বদরগঞ্জে ৮০ ভাগ পোল্ট্রি খামার বন্ধ

বদরগঞ্জ (রংপুর) : লোকসান, খাদ্য, ওষুধ ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধি কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ পোল্ট্রি খামার

খাদ্য ওষুধ ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধি
বদরগঞ্জ (রংপুর) সংবাদদাতা :  খাদ্য, ওষুধ ও বাচ্চাসহ আনুষাঙ্গিক সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে বদরগঞ্জের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পোল্ট্রি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পে জড়িত কয়েক শত শ্রমিক কর্মচারী।

খামারীদের অভিযোগ, সরকারি নজরদারির অভাবে ও পোল্টি শিল্পের স্থায়ী কোনো নীতিমালা না থাকায় প্রতিযোগিতার এই যুগে  বিপুল সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে টিকে রাখা সম্ভব নয়। অব্যাহত লোকসান গুণতে গুণতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোল্ট্রি খামারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এই শিল্পকে রক্ষায় ভুক্তোভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা  করেছেন।

সরেজমিন ঘুরে কথা হয়েছে বালুয়া ভাটার বেলাল হোসেন, চাঁনকুঠির ডাংগার আনিছুল ইসলাম, নয়াপাড়ার আসাদুজ্জামান, দামোদর পুরের ইয়াসিন আলীসহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান, সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি বর্তমানে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার মূল কারণ বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধ ও উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। অন্য দিকে মুরগির দাম কমে গেছে। কমেছে ডিমের দামও। এসব কারণে এবছর তাদের প্রত্যেকের গড়ে লক্ষাধিক করে টাকা লোকসান হয়েছে।

তারা আরো জানান, এক বছর আগেও একদিনের লেয়ার বাচ্চার দাম ছিল ১০-১২ টাকা। বর্তমানে সেই বাচ্চার দাম হয়েছে ১৬-২০ টাকা। একইভাবে ১৫-১৬ টাকার বয়লার বাচ্চার দাম ২৭-৩০ টাকায় ও সোনালী জাতের বাচ্চা ১২-১৪ টাকা থেকে বেড়ে  ২৫-২৬ টাকা হয়েছে। ২৫ টাকা দামের রেডি ফিস ৪৫-৪৮ টাকা হয়েছে।

নয়াপাড়া গ্রামের মোজাহেদুল জানান একটি এক কেজি ওজনের বয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হয় ১১০-১১৫ টাকা। বর্তমান বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। ফলে প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ২৫ টাকা। অব্যাহত এই লোকসানের মুখে বাধ্য হয়ে খামারীরা খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। সূত্র মতে নব্বই দশকের শুরুতে বদরগঞ্জ উপজেলার শত শত শিক্ষিত বেকার তরুণ তরুণী স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় পোল্টি শিল্পের দিকে ঝুকে পড়ে। ফলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় তিন শতাধিক পোল্ট্রি খামার গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির খামারই বেশি।

বর্তমানে খাদ্য, ওষুধ, বাচ্চাসহ আনুষাঙ্গিক সবকিছুর দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণে প্রায় ৭০-৮০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। যেকটি খামার টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। ফলে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুকে পড়েছে। ঋণগ্রস্ত অনেকেই জীবিকার টানে শহরে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জানান, সম্প্রতি খাদ্য, ওষুধ  বাচ্চাসহ আনুষাঙ্গিক সবকিছুর দাম  বৃদ্ধি পাওয়া ও বাজারে মুরগির দাম অব্যাহত ভাবে কমতে থাকায় লোকসানের মুখে খামারীরা বাধ্য হয়েই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের খামার টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের কিছুই করার নেই।