যদের জন্য বেশ কিছু জামা-কাপড়।

ঈদ উপলক্ষ্যে বাড়ি ফিরতি মানুষের অনেক ভিড় বাস-ট্রেন-লঞ্চ সব জায়গাই মানুষ আর মানুষ। আজ সে লঞ্চে যাওয়ার প্লান করেছে। সন্ধ্যার পর পরই মাগরিবের সালাত আদায় করে লঞ্চে উঠে পড়ে ফাহিমের আব্বু।

এদিকে ফাহিমের ঘুম হয় না। আগামীকাল আব্বু আসবে পরের দিন ঈদ। লাল পাঞ্জাবির স্বপ্নে সে বিভোর। সে বারবার আম্মুকে বলে আব্বু কখন এসে পৌঁছতে পারে ইত্যাদি। তার আম্মু বলে এখন ঘুমাও কাল সকালের দিকে হয়তোবা তোমার আব্বু পৌঁছবে।

অনেক কষ্ট করে ঘুমায় সে। খুব সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।  ফাহিম মসজিদে গিয়ে আজ ফজরের নামাজ পড়ে আসে। তার মন খুব উৎফুল্ল। একটু পরে তার আব্বু আসবে। লাল পাঞ্জাবি সে দেখতে পাবে। অপেক্ষার প্রহর সে গুণতে থাকে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল। তবু তার আব্বু পৌঁছালো না। তার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল। তার আম্মু তাকে বলল, একটু পরেই তোমার আব্বু হয়তো বা পৌঁছে যাবে। একটু ধৈর্য ধর। সে পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বিকালে সে বন্ধুদের সাথে খেলতে আসে। সবার মুখে নতুন জামা-পাজামার গন্ধ। সে ভাবে একটু পরে সেও নতুন পাঞ্জাবি হাতে পাবে। সন্ধ্যা প্রায়ই ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। পশ্চিমের সূর্য হেলে অস্তপরে বিলীন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে মনে করে আব্বু এতোক্ষণে চলে এসেছে। সে দ্রুত বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। বাড়ির সামনে যেতে সে দেখে একটি গাড়ি এবং কিছু লোকের ভিড়। এমন সময় কান্নাকাটির শব্দ তার কানে আসে। কী হলো? ভেতরে ঢুকতেই সে দেখতে পেলো উঠানে সটান হয়ে পড়ে থাকা তার আব্বুর প্রাণহীন দেহ। কিছুক্ষণ থমকে যায় ফাহিম। দাঁড়িয়েই থাকে।

পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে। আব্বু! বলে জড়িয়ে ধরে তার আব্বুর প্রাণহীন দেহকে। পাশে তার আম্মু এবং স্বজনেরা গগণবিদারী কান্নাকাটিতে আকাশ-বাতস ভারী হয়ে উঠেছে। লাল পাঞ্জাবি আর ঈদের কথা ভুলে গিয়ে সে আব্বু আব্বু বলে কাঁদতে থাকে। মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লাশ হতে হয়েছে অনেককেই। ফাহিমের আব্বু তাদের একজন। আগামীকাল ঈদ  এতক্ষণে ঈদের চাঁদ হয়তোবা উঠে গেছে। কিন্তু আগামীকালকের ঈদ ফাহিমের জন্য কষ্টের ঈদ। তার লাল পাঞ্জাবিটা তার আব্বুর ব্যাগ থেকে নদীর গহ্বরে বিলীন হয়ে গেছে। সেই সাথে বিলীন হয়ে গেল ফাহিমের ঈদের আনন্দ।