আতঙ্কের জনপদ সাতক্ষীরা : এক সপ্তাহে গ্রেফতার তিন শতাধিক : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অভিযান

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : পুলিশি আতঙ্কে সাতক্ষীরা। প্রতিদিন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি গ্রেফতার হচ্ছে খেটে খাওয়া নিরীহ সাধারণ মানুষ। গত এক সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে  তিন শতাধিক বিরোধী জোট সমর্থকদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ শিক্ষকদের আটক করছে পুলিশ। ফলে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গোটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পাশাপাশি ছাত্ররা ও শ্রেণীতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।  

গত ২৪ জানুয়ারি শনিবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্র পিএন হাইস্কুল এন্ড কলেজ থেকে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য সাতক্ষীরা শহর জামায়াতের আমীর মো. ওবায়দুল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কলেজ সেকশনের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ও শহরের ইটাগাছা এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রহমান জানান, তার বিরুদ্ধে নাশকতা, সরকারি কাজে বাধা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের পর তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলেও জানান তিনি। এর আগে ২১ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আহলে হাদীস আন্দোলনের নেতা আবু তাহেরকে আটক করে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা ছিল। একই দিনে তালা উপজেলার খলিষখালী ইউনিয়নের মঙ্গলানন্দকাটী গ্রামের মোহাম্মদ বিশ্বাসের ছেলে দোকানদার রফিকুল ইসলামকে বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। রফিকুলের বোন লিলি আক্তার জানান, তার ভাই কোনো দিন কোনো দল করেনি। দোকানের পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এ কারণে তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। একই অভিযোগ গ্রেফতারকৃত শতাধিক পরিবারের। ২৩ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শহরের মাছখোলা গ্রামের ঝুটি তলা এলাকায় অবস্থিত নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়। এদিকে কয়েকদিনে বিরোধী দলের  তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

   ২০ দলীয় জোটের ডাকে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচি পালন করতে না দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে গত গত ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকার এক দিন আগে থেকেই সারা দেশে সড়ক ও নৌ পথে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। 

এদিকে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক, জেলা সেক্রেটারি শেখ নুরুল হুদা, সাতক্ষীরা শহর নায়েবে আমীর ফখরুল হাসান লাভলু ও সেক্রেটারি ওমর ফারুক এক যৌথ বিবৃতিতে শহর জামায়াতের আমীর প্রভাষক ওবাইদুল্লাহকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা আরোও বলেছেন, দুর্বার গণআন্দোলনে দিশেহারা হয়ে জুলুমবাজ সরকার এখন প্রশাসন নির্ভর হয়ে পড়েছে। তারা জনতার কণ্ঠকে স্তব্ধ করার জন্য দলন-পীড়ন, হত্যা-সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদেরকে জনতার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অতীতে কোনো স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি, আর আওয়ামী লীগেরও হবে না। তারা সরকারকে জুলুম-নির্যাতনের পথ পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান।

অন্যথায় গণদাবি রাজপথেই আদায় করা হবে। সাথে সাথে তারা ২০ দলীয় জোটের নির্ধারিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য সাতক্ষীরাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বক্তরা আরো বলেন, প্রবল গণআন্দোলনে দিশেহারা সরকার এখন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও ভাড়াটিয়াদের হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব নাশকতা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের দায়ভার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের উপর চাপিয়ে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকারের সীমাহীন বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে বিক্ষুব্ধ ও অধিকার বঞ্চিত জনতা রাজপথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছে। বীর জনতার সম্মিলিত পদচারণায় রাজপথ এখন উত্তাল। কিন্তু সরকারের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী জনগণের উপর জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। তারা আরো বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সরকার রাজনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা না করে পেশীশক্তি ও রাষ্ট্রীয় শক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে বিরোধী মত ধ্বংস ও নির্মূল করার ষড়যন্ত্র করছে।