সংবাদ শিরোনামঃ

গণদাবি : লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ** লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ** শিগগিরই এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে ২০ দল ** অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘোচাতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে ** কঠিন পরিস্থিতির মুখে ওবামা ** অবিলম্বে জঙ্গি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে : ছাত্রশিবির ** সঙ্কট সৃষ্টির জন্য বিরোধী দল নয় আওয়ামী লীগই যথেষ্ট ** সার্ককে আরো কার্যকর করুন, জনগণের প্রত্যাশা দারিদ্র্যমুক্ত শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া ** জামায়াতের অগ্রযাত্রায় দিশেহারা সরকার ** পলক ফেরে না যেখানে ** অধ্যাপক গোলাম আযম : যিনি আমার শিক্ষক ** বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর প্রয়োজন নিরপেক্ষ মিডিয়া ** ভারতীয় ভিসার ই-টোকেন দালাল চক্রের হাতে ** বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪২১, ৪ সফর ১৪৩৬, ২৮ নভেম্বর ২০১৪

স্টাফ রিপোর্টার : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার মোবারক হোসেনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে গঠিত এই ট্রাইব্যুনাল গত ২৪ নভেম্বর সোমবার জনাকীর্ণ আদালতে মোবারকের বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত ৫টি অভিযোগের মধ্যে ২টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রথম অভিযোগে ফাঁসি ও তৃতীয় অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। দাখিলকৃত অপর তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন সাজাপ্রাপ্ত মোবারক হোসেন। এই রায়ের মাধ্যমে এই প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগের কোনো সাবেক নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষিত হলো। মোবারকের বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে রায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি মর্মে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছে আসাপিক্ষের আইনজীবী ও তার স্বজনেরা। এনিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ত্রয়োদশ রায় ঘোষিত হলো। মোবারকের রায়সহ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ঘোষিত রায়ের সংখ্যা ৬টি। মোবারকের রায় ঘোষণার আগে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে ব্রেকিং নিউজ প্রকাশের ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রায় ঘোষণার আগে সোমবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মোবারককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে কড়া নিরাপত্তায় ট্রাইব্যুনালে হাজতখানায় আনা হয়। এরপর বেলা ১১টায় সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবি পরা মোবারককে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।

১১টার কিছু পরে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক এজলাসে তাদের নিজ নিজ আসন গ্রহণ করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, উপস্থিত প্রসিকিউশন, আসামি পক্ষ, সুধী ও সাংবাদিকবৃন্দ, আজ এ ট্রাইব্যুনাল থেকে আমরা ষষ্ঠ রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছি। রায়ের মধ্য থেকে বিশেষ কিছু অংশ এবং আদেশ আমরা পাঠ করবো।

এরপর বেলা সোয়া এগারটা থেকে ৯২ পৃষ্ঠার মূল রায়ের সারাংশের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক। তিনি এই মামলায় অভিযুক্ত মোবারকের রাজনৈতিক পরিচয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন তার ভূমিকা, মোবারকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত ৫টি অভিযোগ পড়ে শোনান। দুপুর ১২টায় রায়ের মূল অংশ ও দণ্ডদান সম্পর্কিত অংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, প্রসিকিউশনের সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, আসামি মোবারক হোসেন ওরফে মোবারক আলী প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত প্রথম ও তৃতীয় অভিযোগে অভিযুক্ত। এ কারণে প্রথম অভিযোগে তাকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হলো। এছাড়া তৃতীয় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো। তবে রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত মোবারক ছিলেন অনেকটাই নির্লিপ্ত। রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে মোবারক হোসেনও পুলিশি নিরাপত্তায় এজলাস ত্যাগ করে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় চলে যান। 

রায়ে সন্তুষ্ট রাষ্ট্রপক্ষ : মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মোবারক হোসেনের ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই বিচারকাজ হচ্ছে। এই বিচারে জনগণের আস্থাও ফিরে আসছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে মোবারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে খালাস পাওয়া অভিযোগগুলোর  বিষয়ে আপিলের সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি। এই মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাহীদুর রহমান বলেন, প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। আমরা সন্তুষ্ট। পূর্ণাঙ্গ রায় দেখে আপিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ন্যায়বিচার পাইনি, আপিল করা হবে -তাজুল

মোবারকের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আদালতের কাজ হচ্ছে আবেগের বাইরে গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে  উপনীত হওয়া। কিন্তু মোবারকের রায়ে ট্রাইব্যুনাল সঠিক সিদ্ধান্তে  পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আশা করি আপিলে গিয়ে এই রায় বাতিল হবে। মোবারকের বড় ছেলে আসাদুল্লাহ বলেন, আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।

যে অভিযোগে ফাঁসি

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে : ১৯৭১ সালের ২২ আগস্ট আখাউড়ার টানমাণ্ডাইল গ্রামের হাজী নূর বক্সের বাড়িতে ১৩০/১৩২ জন গ্রামবাসীকে জড়ো করে মোবারক ও তার রাজাকার সহযোগীরা। পরে তাদের আটক করে নৌকায় করে গঙ্গাসাগর দীঘির পাড়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয়। এরপর ৩৩ জনকে বাছাই করে আটকে রাখা হয় তেরজুড়ি হাজতখানায়। পরদিন ২৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে ওই ৩৩ জনকে দীঘির পাড়ে পানিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

যে অভিযোগে যাবজ্জীবন : তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার ছাতিয়ান গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী আবদুুল খালেককে অপহরণ করে মোবারক ও তার সহযোগী রাজাকাররা। তাকে সুহিলপুর রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়, যার প্রত্যক্ষদর্শী তার ছেলে রফিকুল ইসলাম। একই রাতে তাকে তিতাস নদীর পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি করার পরে মোবারক বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খালেকের মৃত্যু নিশ্চিত করে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচ ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল মোবারকের বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। একাত্তরে একটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২০০৯ সালের ৩ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোবারকের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। তখন হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন তিনি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তার মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। গত বছরের ১৫ জুলাই মোবারক হোসেনকে দুই মাসের জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল। এরপর কয়েক দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১২  মার্চ অভিযোগ আমলে নিয়ে তার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মোবারকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ১২ মার্চ অভিযোগ আমলে নিয়ে জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে গত ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১৩ সালের ২০ মে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের মোট ১২ জন সাক্ষী এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। গত ২৫ নভেম্বর প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং তাদের আসামি পক্ষের জেরা শেষ হয়।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।