রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হলেও তা অস্থায়ী : ইইউ রাষ্ট্রদূত

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়ারে মায়াদুন বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হলেও তা অস্থায়ী অবস্থায় রয়েছে। টেকসই স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে আস্থা সৃষ্টি হওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে।

গত ২২ জুন সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সভাপতি মাসুদ করিম। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিকাব সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ।

রানা প্লাজা ভবন ধসের পর বাংলাদেশের সাথে ইইউর বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ সময় বাংলাদেশকে দেয়া শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করেছিল ইইউ।  দু’টি উদ্যোগের কারণে এটি রক্ষা পায়। প্রথমটি হলো সরকারি পর্যায়ে সাস্টেইনিবিলিটি কমপেক্ট সই। দ্বিতীয়টি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শনে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়ান্সের পদক্ষেপ। এই দু’টি উদ্যোগের এখন পর্যন্ত অর্জনকে সম্মান জানাতে হবে এবং বাকি কাজগুলোর জন্য সমর্থন জোগাতে হবে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ক্রেতারা কোন পণ্য কিনবে তা দিন দিন আরো সচেতন হচ্ছে। এর মধ্যে পণ্যের মূল্য একটিমাত্র বিবেচ্য বিষয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির (সংযোগ) ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জন্য কানেক্টিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। আর এর ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা কেউ রোধ করতে পারবে না। কানেক্টিভিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউরোপের এ ধরনের নিবিড় সহযোগিতা থেকে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘এ সুযোগ ব্যর্থ হবে না- এটি বিশ্বাস করার মতো আমাদের যথেষ্ট কারণ আছে।’

পিয়েরে মায়াদোন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের সময় একাধিকবার কানেক্টিভিটির কথা বলেছেন। বিশেষ করে মোদি তাঁর সফরের শেষ দিন ঢাকায় সুধি সমাবেশে বক্তব্যে ইইউর উদাহরণ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আরো কানেক্টিভিটির ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সমঝোতা এবং বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত ও নেপালের মধ্যে মোটরযান চলাচল চুক্তি সইয়ের প্রশংসা করে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, তবে মোটরযান চলাচল চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামো ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রতিষ্ঠার বাধা আসতে পারে, যা জোরালো রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।

ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই বছর আগে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সঙ্গে রফতানিনির্ভর সম্পর্ক শুরু করেছে ইইউ। ওই বিপর্যয়ের পর ইইউ তার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রত্যাহার করার কথা বিবেচনা করেছিল।

পিয়েরে মায়াদোন বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের অনেক বিকল্প আছে এবং বাংলাদেশ তার অন্যতম। বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন, ইতিবাচক ও আধুনিক বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা সৃষ্টি করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে কোম্পানি আইনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মায়াদোন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজ করতে ওই আইন সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সাফল্যের গল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, সেগুলো সাধারণ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তারা বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমর্যাদা তুলে ধরবে।’