মিসর : গণপ্রজাতন্ত্র নয়, ভীতিতন্ত্র

কায়রো : মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কটের শেষ নেই। তবে যে বিষয়টাতে অধিক মনোযোগ দেওয়া উচিৎ সেই বিষয়টাই তুলনামুলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কম গুরুত্ব পাচ্ছে। আরব বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ মিসরে যে মানবাধিকারের মহাবিপর্যয় ঘটেছে সেদিকে কারো নজর নেই।

কার্নেগী এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের মিসর বিশেষজ্ঞ মাইকেল ডান বলেন, ১৯৫০ দশকে সর্বপ্রথম সামরিক শাসনের অধীনে আসার পর দেশটি যে অত্যাচার-নিপীড়ন প্রত্যক্ষ করেছে, বর্তমানে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির নেতৃত্বে রাজনৈতিক নিপীড়ন সে সময়ের চেয়েও ভয়াবহ।

কথিত রাজনৈতিক অপরাধের অভিযোগে মুসলিম ব্রাদারহুডের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এখন কারাগারে। মিসরীয় একটি আদালত মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ও মিসরের সর্বপ্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে।

সরকার জনগণকে ভয় দেখাচ্ছে। জনগণের কণ্ঠ রুদ্ধ করে দিতে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। মিসরের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদেরকে ৭০ ও আশির দশকের আর্জেন্টিনার স্বৈরশাসকের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমসে এই সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে মিসরীয় লেখক মোনা এলতাহাবি বর্ণনা করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী কিভাবে কোনো কারণ ছাড়াই হাজার হাজার তরুণকে আটক করছে।

গত এপ্রিল থেকে এই পর্যন্ত কমপক্ষে দুই জন তরুণকে নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে। এই দুজনের একজন ২৩ বছর বয়সী ইসলাম আতিতো যাকে শামস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার দুদিন পর তার রক্তাক্ত লাশ তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

মাইকেল ডান ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন, নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার- নিপীড়ন ৫০ ও ৬০-এর দশকের চেয়েও শোচনীয়। স্বৈরশাসক আল সিসির সরকার সমালোচকদেরকেও টার্গেট করছে। একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল ডানকে গত ডিসেম্বর মাসে মিসরে ঢুকতে না দিয়ে বিমান বন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

মাইকেল ডান বলেন, মিসরের যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো জনগণের উপর অত্যাচার-নিপীড়নের দলিল-প্রমাণ সংগ্রহ ও প্রকাশ করছে, তাদেরকে বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতা নেওয়ার কারণে বা মিসরের সুনাম নষ্ট করার অভিযোগ তুলে বিচারের মুখোমুখি করার হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।

মিসর সরকারের তদন্তাধীন কায়রো ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের পরিচালক বাহে এলদিন হাসান লিখেছেন যে, হত্যার জন্য তাকে টার্গেট করা হয়েছে।

২৮ মে এলদিন হাসান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের হিউম্যান রাইটস কমিটির সামনে মিসরের মানবাধিকারের নাজুক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি বিবৃতি দেন যেখানে তিনি বলেন, তার দেশ এখন একটা ‘ভয়ের প্রজাতন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে।

ইসলামী মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মুসলিম ব্রাদাহুডের প্রভাব মোকাবেলায় এই চরম নিপীড়ন দরকার বলে প্রচার করছে সিসির সরকার। তবে ব্রাদারহুড কয়েক দশক আগেই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে।

সিসির এই নীতিতে সন্ত্রাসবাদ আরো পুষ্ট হয়েছে। সিনাইয়ে বোমা হামলা, সম্প্রতি লুক্সর ও মিসরের সবচেয়ে খ্যাতনামা পিরামিডে হামলার ঘটনাগুলো সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা