সংবাদ শিরোনামঃ

আন্তর্জাতিক চাপে সরকার ** গুমের সঙ্গে এই সরকার জড়িত ** যেমন কর্ম তেমন ফল ** শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে ** উৎপাদন খরচ কমলেও বাড়লো বিদ্যুতের দাম ** গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক : বিএনপি ** প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভ, উত্তাল মালয়েশিয়া ** দেশ আতঙ্কিত অথচ সরকার বলছে শান্তিপূর্ণ ** রাষ্ট্র ও সরকারকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** গুম দিবসও গুম হয়ে গেলো! ** ছোটদের বন্ধু নজরুল ** বন্যায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি অপর্যাপ্ত সরকারি সাহায্য ** রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ** যশোরের শার্শায় বাণিজ্যিকভাবে বেদানা চাষ **

ঢাকা, শুক্রবার, ২০ ভাদ্র ১৪২২, ১৯ জিলকদ ১৪৩৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

শামীম খান যুবরাজ
জ্যৈষ্ঠের খাঁ খাঁ রৌদ্রের মধ্যে ভরদুপুরে অয়নকে নিয়ে বের হলেন দাদাভাই। অবশ্য ছাতা হাতেই বের হয়েছেন তিনি।

কয়েকদিন হলো অয়ন পড়ালেখা শেষ করে বিদেশ থেকে ভালো ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেছে। শহরে বাবা-মায়ের সাথে দু’দিন থেকে দাদাভাইকে দেখতে গ্রামে এসেছে সে।

দাদার পিছনে হাঁটছে অয়ন।

-এই ভরদুপুরে আমরা কোথায় যাচ্ছি দাদাভাই?

-কেন তোর কি কষ্ট হচ্ছে?

-না দাদাভাই, এমনি জানতে চাইলাম আর কি!

-আজ তোর এক বন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। চল।

দাদাভাই অয়নকে নিয়ে বাড়ির সীমানা পেরিয়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরে চলতে লাগলেন।

মেঠোপথ শেষ হলে ক্ষেতের কাঁচা আল ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটি উঁচু ভিটের মতো জায়গায় এসে পৌঁছলেন। ভিটের মধ্যে অনেকগুলো ছোট গাছ, কিছু নতুন চারা আর মাঝারি সাইজের একটা বটগাছ। দাদাভাই ছাতা গুটিয়ে বটগাছের ছায়ায় বসে অয়নকে বসতে বললেন।

বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বসলো দাদাভাই। কিছুক্ষণের মধ্যে চায়ের ফ্যাক্স নিয়ে খোরশেদ চাচা এলেন। খোরশেদ চাচা দাদার কাছেই বড় হয়েছেন। কাজের লোক বলে কোনোদিন অবজ্ঞা করেননি তাকে। দাদাভাই যখন শহর থেকে গ্রামে চলে এলেন সেও দাদাভাইয়ের সঙ্গ ছাড়েনি। খোরশেদ চাচা দাদাভাইকে বেশ মান্য করেই চলেন। ফ্যাক্স থেকে চা ঢেলে অয়নের হাতে দিতে দিতে খোরশেদকে ডাক দিলেন à¦¦à¦¾à¦¦à¦¾à¦­à¦¾à¦‡Ñ ‘আশপাশের কৃষকদের ডেকে নিয়ে আয় চা খেতে’।

দাদাভাইয়ের কথা শুনে পাঁচ-ছয়জন কৃষক এসে বসলো বটগাছের শীতল ছায়ায়। সবাই ঘামে ভেজা। গামছা দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে সবাই দাদাভাইয়ের কাছাকাছি মাটিতে বসে পড়লো। দাদাভাই সবার হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে নাতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

অয়ন সবাইকে সালাম দিলো। সবাই ‘বেঁচে থাকো’ বলে অয়নের জন্য দোয়া করলেন।

চা পর্ব শেষ হলে দাদাভাই সবার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আজ তোমাদের একটা গল্প শোনাবো, একটা ছোট্ট ছেলে ও তার গাছবন্ধুর গল্প’।

সবাই গল্প শোনার জন্য দাদার কাছাকাছি এসে গোল হয়ে বসলো।

দাদা গল্প শুরু করলেন।

একটি ছোট্ট ছেলে। শহরে বাস করতো সে। একা একা খেলতো। বাসার বেলকনিতে, কখনো ছাদে। দাদার সাথে খুব ভাব ছিল তার। অফিস থেকে এলেই দাদার সব কাজে নাক গলাতো সে। আর কতোশতো প্রশ্ন! দাদা কী করছো? এটা কেনো করছো? ওটা করছো না কেনো?

এভাবেই দাদা নাতির দিন কেটে যেতো।

একদিন দাদা নতুন বছরের আগমনে বাড়িতে রঙ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কাজের লোকরা বাড়ির দেয়াল আর ছাদ পরিষ্কার করছে। ছাদের কোণায় জমে থাকা বালির স্তূপ থেকে পাঁচটি পাতাসহ নাদুস নুদুস একটি বটগাছের চারা উঠিয়ে ফেলে দিচ্ছিলো কাজের লোকগুলো। চারাটি দেখে ভালো লেগে যায় ছেলেটির। কি সুন্দর তার পাতাগুলো!

ছেলেটি তার দাদাকে বললো, ‘দাদাভাই দেখো কি সুন্দর একটি গাছ। এটাকে আমি ফেলে দিতে দেবো না, তুমি বরং একটি টবের মধ্যে এটাকে লাগিয়ে দাও।’

দাদা জানেন এটি টবে লাগানোর গাছ নয়, তবুও নাতির আবদার রাখতে তিনি টবের মধ্যে লাগিয়ে ছাদে রেখে দিলেন চারাটি।

নতুন মাটি আর পানি পেয়ে চারাটি তরতাজা হয়ে উঠলো কয়েকদিনের মধ্যেই। ছেলেটি প্রতিদিন এসে বসে বসে দেখতো চারাটির বেড়ে ওঠা। প্রতিদিন ছাদে বসে চারাটির সাথে কথা বলতো সে।  আর এভাবেই চারা গাছটি বন্ধু হয়ে গেলো তার।

এরই মাঝে ছেলেটি বিদেশে চলে যায়। সেখানেই পড়ালেখা শুরু করে সে। যাওয়ার আগে চারা বন্ধুটির কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে কেঁদে ফেলে ছেলেটি।

বেশ ক’বছর চারাটি গাছে পরিণত হলো। ডালাপালা ছড়িয়ে দিলো। টবের মাটি ভেঙে বেরিয়ে আসতে লাগলো তার শক্ত শেকড়। এ অবস্থায় গাছটিকে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কিন্তু দাদার প্রিয় নাতির শখের গাছটিকে মরতে দেয়া যায় না।

একদিন দাদা একটি পিক-আপ ভ্যানে করে টবসহ গাছটিকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। গ্রামে তাদের অনেক জায়গা খালি পড়ে আছে। একটি শণের ভিটেয় বটগাছের চারাটি লাগিয়ে দিলেন। তার প্রিয় নাতির স্মৃতি নিয়ে বটগাছটি বড় হতে লাগলো।

সবাই হা করে শুনছিলো দাদার গল্প। তিনি অয়নের পিঠে হাত রেখে বললেন, ছেলেটি হচ্ছে আমাদের অয়ন। আর তার প্রিয় বন্ধু বটগাছটির ছায়াতলে আমরা বসে আছি।

দাদার কথা শুনে অয়নের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো। বন্ধু বটগাছটির দিকে তাকিয়ে অয়নের মন ভরে গেলো। পরম ভালোবাসায় অয়নের চোখ ভিজে এলো।

দাদাভাই বললেন, তোমার বন্ধুটির খুব যতœ করেছে তোমার খোরশেদ চাচা। তাকে তোমার ধন্যবাদ দেয়া উচিত। অয়ন চোখের ইশারায় খোরশেদ চাচা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। খোরশেদ চাচা মুখে হাসির রেখা টানলেন। দাদাভাই এবার অয়নকে উপস্থিত কৃষকদের উদ্দেশে নিজের জীবন থেকে কিছু শোনাতে বললেন।

অয়ন দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম দিয়ে বললোÑ

আসলে আমার জীবন থেকে বলার তেমন কিছু নেই। তবে আমি আপনাদের গাছ ও আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। আপনারা জানেন গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছ অক্সিজেন দেয়, যেটা আমরা গ্রহণ করি। আর গাছ কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে যেটা আমরা ত্যাগ করি। গাছের ছায়ায় আমরা বিশ্রাম নিই। কান্ত দেহে প্রশান্তি এনে দেয় গাছের ছায়ায় আর পাতাগুলো পাখা হয়ে আলতো বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। গাছ দেয় জ্বালানি কাঠ, ফুল ও ফল। গাছে গাছে পাখিরা উড়ে বেড়ায়। সুর করে গান গায়। পাখির গানে আমাদের মন সতেজ হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও গাছ আমাদের রক্ষা করে। ভাঙন রোধ করে গাছের শেকড়। মোটকথা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গাছের বিকল্প নেই। পৃথিবীর বৃষ্টিপাত বা বাতাসের আর্দ্রতা সংরক্ষণ করে এই গাছ।

কলকারখানার কালো ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে, গাছ সেটা শোষণ করে বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখে। চরম বিপর্যয় থেকে জীবন ও প্রকৃতি রক্ষা করে বলেই গাছ আমাদের খাঁটি বন্ধু। তাই অযথা গাছ না কেটে বেশি বেশি গাছ লাগানোর অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে।

সবাই মুগ্ধ হয়ে অয়নের কথা শুনলো এবং প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনো গাছ কাটবে না। গাছের চারা লাগিয়ে খালি জায়গাগুলো কাজে লাগাবে। নিজেরা স্বাবলম্বী হবে এবং বিপর্যয় থেকে প্রকৃতিকে বাঁচাবে।

দাদাভাই উঠে দাঁড়ালেন। অয়নের দিকে তাকিয়ে গর্বে বুকটা ভরে গেলো তাঁর। কৃষকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পা বাড়ালো অয়ন দাদাভাইকে থামিয়ে বললেন, দাদাভাই আসুন আমরা গাছবন্ধুর কাথে একটা সেলফি তুলে এুণি ফেসবুকে আপলোড করে দেই। আমার ফেসবুক বন্ধুদের সাথে আমার গাছবন্ধুর পরিচয় করিয়ে দেই। মুখে হাসির রেখা টেনে দাদাভাই অয়নের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই কিক করে একটা শব্দ রেরিয়ে এলো ক্যামেরার ভেতর থেকে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।